প্রাচ্যবিদদের দাঁতের দাগ মাকতাবাতুল আযহার প্রকাশনীর ইসলামি বই টি পেতে ইসলামিক বইঘর ডট কম এ অনলাইন অর্ডার করুন এখনই।
১। প্রাচ্যবিদদের দাঁতের দাগ বইটি আপনি ফোন বা অনলাইন এর মাধ্যমে অর্ডার করার পর ইসলামিক বইঘর ডট কম আপনার সাথে যোগাযোগ করবে এবং আপনার বিলি ঠিকানা নিশ্চিত করবে ।
৩। ইসলামিক বইঘর এখন ঢাকা ও এর আশেপাশে ক্যাশ অন ডেলিভারী ও কুরিয়ার সার্ভিস এর মাধ্যমে বই পাঠাচ্ছে । এবং ঢাকার বাইরে কুরিয়ার সার্ভিস এর মাধ্যমে বই পাঠাচ্ছে ।
৫। বইয়ের মুল্য bKash, ডাচ বাংলা মোবাইল বা ক্যাশ অন ডেলিভারী এর মাধ্যমে প্রদান করা যাবে । বাংলাদেশের যে কোনো প্রান্তে ৪০ টাকায় বই পৌছে দেয়া হবে ।
যে কোন ইসলামী বই পেতে ইসলামিক বইঘর.কম এর সাথেই থাকুন
বি:দ্র: প্রাচ্যবিদদের দাঁতের দাগ বইটি free pdf download করিতে চাহিয়া লেখকদের নিরুৎসাহিত করিবেন না
হাসান ইমরান –
প্রতিটি সমাজ, প্রতিটি গোত্র, প্রতিটি দেশ, ধর্ম, বর্ণ, সংস্কার চিন্তা চেতনা ধ্বংসের মূলে থাকে তাদেরই ভিতরের কোন কারণ, ভারতে ইংরেজরা মুসলমানদের হাত থেকে ক্ষমতা ছিনিয়ে নিল কারণ একজন মুসলিমের বিশ্বাসঘাতকতা। স্পেন থেকে মুসলিম বিতাড়িত হল, সেই একই বিশ্বাসঘাতকতা। গাছের ডাল কেটে যদি কুড়াল বানানো না যেত তাহলে গাছও কাটা সম্ভব হত না!
খৃষ্টানরা যখন একের পর এক তাদেরই সৃষ্ট ক্রুসেডে বারংবার পরাজিত হচ্ছিল, মুসলমান ধ্বংসের যখন কোন পথ খুঁজে পাচ্ছিল না তখন তারা এক মোক্ষম দাওয়াইয়ের ক্ষেত্র প্রস্তুত করে । শুরু হয় মুসলিম নিধনের এক নতুন ক্ষেত্র ‘প্রাচ্যবাদ’ যেখানে যুদ্ধ বিগ্রহ নেই, তলোয়ারের ঝনঝনানি নেই, মারামারি কাটাকাটি নেই, দ্বেষ বিদ্বেষ নেই, নেই নারীদের যৌনদাসি বানানো বা পুরুষদের দাস করণ।
আছে ইসলামের প্রতি প্রকাশ্য ভালোবাসা, মুখে সমর্থনের বুলি, চরিত্রে মাধুর্য, আচরণে ভদ্র, কথায় উচ্ছাস আনন্দ। কিন্তু অন্তরে তাদের পুরনো অস্ত্র, ইসলামের প্রতি বিদ্বেষ।
ধীরে ধীরে প্রাচ্যবাদরা মুসলমানদের মানসজগতে প্রবেশ করতে থাকে। মুসলমানদের আচার ব্যাবহার, কৃষ্টি কালচার, ব্যাবসা বাণিজ্য, নিয়মনীতি রপ্ত করতে থাকে। একদিকে তারা জাগতিক বিষয়গুলো নিজেদের ভিতর প্রচলন করে সভ্য হয় অপরদিকে তারা কুরআন, হাদিস, উসুল, ফিকহ, তাসাউফ অধ্যয়ন করে মুসলমানদের ভিতর ফাটল ধরাতে চেষ্টা করে। তারা মন্তব্য করে সাধারণ কোন বিষয় নিয়ে, বিভিন্ন মুসতাহাব কাজ, মুবাহ, মাকরুহ বিষয়গুলো নিয়ে তারা আলাদা মতামত গড়ে তুলে এবং তৎপরবর্তী মুসলমানদের ভিতরেই তারা এমন একদল গড়তে সক্ষম হয় যারা টুপির ডিজাইন, পাগড়ির কালার, পাঞ্জাবি, জুব্বা বা অন্য জাতির পোষাক কি ইসলামে প্রতিবন্ধক এ ধরণের প্রশ্নে নিজেরা মারামারি কাটাকাটি করে আর সাধারণ মুসলমানদের মাঝে সংশয় সৃষ্টি করে । প্রাচ্যবাদ ঘরের শত্রু। তারা প্রচার করে কুরআন কোন ঐশী গ্রন্থ নয়, মুহম্মদ সা. সৃষ্ট, মুহাম্মদ সা. কে তারা মৃগী রোগী সাব্যস্ত করে, তাঁর ওহীর অবস্থাকে মৃগী রোগের সাথে তুলনা দিয়ে বিকৃত আনন্দ পায়। এসব বিভ্রান্তি যেমন মারগোলিয়থ, উইলিয়াম ম্যুর, স্প্রেঙ্গার, ড্রেপার, স্নোক হরগ্রোনজিদের মত প্রাচ্যবিদরা ছড়িয়েছে তেমনিই আরেকদল প্রাচ্যবিদ এটাকে খন্ডন করেছে। সত্য বহির্ভুত আর ইতিহাসকে আস্তাকুড়ে রেখে কোন কথা বা মতবাদ বেশিদিন টিকে না। এক শ্রেণীর লোকদের প্রভাবিত করলেও আবর্জনার মত বেশির ভাগ মানুষই এসব ছুড়ে দিয়েছে।
প্রাচ্যবিদ বলতেই ইসলাম বিদ্বেষী নয়, আবার প্রাচ্যবিদ বলতেই ইসলাম সমর্থক নয়, তাহলে প্রাচ্যবাদ কি? লেখক এ প্রসঙ্গে আলোচনা করেছেন ‘বহুরূপ, বহুস্রোত’ নামক শিরোণামে। প্রাচ্যবাদের বহু সংখ্যা সহ আলোচনা করেছেন একেবারে গোড়া থেকে এ পর্যন্ত তাদের কর্মকান্ড। তাদের ভিতর বহুদল এবং বহুদলের বিভিন্নমুখী অবস্থাকে আলোচনা করেছেন। খৃষ্টানরা নিজেদের সৃষ্ট ক্রুসেড যুদ্ধগুলোর বেশিরভাগই পরাজিত হয়েছে মুসলমানদের কাছে, যুদ্ধের মাঠে মুখোমুখি শক্তিতে না পেড়ে তারা আশ্রয় নিয়েছে ভিন্ন পদ্ধতির। ইসলাম বিদ্বেষকে তারা উস্কে দিয়েছে কবিতায়, লেখায়, গজলে। দান্তের ডিভাইন কমেডি যার জলন্ত প্রমাণ। খৃষ্টানদের হাজার হাজার বছরের বিদ্বেষ আর ব্যার্থ ফলাফল তুলে ধরেছেন ‘হাজার বছরের বিষ’ নামক শিরোনামে । খৃষ্টীয় দেশে জ্ঞান বিজ্ঞানের শুরু এবং তার পূর্বে জ্ঞান বিজ্ঞান, সভ্যতা, আচার আচরণ, উন্নত খাবার দাবার, এবং পোষাক আশাক সহ বহুমুখী অজ্ঞতা এবং তৎপরবর্তী মুসলিমদের থেকে জ্ঞান বিজ্ঞান আহরণ এবং নিজেদের সভ্য করে গড়ে নেওয়া এবং মুসলিম বিজ্ঞানীদের প্রতি তাদের অবহেলা ও তাদের নাম বিকৃত করে উপস্থাপন সহ ব্যাপক আলোচনা করেছেন ‘আরেক অভিযান’ নামক শিরোনামে। প্রাচ্যবিদদের দাঁতের দাগ’ শিরোনামে লেখক তাদের আরোপিত বিভিন্ন প্রশ্ন অপপ্রচার কে তুলে এনেছেন এবং দিয়েছেন তার দাঁত ভাঙ্গা জবাব। তারা কুরআন কে হাদিসের সাথে মিলিয়ে দেয়, কুরআনকে মুহাম্মদ সা. এর নিজের সৃষ্ট বলে! লেখক জবাব দিয়েছেন, হাদিসের সনদ নিয়ে তাদের ভ্রান্তি,হাদিস কে উমাইয়া শাসনের রাজনৈতিক মতাদর্শ বলে! লেখক জবাব দিয়েছেন, ফিকহ শাস্ত্রকে খৃষ্টীয় আইন শাস্ত্র থেকে উদ্ভূত বলে, লেখক জবাব দিয়েছেন, তাসাউফকে হিন্দু সাধুবাদ এবং নিউ প্লেটোনিক মতাদর্শ থেকে উদ্ভূত বলে, লেখক জবাব দিয়েছেন, নবীর বহু বিবাহ, এবং নবীকে নিয়ে বিভিন্ন বিকৃত চিন্তা তারা করে! লেখক জবাব দিয়েছেন। সব জবাব দিয়েছেন তাদেরই আরেকদল প্রাচ্যবিদদের উদ্ধৃতি দিয়ে। তাদের ভ্রান্ত মতবাদ প্রথমে খন্ডন করেছেন তাদের ভিতর থেকে তারপর আলোচনা করেছেন নিজস্ব পর্যালোচনা এবং বহু ইসলামিক স্কলারদের বক্তব্য নিয়ে।
নিজস্ব মতামত : একজন মুসলিম হিসেবে অবশ্যয় সবার বইটি পড়া উচিৎ, ধর্ম রক্ষার জন্য জানতে হবে তার আঘাতের উৎস কোথাই, এবং ঘাঁটি কারা, আপনাকে জানতে হবে আগা থেকে গোড়া, শিকড় থেকে শিখরে, পক্ষ এবং বিপক্ষ যুক্তি, দলিল, খন্ডন। আর এসব মশলা একসাথে পাওয়ার জন্য বাংলা ভাষায় এর চেয়ে উত্তম বই আর হতে পারে না। ইসলামি গবেষক ও লেখক মুসা আল হাফিজের বাঙময় আবেদনময়ী ও আবেগপূর্ণ ভাষার সমাহারে বইটি খুবই উপভোগ্য লেগেছে। তবে অতিরিক্ত তথ্যের ফলে কিছুটা কঠিন লাগতে পারে, তাই বলে পিছিয়ে যাওয়ার কোন কারণ নেই।
বইটিতে খারাপ লাগা : দুঃখের বিষয় হল এত সুন্দর একটা বই অজস্র বানান ভুল বা টাইপিং মিস্টেকে সৌন্দর্য্যের অনেকটাই ম্লান করে দিয়েছে, টাইপিং মিস্টেকটা এমন পর্যায় গিয়েছে যে কুরআনের একটা আয়াতেও ভুল হয়ে গিয়েছে। ویا سماء اقلعی এই আয়াতে ‘ইয়া’ শব্দটিতে একটা নোকতা কমে যাওয়ায় সেটা ‘বা’ হয়ে গেছে। মাকতাবাতুল আযহারের নিকট সবিনয় অনুরোধ এ ধরণের গুরুত্বপূর্ণ একটা বইতে আরো সতর্ক হবেন। আশা করি বিষয়টা বুঝবেন।