ফাতেমি সাম্রাজ্যের ইতিহাস
১৯৬৩ খ্রিস্টাব্দে লিবিয়ার বেনগাজিতে জন্মগ্রহণ করা ড. আলি মুহাম্মদ সাল্লাবি বর্তমান সময়ের একজন খ্যাতিমান লেখক। ইসলামি ইতিহাসের জানা ও অজানা অধ্যায়গুলো নিজ কলমে তিনি রচনা করেছেন প্রবল যত্ন সহকারে।
প্রাচীন ও আধুনিক গ্রন্থাবলির সহায়তা নিয়ে ইতিহাসের অজানা অধ্যায় থেকে তিনি খুঁজে এনেছেন অনেক বিরল তথ্য-উপাত্ত। এর পাশাপাশি ইতিহাসের নানান বাঁকগুলোকে নিজস্ব বিশ্লেষণ স্টাইলে উপস্থাপন করেছেন বিপুল দক্ষতায়। তার রচনা ও গদ্য পাঠককে যেমন প্রবলভাবে আকর্ষণ করে তেমনি অসংখ্য লাইব্রেরি ও গ্রন্থাগারের শোভাবর্ধনও করে।
‘আদ-দাওলাতুল ফাতিমিয়্যাহ’ বা ‘ফাতেমি সাম্রাজ্যের তার অনন্য একটি গ্রন্থ। গ্রন্থটি প্রসঙ্গে তিনি নিজেই ভূমিকায় লিখেছেন:
‘আদ-দাওলাতুল ফাতিমিয়্যাহ’ নামক এক গ্রন্থটিতে ইতিহাসে ‘ফাতেমি সম্প্রদায়’ নামে পরিচিত জাতি-গোষ্ঠির রাজ্যশাসনের সূচনা ও উত্থান-পতনের কথা সবিস্তারে আলোচনা করা হয়েছে। আলোচনার প্রেক্ষিতে শিয়া সম্প্রদায় ও মুসলিম জাতির বিনাশ সাধনে তাদের মারাত্মক ষড়যন্ত্র-অপতৎপরতার কথাও আলোচনা করা হয়েছে।
দক্ষিণ আফ্রিকা অঞ্চলে বাতেনী সম্প্রদায়ের সাফল্যের স্বরূপ উদ্ঘাটনের চেষ্টা করা হয়েছে। রাফেযী সম্প্রদায় ও আহলুস সুন্নাহের মাঝে দ্বন্দ্বের বাস্তবতার কথা বর্ণনা করা হয়েছে। আহলুস সুন্নাহের বিরুদ্ধে রাফেযীদের নানাবিদ অপকৌশল ও এর প্রতিরোধে আহলুস সুন্নাহের ভূমিকা-পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। উবায়দিয়া সা¤্রাজ্যের বিনাশে দক্ষিণ আফ্রিকা অঞ্চলের অধিবাসীদের গৃহীত বিরাট বিরাট আন্দোলন-সংগ্রাম ও পদক্ষেপের কথাও তুলে ধরা হয়েছে।
একই সাথে তৎকালীন সময়ে আহলুস সুন্নাহর মতাদর্শী আলেম সমাজের বয়ান-নসীহত ও সুষ্ঠু চিন্তা- চেতনার প্রচার-প্রসার এবং রাফেযী সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে তাদের অস্ত্রধারণের বিবরণও সংক্ষেপে উপস্থাপন করা হয়েছে।
আহলুস সুন্নাহর মতাদর্শ প্রচার-প্রসার এবং সমগ্র দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে রাফেযীদের মূলোৎপাটনে জিনকি সা¤্রাজ্যের ভূমিকা সবিস্তারে উল্লেখ করতে চেষ্টা করা হয়েছে। বিশেষ করে, মুঈয ইবনে বাদিশ জিনকির যুগে এবং তার পুত্র শাহযাদা তামীম বিন মুঈয এর যুগের ব্যাপক তৎপরতার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
এমনিভাবে মিসরে উবায়দিয়া সা¤্রাজ্য ও জিনকি সা¤্রাজ্যের মাঝে সংঘটিত সংঘর্ষ-ঘটনার কথা লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। জিনকি সা¤্রাজ্য পতনের মূল কারণগুলো বিশ্লেষণ করা হয়েছে। একইসঙ্গে এই বই পাঠককে মিশরের রাফেযী ফেতনা ও ইরাকের আহলুস সুন্নাহর মধ্যকার দ্বন্দ্বের কথাও ব্যকœ করবে।
আর তা কেবলই ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ সত্য উদ্ঘাটনের জন্য। সত্যটি হলো, দক্ষিণ আফ্রিকার ইতিহাস সারা মুসলিম উম্মাহ তথা মিসর, হিজায, সিরিয়া ও ইরাকসহ সারা মুসলিম বিশ্বে সংঘটিত ফেতনা-ফাসাদের সাথে সম্পৃক্ত। বাস্তব কথা হলো, আমরা ইতিহাস বর্ণনার ক্ষেত্রে এক জাতির একাংশ বাদ দিয়ে অন্য অংশ বর্ণনা করতে অপারগ।
একই সঙ্গে এই বইটি দুই মহান মুসলিম সেনাপতি নূরুদ্দীন মাহমূদ ও সালাহউদ্দীন আইয়ুবীর যুদ্ধ ও সংগ্রামী জীবনের মূর লক্ষ্য-উদ্দেশ্যও পরিস্ফূট করে দেবে।
আলেম-উলামা, মুহাদ্দিস, ফকীহ ও দীনি ব্যক্তিবর্গের অমর কীর্তিনামার কথাও তুলে ধরবে। যারা সদাসর্বদা দীনের প্রচার-প্রসারে বিরাট অবদান রেখেছেন। পাশাপাশি নানান ফেতনা ও যুদ্ধ-সংঘর্ষের ঐতিহাসিক ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ প্রদানের মধ্য দিয়ে জাতি-সমাজ ও রাষ্ট্রের ব্যাপারে আল্লাহ তাআলার কর্মনীতি ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করবে।
আল্লাহ তাআলার রীতিনীতি এবং ঐতিহাসিক প্রেক্ষিতে সেগুলোর সত্যমর্ম উদ্ঘাটন এবং হারানো ঐতিহ্য ও মর্যাদা পূনরুদ্ধারে আলেম-উলামাদের অগ্রণী ভূমিকা পালনের গুরুত্বের কথা তুলে ধরবে এবং বস্তুজাগতিক ক্ষেত্রে এমন উপায়-উপকরণ সংগ্রহে উদ্বুদ্ধ করবে- যার দ্বারা সত্যিকারার্থেই শত্রুবাহিনীর বিপক্ষে বিজয় লাভ করা যায়।
এই বইটি সমাজ পরিবর্তন, জাতি ও রাষ্ট্র গঠণে ভূমিকা পালনের গুরুত্ব তুলে ধরবে। ঐশী জ্ঞানবিজ্ঞান সাধনা ও চর্চাকে জাতির বিরাট লক্ষ্য-উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের সর্বোচ্চ গুরুত্ব প্রদান করবে। চাই তা আচার-আখলাক, কর্ম-প্রচেষ্টার ক্ষেত্রে হোক কিংবা আপন রবের কিতাব, তার নবীর সুন্নত ও নিষ্ঠাপূর্ণভাবে এ দুটির অনুসরণের এবং ঐক্যবদ্ধভাবে দীনের আহ্বানে সাড়া দানের মধ্য দিয়ে হোক।
আমার এই সামান্য চেষ্টা কোনো নতুন কিছু নয়; বরং এই গ্রন্থের দ্বারা কালের সেই ঐতিহাসিক ঘটনাগুলোকে সংকলন ও গ্রন্থনা করা হয়েছে, যা দক্ষিণ আফ্রিকা অঞ্চলে সংঘটিত হয়েছে। যা পশ্চিমাঞ্চলে ইসলামী রাজনীতির মেরুকরণে বিরাট প্রভাব সৃষ্টি করেছে।
সুতরাং আমার এই চেষ্টা যদি কল্যাণকর হয় তবে তা একমাত্র আল্লাহর তাওফীকেই হয়েছে। যদি আমি এক্ষেত্রে কোনো ভুল করে থাকি, তবে আমার কাছে তা প্রকাশ করলে আমি অবশ্যই আমার বক্তব্য প্রত্যাহার করে নেবো। এই গ্রন্থের সমালোচনা, পর্যালোচনা এবং পরিমার্জন ও পরিশোধনের দ্বার সবার জন্যই উন্মুক্ত।
গ্রন্থটি রচনার ৫টি মৌলিক উদ্দেশ্য উল্লেখ করে তিনি লিখেছেন :
ক. এ কথা প্রমাণ করা যে, আমাদের দেশের ইসলামি সভ্যতা-সংস্কৃতি সুন্নী ধারা তথা নবী কারীম সা. ও তার সাহাবীগণ যে ধারার ওপর প্রতিষ্ঠিত ছিলেন- তার আলোকেই রচিত ও প্রচারিত। শিয়া ও খারেযীদের মাঝে প্রচলিত ধারা নয়।
খ. বিভিন্ন রাষ্ট্রের অবস্থা ও পরিস্থিতি, রাষ্ট্রগঠনের ভিত্তি, পতনের কারণ এবং সারা বিশ্বের ক্ষেত্রে আল্লাহ তাআলার কর্মরীতি এবং ব্যক্তি ও সমাজের ক্ষেত্রে আল্লাহর রীতিনীতি জানার মধ্য দিয়ে উপদেশ ও শিক্ষাগ্রহণের পথ সহজতর করা।
গ. আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাতের আকিদা-বিশ্বাসকে গুরুত্ব ও অগ্রাধিকার দেওয়া। জাতির আগামী প্রজন্মকে এর আলোকে গড়ে তোলা। রাফেযীদের ধ্যান-ধারনার প্রকাশকরতঃ কুরআন-সুন্নাহ ও জ্ঞানী আলেমসমাজের সর্বসম্মত মতের পরিপন্থী দিকগুলো চিন্হিত করে দেওয়া। (যাতে সাধারণ মানুষ সহজেই তাদের বিকৃত চিন্তা-চেতনার বিষছোবল থেকে বেঁচে থাকতে পারেন।)
ঘ. সংস্কারের মানসিকতা সম্পন্ন কতিপয় মুসলিম চিন্তাশীল নেতা ও ব্যক্তিত্বের পরিচয় তুলে ধরা। যেমন পশ্চিমে মুঈয বিন বাদিশ ও তামীম বিন মুঈয, পূর্বে নূরুদ্দীন মাহমূদ ও সালাহউদ্দীন আইয়ুবী। যাতে মুসলিম প্রজন্ম তাদের জীবনচরিত পাঠ করে সবিশেষ উপকৃত হতে পারে। যেহেতু তারা আল্লাহর জমিনে আল্লাহর দীন প্রতিষ্ঠায় নিজেদের জীবন উৎসর্গ করে গেছেন।
ঙ. ইসলামি গ্রন্থাগারগুলোকে নিরেট ইসলামি ইতিহাসের গ্রন্থাদি উপহার দিয়ে সমৃদ্ধ করা। যাতে সেগুলো পাশ্চাত্যের ইসলামবিদ্বেষী মহল কর্তৃক ইসলামি আদর্শ ও ইতিহাস বিকৃত করার ঘৃণ্য মানসিকতা থেকে রচিত রচনাসম্ভার সংগ্রহ করা থেকে বিরত থাকে।
রয়্যাল সাইজে ১৩৫ পৃষ্ঠায় প্রকাশিত বইটি মোট ৪টি পরিচ্ছেদে বিভক্ত।
বি:দ্র: ফাতেমি সাম্রাজ্যের ইতিহাস বইটি free pdf download করিতে চাহিয়া লেখকদের নিরুৎসাহিত করিবেন না
Mizan chowdhury –
বইটি প্রসংগে লেখকের ব্যাখ্যা বা প্রাক আলোচনাটি পড়ে ভালো লাগল। আমি একজন সুন্নি মুসলিম। তাই লেখক যে তার লেখাতে পবিত্র কুরআন, হাদিস এবং নবীজির প্রিয় সাহাবায়ে কেরামদের প্রাধান্য দিয়েছেন সে জন্য ধন্যবাদ।