দাজ্জাল
কিয়ামত পর্যন্ত যত ফেতনা আসবে তার মধ্যে দাজ্জাল এর ফেতনা সবচেইয়ে ভয়াবহ। শুধু শেষ নবী হযরত মুহাম্মদ সঃ ই নন এই ফেতনাকে ভয় পেতেন পূর্বের সকল নবী-রাসুল। সবাই তার উম্মতদের এ ব্যাপারে সতর্ক করে গেছেন, নিজেরাও পানাহ চেয়েছেন। আমরা যেহেতু শেষ নবীর উম্মত সে হিসেবে দাজ্জাল থেকে মুক্তির উপায় নেই। দাজ্জাল আসবে আমাদের বিভ্রান্ত করতে, ঈমান হারা করতে, আল্লাহ্র আসানে বসতে চাইতে। যাদের ঈমান দুর্বল তারা ঈমান হারাবে। একই সাথে যারা ঈমান হারা হবে তাদের কপালে তিলক/সিলমহর দেয়া হবে কাফের।
দাজ্জাল নিয়ে ভ্রান্ত মতবাদ
কয়েক বছর ধরে একটি বই ও ভিডিও দেখছেন? পশ্চিমা সংস্কৃতি, ইহুদি, খ্রিস্টান সভ্যতা দাজ্জাল? দাজ্জাল বলতে আসলে নতুন কিছু নেই বা আসবে না এমন কথা শুনেছেন? বিষয়টা সম্পূর্ণ ভুল। হজরত মুহাম্মদ সঃ যখন বেঁচে ছিলেন তখন ও ইহুদি, খ্রিস্টান সভ্যতা ছিল, যারা এটা প্রচার করছে তাদের মাথায় হয়তো সেই জ্ঞান টুকু হয়নি। তারা উঠে পড়ে লেগেছে আমাদের ঈমান হারা করতে, ভুল আকীদায় বিশ্বাস করাতে। সেদিকে কান না দিয়ে আসুন দাজ্জাল সম্পর্কে কিছু জিনিস জেনে নেই।
দাজ্জাল দেখতে কেমন
দাজ্জাল হচ্ছে লালচে বর্ণের ও স্থুলদেহ বিশিষ্ট্য, তার থাকবে উসকো-খুসকো চুল ও ডান চোখ কানা, সাড়া শরীর বড় বড় লোমে আবৃত। তাকে আল্লাহ তায়ালা যেকোন এক দ্বীপে শিকল দিয়ে আটকে রেখেছেন। শেষ জামানায় তাকে মুক্ত করা হবে। সে ৪০ দিনে পুরো বিশ্ব ভ্রমণ করবে। এমন কোন জায়গা থাকবে না সে যেখানে যাবে না। বিভিন্নভাবে মানুষকে ঈমান হারা করে তার অনুসারি বানাবে। তারপর কপালে তার মতোই তিলক পরিয়ে দিবে যাতে লেখা থাকবে কাফের। এই ৪০ দিনের প্রথম দিনটি হবে বর্তমানের এক বছরের সমান, ২য় দিনটি হবে এক মাসের সমান, ৩য় দিনটি হবে এক সপ্তহের সমান। বাকি দিনগুলো নরমাল দিনের মতোই হবে।
দাজ্জালকে কেউ কি দেখেছে?
হ্যাঁ। রাসূল (সাঃ) বললেন, লাখমান জুদাম নামক স্থান থেকে কিছু খ্রিস্টান আরব গোত্রের কিছু লোক তারা যখন জাহাজে করে যাচ্ছিল, বড় ঢেউ খেলে তাদের জাহাজ ওলটপালট হয়ে গেল, আর একটা অজানা দ্বীপে তরী ফেলার আগ পর্যন্ত তারা এক মাস ধরে দিকভ্রান্ত অবস্থায় ঘুরপাক খাচ্ছিল। সেই দ্বীপের সন্ধান পেলে তারা নৌকায় করে সেই দ্বীপ অভিমুখে যাত্রা শুরু করল, এটা ছিল রাতের বেলা, তারা সকালে সেই দ্বীপে পৌছল। সেখানে তারা দাজ্জালের বর্ণনার সাথে মিলে যায় এমন একজনকে দেখতে পায় ও তার সাথে কথাও বলে। দাজ্জাল বিভিন্ন বিষয়ে প্রশ্ন করে ও বলে দেয় সে কখন এখান থেকে মুক্তি পাবে ও কি করবে।
দাজ্জালকে হত্যা
দাজ্জালকে হত্যা করবেন হজরত ঈসা আঃ পুনরায় পৃথিবীতে এসে। হজরত ঈসা আঃ যখন পৃথিবীতে আসবেন তখন ইমাম মাহাদী ও থাকবেন পৃথিবীতে। ইমাম মাহাদীর নেতৃতে যখন নামাজের জন্য প্রস্তুতি নিবেন তখন ই আবির্ভাব হবেন হযরত ঈসা আঃ। পরে তার নেতৃতে সবাই ঈমান আনবে। দাজ্জাল, ইয়াজুজ, মাজুজ মারা যাবে। দাজ্জাল মারা যাবার পর বের হবে ইয়াজুজ, মাজুজ। তারা আকারে ছোট হবে, সামনে যা পাবে তাই খেয়ে ফেলবে। ঈসা আঃ এর দয়ার কারণে তারা মারা যাবে। এরপর এক সময় সকল ঈমানদার ব্যক্তি মারা যাবেন। হবে কিয়ামত।
রিভিউ লিখেছেন: মোঃ নাহিদ হোসেন
বি:দ্র: দাজ্জাল বইটি free pdf download করিতে চাহিয়া লেখকদের নিরুৎসাহিত করিবেন না
Muhammad Sabuz Ahmed –
শুরুর কথাঃ
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আদম (আলাইহিস সালাম) থেকে নিয়ে কিয়ামত অবধি দাজ্জাল থেকে ভয়ানত কোন সৃষ্টি নেই। (মুসলিম)
আয়িশা (রাদিয়াল্লাহু আনহা) বর্ণনা করেন, আমি শুনেছি, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নামাজে দাজ্জালের ফিতনা থেকে আল্লাহ্র নিকট আশ্রয় চাচ্ছেন। (বুখারি)
এ থেকেই বুঝা যায় দাজ্জালের ফিতনা কত ভয়াবহ! সৃষ্টির পর থেকে কিয়ামত পর্যন্ত পৃথিবীর সবচেয়ে ভয়ানক ফিতনা হল দাজ্জালের ফিতনা। দুঃখজনক হলেও সত্যি এই দাজ্জাকে নিয়ে আমাদের মাঝে আছে চরম ভ্রান্তি। অথচ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দিবালোকের মত সবকিছু স্পষ্ট করে বর্ণনা করে গেছেন তার উম্মতের কাছে এই দাজ্জাল সম্পর্কে।
এই দাজ্জাল কে হবে?
তার বৈশিষ্ট্য কি?
সে মানুষ নাকি অন্য কিছু?
কবে বের হবে?
কতদিন থাকবে পৃথিবীতে?
তার অনুসারী কারা হবে?
ইত্যাদি বিষয় খুব স্পষ্ট করে বর্ণনা করে দিয়েছেন কিন্তু আমরা পরে আছি সেই দাজ্জালকে জানতে/চিনতে ফেসবুক আর ইউটিউবে যার অধিকাংশই হল হাদীসের বিপরীত।
তাই তো কেউ কেউ মনে করে দাজ্জাল হল সভ্যতা! কেউ আবার মনে করে কোন সংগঠন! অনেকেই আবার ইলুমিনাতিকেই দাজ্জাল ভেবে বসে আছে!
বক্ষ্যমান গ্রন্থে লেখক সেই সব হাদীসের আলোকে দাজ্জালকে আমাদের সামনে উপস্থিত করেছেন যেমনটি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উম্মতের কাছে বর্ননা করেছেন।
বইটি তৈরি করতে লেখক প্রচুর পরিশ্রম দিয়েছে তা পড়লেই বুঝা যায়। ১২৬ টি রেফারেন্স একত্রিত করেছেন শুধু এই প্রকৃত দাজ্জালকে চিহ্নিত করতে।
আমরা কি প্রস্তুত আছি সেই দাজ্জালকে চিনতে?
পাঠ প্রতিক্রিয়াঃ
আলোচ্য বিষয়ের উপর নির্ভর করে বইটিকে মূলত তিনটি ভাগে ভাগ করা যায়।
১। কিয়ামতের নির্দশন
২। দাজ্জাল সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা
৩। দাজ্জাল সম্পর্কে ভ্রান্তি ধারনার খন্ডন
বইটির মূল কেন্দ্র বিন্দু যদিও দাজ্জালকে ঘিরে। লেখক সর্বপ্রথম এখানে কিয়ামতের নির্দশন নিয়ে আলোচনা করেছেন। কারন এই দাজ্জাল কিয়ামতের বড় বড় নির্দশনের একটি।
এরপর আলোচনা করেছেন খতমে নবুয়াত সম্পর্কে। কারন দাজ্জাল নবি দাবি করবে। তাই এখানে শেষ নবি নিয়ে আলোচনা করেছেন তার পরে আর কেউ নবি হবে না। এতে দাজ্জালকে চিনতে সহজ হবে।
এরপর লেখক আলোচনা করেছেন বিস্তারিতভাবে দাজ্জাল সম্পর্কে। যেই বিষয় এসেছে সেই আলোচনায়
*দাজ্জালের বৈশিষ্ট্য
*তার দাবি
*তার সাথে যা থাকবে
*পৃথিবীতে কত দিন থাকবে?
*তার অনুসারি কারা হবে?
*তার ধোঁকা
*তার কর্মক্ষেত্র
*তাকে হত্যা কে করবে কিভাবে করা হবে কোথায় করা হবে? ইত্যাদি বিষয়।
দাজ্জাল সম্পর্কে আমাদের বাংলাদেশের একজন লোক নাম বায়জিদ খান পন্নি হিজবুত তাওহিদের প্রতিষ্ঠাতা একটি বই লেখেন ও দাবি করেন যে দাজ্জাল আসলে কিছু না ইহুদি খ্রিস্টানের সভ্যতা!
বইটিকে আবরার সাহেব খুব কঠিনভাবে খন্ডন করেছেন। দেখিয়ে দিয়েছেন পন্নি সাহেবের হাদিসের নামে জালিয়াত ,এলেমের অপরিপক্কতা। যা পড়লেই দিবালোকের মত স্পষ্ট হয়ে যাবে পন্নি সাহবের ভ্রান্ত ধারনা। আর ফুটে উঠবে দাজ্জাল সম্পর্কে প্রকৃত অবস্থান।
অপূর্ণতাঃ
দাজ্জাল শব্দের অর্থ কি? কেন দাজ্জালকে মাসীহ দাজ্জাল বলা হয়? দাজ্জাল থেকে বাচার দোয়া ও সূরা কাহাফের তিলাওয়াত এই নিয়ে কিছু আলোচনা আসে নি।
লেখক ইমাম মাহদি এর সম্পর্কে তেমন কোন আলোচনাই করে নি। অথচ ইমাম মাহদির সাথে কিয়ামতের ও দাজ্জালের কানেকশন আছে। কারন তার সময়ই দাজ্জাল বের হবে।
ঈসা (আলাইহিস সালাম) আসবে উম্মত হয়ে নবি হয়ে না। যদিও তিনি একসময় নবি ছিলেন। অবশ্য লেখক আগে খতমে নবুয়াত সম্পর্কে আলোচনা করেছেন তারপরও যেখানে ঈসা (আলাইহিস সালাম) এর আলোচনা যেখানে এসেছে সেখানে একটি ছোট্ট ফুটনোট দেয়া প্রয়োজন বলে মনে করছি। এতে আমাদের মত জেনারেল শিক্ষিতদের জন্য বুঝতে আরো সুবিধা হবে।
অসংগতিঃ
পন্নি সাহেবের বইয়ের খন্ডন করতে লেখক পৃষ্ঠা ১২১ শুরুর দিকে এবং ১২৬ নং শেষের দিকে দুই জায়গায় দুই ধরনের বয়স উল্লেখ করেছেন।
সংশয়ঃ
লেখক ৮৯ নং পৃষ্ঠায় মুসলিম শরিফের বরাত দিয়ে [রোমনদের সংখ্যাধিক্যের অবস্থায় কিয়ামত সংঘটিত হবে এই পরিচ্ছেদে] একটি হাদিস এনেছেন, হাদিসটির শেষের দিকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ওইসব অশ্বারোহীর নাম এবং তাদের পিতার নাম, এমনকি ঘোড়ার রং পর্যন্ত আমার জানা নেই।
কিন্তু ইসলামিক ফাউন্ডেশন থেকে প্রকাশিত মুসলিম শরিফের ৭০১৭ নং হাদিসে আছে, “…তাদের অশ্বের রং সম্পর্কেও আমি অবগত আছি।“
বানানে সতর্কতাঃ বইটি পড়তে গিয়ে ভুল বানান তেমন দৃষ্টিগোচর হয় নি (যদিও আমি বানানে expert না)। তবে কয়েটি ছাড়া সেগুলো হল ১১২ নং পৃষ্ঠায় ৪২ নং পয়েন্টে বায়তুল মাকদিস কে লেখা হয়েছে বায়তুল মাতদিস ১৪৬ নং পৃষ্ঠায় করেছেন কে লেখা হয়েছে কোরেছেন।
পরামর্শঃ প্রচ্ছদটি দাজ্জাল বিষয়টির সাথে অনেক গরিব মনে হয়েছে। নেক্সট সংস্করনে ভেবে দেখার অনুরোধ রইল
সর্বশেষঃ যারা দাজ্জাল সম্পর্কে একেবারেই জানেন না ভ্রান্তিতে আছেন তাদের জন্য নিঃসন্দেহে একটি উত্তম পাথেয় হবে আমি মনে করি। দাজ্জাল বিষয়ে এত বিস্তারিত বই সম্ভবত এইটিই প্রথম। আল্লাহ্ তাআলা আমাদেরকে দাজ্জাল সহ সমস্ত ফিতনা থেকে বেঁচে থাকার তৌফিক দান করেন। আমীন।