আল ফিতান ওয়াল মালাহিম (১-৩ খন্ড)
আল ফিতান ওয়াল মালাহিম (১ম খণ্ড)
আমাদের বর্তমান যুগটি চলছে ‘ফিতনার যুগ’। চারদিকে ফিতনা আর ফিতনা। আমাবশ্যা রাতের মত চারদিক থেকে ফিতনা আমাদেরকে গ্রাস করে নিচ্ছে। আমাদের ব্যক্তিগত জীবন, পারিবারিক জীবন, সামাজিক জীবন, রাষ্ট্রীয় জীবনসহ সবখানে রয়েছে ফিতনার আগ্রাসন। ফিতনা আমাদের দরজায় কড়া নাড়ছে। চারদিকে শোনা যায় ফিতনার বজ্রধ্বনি। ফিতনার আর্তচিৎকার।<br> আমাদের নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চৌদ্দশত বছর পূর্বেই ফিতনা সর্ম্পকে বলে গিয়েছেন। উম্মাহকে আগত সকল ফিতনার ব্যাপারে সতর্ক করেছেন। সচেতন করেছেন। ফিতনা থেকে বাঁচতে নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অনেক তাগিদ দিয়েছেন। তাই আমাদের সকল ফিতনা থেকে বাঁচতে হবে। ফিতনাময় দিনে ফিতনা থেকে বেঁচে ঈমান নিয়ে রবের আহবানে সাড়া দিতে হবে।<br> আখেরী জামানার ফিতনাগুলো এত ভয়াবহ ও ঈমান বিধ্বংসী যে, লোকেরা দিনের শুরুতে মুসলিম থাকবে, কিন্তু দিনশেষে সে হয়ে যাবে কাফির। নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন—
‘আধাঁর রাতের মতো ফিতনাহ আসার পূর্বেই তোমরা সৎ আমলের দিকে ধাবিত হও। সে সময় সকালে একজন মুমিন হলে বিকালে কাফির হয়ে যাবে। বিকেলে মুমিন হলে সকালে কাফির হয়ে যাবে। দুনিয়ার সামগ্রীর বিনিময়ে সে তার দ্বীনকে বিক্রি করে দিবে।’ [সহিহ মুসলিম, হাদিস নং—২১৩]
তাই যুগের ফিতনা সম্পর্কে আমাদের জানা কর্তব্য। যদি কেউ ফিতনা সম্পর্কেই না জানে, তাহলে সে কীভাবে নিজেকে ফিতনা থেকে বাঁচাবে? কীভাবে সে তার পরিবার-পরিজন, সমাজ, রাষ্ট্রকে বাচাঁবে? সুতরাং ফিতনা সম্পর্কে জানুন এওবং সতর্ক হোন। ফিতনার যাবতীয় বিষয়গুলো জানতে ও ফিতনার যুগে আমাদের করণীয় জানাতে বিখ্যাত মুফাসসির ইমাম ইবনু কাসির রাহিমাহুল্লাহু রচনা করেছেন—‘আন নিহায়া ফিল ফিতান ওয়াল মালাহিম’। এ গ্রন্থটির অধিকাংশ হাদিস ও বর্ণনা বুখারি, মুসলিম এবং সিহাহে সিত্তা থেকে চয়ন করা হয়েছে। তারই ভাষান্তরিত রূপ হলো—‘আল ফিতান ওয়াল মালাহিম।’ বক্ষমাণ গ্রন্থটি প্রথম অংশের অনুবাদ।
পরকালের পথে যাত্রা – আল ফিতান ওয়াল মালাহিম (২য় খণ্ড)
যে পাঁচটি পাপের শাস্তি দুনিয়ায় অনিবার্য–
‘আবদুল্লাহ ইবনু উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের দিকে এগিয়ে এসে বলেন : হে মুহাজিরগণ! তোমরা পাঁচটি বিষয়ে পরীক্ষার সম্মুখীন হবে; তবে আমি আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি, তোমরা যেন এর সম্মুখীন না হও—
১. যখন কোনো জাতির মধ্যে প্রকাশ্যে অশ্লীলতা ছড়িয়ে পড়ে, তখন সেখানে মহামারি আকারে প্লেগরোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। তাছাড়া এমন সব ব্যাধির উদ্ভব হয়, যা পূর্বেকার লোকদের মধ্যে কখনো দেখা যায় নি।
২. যখন কোনো জাতি ওজন ও পরিমাপে কারচুপি করে, তখন তাদের ওপর নেমে আসে দুর্ভিক্ষ, কঠিন বিপদ-মুসিবত৷
৩. মানুষ যখন জাকাত আদায় না করে, তখন আসমান থেকে বৃষ্টি বর্ষণ বন্ধ করে দেওয়া হয়। যদি ভু-পৃষ্ঠে চতুষ্পদ জন্তু ও নির্বাক প্রাণী না থাকতো, তাহলে আর কখনো বৃষ্টিপাত হতো না।
৪. যখন কোনো জাতি আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের অঙ্গীকার ভঙ্গ করে, তখন আল্লাহ তাদের ওপর তাদের বিজাতীয় দুশমনকে ক্ষমতাসীন করে দেন আর সে তাদের সহায়-সম্পদ সবকিছু কেড়ে নেয়।
৫. যখন তোমাদের শাসকবর্গ আল্লাহর কিতাব মোতাবেক মীমাংসা না করে এবং আল্লাহর নাজিলকৃত বিধানকে গ্রহণ না করে, তখন আল্লাহ তাদের পরস্পরের মধ্যে যুদ্ধ বাঁধিয়ে দেন।’ সুনানু ইবনি মাজাহ, হাদিস : ৪০১৯; আল-মুজামুল আওসাত লিত-তবারনি, হাদিস : ৪৬৭১; বাজলুল মাউন, পৃষ্ঠা : ১২৪; ইমাম হাফিজ ইবনু হাজার আসকালানি রাহিমাহুল্লাহ বলেন : এর শাওয়াহিদ (বহু সমর্থক) রয়েছে৷ হাদিসের মান : হাসান হাদিস৷
জান্নাত ও জাহান্নাম – আল ফিতান ওয়াল মালাহিম (৩য় খণ্ড)
হযরত আনাস ইবনে মালেক রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন— একদা দুজন লোক মরুভূমিতে চলছিল। তাদের একজন আবেদ, আর অপরজন গোনাহগার। পথিমধ্যে গোনাহগার ব্যক্তিটি তার কাছে থাকা একটি পানির পাত্র বের করল। আবেদ লোকটির কাছে কোন পানি ছিল না, ফলে সে পিপাসার্ত হয়ে পড়ল। তখন সে গোনাহগার লোকটির উদ্দেশে বলল, হে অমুক! আমাকে পানি দাও, আমি পিপাসায় মরে যাব। গোনাহগার লোকটি বলল, দেখ, আমার কাছে একটিমাত্র পানির পাত্র আছে, আর আমরা মরুভূমিতে আছি। এখন যদি তোমাকে আমি এই পানিটুকু দিয়ে দিই তাহলে আমি মারা পড়ব।
এরপর উভয়ে আবার চলতে থাকল। কতক্ষণ পর আবেদ লোকটি খুবই পিপাসার্ত হয়ে পড়ল। তখন সে গোনাহগার লোকটির উদ্দেশে আবার বলল, হে অমুক! আমাকে পানি দাও, আমি পিপাসায় মরে যাব। গোনাহগার লোকটি বলল, দেখ, আমার কাছে একটিমাত্র পানির পাত্র আছে, আর আমরা মরুভূমিতে আছি। এখন যদি তোমাকে আমি এই পানিটুকু দিয়ে দিই তাহলে আমি মারা পড়ব। এরপর তারা উভয়ে আবার চলতে থাকল। কতক্ষণ পরে সেই আবেদ লোকটি পিপাসায় কাতর হয়ে পড়ে গেল। তখন সে গোনাহগার লোকটির উদ্দেশে পুনরায় বলল, হে অমুক! আমাকে পানি দাও, আমি পিপাসায় মারা যাচ্ছি। তখন গোনাহগার লোকটি মনে মনে বলল, খোদার কসম! যদি এই নেককার লোকটি এভাবে মারা যায় তাহলে আল্লাহর কাছে আমার আর কোন উপায় থাকবে না। এই ভেবে সে কিছু পানি তার উপর ছিটিয়ে দিল এবং তাকে কিছু পানি পান করাল। এরপর তারা আবার মরুভূমিতে পথ চলতে লাগল। চলতে চলতে এক সময় মরুভূমি শেষ হয়ে গেল।
রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেন, কেয়ামতের দিন যখন তাদের উভয়কে হিসাব নিকাশের জন্য দাঁড় করানো হবে, তখন আবেদের জন্য জান্নাতের ফায়সালা হয়ে যাবে এবং গোনাহগার লোকটির জন্য স্বীয় গোনাহের কারণে জাহান্নামের ফায়সালা হবে। রাসূল ﷺ বলেন, এমন সময় গোনাহগার লোকটি আবেদকে দেখে চিনে ফেলবে। কিন্তু আবেদ লোকটি গোনাহগারকে চিনতে পারবে না। তখন সে আবেদকে ডাক দিয়ে বলবে, হে অমুক! আমি সেই লোক যে তোমাকে মরুভূমিতে একদিন নিজের উপর অগ্রাধিকার দিয়েছিলাম। আজ আমার জাহান্নামের ফায়সালা হয়ে গেছে। অতএব তুমি তোমার রবের নিকট আমার জন্য সুপারিশ কর। তখন আবেদ লোকটি আল্লাহর দরবারে তার জন্য সুপারিশ করে বলবে, হে আল্লাহ, এই লোকটি নিজের উপর আমাকে অগ্রাধিকার দিয়েছিল। হে আল্লাহ, তাকে আজ আমার জন্য দিয়ে দিন। তখন সেই গোনাহগার লোকটিকে আবেদের সোপর্দ করে দেয়া হবে। ফলে আবেদ লোকটি তার হাত ধরে তাকে নিয়ে সোজা জান্নাতে চলে যাবে।
বি:দ্র: আল ফিতান ওয়াল মালাহিম (১-৩ খন্ড) বইটি free pdf download করিতে চাহিয়া লেখকদের নিরুৎসাহিত করিবেন না
মুহাম্মাদ আব্দুস সোবহান আকাশ –
Excellent