খুশু-খুযু
সালাতে আমাদের অনেকের মনোযোগ ঠিক থাকেনা। আমরা বুঝি না আমরা কি পড়ছি, কি বলছি। সালাতে দাঁড়ালেই যেন দুনিয়ার সমস্ত চিন্তা চেপে বসে আমাদের মনে। তাকবির বলে হাত বাঁধার পরেই মনে হয়, ‘আচ্ছা, সালাতে আসার আগে ঠিকমতো দোকানের তালা লাগিয়েছি তো? আমার ফেইসবুক একাউন্ট থেকে লগ আউট হয়েছিলাম? আমার বাচ্চারা কি যেন নিতে বলেছিলো? বাজারের লিস্টের কি কি বাদ পড়ে গেলো? কাকে যেন আমার ফোন দেওয়ার কথা? অমুক আত্মীয়ের অসুখ। কেমন আছে এখন সে?’
কথা ছিলো, সালাতে দাঁড়ালে বান্দা কেবল তার রবের দিকেই রুজু করবে। কিন্তু শয়তান তা আর হতে দেয়না। সালাতে সে বান্দার মনকে নানানদিকে ডাইভার্ট করে রাখে যাতে বান্দা সালাতের আসল মজা থেকে বঞ্চিত হয় এবং রহমানের অনুগ্রহ থেকে সটকে পড়ে।
‘সালাতে মন বসেনা’ এই প্রশ্ন, এই সমস্যা আমাদের অনেকের। শতকরা নব্বই জনের। কি করা তাহলে? সেই সমস্যার সুন্দর সমাধান নিয়ে যুগের অন্যতম ফকীহ, ইমাম ইবনুল কাইয়্যিম রাহিমাহুল্লাহু লিখেছিলেন ‘আসরার-আল-সালাহ’ বইটি। এই বইটিতে তিনি অত্যন্ত সুচারুরূপে সালাতে আমাদের সমস্যাগুলো নিয়ে কথা বলেছেন, এবং বাতলে দিয়েছেন সেগুলো থেকে পরিত্রাণের উপায়। এক অনুপম মায়াভরা স্পর্শে যেন তিনি প্রতি লাইনে লাইনে আমাদের নাসীহাহ দিয়ে যাচ্ছেন।
যারা তাদের সালাতকে সুন্দর এবং সমৃদ্ধ করতে চায়, ‘খুশু-খুজু’র সাথে সালাত আদায় করতে চায়, তাদের জন্য ইমাম ইবনুল কাইয়্যিম রাহিমাহুল্লাহুর এই বইটা খুব সহায়ক হবে, ইন শা আল্লাহ।
বি:দ্র: খুশু-খুযু বইটি free pdf download করিতে চাহিয়া লেখকদের নিরুৎসাহিত করিবেন না
Rashedul Haider –
নামাজে খুশূ-খুযূ।
প্রথমেই বলে রাখা ভালো এটি ধরলাম, পড়লাম, রেখে দিলাম এরপর আগের মত রয়ে গেলাম টাইপের বই নয়। এটি পড়ার সাথে দৈনিক একটু একটু করে চর্চা করে নামাজ পরিবর্তনের একটি বই।
আমরা সাধারণত মুখস্তভাবে নামাজ পড়ে থাকি। একটা অটোমেটিক মেশিনের মত উঠবস করি। মুখে মুখে সুরা-কিরায়াত পড়লেও অন্তরে ব্যবসার কথা, লাভ-লসের হিসেব এবং দৈনন্দিন নানাবিধ কাজ-কর্মের কথা ভেসে উঠে। সূরা-কিরায়াতের মর্মবাণী আমাদের অন্তর পর্যন্ত খুব একটা পৌঁছে না। এর অর্থগুলোও আমাদের অন্তরে দাগ কাটতে পারে না। এর প্রভাব আমাদের অন্তর-আত্মা পর্যন্ত স্পর্শ করতে পারে না। অথচ নামাজ মানে দোয়া। আল্লাহর কাছে হাজিরা। যেমনি করে আমরা ক্লাসে ইয়েস স্যার বলে নিজের উপস্থিতি জানিয়ে দিই। নামাজও ঠিক তেমনি আল্লাহর দরবারে হাজিরা। আল্লাহর সাথে কথোপকথন। অথচ আমরা রুকু করি, সিজদা করি, তাসবিহ পাঠ করি তারপর সালাম ফিরিয়ে নামাজ শেষ করি। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এমন হয় যে, ওই নামাজে আমরা কোন কোন সূরা পড়েছি সেটা পর্যন্ত তখন মনে থাকে না।
নামাজে মনোযোগ ফিরিয়ে আনার জন্য এই বইটি আপনাকে সাহায্য করবে। এই বইটিতে নামাজে যা যা পড়া হয় এমন প্রতিটা বিষয়কে সংক্ষিপ্তাকারে বুঝিয়ে বলা হয়েছে। আমরা সূরা ফাতিহা পড়ি এটির প্রতিটি আয়াত তেলোয়াতে আল্লাহ যে জবাব দেন সেটা কি আমরা জানি?
সূরা ফাতিহার অংশটুকু এই বই থেকে হুবহু তুলে ধরছি,
যখন আমরা বলি,
– আল হামদুলিল্লা-হি রাব্বিল আ-লামীন। যাবতীয় প্রশংসা আল্লাহ তাআলার-যিনি সকল সৃষ্টি জগতের পালন কর্তা।
তখন বান্দা কল্পনা করবে, আল্লাহ তার প্রশংসা শুনেছেন এবং বলছেন,
– আমার বান্দা আমার প্রশংসা করেছে।
– আররাহমা-নির রাহীম। যিনি অত্যন্ত মেহেরবান ও দয়ালু।
– তখন আল্লাহ বলেন, আমার বান্দা আমার গুণ বর্ণনা করছে।
– মা-লিকি ইয়াওমিদ্দীন। যিনি বিচার দিনের মালিক।
– তখন আল্লাহ বলেন, আমার বান্দা আমার বড়ত্বের প্রশংসা করেছে।
– ইয়্যা-কা না’বুদু ওয়া ইয়্যা-কা নাছতা’ঈন। আমরা একমাত্র আপনারই ইবাদত করি এবং শুধু আপনারই সাহায্য প্রার্থনা করি।
– তখন আল্লাহ বলেন, আমার ও আমার বান্দার মাঝে এটাই পার্থক্য।
– ইহদিনাসসিরা-তাল মুছতাকীম। সিরা-তাল্লাযী না আন’আমতা আলাইহিম। গাইরিল মাগদূ বি আলাইহিম ওয়ালাদ্দাল্লীন। আমাদের সরল সঠিক পথ প্রদর্শন করুন। তাদের পথ, যাদের প্রতি আপনি অনুগ্রহ করেছেন। তাদের পথ নয়, যাদের প্রতি আপনার গযব বর্ষিত হয়েছে, তাদের পথও নয় যারা পথভ্রষ্ট হয়েছে।
– তখন আল্লাহ বলেন,আমার বান্দা যা চেয়েছে তা পাবে।
সুবহানাল্লাহ! কত সুন্দর এই কথোপকথন!
এজন্য খুসূ-খুযূ আনার জন্য নামাজকে বুঝে পড়া আবশ্যক।
সাধারণত আমরা রাতের নামাজ অপেক্ষাকৃত ধীরস্থির ভাবে পড়ার চেষ্টা করে থাকি। তাই আগে রাতের নামাজে প্রথমে এই প্র্যাকটিস আনা উচিত। তারপর ধীরে ধীরে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ সহ অন্যান্য নামাজে।
নামাজে রুকু-সেজদা তে, রুকু থেকে উঠে, দু্ই সেজদার মাঝে বিভিন্ন দোয়া আছে যা আপনার নামাজকে আরও সুন্দর এবং একাগ্রতা আনতে সাহায্য করবে। আমি আমার পরবর্তী পোস্টে সেসব দোয়া আপনাদের দেয়ার চেষ্টা করবো (ইনশাআল্লাহ)যা আমি বিভিন্ন বই এবং ইন্টারনেট ঘেঁটে নোট করেছি।
ধন্যবাদ সকলকে। জাজাকাল্লাহু খাইরান।
রিভিউ: রাশেদুল হায়দার
বই: খুশূ-খুযূ
লেখক: ইমাম ইবনুল কাইয়্যিয় (রাহিমাহুল্লাহ)
অনুবাদক: মাসউদুর রহমান