হারিয়ে যাওয়া মুক্তো
একসময় মুসলিমরা ছিল সবার ওপরে। ভালোভাবে লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, যে সময়ে আমরা আল্লাহর কিতাব ও রাসূলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সুন্নাহ আঁকড়ে ধরেছিলাম, সে সময়ে আল্লাহ তা‘আলা আমাদের সম্মানিত করেছেন। আর যখন আমরা ইসলাম ছাড়া অন্য কিছুতে সম্মান খুঁজেছি, রাসূলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সুন্নাহর চেয়ে অন্য কিছুকে শ্রেষ্ঠ ভেবেছি, তখন পদে পদে লাঞ্ছিত হয়েছি।
রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “সামনে তোমাদের জন্য রয়েছে ধৈর্য্যের সময়। সে সময় ধৈর্য্য অবলম্বন করা জ্বলন্ত অঙ্গার ধরে রাখার মতোই কঠিন হবে। (সে সময়ে) যারা ভালো কাজ করবে, তারা পঞ্চাশজনের সমপরিমাণ পুরস্কার পাবে।’
জিজ্ঞেস করা হলো, ‘হে আল্লাহর রাসূল! তাদের পঞ্চাশজনের সমপরিমাণ?’
রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, ‘তোমাদের পঞ্চাশজনের সমপরিমাণ।’ (আবু দাউদ, হাদিস নংঃ ৪৩৪১)
কোনো কোনো বর্ণনায় এসেছে, ‘তারা হচ্ছে সেসব ব্যক্তি, যারা আমার সুন্নাহকে জীবিত করবে এবং মানুষকে তা শেখাবে’।” `
একজন মুসলিম হিসেবে তাই আমাদের সবার কাছে সুন্নাহর গুরুত্ব স্পষ্ট। রাসূলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) হাদিসের মাধ্যমে আমরা এটাও বুঝতে পেরেছি; ফিতনার সময়ে সুন্নাহকে আঁকড়ে ধরা, মানুষকে ভুলে যাওয়া সুন্নাহ স্মরণ করিয়ে দেয়া এবং হারানো সুন্নাহকে জীবিত করার মর্যাদা কতোখানি। ঈমানের দাবীদার কোনো মুসলিমই এটা থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখতে পারে না।
রাসূলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) হারানো সুন্নাহকে পুনরুজ্জীবিত করার তাড়না থেকেই ‘হারিয়ে যাওয়া মুক্তো’ বইটির জন্ম। আমি আশা করব, এ বইটি পড়ে সবাই সুন্নাহকে অন্যভাবে দেখতে শিখবেন। ভালোবাসতে শিখবেন। তারা বুঝতে শিখবেন, সুন্নাহ মানে শুধু যোহরের আগের চার রাকাত কিংবা মাগরিবের পর দুই রাকাত সালাত নয়। সুন্নাহ হতে পারে দুপুর বেলা ঝুম বৃষ্টিতে ভেজা। কোথাও পরিষ্কার মাটি দেখলে খালি পায়ে হাঁটা। সারাদিনের ক্লান্তি শেষে রাতের বেলা প্রিয়তমার সাথে হাঁটা। তার সাথে মিষ্টি মিষ্টি কথা বলা।
বি:দ্র: হারিয়ে যাওয়া মুক্তো বইটি free pdf download করিতে চাহিয়া লেখকদের নিরুৎসাহিত করিবেন না
তানজিনা সুলতানা –
বইটি পুরো পড়ার সৌভাগ্য আমার হয় নি তাই জানি না এটাকে রিভিউ ধরা যাবে কিনা! প্রায় অর্ধেকের মত পড়া হইসে বইটা আমার। কিন্তু বইটা পড়ার পর কিছু জিনিসের আত্মপ্রকাশ করছি এইখানে।
প্রথমত: আমি যেদিন বইটা কিনি সেদিন এর সাথে আমি আরোকিছু বই একসঙ্গে কিনি। তো সেদিন রাতেই আমি সব বইয়ের প্রথমে কি লিখা আছে মোটামুটি পড়লাম। সেখানে শিহাব আহমেদ তুহিন ভাইয়া বলেছেন- বইটা পড়ে যদি কারো উপকার হয় সে যেন উনার জন্য দো’য়া করে। আলহামদুলিল্লাহ, সেদিন তাহাজ্জুদ এর নামাজেই উনার কথা মনে পড়ে গেল।
বই টার যতটা আর্টিক্যাল আমি পড়েছি সব গুলোর কথা আমার মনে নেই। আর বইটি বর্তমানে আমার কাছেও নেই। কিন্তু বইটা আমাকে যা শিখিয়েছে তাই এখানে বলছি।
ঋণ:
আমরা অনেককেই ঋণ দিয়ে থাকি। সেটা ফেরত দেওয়ার হয়ত নির্দিষ্ট সময়ও দেয়া থাকে। কিন্তু নির্দিষ্ট সময়ে যদি ফেরত না দেওয়া যায় সে ঋণ তাহলে ঋণদাতা কি করবে?
ভালো মানুষ হলে হয়ত আরো কিছু সময় দিবে আর খারাপ মানুষ হলে হয়ত থ্রেড ট্রেড দিয়ে অরো কিছু সময় দিবে। কিন্তু এই ঋণ দেওয়ার মাধ্যমে যে আপনি কত বোনাস পাচ্ছেন সেটা কি আপনি জানেন? আপনার আমলে কত নেকী গিয়ে জমা হচ্ছে জানেন আপনি? দেখুন তাহলে কিভাবে আপনার আমলে বোনাস নেকী যোগ হচ্ছে
মনে করুন আপনি কাউকে ৫ হাজার টাকা ঋণ দিলেন এখন এই ৫ হাজার টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য আপনি ঋণ গ্রহীতা কে সময় দিলেন ১৫ দিন। এই ১৫ দিনের প্রতি দিন আপনার আমল নামায় ৫ হাজার টাকার সাদাকাহ্ দেওয়ার সওয়াব হিসেবে জমা হয়েছে। মানে আপনি এই ১৫ দিনে প্রতিদিন ৫ হাজার করে সাদাকাহ দিলে কত টা সাদাকাহ হলো? ১৫*৫ = ৭৫। মানে আপনি ১৫ দিনে ৭৫ হাজার টাকা সাদাকাহ দেওয়ার সওয়াব পেয়ে গেলেন। চিন্তা করেছেন আপনি কত টাকা সাদাকাহর সওয়াব পেলেন!
আবার ধরুন ঋণগ্রহীতা আপনাকে ১৫ দিন পর সে টাকা ফেরত দিতে পারল না তাহলে কি হবে?
হুম………
মনে করুন আপনি তাকে আরো ১ সপ্তাহ সময় দিলেন।
তাহলে আপনার লাভ হলো কি? সেটাই তো আপনার লাভ টা কি?
লাভ হলো এটাই যে আপনি আরো ১ সপ্তাহ সাদাকাহ দেওয়ার সওয়াব পেলেন। তার মানে কত টাকা সাদাকাহ হলো? ৭*৫ = ৩৫ হাজার, আর আগের ৭৫ +৩৫= ১১০ (এক লক্ষ দশ হাজার টাকা)।
এ্যামেজিং না?
কত্ত টাকা সাদাকাহ হিসেবে আপনার আমলনামায় যোগ হলো দেখলেন তো? অথচ আমাদের অনেকের পক্ষেই কি এত টাকা সাদাকাহ দেওয়ার সৌভাগ্য হয়?
তাহলে এখন থেকে কি করতে হবে নিজেই বুঝে নিয়েন।
আমাদের দেহে কয়টা গ্রন্থি? ৩৬০ টা।
এখন আমাদের এই গ্রন্থি গুলোর যে সাদাকাহ দিতে হয় সেটা কি আমরা জানি? অনেকেই হয়ত জানি আবার অনেকেই জানি না। এখন আসল কথায় আসি-› আমাদের পক্ষে কি প্রতিদিন এই ৩৬০ টা গ্রন্থির সাদাকাহ আলাদা আলাদা করে দেওয়া সম্ভব?
তাহলে এখন আমরা কি করব?
হুম এটারো একটা এ্যামাজিং সলিউশুন আছে। কি সেটা? সেটা হলো- প্রতিদিন যদি আমরা ৪ রাকাতের ১ টা নামাজ পড়তে পারি তাহলে আমাদের আর প্রতিদিন আলাদা আলাদা করে ৩৬০ টা গ্রন্থির সাদাকাহ দিতে হবে না। অনেক ইজি না? আর নামাজ টার নাম হলো দুহার নামাজ। নামাজের সময় টা হলো ফজরের নামাজের ১৫-২০ মিনিট পর থেকে জোহরের নামাজের ১০ মিনিট আগ পর্যন্ত।
এছাড়াও আরো বেশ কিছু হারিয়ে যাওয়া সুন্নতের কথা বইটিতে উল্লেখ করা হয়েছে। যেমন: বৃষ্টি পড়া অবস্থায় নিজের দেহে বৃষ্টির পানি স্পর্শ করানো।
রাতে নিজের ওয়াইফকে নিয়ে একটু বাহিরে হাঁটাহাটি করা, ইত্যাদি ইত্যাদি।
[নিজের অনুভূতি প্রকাশ]
আমি মোটামুটি দ্বীন পালন করার পর থেকেই চাইতাম নামাজে আল্লাহ্ কে ভালোবেসে যেন আমি আঝোরে কাঁদতে পারি। কিন্তু কেন যেন নামাজে অনেক চেষ্টা করেও বেশি কাঁদতে পারতাম না। অনেক ভয় হতো আমার, ভাবতাম ঈমান দুর্বল। হয়ত সেটাই। কিন্তু….. যখন আমি বইটা থেকে দুহার নামাজের কথা জানলাম ঘড়ির টাইমের দিকে তাকালাম, দেখলাম জোহরের সময় হতে এখনো অনেক দেরী। চট করে অযু করে আসলাম। দুহার নামাজ পড়ার উদ্দ্যেশে জায়নামাজে দাঁড়ালাম, জানি না হঠাৎ করেই এত কান্না করতে থাকলাম যে নিজেই বুঝতে পারলাম না কেন এত কান্না আসছে আমার! সিজদায় বার বার মনে হতে থাকলো কত ভাবে গুনাহ করেই যাচ্ছি,করেই যাচ্ছি। কত জিনিশ অজানা রয়ে গেল। কত অজানা হক পালন করাই হচ্ছে না। কিভাবে এসব রিকভার করব!
সেদিন আমি বুঝতে পারলাম এইভাবে আমি আর কোনো দিন কোনো নামাজে এত কান্না করি নাই।
সেদিন দুহার নামাজ পড়ে এক অন্য রকম শান্তি অনুভূত হইসে।
আল্লাহ্ লেখককে উত্তম প্রতিদান দিক।
আমীন।
বি.দ্র. যে বিষয় গুলোর কথা বললাম সেগুলো নিজেরা পড়ে নিলে আরো ভালো ভাবে ক্লিয়ার করে নিতে পারবেন আপনারা।
Kamrul Hasan –
“বল যদি তোমরা আল্লাহকে ভালোবাসো, তাহলে আমার(রাসুল সাল্লালাহু আলাইহী ওয়াসাল্লাম) অনুসরণ করো। আল্লাহ তোমাদেরকে ভালোবাসবেন এবং তোমাদের পাপসমূহ ক্ষমা করে দেবেন। আর আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল পরম দয়ালু।
[সূরা -আলে ইমরান-৩১]
আমদেরকে আল্লাহর নৈকট্য ও ভালোবাসা পেতে হলে রাসুল সাল্লালাহু আলাইহী ওয়া সাল্লামের সুন্নাহর অনুসরণের কোন বিকল্প নেই।
সুন্নাহই একজন মানুষের জীবন বদলে দিতে পারে, আমাদের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে সুন্নাহর গুরুত্ব অপরিসীম।
হারিয়ে যাওয়া মুক্তো এমন একটি বই যা আমাদের সুন্নাহ পালনে সুন্নাহর প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসা তৈরিতে সহায়ক ভূমিকা রাখবে।
উক্ত বইয়ে লেখক অত্যন্ত সুন্দর সাবলীল ভাষায় মোট ৪০টি অধ্যায়ে হারিয়ে যাওয়া কিছু সুন্নাহর বর্ণনা করেছেন।
যেমন দুটি সুন্নাহ-
★
বৃষ্টি এলে রাসুল সাল্লালাহু আলাইহী ওয়া সাল্লাম কি করতেন? তিনি মোটেও পালিয়ে যেতেন না ; বরং প্রচন্ড খুশি হতেন। খুব সাবধানতার সাথে তিনি তার পবিত্র দেহের কিছু অংশ উন্মুক্ত করে বৃষ্টির পরশ বুলাতেন। আমরা ও বৃষ্টিতে ভিজি এটা যদি আমরা রাসুল সাল্লালাহু আলাইহী ওয়াসাল্লাম এর সুন্নাহ মনে করে করি তা ইবাদাত হিসেবে পরিগণিত হবে।
★
খালি পায়ে হাটাঁ।
একজন সাহাবী বলেছেন রাসুল সাল্লালাহু আলাইহী ওয়া সাল্লাম আমাদেরকে খালি পায়ে হাটার নির্দেশ দিতেন। খালি পায়ে হাটঁলে নিজের ক্ষুদ্রতা উপলব্দি হয়। নিজের অসহায়ত্ব বুঝা যায়।
সুন্নাহর অনুসরণে আমাদের দৈনন্দিন প্রতিটি কাজই হতে পারে ইবাদাত যদি আমাদের নিয়ত ঠিক থাকে এবং আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য তা করি।
এ বইটি পড়ে সবাই সুন্নাহকে অন্যভাবে দেখতে শিখবেন। ভালোবাসতে শিখবেন। তারা বুঝতে শিখবেন, সুন্নাহ মানে শুধু যোহরের আগের চার রাকাত কিংবা মাগরিবের পর দুই রাকাত সালাত নয়। সুন্নাহ হতে পারে দুপুরবেলা ঝুম বৃষ্টিতে ভেজা। সারাদিনের ক্লান্তি শেষে রাতের বেলা প্রিয়তমার সাথে হাটাঁ। তার সাথে মিষ্টি মিষ্টি কথা বলা।