মুসলিম উম্মাহর পতনে বিশ্বের কী ক্ষতি হলো?
[মুসলিম উম্মাহর পতনে বিশ্বের কী ক্ষতি হলো? বইটির বিস্তুারিত বিবরন শিঘ্রই হালনাগাদ করা হবে ]
মুসলিম উম্মাহর পতনে বিশ্বের কী ক্ষতি হলো?. , দারুল কলম এর ইসলামি বই টি পেতে ইসলামী বইঘর.কম এ অনলাইন অর্ডার করুন এখনই।
মুসলিম উম্মাহর পতনে বিশ্বের কী ক্ষতি হলো? বইটি অর্ডার যেভাবে করবেন
১। আপনি ফোন অথবা অনলাইন এর মাধ্যমে অর্ডার করার পর ইসলামিক বইঘর ডট কম আপনার সাথে যোগাযোগ করবে এবং আপনার বিলি ঠিকানা নিশ্চিত করবে ।
২। ইসলামিক বইঘর এখন ঢাকা ও এর আশেপাশে ক্যাশ অন ডেলিভারী ও কুরিয়ার সার্ভিস এর মাধ্যমে বই পাঠাচ্ছে । এবং ঢাকার বাইরে কুরিয়ার সার্ভিস এর মাধ্যমে বই পাঠাচ্ছে ।
৩। বইয়ের মুল্য bKash, ডাচ বাংলা মোবাইল বা ক্যাশ অন ডেলিভারী এর মাধ্যমে প্রদান করা যাবে । বাংলাদেশের যে কোনো প্রান্তে ৪০ টাকায় বই পৌছে দেয়া হবে ।
যে কোন ইসলামী বই পেতে ইসলামিক বইঘর ডট কম এর সাথেই থাকুন
বি:দ্র: মুসলিম উম্মাহর পতনে বিশ্বের কী ক্ষতি হলো? বইটি free pdf download করিতে চাহিয়া লেখকদের নিরুৎসাহিত করিবেন না
Anas Hamza –
মুসলিম উম্মাহর পতনে বিশ্বের কী ক্ষতি হলো?
লেখক: সাইয়েদ আবুল হাসান আলী নাদাবী রহ.
চিন্তাকে সমৃদ্ধ করে কিছু বই। শেষ অক্ষরটি পড়ে উঠে মনে হয়, সব বদলে গেছে, বইটি শুরু করার আগের ও শেষ করার পরের মানুষটি আমি সম্পূর্ণ আলাদা। এটিও তেমনই একটি বই।
মুসলিম উম্মাহর পতনে বিশ্বের কী ক্ষতি হলো? প্রশ্নটি কি যৌক্তিক ও সমসাময়িক? মুসলিম উম্মাহ কি এমন কোনো জাতি, যাদের পতন আসলে বিশ্বমানবতারই অধঃপতন?
ইসলাম কী?
ইসলাম হলো শ্রেষ্ঠত্ববোধের বিশ্বাস; আল্লাহ তাআলার পাঠানো সর্বশেষ ও চূড়ান্ত দ্বীন বা জীবনবিধান। মানবরচিত সমস্ত ধর্ম, দর্শন ও মতবাদের ওপর বিজয়ী থাকার জন্য আল্লাহ তাআলা তার দ্বীনকে পূর্ণাঙ্গ করেছেন, নিখুঁত করেছেন। ইসলামের কোনো বিকল্প হয় না। বরং জীবনের যতটুকু পরিসরে ইসলামের বিকল্প খোঁজা হয়, সেখানেই শুরু হয় জুলুম ও ফাসাদ। আজকের সমগ্র বিশ্বের জাহেলিয়াতমুখিতার কারণও এই যে, বিশ্বের শাসনভার ইসলামের হাতে নেই, পৃথিবীতে যত ফাসাদ, যত জুলুম ও অত্যাচার ঘটছে, তারও একমাত্র কারণ এই যে, কর্তৃত্ব ইসলামের হাতে নেই। বইটির ভেতরে পাতায় পাতায় লেখক এই সত্যকে আরো স্পষ্ট করে দেখিয়েছেন।
বইটির বক্তব্যের মূল কাঠামো বুঝতে আমরা বইটির ‘বিষয়-বিন্যাসে’ চোখ বুলিয়ে নেব।
প্রথম অধ্যায়টির নাম ‘জাহেলিয়াতের যুগ’। দুটি পরিচ্ছেদ এতে: ‘মানবতার মুমূর্ষদশা’ ও ‘জাহেলি যুগে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থা’। লেখক প্রথমে এঁকেছেন ইসলাম-পূর্ব জাহেলিয়াতের যুগের সংক্ষিপ্ত কিন্তু স্বচ্ছ ও পূর্ণাঙ্গ চিত্র; এঁকেছেন পূর্ব থেকে পশ্চিম ও উত্তর থেকে দক্ষিণ, চীন আরব ও হিন্দুস্তান থেকে শুরু করে রোম ও পারস্য পর্যন্ত বিস্তৃত তখনকার পৃথিবীর চিত্র। দেখিয়েছেন কোনদিকে ছিল তখনকার সমাজ ও সভ্যতার অভিমুখ ও গতিধারা। মোটকথা এ অধ্যায়ে তিনি চেয়েছেন ইসলামের আলো চেনার আগে ইসলাম-পূর্ব জাহেলিয়াতের অন্ধকার চিনিয়ে দিতে।
দ্বিতীয় অধ্যায়টির নাম ‘জাহেলিয়াত থেকে ইসলামের দিকে’। চারটি পরিচ্ছেদ এতে: ‘সংস্কার ও সংশোধনের নববী পদ্ধতি’ ও ‘জাহেলিয়াতের অন্ধকার থেকে ইসলামের আলোতে’ ও ‘নববী তারবিয়াতে আদর্শ ইসলামী সমাজ’ ও ‘জাহেলিয়াতের কাঁচামাল থেকে মানবতার শ্রেষ্ঠ সম্পদ’। এখানে লেখক দেখিয়েছেন কীভাবে বিশ্ব বেরিয়ে এলো জাহেলিয়াত থেকে ইসলামের দিকে, কীভাবে নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পূর্ণ নতুন এক ধারায়, বিস্ময়কর দ্রুতসময়ে মানবতার সংস্কার করলেন, আদর্শ এক সমাজ প্রতিষ্ঠা করলেন।
সংস্কার ও সংশোধনের চেষ্টা যুগে যুগে অনেক মনীষী করেছেন, সফল যতটা হয়েছেন ব্যর্থ হয়েছেন আরো বেশি, কারণ তাদের সংস্কার ছিল খণ্ডিত সংস্কার। লেখক দেখিয়েছেন যে তারা ব্যর্থ হওয়ারই ছিল। কী এমন বার্তা ছিল তাদের কাছে, যা ওহির সমতুল্য, যে তারা ব্যর্থ হবে না? তাদের সংস্কার খণ্ডিত সংস্কার হবে না?
তৃতীয় অধ্যায়টির নাম ‘ইসলামের সোনালী যুগ’। তিনটি পরিচ্ছেদ এতে: ‘মুসলিম উম্মাহর নেতৃত্বের যুগ’ ও ‘মুসলিম জীবনে পতনের সূচনা’ ও ‘উছমানী খেলাফতের যুগ’। অধ্যায়টিতে লেখক দেখিয়েছেন খোলাফায়ে রাশেদার পর ধীরে ধীরে মুসলিম শাসকরা, যাদের হাতে ছিল মানবতার চিকিৎসা-ভার, নিজেরাই কীভাবে ব্যধিগ্রস্থ হয়ে পড়ল, কীভাবে তাদের ভেতরেও ঢুকে গেল জাহেলিয়াতের ভাবধারা, এরপর খিলাফাতের দায়িত্বভার তুর্কিরা কাঁধে তুলে নিল এবং কীভাবে একসময় তারাও স্থবির হয়ে পড়ল, বিশ্বের শাসনভার চলে গেল ইসলামের হাত থেকে নব্য জাহেলিয়াতের হাতে, মুসলিমদের হাত থেকে বস্তুবাদী ইউরোপের হাতে।
চতুর্থ অধ্যায়টির নাম ‘ইউরোপীয় যুগ’। চারটি পরিচ্ছেদ এতে: ‘জড়বাদী ও বস্তুবাদী ইউরোপ’ ও ‘ইউরোপে স্বদেশবাদ ও জাতীয়তাবাদ’ ও ‘আত্মহত্যার পথে ইউরোপ’ ও ‘ইউরোপীয় সাম্রাজ্যবাদের যুগে মানবিকতার আত্মিক বিপর্যয়’। অধ্যায়টিতে লেখক প্রথমে পাশ্চাত্য সভ্যতার স্বভাব ও প্রকৃতি বিশ্লেষণ করে দেখিয়েছেন যে আধুনিক ইউরোপ প্রাচীন গ্রীক ও রোমান সভ্যতারই নয়া সংস্করণ, এবং গ্রীক ও রোমানদের মতো এই সভ্যতারও মূলকথা হলো: বস্তুবাদ ও ভোগবাদ। এই সভ্যতার গোড়াতেই রয়েছে পচন ও দুর্গন্ধ। অতএব এর জঠর থেকে বেরিয়ে আসা কোনোকিছুই এর প্রভাব থেকে মুক্ত হতে পারে না। যা খবিছ তা খবিছ ছাড়া আর কী দেবে? এই অধ্যায়টিতে মূলত পাশ্চাত্য সভ্যতাকে খুলে খুলে দেখানো হয়েছে যে, বিরাটকায় এই সভ্যতার ভেতরটা কত ফাঁপা, কত অন্তঃসারশূন্য, এবং কত ঠুনকো ও ভঙ্গুর ভিতের ওপর এর প্রায়-ধ্বসে-পড়া প্রাসাদ দাঁড়িয়ে। দেখিয়েছেন যে এই সভ্যতার আত্মা কতটা ধ্বংসকামী, নীতি ও শক্তির ক্ষেত্রে কতটা ভারসাম্যহীন, অপবিজ্ঞান চর্চা করে, বিপুল শক্তির মারণাস্ত্র আবিষ্কার করে এরা এমনকি গর্বও করে! গুরুত্বপূর্ণ এই অধ্যায়ে লেখক নব্য জাহেলিয়াতের মুখোশ খুলে দেখান।
পঞ্চম অধ্যায়টির নাম ‘বিশ্বনেতৃত্বের আসনে ইসলামের প্রত্যাবর্তন’। দুটি পরিচ্ছেদ এতে: ‘মুসলিমবিশ্বের নব উত্থান’ ও ‘আরবজাতির নেতৃত্ব’। এই অধ্যায়ে লেখক আমাদের বলেছেন কীভাবে মুসলিমবিশ্বের নব উত্থান ঘটতে পারে।
প্রথমত তিনি বলেছেন সেই পয়গাম ধারণের কথা যা নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা আমাদের জানিয়েছেন। ঈমানের শক্তি ছাড়া বস্তুগত শক্তি-সামর্থ্য কোনো কাজে আসতে পারে না। মুসলিমবিশ্বকে অবশ্যই জোরদারভাবে এই আত্মিক প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে।
তিনি বলেছেন জীবনের সর্বক্ষেত্রে পাশ্চাত্য-নির্ভরতা পরিহার করার কথা। তার ভাষায় (তরজমা): ‘ইসলামী বিশ্ব যদি নতুন করে বিশ্বনেতৃত্বের আসন ফিরে পেতে চায়, তাহলে তার অবশ্য-কর্তব্য হবে, জ্ঞান-বিজ্ঞান, শিল্প, বাণিজ্য ও যুদ্ধবিদ্যায় পূর্ণ প্রস্তুতি গ্রহণ করা এবং জীবনের যাবতীয় উপায়-উপকরণ ও প্রয়োজনের ক্ষেত্রে পাশ্চাত্য-নির্ভরতা পরিহার করা’। বলেছেন প্রতিটি ক্ষেত্রে মোকাবেলার আগে অন্তত স্বনির্ভর হওয়ার কথা। (শুধু সমরযোগ্যতা, বা শুধু বিজ্ঞানযাত্রা, বা শুধু শিল্পবিপ্লব করে বিজয়ী হওয়া যায় না। এগুলো একে অপরের পরিপূরক। অবশ্য সমরপ্রস্তুতি ও অর্থনৈতিক স্বনির্ভরতা অগ্রাধিকার পাবে, এটা আমার ব্যক্তিগত মত।)
এরপর তিনি আরবজাতিকে সম্বোধন করেছেন। তার ভাষায় (তরজমা): ‘… গৌরবময় ইতিহাস ও গুরুত্বপূর্ণ ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে অবশ্যই আরবজাহান এখনো বিশ্ব-নেতৃত্বের দায়িত্বভার গ্রহণ করে সমগ্র সভ্য পৃথিবীকে প্রভাবিত করার পূর্ণ যৌগ্যতা রাখে’। সবশেষে তিনি শিক্ষা-দীক্ষা ও রাষ্ট্রের কর্ণধারদের কাছে আরবযুবশক্তিকে সৈনিকতার ওপরে গড়ে তোলার আহ্ববান জানিয়ে, এবং তাদের শ্রেণিবৈষম্য, অপচয় ও বিলাসবহুলতা পরিত্যাগ করার আহ্ববান জানিয়ে রচনার ইতি টেনেছেন।
এই হলো বইটির বক্তব্যের মূল কাঠামো – আমি সংক্ষিপ্তভাবে তুলে আনার চেষ্টা করলাম। তবে বিষয়বস্তুর জটিলতার কারণে প্রতিটি অধ্যায় বিস্তারিত আলোচনার দাবি রাখে।
বইটি পড়া সবার জন্য আবশ্যক মনে করি এই কারণে যে, দুর্ভাগ্যবশত মুসলিমদের বড়ো একটা অংশ আজ নিজের ইসলাম নিয়ে হীনম্মন্য। তারা জানে না কী তাদের পরিচয়, অতএব বুঝতেও পারে না কী তাদের মর্যাদা, দায়িত্ব ও কর্তব্য। এই বই তাদের মধ্যে শ্রেষ্ঠত্বের বোধ নতুনভাবে জাগ্রত করবে যে, মুসলিম হিসেবে সমগ্র বিশ্বমানবতার দায়িত্বভার তাদের কাঁধে অর্পিত হয়েছে, তারা জাহেলিয়াতের ইশারার পুতুল নয়, কিংবা নয় তাদের নাট্যমঞ্চের অভিনেতা মাত্র। ইসলাম যে কারো অধীন হতে পারে না, কারণ অধীনতা ও অনুসরণ নয়, স্বকীয়তা ও সৃজনশীলতাই হলো ইসলামের প্রকৃতি, এই বই পাঠে তারা এ সত্যকে নতুনভাবে উপলব্ধি করতে পারবে।