তুমি সেই রানী
নারী, এবং রাণী! কতইনা পার্থক্য শব্দ দুইটির মধ্যে!
সব নারীই কি রাণী?না! তাহলে কারা সেই রাণী?ঈমান যাদের অলংকার, আখলাক যাদের ভূষণ, যাদের আলোতে পরবর্তী প্রজন্ম আলোকিত, যাদের সুবাসে আমাদের অতীত ইতিহাস সুবাসিত। তাদেরকে নিয়েই সাজানো হয়েছে এই নারীগ্রন্থ- ” তুমি সেই রাণী”।
“তুমি সেই রাণী” গ্রন্থের গল্পের ঝুলিটি পরিপূর্ণ হয়েছে ছোট ছোট গল্প দিয়ে, যেগুলোর মূল চরিত্র রাণীরা।না!কোন সিংহাসনের রাণী না! ভারী ভারী অলংকারে সজ্জিত রাজমুকুট পরিহিত রাণী না! পরিপূর্ণ ঈমান ও উন্নত চরিত্রের রাণী।বইটির আগা – গোড়াই সুখপাঠ্য।কয়েকটা লাইন পড়লে শেষ না করে উঠাই যায় না!
যে সব রাণীদের কথা- কাহিনী এখানে বলা হয়েছে- তারা কে কে? তারা তো অনেক! বইটি শুরু হয়েছে এক রুশ কন্যার আধার থেকে আলোতে ফেরার বিস্ময়কর ও মুগ্ধকর এক অসাধারন কাহিনী দিয়ে।
রুশ কন্যা বানিজ্যসফরে বেড়িয়েছিলো ভ্রমনের আনন্দ নিয়ে।কিন্তু কি ঘটলো তার ভাগ্যে? নিজের সতীত্ব রক্ষার জন্য এক কাপড়ে রাস্তায় নেমে আসতে হল।এরপর নিয়তি কোথায় নিয়ে ফেললো তাকে? আশ্রিতা হয়ে উঠতে হল এক মুসলিম পরিবারে।তারপর? তারপরের ঘটনা অভাবনীয়। কিভাবে ইসলাম কবুল করে ও ধন্য হল, কিভাবে ঘরের ছেলেটির সাথেই তার বিয়ে হল, যে রুশ তরুণীর হওয়ার কথা ছিল দেহপসারিনী,সে হয়ে গেল ” ইসলাম প্রচারিণী”!!
তারপরের ঘটনা আরো অকল্পনীয়।নতুন পাসপোর্ট করানোর জন্য মস্কোতে গিয়ে শত লান্চনা সত্ত্বেও হিজাব খুললো না, বারবার ব্যর্থ হয়েও না।সারারাত এবাদতে এবাদতে এবং দুয়ায় দুয়ায় কাটিয়ে দিল, যতক্ষন না আল্লাহ নিজ কুদরতে তাদের মুক্তির পথ বের করেই দিলেন।
এরপরের ঘটনা আরো করুণ।মেয়েটি তার স্বামীকে নিয়ে নিজের বাড়িতে দেখা করতে গেল।আবেগে! উৎসাহে! কিন্তু স্নেহের বাগিচায় নিষ্ঠুরতার ফুল ফুটলো।সেই নিষ্ঠুরতার কোন উদাহরণ দেয়া আমার পক্ষে সম্ভব নয়।পাঠক নিজেই বইটি পড়ে জেনে নেবেন কেমন ছিল সেই নিষ্ঠুরতা!
কি এমন সে পেয়েছিলো ইসলামের মধ্যে যে,এতো নির্যাতনের মধ্যে পড়েও ইসলাম ত্যাগ করলো না?সুন্দর শব্দে,চমৎকার অলংকারে ও উপমায় লেখক তুলে ধরেছেন সেই কাহিনী।
এই বইয়ে লেখক তুলে ধরেছেন আরেকজন রাণীর গল্প, যিনি সত্যি সত্যি রাণী ছিলেন আপন সিংহাসনে।হ্যা,রাজকীয় উপায় উপকরণে তিনি ছিলেন সজ্জিত।তার ছিলো সাজানো পরিবার।
কে তিনি? তিনি বিবি আসিয়া।ইসলামের চার শ্রেষ্ঠ নারীর মধে একজন।
তিনি শুধু প্রাসাদ ও মাল দৌলতের রাণী ছিলেন না, তিনি ছিলেন ঈমানের মহা দৌলতের রাণীও।ফেরাউনের সাথে এক ছাদের নিচে বাস করেও তিনি কখনোই ফেরাউনকে রব মানেননি।যে রুমে ফিরাউন বলতো ” আনা রব্বাকুম আ’লা”, পাশের রুমেই তিনি বলতেন, “সুবহানা রব্বিয়াল আ’লা”।
শুরু হলো অমানবিক নিষ্ঠুরতায় এক নারীর উপর এক জালিম বাদশাহর লোমহর্ষক অত্যাচারের গল্প।ক্ষত – বিক্ষত হতে লাগলো নারীদেহ।ঝরতে লাগল টপটপ তাজা রক্ত।খসে খসে পড়তে লাগল হাড্ডি থেকে দলাদলা গোশত।
তারপর? রাণী চলে গেলেন।শাহাদাতের লাল সমুদ্র পাড়ি দিয়ে! হাসতে হাসতে?
ফেরাউন কন্যার সেই কেশবিন্যাসকারিণীর কথা মনে আছে? যে নারী একে একে পাঁচ সন্তানকে বিসর্জন দিয়ে শেষে নিজেও ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন ফুটন্ত তেলের কড়াইয়ে? তবু ঈমান হারাননি? মিরাজ রজনীতে নবীজি (সঃ) পেয়েছিলেন তাদের সুঘ্রাণ? কতটা সম্মানিত করেছিলেন আল্লাহ তাদেরকে?
এরকম আরও অনেক গল্পে লেখক সাজিয়েছেন এই বইটি।এতে এসেছে মা হাজেরার কথা,নবীজির প্রিয়তমা খাদিজা(রাঃ) এর কথা,ইসলামের প্রথম শহীদ সুমাইয়া(রাঃ) এর কথা,উম্মে সুলাইমের কথা,সাফিয়্যা(রাঃ) এর কথা,আর এক গণিকার কথা- যে একটি পিপাসার্ত কুকুরকে পানি পান করিয়ে জান্নাত পেয়েছে।
খুব মায়া দিয়ে,মমতা দিয়ে, আদর দিয়ে,দরদ দিয়ে অনুবাদক অনুবাদ করেছেন বইটি।
এ বইয়ে আছে- ছোট থেকে কিভাবে বড় হতে হয়,
অন্ধকার থেকে কিভাবে আলোতে আসতে হয়,
নারী থেকে কিভাবে রাণী হতে হয়!
বইটি প্রকাশ করেছে মাকতাবাতুল আখতার। কভারটি সাদামাটা এবং কাগজের মান সাধারণ হলেও বইটি অনন্য।
আল্লাহ তা’য়ালা লেখক ও অনুবাদকের সাথে এই রিভিউর লেখিকাকেও দুনিয়াতে হিদায়াত এবং আখিরাতে মাগফিরাত ও নাজাত দান করুন।
তুমি সেই রানী
[রিভিউ লেখক : Marium Rakib ]যে কোন ইসলামী বই পেতে ইসলামিক বইঘর.কম এর সাথেই থাকুন
বি:দ্র: তুমি সেই রানী বইটি free pdf download করিতে চাহিয়া লেখকদের নিরুৎসাহিত করিবেন না
Reviews
There are no reviews yet.