তোমাকে ভালোবাসি হে নবী
[ তোমাকে ভালোবাসি হে নবী বইটির বিস্তুারিত বিবরন শিঘ্রই হালনাগাদ করা হবে ]তোমাকে ভালোবাসি হে নবী , দারুল কলম এর ইসলামি বই টি পেতে ইসলামী বইঘর.কম এ অনলাইন অর্ডার করুন এখনই।
১। তোমাকে ভালোবাসি হে নবী আপনি ফোন অথবা অনলাইন এর মাধ্যমে অর্ডার করার পর ইসলামিক বইঘর ডট কম আপনার সাথে যোগাযোগ করবে এবং আপনার বিলি ঠিকানা নিশ্চিত করবে ।
২। ইসলামিক বইঘর এখন ঢাকা ও এর আশেপাশে ক্যাশ অন ডেলিভারী ও কুরিয়ার সার্ভিস এর মাধ্যমে বই পাঠাচ্ছে । এবং ঢাকার বাইরে কুরিয়ার সার্ভিস এর মাধ্যমে বই পাঠাচ্ছে ।
যে কোন ইসলামী বই পেতে ইসলামিক বইঘর ডট কম এর সাথেই থাকুন
বি:দ্র: তোমাকে ভালবাসি হে নবী বইটি free pdf download করিতে চাহিয়া লেখকদের নিরুৎসাহিত করিবেন না
সালেহ খান বাবলু –
পৃথিবীর মানুষগুলো
তখন `মানুষ` ছিল না! মানুষ থাকলেও মনুষ্যত্ব ছিল না! মানবতার শ্লোগান তখনও ছিল, কিন্তু মানবিকতা ছিল না!
মরুর ঊষাতে স্নিগ্ধতা ছিল না। মরুভূমির ঊষারে গুল্ম-গালিচা ছিল না। আরবের ধুলো-বালি যেন উদ্বাস্তু। চারদিক তমসাচ্ছন্ন। গূঢ় তমসায় পৃথিবী ছেয়ে গেছে। কোথাও আলো নেই। দীপ্তির কোন চিহ্ন নেই। কোথাও নূর নেই। দ্যুতির কোন প্রতীক নেই। কিন্তু পৃথিবীর মানুষগুলোকে `মানুষ` বানাতে, প্রকৃতিকে প্রকৃত করতে ধূসর ধরিত্রীতে ঈষত্ আলো প্রয়োজন। চাই কিঞ্চিত নূরের সংযোজন। প্রায় সোয়াশত যুগ পূর্বে, ঠিক এমন মুহূর্তে, এরূপ পরিস্থিতিতে ধরিত্রীর আঁধার অপসৃত করতে এক আলোকবর্তিকা আবির্ভূত হলো। সেই বর্তিকাকে যারা অনুসরণ করল, তার কর্তৃত্ব যারা অনুকরণ করল, তারাই আলোকরশ্মীতে পরিণত হলো। ইতিহাসের স্বর্ণরেণুতে পরিণত হলো।
সেই বর্তিকার আলোতে পুরো পৃথিবী আলোকিত হলো। আর সেই আলোকবর্তিকাটিই হলো সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ট মহামানব হযরত মুহাম্মদ (সা.)। তাঁকে নিয়েই বক্ষ্যমাণ বইটি রচিত।
বইটি মূলত `রাসূলে আরাবী` নামে উর্দু ভাষার সংকলন। লেখক অমুসলিম। গুরুদত্ত সিং। একজন অমুসলিম রাসূলকে নিয়ে সীরাত সাহিত্যে এমন মহার্ঘগ্রন্থ রচনা করেছেন যা আমাদের রীতিমতো আবিষ্ট করেছে! বইটির প্রতিটি শব্দ রাসূলপ্রেমে উন্মত্ত। প্রত্যেকটি বাক্য রাসূলের ভালোবাসায় উন্মীলিত। বইটির আদ্যন্ত রাসূলের প্রেমমূর্ছনায় উত্সর্গ। বইটির অনুবাদক একজন বিদ্বজ্জন আলিম। প্রথিতযশা সাহিত্যিক। ভূমিকায় অনুবাদক লিখেছেন, `লেখকের লেখায় নবীপ্রেমের যে জ্বাজল্যমান আলো, অনুবাদের পর তা ফুটিয়ে তোলা দুষ্কর!`
এর দ্বারাই প্রতীয়মান হয় লেখক বইটিতে ভালোবাসার কেমন সমাবেশ ঘটিয়েছেন। নবীপ্রেমের কীরূপ উন্মাদনা প্রকাশ করেছেন। হৃদয়দ্বার যদি উন্মুক্ত থাকে, অন্তরদুয়ার যদি অবারিত থাকে তাহলে বইটি পড়ে পাঠকও সেই ভালোবাসায় সিক্ত হতে পারে। স্নাত হতে পারে নবীপ্রেমের সরোবরে।
* * *
প্রাক্কালের আরব অনারবের চেয়েও অধম ছিল। হিংসা-বিদ্বেষ, চুরি-ডাকাতি, মারামারি-কাটাকাটি, হুজ্জত-হাঙ্গামার সয়লাবে আরবভূমি জর্জরিত। কিয়ত্ উপসর্গ উত্সারিত হলেই গোত্রে-গোত্রে জঙ্গযুদ্ধ চলত যুগশতাব্দী। তদানীন্তর আরবে কন্যা সন্তানকে `কাল` মনে করত। অভিশপ্ত ভাবত। যার দরুন কন্যা জন্মালে লজ্জা ও অনুশোচনায় জীবিত পুঁতে ফেলত। ঠিক এমন সময়ে আরবের আভিজাত্য কুরাঈশ বংশে মা আমেনার কোলে একটি শিশু ভূমিষ্ট হয়। দাদা মধুমাখা নাম রাখলেন `মুহাম্মদ`। ছোট্ট মুহাম্মদ জন্মের ছয়মাস পূর্বেই বাবাকে হারান, ছয়বছর পরে মাকে। অতঃপর দাদা ও চাচার তত্ত্বাবধানে লালিত-পালিত হন। ছোটবেলা থেকেই ছোট্ট `মুহাম্মদের` মাঝে মুজিযা তথা অলৌকিকতা প্রকাশ পেত। অল্প বয়সেই তিনি সত্যবাদী, আমানতদারের দুর্লভ দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন। সত্যবাদীতার সাবুদস্বরূপ তাঁর উপাধি সাযুজ্য হয় `আলামীন`। আলামীন উপাধি নিয়েই তিনি বড় হতে লাগলেন। তাঁর চিন্তার গভীরতা, চিত্তের নিগূঢ়তা বিস্তর হতে থাকে। তিনি ভাবতে থাকেন সমাজকে নিয়ে। বালক বয়সেই গঠন করেন `হিলফুল ফুযূল` নামক সেবামূলক সংগঠন। এভাবেই তিনি সবার প্রিয় হয়ে উঠেন। পঁচিশ বছর বয়সে আরবের সম্ভ্রান্ত পরিবারের খাদিজা নাম্নী মহিলার সাথে দাম্পত্য জীবনে পদার্পণ করেন।
তাঁর বয়স যখন চল্লিশ তখন আল্লাহর পক্ষ থেকে নবুয়তপ্রাপ্ত হন। শুরু হলো তৌহিদ তথা একত্ববাদের কালিমা প্রচার। মূর্তিপূজকদের সকল ভ্রান্তি-বিভ্রান্তি বিলোপ করে এক আল্লাহর দাওয়াত দিতে লাগলেন। ঠিক তখন সেই `আলামীন` তাদের চক্ষুশূল হয়ে গেল। কিন্তু তবুও তিনি দীনের দাওয়াত সক্রিয় রাখলেন। গোপনে-সন্তর্পণে কিছু সংখ্যক মানুষ মুসলমান হলেও বিশাল আরব শত্রুতে পরিণত হলো। একসময় মক্কার কাফিরেরা আচরণে-উচ্চারণে, শারীরিক ও মানসিকভাবে তাঁকে উপহত করতে থাকে। অবস্থার বেগতিক মুহূর্তে আসমান থেকে হিজরতের হুকুম হলো। তিনি হিজরত করলেন। দাওয়াত অব্যাহত। কিন্তু মুসলমান বাড়ছে না। বুকভরা আশা নিয়ে একসময় দাওয়াত দিতে গেলেন তায়েফের প্রান্তরে। কিন্তু সেখানে রচিত হলো ইতিহাসের অম্ল অধ্যায়। দাওয়াত দিতে গিয়ে তিনি তায়েফবাসীর কাছে লাঞ্চিত হলেন। দাওয়াত গ্রহণ তো দূরের কথা বরং বাতিকগ্রস্ত বলে তায়েফবাসীরা তাঁকে প্রহার করে। পাথর নিক্ষেপ করে। সেই তায়েফবাসীর তাকলীফে দোজানের বাদশাহর শরীর থেকে ঘাম ঝরল, বদন থেকে রক্ত পড়ল। চোখ অশ্রুবিপ্লুত হলো। কিন্তু তবুও তিনি সহ্য করলেন নিভৃত্বে। এভাবে ইসলাম প্রচারের নিমিত্তে বর্ণাতীত গঞ্চনার শিকার হলেন। প্রভিন্নভাবে প্রহত হলেন। কিন্তু তবুও দাওয়াতী কার্যক্রম অব্যাহত রাখলেন। একসময় অদৃষ্টের দুর্বিপাকে বৃদ্ধি পেতে থাকে মুসলমান। বাড়তে থাকে ধর্মপ্রাণ। এদিকে আমাদের ক্রমবর্ধনে কাফিররা আকণ্ঠ বিদ্বেষবিষে বিক্ষত। একসময় মুসলমানদের সাথে কাফিররা যুদ্ধ ঘোষণা করে। শুরু হয় `জিহাদ` নামক কার্যক্রম। একে একে উহুদ, বদর, মুতা, তাবুক, খন্দক সংঘটিত হয়। মুসলমানরা আল্লাহর মদদে ও গায়বী নুসরতে বিজয়ের কেতন উড্ডীন করে। এভাবেই মদীনা চলে আসে আমাদের অধস্তনে। তারপর মক্কার সাথে যুদ্ধ করে মক্কাও আমাদের দখলে এলো। মক্কাবিজয়ে আমরা আনন্দের আতিশায্যে আত্মহারা হলাম। মক্কার যাঁরা আমাদের কষ্ট দিয়েছিল তাদের আমরা মাফ করলাম। এমনকি যারা রাসূলের চাচাকে হত্যা করে কলিজা চিবিয়ে খেয়েছিল, তারাও মাফ পেল। ইতিহাস কি কখনো এমন দৃষ্টান্ত দেখেছিল? আমরা সেই ইতিহাস গড়লাম। এভাবে পুরো আরব আমাদের দখলে এলো। আস্তে আস্তে পুরো পৃথিবী। আমরা পুরো পৃথিবীর পরিচালক হলাম। পৃথিবীতে শান্তির বাতাস প্রবাহিত করলাম। ন্যায়-ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করলাম। এভাবে চলতে থাকে ইসলামের সোনালি যুগ।
অবশেষে ৬৩ বছর বয়সে নবুয়তী দায়িত্বের আঞ্জাম শেষে রাসূলুল্লাহ সা. রাব্বে কারীমের দীদারপ্রাপ্ত হন।
* * *
প্রতিক্রিয়া:
একজন অমুসলিম কীভাবে রাসূলপ্রেমে মত্ত এতো সুন্দর সন্দর্ভ রচনা করতে পারেন? যিনি পারেন তিনি কীভাবে অমুসলিম থাকেন? এসবের উত্তর যখন মাথায় ঘোরপাক খায় তখন বলে উঠি, `হে প্রভু! তাঁকে তুমি নবীপ্রেমের উত্তম প্রতিদান দিও।`