শতাব্দীর চিঠি
বাংলায় মুসলিম বিজয়ের ইতিহাসকে একটা শ্রেণী বেশ ধোঁয়াশাপূর্ণ করে রেখেছে, ইচ্ছে করেই করেছে। প্রকৃত সত্যকে লুকিয়ে রাখতে চেয়েছে মিথ্যার আড়ালে। জানতে দিতে চায়নি, মুসলিমদের ঔদার্যপূর্ণ শাসন ও জনকল্যাণকামিতার কথা। মুছে দিতে চেয়েছে বহু বড় বড় দরবেশ ও ওলীদের নামও, যারা ছিলেন যুগের প্রাণ। কিন্তু, ইতিহাস তো ভোলেনি তা। ভোলেনি, কারা প্রকৃত সাম্প্রয়িকতার বীজ পুঁতে গেছে এই বাংলায়, আর কারা মেলে দিয়েছিল সম্প্রীতি ও ভালবাসার বাহু। ‘শতাব্দীর চিঠি’ বইতে দলীল-দস্তাবেজসহ তার বিস্তারিত দাস্তান উঠে এসেছে। উঠে এসেছে বাংলার অনেক সূর্যসন্তানের নাম ও কীর্তি। চিঠির ভাষায় বিবৃত হয়েছে বাংলায় মুসলিম সভ্যতার বিকাশ, গণেশচক্রের চ্যালেঞ্জ ও নুর কুতুবুরল আলমদের লড়াইয়ের ইতিহাস।
বি:দ্র: শতাব্দীর চিঠি বইটি free pdf download করিতে চাহিয়া লেখকদের নিরুৎসাহিত করিবেন না
FS Ananna –
ইউরোপ যখন কাপড় পরতে শিখেছে এই বাংলার জনপদ তখন মসলিন রপ্তানিতে জগতবিখ্যাত।
বাংলার অলিতেগলিতে গড়ে উঠা অসংখ্য মসজিদ, মাদরাসা যখন মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছিল তখন ইউরোপীয় রেনেসাঁসের, রয়েল সোসাইটির কোন অস্তিত্বই ছিল না।
যখন বাংলার অর্থায়নে সুদূর মক্কা শরীফে নির্মিত হয়েছিল ”বাব ই উম্মে হানি” নামক মাদরাসা, হাজীদের পানির কষ্ট দূর করতে খনন করা হয়েছিল সুবিশাল খাল তখন এই বাংলার মানুষের উদারতায় পৃথিবীর আকাশ বাতাস ছিল মুখরিত।
যখন এই বাংলায় ১টাকায় ৮মণ চাল, ২ টাকায় ১৫ গজ সুতি কাপড়,৩ টাকায় একটি গাভী, কিনতে পাওয়া যেত তখন এই বাংলার মানুষের আধ্যাত্মিক,সামাজিক,অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির কথা মুহাম্মদ আল মাসুমুদি, ইবনে বতুতাদের মতো বিশ্ববিখ্যাত পর্যটকদের মুখে মুখে শোনা যেত বিস্ময়কর বর্ণনা।
৬১০ সালের ২১ শে রমাদান মক্কার হেরা গুহা থেকে নবুওয়তের সেই শাশ্বত বাণী কিভাবে এই বাংলার সহজ সরল জনপদের মানুষ গুলোকে বদলে দিল?
কে বা কারা ঐক্যবদ্ধ করলো এই ছোট ছোট জনপদ গুলোকে?
কিভাবে এই বাংলা, বাঙালির হয়ে উঠলো? সাম্প্রদায়িকতার কালো থাবা থেকে কে বা কাদের হাজারো ত্যাগ তিতিক্ষার মাধ্যমে অর্জিত হলো আজকের এই অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ?
পনেরো শতকে লেখা একটি চিঠি কিভাবে এই বাংলার মুসলিম জাতিসত্তাকে খাঁদের কিনারা থেকে অতল গহব্বরে হারিয়ে যাওয়া থেকে রক্ষা করলো?
এ সব কিছু নিয়ে মুসা আল হাফিজের লেখা ফোয়ারা প্রকাশনীর অনবদ্য একটি বই শতাব্দীর চিঠি।
৬১৭ সালে সাহাবি আবি ওয়াক্কাস,মালিক ইবনে ওয়াহাব, কায়েস ইবনে হুজাইফা
৬৪৬ সালে তাবেই মুহাম্মদ মামুন ও মুহাম্মদ মুহাইমিন
৮৭৪ সালে তাবে তাবেইন বায়েজিদ বোস্তামি,বদর শাহ রহ.
১২০৩/১২০৪ সালে বঙ্গবিজয়ী বখতিয়ার খিলজির মাধ্যমে এই বাংলার কর্ণকুহরে বার বার প্রতিধ্বনিত হতে থাকে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কালিমার সেই শাশ্বত বাণী।
বাংলার স্বাধীন সুলতান শামসুদ্দিন ইলিয়াস শাহ এই বাংলার স্বাধীনতার জনক তিনি ১৩৩৮ সালে বাংলার স্বাধীনতা ঘোষণা করেন।
তারপর সিকন্দর শাহের শাসনামল।
গিয়াসউদ্দিন আজম শাহের শাসনামল থেকেই গজাতে থাকে সাম্প্রদায়িকতার ডানা। হিন্দু মনুবাদ রামপন্থীদের নেতা গনেশের ষড়যন্ত্রে একে একে নিহত হয় গিয়াসউদ্দিন আজম শাহ, সাইফুদ্দিন হামজা শাহ, শিহাবউদ্দিন বায়জিদ শাহ, আলাউদ্দিন ফিরোজ শাহ।
গনেশের ক্ষমতা গ্রহণে আর কোন বাধা না থাকায় বাংলার আকাশ তখন সাম্প্রদায়িকতার শকুনের ডানা প্রশস্ত হতে থাকে। সেই শকুন ছিঁড়ে খেতে থাকে এই বাংলার হাজারো আলেম হাজারো মুসলিমদের মাংসপেশীকে।
মহানন্দা নদীতে ডুবিয়ে দেওয়া হয় বাঙালি মুসলিম জাতিসত্তার ভেলা। ডুবন্ত মুসলিম জাতিসত্তাকে এভাবে ডুবে যেতে দেননি খালিদ বিন ওয়ালিদের রক্ত নুর কুতুবুল আলম।
তিনি জৈনপুরের শাসক ইবরাহিম শর্কিকে একটি পত্র লিখেন।
যে পত্রের সাথে জড়িত ছিল বাংলার ভাগ্য। হয়তো বাংলা আন্দালুসিয়ায় রুপ নেবে আর নয়তো বাংলার আকাশে আবারও কালিমার পতাকা অক্ষুণ্ণ থাকবে।
হৃদয়ের সবটুকু আলো আর ব্যাথা দিয়ে একে একে তুলে ধরলেন গণেশের অমানবিক কর্মকান্ড গুলোকে ।
ইবরাহীম শর্কির বিশাল বাহিনীর কথা জানতে পেরে গণেশ ভয় পেয়ে গেলেন।
কালবিলম্ব না করে সোজা চলে গেলেন নুর কুতুবুল আলমের খানাকায়।
নুর কুতুবুল আলমের পায়ে পড়ে প্রাণভিক্ষা চাইলেন গণেশ ।
নুর কুতুবুল আলম ক্ষমা করে দিবেন ইসলাম গ্রহণের শর্তে গনেশ তাতে রাজিও হয়েছিলেন কিন্ত গণেশের স্ত্রীর কলকাঠিতে হেদায়েতের তীর গিয়ে বিধলো গণেশের পুত্র যদুর হৃদয়ে।
নুর কুতুবুল আলম এ যাত্রায় গণেশকে ক্ষমা করে দিলেন তার পুত্রের ইসলাম গ্রহণের মাধ্যমে।
নুর কুতুবুল আলমের অনুরোধে ইবরাহীম শর্কি প্রতিশোধ না নিয়েই ফিরে গেলেন জৈনপুরে এবং সে বছরেই তিনি মৃত্যু বরণ করেন।
এ সুযোগ হাতছাড়া করার পাত্র গণেশ নন। নিজের পুত্রকে রাজসিংহাসন থেকে নামিয়ে কারাগারের বদ্ধ কুঠুরিতে নিক্ষেপ করেন। কেননা পুত্রকে হাজারো চেষ্টা করার পরও পুনরায় হিন্দু ধর্মে দীক্ষিত করা যায়নি।
হেদায়েতের তীর যার অন্তরে একবার গেঁথে যায় সে তীর হাজারো চেষ্টায় উপড়ে ফেলা যায় না।
গণেশ থেকে দনুজমর্দন দেব
যদু থেকে জালালুদ্দিন মুহাম্মদ শাহ
শঙ্কর থেকে আব্দুল কাদির যার তরবারির আঘাতে নিহত হয় গণেশ।
বাংলার রক্ষাকবচ হিসেবে নুর কুতুবুল আলমের নাম ইতিহাসের পাতায় চির অম্লান হয়ে থাকলো।
আল্লাহর তরবারী খালিদ বিন ওয়ালিদ থেকে নুর কুতুবুল আলম
মাক্কা থেকে লাহোর, লাহোর থেকে দিল্লি, দিল্লি থেকে বাংলা।
বাংলা থেকে পান্ডুয়ায় আবিরাম বয়ে চলা খালিদ বিন ওয়ালিদের রক্ত কিভাবে এই বাংলায় আল্লাহর কালিমাকে সমুন্নত রাখলো তার রোমহষর্ক বর্ণনা পাঠক হৃদয়কে তৃপ্ত করবে।
উমর বিন আসাদ খালেদি থেকে আলাওল হক আলাওল হক থেকে নুর কুতুবল আলম থেকে
রিফাতউদ্দিন,আনোয়ার শহিদ,শেখ ফয়জুল্লাহ
আনোয়ার থেকে আজমল ও আকমল, রিফাতউদ্দিন থেকে শেখ জাহিদের ১০ জন পুত্রের বংশপরম্পরায় বিবি শামছুন নাহার থেকে সৈয়দ বদরুজ্জামান আহমদের মাধ্যমে খালিদি বংশ বৃক্ষ আজও দোল খায় সততা ও আধ্যাত্মিকতার বাতাসে।