প্রত্যাবর্তন
প্রত্যাবর্তন একটা পরিবর্তনের নাম। নিজের ভেতরের আত্মর মাঝে একটা তোলপাড় শুরু করা অনুভূতির নাম। প্রত্যাবর্তন একটা ফিকিরের নাম।
প্রত্যাবর্তন একটা ঘরের ফেরার গল্পের নাম। প্রতিটি মানুষই জীবনে এক’দুবার সুযোগ পায় প্রত্যাবর্তন করার। কেউ প্রত্যাবর্তিত হয় আলোকবর্তিকা সহ আবার কেউ হেলায় হারায়।
স্রষ্টা প্রতিটি মানুষকেই কিছু সুযোগ , উপলক্ষ্য , ঘটনা, পরিবেশ অথবা এমন কিছু সম্পর্কে সাথে জড়িয়ে দেয় যারা এনজাইমের মত কাজ করে প্রত্যাবর্তনের উপকরন হিসেবে।
চোখ-কান খোলা রাখুন , আপনিও স্রষ্টার কাছ থেকে তেমন কোন উপলক্ষ্য পেয়ে যেতে পারেন প্রত্যাবর্তনের।
আর যারা পেয়ে হেলায় হারিয়েছেন তারা স্রষ্টার কাছে দোয়া করুন দ্বিতীয় কোন এনজাইম প্রেরনের উদ্দেশ্যে।
যে কোন ইসলামী বই পেতে ইসলামিক বইঘর.কম এর সাথেই থাকুন
বি:দ্র: প্রত্যাবর্তন বইটি free pdf download করিতে চাহিয়া লেখকদের নিরুৎসাহিত করিবেন না
Arfin Rafi Shohel –
বই আলোচনাঃ
২৫ জন লেখক, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার এবং অধ্যয়ন রত ছাত্রদের লেখা বইটি। এখানে আবার আছেন অক্সফোর্ড এ অধ্যয়নরত ছাত্র, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র, চট্রগ্রাম ইউনিভারসিটির ছাত্র। আবার আছে কিছু অমুসলিমদের ইসলাম গ্রহনের বর্ননাও। তাদের সবার দ্বীনে ফেরার গল্পগুলো নিয়েই এই বই এর পৃষ্টাগুলো অনূদিত। যেহেতু ২৫ জনের ২৫ টা গল্প এবং একেকজনের গল্পটা একেক রকম বিধায় প্রত্যেকটা গল্পের সার সংক্ষেপ আলোচনা করছি। আসলে তারা অতি উঁচু মাপের মানুষ তাদের কথাগুলো নিজের ভাষায় প্রকাশ করার মত অতটা যোগ্যতাও আমার নেই। কোনটা রেখে লিখবো তা ভেবে পাচ্ছিলাম না। কেউ একজন বললো বই পড়ে যদি দু’চার কথা নাই লিখা যায় তাহলে নাকি বই পড়াই হয়না! তাই এ প্রচেষ্টা। আর রিভিউ লেখার অভ্যাসও নেই। এটা আমার জীবনে দ্বিতীয় রিভিউ। তাই ভুল ত্রুটি পূর্বেই ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি।
গল্প সারসংক্ষেপঃ
১।
‘সরল পথের খোঁজে’ অধ্যায়ে মোহাম্মাদ রুহুল আমিন স্যারের লিখা। যেখানে তিনি অত্যন্ত সুন্দর ভাবে তার ফিরে আসার গল্পটা বর্ণনা করেছেন। আরেকটি অপ্রকাশিত সত্য প্রকাশিত হয়েছে। আমাদের দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোর অভ্যন্তরীণ কঠিন অবস্থা। যেখানে দ্বীন মানা অত সহজ কাজ নয়। সে যে প্রথমেই দ্বীনের পথে ছিল ব্যাপারটা এমনও নয়। চলতে চলতে হারিয়ে গিয়েছেল গভীরে। আবার ফিরেও এসেছেন সত্যের পথে। কিন্তু সত্যের পথে ফিরেই তাকে সম্মুখীন হতে হয়। সত প্রতিকূলতা পাড়ি দিয়ে সে রয়েছেন সত্যের পথে, এটাই যেন সবচেয়ে বড় সফলতা।
২।
‘ট্রাইটেশন’ ড. শামসুল আরেফিন স্যারের লেখা। হেদায়েত বা সঠিক পথের দিশা হুট করেই চলে আসেনা। তার জন্য চারপাশের অবস্থা, কিছু মানুষের অক্লান্ত পরিশ্রমই ফোঁটা ফোঁটা আকারে হেদায়েতের চূড়ান্ত সফলতা আসে। তখনই তার মধ্যে এক অন্যরকম পরিবর্তন। মানুষ বদলে যায়। তার এই বদলে যাওয়াতে কারো কোন ক্ষতি হয়না বরং চারপাশের সবাই লাভবান হয়। লাভবান হয় সে নিজেও।
৩।
‘এবং আমিও ফিরেছি’ ওমর আল জাবির স্যারের লেখা। তার প্রত্যাবর্তনের যে চিত্র একেছেন তাতে দেখ। যায় তিনি কখনোই ধর্মের ধার ধারতেন না। মুসলিম হিসাবে বেসিক জিনিস গুলো মাথায় থাকলেও তেমন ভাবতেন না ওসব নিয়ে। তিনি বিভিন্ন দেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখে ফিরেছেন নানান স্থানে। জান্নাতের যে বর্ণনা সে যা জানতো তা কেবলই তিনি কল্পনা ভাবতেন। কিন্তু প্রকৃতির এসব অপার সৌন্দর্য তাকে ফিরিয়েছেন সত্যের পথে। তিনি সে সব নিয়ে গভীর ভাবে ভাবতেন এবং পরিশেষে তার প্রত্যাবর্তন।
৪।
‘নীড়ে ফেরার গল্প’ মাসুদ শরীফ স্যারের লেখা। তার জীবনের গল্পে দেখা যায় সে জীবনে চলতে চলতে একটা সময় নাস্তিক না হলেও সংশয়বাদী হয়ে পড়েন। তার ফিরে আসার সূচনা হয় ‘পিচ টিভি’র হাত ধরে। তিনি এই তার জীবনের গল্পে খুব সুন্দর ভাবে নাস্তিক দের কর্মফল তুলে ধরেছেন। কিভাবে প্রতিটা মুসলিম পরিবারের সন্তানদের মাঝে নাস্তিকতার বিষ প্রয়োগ করা হয়। যাতে তিনি নিজেও আটকে গিয়েছিলেন। অবশেষে মহান আল্লাহর করুণায় ফিরে এসেছেন সেই নীড়ে। মহাসত্যের নীড়।
৫।
‘পাখিদের পথচলা’ অধ্যায়টা লিখেছেন নিশাত তামমিম ম্যাম। তার ফিরে আসার গল্পটা সত্যিই যে কাউকে অভিভূত করবে। একটি ইসলামিক পরিবারের সন্তান এবং সে পরিবেশেই বেড়ে উঠা। তবুও একরকম সমাজের চাপিয়ে দেওয়া অনৈসলামিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ অতপর ফিরে আসা। এখানে তার আবার ফিরে আসার প্রথম ধাপ ছিল ড.জাকির নায়েকের বক্তব্য। একটি মেয়ে কেবল ইবতেদায়ী পর্যন্ত মাদ্রাসায় পরে প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থায় ডাক্তার। পরে যতটুকু তার দ্বীনের পথে চলার প্রয়োজনীয় পাথেয় জ্ঞান তার নিজ উদ্যোগে আহরণ। নিজ পিপাসায় কাতর হয়ে তার আরবী শিক্ষা। যেখানেই জ্ঞান সেখানেই তার পদচারণ। যেখানে আলো দেখতেন তা লুফে নিতেন। কি অনলাইন কি অফলাইন। তার ফিরে আসার গল্পটা এরকমই।
৬।
‘আলোয় ভূবন ভরা’ লেখাটি কবির আনোয়ার স্যারের। এমন একটি হাদিছ পড়েছিলাম যে, “কেউ যদি আল্লাহর দিকে এক পা বাড়ায়, আল্লাহ তার দিকে দশ পা এগিয়ে আসেন। ” এই গল্পটা কিছুটা এমনই। তিনি তার নিজ থেকে সত্য খুঁজতে গিয়ে এমন সব সাহচর্য পেয়েছেন যাদের মেহনতে বদলে গেছে তার জীবন। তিনি ফিরে এসেছেন তার সেই মহান রবের পথে। তিনি আলোকিত হয়েছেন আলোকিত পথে।
৭।
রাফান আহমেদ স্যারের ‘সেই সব দিন রাত্রি’ র গল্পটির শুরুই একটি সুইসাইড নোট দিয়ে। একজন সংশয়বাদীর সুইসাইড নোট। তিনি নিজেও যে ধার্মিক ছিলেন না নয়। তিনিও এমন সংশয়বাদী ছিলেন। এই সুইসাইড নোট পড়ে তিনি ভাবতে থাকেন সব কিছু নিয়ে। ধর্ম, বিজ্ঞান। ভাবার পাশাপাশি তিনি খুঁজতে থাকেন সত্য। আল্লাহর রহমতে তিনি নিজের সংশয় থেকে ফিরে আসেন সঠিক পথে। বিশ্বাসের পথে। এখন অন্যদের ফেরানোর চেষ্টায় রত আছেন। যদিও তার পরিবার আর দশটা গতানুগতিক মুসলিম। তবুও খুব বেশি কিছু তিনি পরিবার থেকে শিক্ষা লাভ করতে পারেননি। যতটা শিখেছেন নিজ উৎসাহ উদ্দীপনায়।
৮।
‘অন্ধের যাত্রা সমীকরণ’ অধ্যায়টি লিখেছেন মোহাম্মদ তোয়াহা আকবর স্যার। তার জীবনের গল্পটাই হোচট খাওয়া আর হতাসার একরাশ ঘটনাবলী সম্পর্কিত। বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ধার্মিকদের সুযোগ পেলেই এক হাত দেওয়া। তিনি যে নাস্তিক ছিলেন তা নয় বরং ঘোরতর নাস্তিক ছিলেন। কিন্তু পড়াশোনায় ভালো। তিনি ধর্মের প্রতি অাকৃষ্ট হয় তার পড়াশোনার সাবজেক্ট থেকে। এটা বলতে গেলে তার ভাগ্যই বলা যায়। আসলে আল্লাহ কার হিদায়েত কিভাবে দেন তা বলাই মুশকিল। তিনি নাস্তিক হয়েও অবাক হতেন যখন মানুষের দেহের গঠন প্রণালী নিয়ে তিনি ভাবতেন। এত সুন্দর নিখুঁত তো আর এমনি এমনি হয় না, এতে পারেনা। তারপরই তার যাত্রা শুরু। সত্যকে খোঁজার যাত্রা। অবশেষে তিনি পেয়েছেন, আলোকিত হওয়ার চেষ্টায় রত আছেন। আরো মানুষকে ভুল পথ থেকে ফেরানোর জন্য হন্য হয়ে খাটছেন।
৯।
‘আপনারে খুঁজিয়া বেড়াই’ লিখেছেন আরমান সোলাইমান স্যার। যে কিনা গল্পের শুরুতেই ছিলেন একজন ‘ডিজুস ছেলে’। গান, নাটক এগুলোই ছিল তার জীবন।’ডিজুস ছেলে’টা ধর্মীয় ট্যাগ পেয়েছিল উত্তরাধিকার সূত্রে। ধর্ম বলতে যা বুঝতো তা কেবলই তার মনগড়া ব্যাখ্যা। সপ্তাহে এবং দুই ঈদে হাজিরা দেওয়াটাই তার ধর্ম ছিল। আর যা ছিল তার সবই তার অজানা। তার পরে আল্লাহ তাকে কবুল করলেন। দ্বীনের পথে ফেরালেন। সত্য অনুধাবন করালেন। তিনি কোরআন পড়লেন। যা বুঝতো তা নিয়ে আলেমদের শরণাপন্ন হতেন। ইউটিউব ঘাটতেন। এভাবেই তার জীবন টা আলোকিত হলো। এখনো আলোর পথেরই যাত্রী।
১০।
‘পথ ও পথিক’ লেখাটি মুহাম্মদ মুশফিকুর রহমান মিনার স্যারের লেখা। তার জীবনের বাঁক গুলো অতি যত্নে লিপিবদ্ধ করেছেন এই অধ্যায়টিতে। এ বাঁক কখনো তাকে কখনো অবিশ্বাসী করে তুলতে পারেনি। বরং তিনি প্রতিটা বাঁকে অবিশ্বাসীদের মোকাবেলা করে চলেছেন। তার ছোটিবেলা থেকেই ধর্মের পথেই আছেন। ছোটবেলা পণ করতেন তিনি ‘মুসলিম মিশনারি’ হবেন। তিনি সত্যের পথে থেকে সব ধর্মকে জানার চেষ্টা করতেন। এখনো তিনি করেন। মানুষকে সত্যের প্রতি দাওয়াত তিনি অব্যাহত রেখেছেন। থাকতে চান মৃত্যু পর্যন্ত এ পথের পথিক হয়ে।
১১।
‘সেই সময়ের উপখ্যান’ লিখেছেন জাকারিয়া মাসুদ স্যার। এ গল্পটা জীবনের মোড় ঘোরানোর গল্প। গল্পটার শুরু একজন সন্ত্রাসী ‘গুরু’ দিয়ে। কিন্তু শেষটা একজন দাওয়াতি ‘গুরু’র মধ্যদিয়ে। যার দাওয়াতের মাধ্যমে বদলে গেছে এক বালকের জীবন। যে বালক ক্লাস নাইনে প্রথম মাগরীবের জামাতের সাথে নামাজ পড়ে। যদিও যে পরিবারটায় বেড়ে উঠা সেটা মুসলিম। গতানুগতিক মুসলিম বললেও দোষ হবে না। সেই বালক টিই আমাদের জাকারিয়া মাসুদ স্যার। যিনি লিখে চলেছেন সত্যের পক্ষে। অবিশ্বাসীদের দেওয়াল ভাঙতে।
১২।
‘সংশয় থেকে বিশ্বাসঃ এক পথিকের গল্প’ লিখাটা মোঃ আব্দুল্লাহ সাঈদ খান স্যারের। যার জীবনটা একটি ধর্মীয় পরিবারে শুরু হওয়ার পরেও সংশয় এসে ভর করে তার সমগ্র চিন্তা শক্তিতে। তাকদীর, বিবর্তবাদ, মহাবিশ্ব, আত্মা নিয়ে তার প্রশ্ন। সেই প্রশ্ন গুলোর সমাধান খুঁজা অতপর সত্যের সামনে মাথানত করা। পেয়েছে জীবনের অমিত সুধা। তার জন্য তাকে পড়তে হয়েছে, প্রচুর পড়তে হয়েছে।
১৩।
‘আমি এবং আমাদের গল্প’ লিখেছেন মাহমুদুর রহমান স্যার। যেই গল্পের শুরুটাই একজন আফ্রিকান চোরের কাহিনী দিয়ে। অতপর চোরকে হাতেনাতে ধরা। তবুও কিছু না বলতে পারা। চোর সম্পর্কে প্রতিবেশী দের জিজ্ঞাসা। এক বাসায় দাওয়াত। সে দাওয়াত যেন খানা পিনার দাওয়াত ছিল না। জন্মতত্ত্ব নিয়ে দেড় হাজার বছর আগের বিশ্লেষণ। যা বিজ্ঞান জেনেছে মাত্র বছর পঞ্চাশ আগে! অতপর সত্য গ্রহন এবং একজন খামি খেয়ালি মানুষের হুজুর হয়েই যেন গল্পটার সমাপ্তি।
১৪।
‘গল্পটা হাসি কান্নার’ লিখেছেন শিহাব আহমেদ তুহিন স্যার। একজন জেদি ছেলে। ছোটবেলায় বাবাকে হারানো। অভাবের সংসার। একটু বড় হওয়া। মনে মনে কাউকে ভাললাগা, না বলতে পারার ব্যর্থতা। প্রচলিত ধারার সাহিত্য অনুরাগী। উপন্যাস পড়ে হাসি কান্না করা। ক্লাস টেন এ থাকতেই স্রষ্টার অস্তিত্ব নিয়ে প্রশ্ন তোলা। মনে সংশয়। তার সামনে হঠাৎ ‘পিচ টিভি বাংলা’। অতপর ভাললাগা। ধর্মের প্রতি আগ্রহ। ধীরে ধীরে জীবন বদলে ফেলা। টেবিলের জায়গা দখল করেছে কোরআন হাদিছে। যে একসময় উপন্যাসে মিথ্যা চরিত্রে মিথ্যা আবেগে কাঁদতো। সে এখন রাসূলের (সাঃ) জীবনী, সাহাবা (রাঃ) দের জীবনী পড়ে কাঁদে। অতপর একটি বদলে যাওয়ার কাহিনী।
১৫।
‘ফিরে পাওয়া গুপ্তধন’ লিখেছেন ফয়সাল বিন আলম স্যারের লিখা। মডারেট মুসলিম পরিবারে বেড়ে উঠা। নামাজের সাথে বলিউড দাপিয়ে বেড়ানো একটি পরিবার। কোরআন খতম ও হয়ে থাকতো। পড়াশোনার দিকে মনোযোগী সবসময় প্রথম কাতারে। গল্প উপন্যাসে নাক ডুবিয়ে থাকা। মিডিয়াতে নাটক তৈরি করা। এক নষ্টামি সঙ্কায় সেখান থেকে ফিরে আসা। তবুও সত্য পথে আসা হয়নি। ছোটবোনের হাজব্যান্ডের হাত ধরে একটা ভিডিও লেকচার পরিবার সবাই মিলে দেখা। সেখাই ধর্মীয় বীজ বপণ করে সবার মনে। এরপর একটি পরিবারের ধার্মিক হয়ে উঠার কাহিনীই এই গল্পটা। একজন নয়, যেন একটি পরিবার এক সাথে নিজেদের মাঝে লোকানো গুপ্তধনের সন্ধান পেয়েছে।
১৬।
‘চলতে ফিরতে যেমন দেখেছি’ লিখেছেন সাইফুর রহমান স্যার। তিনিও উত্তরাধিকার সূত্রে মুসলমানিত্ব পেয়েছিলেন। সারাদিন খেলার মাঠেই পড়ে থাকতেন। নিজ উদ্যোগে ক্লাস নাইনে এসে প্রথম কোরআন তেলাওয়াত রপ্ত। এরপরেই জীবনের মোড় পাল্টানো। একান্ত ভালো লাগা থেকে মুফতিদের সহবতে এসে কোরআন হাদীছের দারস নেওয়া। তারপর জার্মানি পরে ইংল্যান্ড। জার্মানি ইংল্যান্ডে সত্য মানা সত্য পথে এত সহজ কাজ নয়। তবুও তিনি টিকে আছেন। থাকতে চেয়েছেন। অন্যদের মাঝে দাওয়াতের কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।
১৭।
‘দ্য আগলু ডাকলিং’ লিখেছেন রেহনুমা বিনতে আনিছ ম্যাম। এ গল্পের নামানুসারে গল্পের শুরুটাই সে গল্পটা দিয়ে। এ গল্পের মাধ্যেমে এবং একজন স্যারের কথায় নিজে অনুধাবিত হয়ে তিনি নিজের উদ্দেশ্য ফিরে পেতে অনুপ্রাণিত হয়েছিল। স্যার ছিলেন শ্বেতাঙ্গ মুসলিম। তার ধর্মে আসার ঘটনা ম্যামের সাথে সেয়ার করেন। মাত্র ১৫ মিনিটের একটা আলোচনায় বদলে গিয়েছিল ম্যামের জীবনটা। এর মধ্যেও পেয়েছিল কিছু বন্ধু কিছু শত্রু। সব বাধা অতিক্রম করে সত্যের পথে চলে তিনি আজও কলম চালিয়ে যাচ্ছেন সত্যের পক্ষে।
১৮।
‘প্রত্যাবর্তন’ লিখেছেন এস. এম. নাহিদ হাসান স্যার। যদিও এই নামটাই বই এর নাম তথাপি এ নামেই এ গল্পটি রচিত। জাহিলিয়াত এর জীবন কাটানো। হঠাৎ তাবলীগের দাওয়াত। তখন ভালো খারাপ দুইটা কাজই এক সাথে করা। অতপর কয়েকজন ইসলামি স্কলারের সন্ধান। তাদের ফলো করা, তাদের বই পড়া। ফলাফল সরূপ তার প্রত্যাবর্তন ইসলামের পথে।
১৯।
‘ফিরে আসার গল্প’ লিখেছেন আশরাফুল আলম সাকিফ স্যার। গল্পটা একটু বড় হলেও পড়তে পড়তে কখনো চোখ বেয়ে অশ্রু গড়িয়েছে কখনো কখনো। মানুষের জীবন এমন হতে পারে ভাবা যায়! যে ছেলেটাকে নামাজে পাঠালে মসজিদের আশেপাশে ঘুরে বাসায় এসে বলতো “নামাজ পড়েছি”। কিংবা ভয়ে অজু ছাড়াই নামাজ পড়তো। দ্বীনের দাওয়াতি লোকদের দেখলে খেলার মাঠ ছেলে পালাতো। সেই ছেলেটাই একদিন দিনের পথে ফিরে এলো। কিন্তু পরিবার তা মেনে নিতে পারছিল না। মা ভাই এমন কি বাবাও তার দ্বীন পালনে বাঁধা হয়ে দাঁড়ালো। বকা ঝকা করতে লাগলো। টিচারিদের ব্যঙ্গ বিদ্রুপ তো ছিলই। আর ছিল সব চেয়ে বড় শত্রু শয়তান। সে শয়তানের হাত থেকে বাঁচতে চেয়েছে। দ্বীনের পথে এসেও যেন কত শত বাঁধা। দ্বীনে এসেও শান্তি পাচ্ছিল না। ওমুক দল তমুক দল, এদল সঠিক ওদল ভুল! নিজেদের মিধ্যেই কাদাছোড়া ছুড়ি তাকে কষ্ট দিত। এত কিছুর পরও তার টিকে থাকার রসদ কোরআন হাদীছের আলোকে জীবন গড়ার প্রত্যয়ী।
২০।
‘আমার মায়ের বিয়ের প্রস্তাব’ লিখেছেন আরিফুল ইসলাম স্যার। তার নিজের মায়ের একটি গল্প দিয়ে শুরু। দাড়ি রাখার কারণে তার মা একটি বিয়ের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যাত! এখনন তার পরিবার টা আর দশটা ইসলামিক পরিবারের চাইতে অত্যধিক ধার্মিক। সে সুবাদে নামাজ, কোরআন তেলাওয়াত এসবের কোন ঘাটতি পরিবারে ছিল না। তবুও সেই পরিবারের ছেলেটি ভার্সিটি পড়তে এসে নামাজে ধার ধারে না অনেকদিন। হঠাৎ মা অসুস্থ্য হয়। সেও আবার নামাজি ধার্মিক হয়ে উঠে। একবার বেশ কিছুদিন পরে একগুচ্ছ দাড়ি নিয়ে হাজির হয় মায়ের সামনে। মা নামাজ কালামের শিক্ষা ছোট থেকে দিলেও ছেলের দাড়ি রাখার ঘটনাটা মেনে নিতে পারেনি। তারপর ধীরে ধীরে মা ছেলের প্রতি সহনশীল হয়। এবং বুঝতে শিখে।
২১।
‘চলতে চলতে আলোর দেখা’ লিখেছেন মুগনিউর রহমান তাবরীজ স্যার। একটি বৃত্ত। আরো কত বক্র রেখা। তার দাপিয়ে বেড়ানো সত্য খোঁজার মোহে। বিজ্ঞান, ধর্ম, পরকাল সবই যেন কৌতুহলের বিষয়। কিন্তু কোন কূলকিনারা না পাওয়ার ব্যর্থতা। তারপর সংশয়। বিবর্তনবাদ। অনেক প্রশ্ন, অনেক সংশয়। ছুটে চলেছেন এই কিতাব ও কিতাব। জাকির নায়েকের কথা শোনা। খিস্ট্রান ফাদারের অবহেলা। তারপর সত্যের দিকে ফিরে আসা। এবার চাপিয়ে দেওয়া নয় বুঝে শিখে ইসলামে প্রত্যাবর্তন।
২২।
‘সেই মিছিলের দেখা’ লিখেছেন অরিজিৎ রায়। সত্য গ্রহন করার পির যার নাম আতিক আব্দুল্লাহ। সনাতন ধর্মীয় পরিবারে জন্ম। কিন্তু মুসলিম পাড়ায় বেড়ে উঠা। মুসলিম দের সাথে সখ্যতা। বড় বড় তার মাঝে দানা বাধে মুসলিম বিদ্বেষীতা অনেকটা সমাজ পরিবেশ পরিস্থিতিই তার জন্য দ্বায়ী। দ্বায়ী আশেপাশের মানুষ গুলো। হঠাৎ একটা বই পড়া, “মোরা বড় হতে চাই” (এ বই এর একটা রিভিউ কমেন্টে লিংক)। বইটা পড়ে তার আগ্রহ বেড়ে যায়। আরো এ ধাচের বই গুলো পড়তে চায়। তারপর আরো বই পড়া, কোরআন এর আমপারা পড়া। অতপর নিজের ভুল বুঝতে পারে। সঠিক পথ উপলব্ধি করতে পারে। এবং ধর্ম পরিবর্তন। তবুও তার ধর্ম গ্রহন টা এখনো তার পরিবার, সমাজের কাছে অপ্রকাশিত।
২৩।
‘শুদ্ধ আলোর প্রথম প্রহর’ লিখেছেন, সুতীর্থ মুখার্জী স্যার (ধর্মীয় নাম টা উল্লেখ নাই)। যেই কথা দিয়ে গল্পটার শুরু তা অনেকটা এরকম, মাটির দেহের খাদ্য মাটি থেকেই আসে, কিন্তু আত্মার খাদ্য আসে উর্ধ জগৎ থেকে। তার জীবনের শুরু চরম ইসলাম বিদ্বেষীতার মধ্য দিয়ে। ফেসবুকে, বাস্তবে সব খানে মুসলিমদের নিয়ে অতিরিক্ত বাড়াবাড়ি করতেন। গালিগালাজ তো একটা অস্ত্র। তার এক সহপাঠী বন্ধুর মাধ্যমেই তার প্রথম আলোর পথ দেখা। তবুও তা গ্রহন করেনি। জীবানের বাকে বাকে ছুটে চলা। শেষমেশ ইসলাম গ্রহন। তবুও চারদিকে অশান্তি। কিন্তু যা তার আত্মাটা তো শান্তিতে আছে। সে যে তার আত্মার খাদ্য খুঁজে পেয়েছে।
২৪।
‘যেমন ছিলাম আমি’ লিখেছেন, এস ট্রানস (আমিনা) ম্যাম। কখনো মুসলিন দেখেনি। যখন দেখেছে তখন ছাত্রী পড়াশোনা করে। দেখেই তাদের সাথে ক্লাস না করে বাসায় ফেরা। সে মুসলিমদের বর্বর হিসাবেই দেখতো। আর আরবের উট বলেও সম্বোধন করতো। তবুও ক্লাসে যেতে হবে। ক্লাসে না গেলে ভালো রেজল্ট হবেনা স্কলারশিপ টাও বন্ধ হয়ে যাবে। তবে মনে ঠিক করলো এদের কে খ্রিষ্টান বানিয়ে ছাড়বে। অতপর লেগে যাওয়া। কিন্তু না কাজ হয়না। তাই তাদের ধর্ম গ্রন্থ পড়ে ভুল ধরে খ্রিষ্টান বানাবে। কিন্তু ধর্ম গ্রন্থের ভুল কি ধরবে সেই মুসলিম হয়ে গেল। এবং স্বামী সন্তান হারালো। কোর্টে যখন বিচারক সন্তান অথবা ধর্ম থেকে তাকে যেকোন একটা গ্রহন করতে হবে সে সেই মূহুর্তে ধর্মটাকেই গ্রহন করে। তার চাকরী যায়। বাবা মা ভাই বোনেরা ত্যাগ করে। বাবা হত্যা করতে চাইতো। বোন ডাক্তার ছিলেন বলে তাকে মানুষিক রোগি বলতো। এরপর কিছু বছর পর তার দাদী ইসলাম গ্রহন করে। পরে বাবা মা ভাই বোন সবাই। তার প্রাক্তন স্বামীও ইসলাম গ্রহন করে তার জীবন পর্যবেক্ষণ করে। তার সন্তানেরাও ইসলামের আলোয় আলোকিত। তার জীবিনের গল্পটা এমনই ছিল। কখনো চোখ ভারি হয়ে উঠেছিল অশ্রুতে পড়তে পড়তে। এ জীবনের গল্প পড়ে অশ্রু ধরে রাখবে সাধ্য কার?
২৫।
‘ফেরার কথাই ছিল’ লিখেছেন, ওলোগুন্ডে সা ম্যাম। তিনি এক নাস্তিক পরিবারে জন্মেছিল বড় হয়ে স্বাভাবিক ভাবে নাস্তিক হচ্ছিল। কিন্তু তার সামনে নানা প্রশ্ন গুরতে থাকে। উত্তর খুঁজতে খুঁজতে তিনি স্রষ্টার বিশ্বাসী হয়ে উঠেন। কিন্তু তিনি কোন ধর্মে তখনো বিশ্বাস করে উঠতে পারেনি। পরে আমিরিকার একজনকে বিয়ে করে আমিরিকা চলে যায়। সেখানে তার স্বামী ছিল খ্রিস্টান এবং সে সেটাই গ্রহন করে। কারণ তাকেও বোঝানো হয় এটা এক ঈশ্বরবাদী ধর্ম। তারপর তার কিছু বিষয়ে জিজ্ঞাসা থাকলেও তার সঠিক উত্তর পায়নি। এরপর সে আবারো খুঁজতে থাকে, খুঁজতে তিনি পেয়ে যান আল কোরআন। তিনি তার কথা স্বামীকে জানান। তার স্বামী শুধু তারজন্য বেশি কিছু না জেনেই কালেমা পাঠ করেন। এরপর কোন এক সাগরের অভিযানে থাকাকালে তার স্বামী সমস্ত কোরআন পড়েন বুঝেন। সাগর থেকে বাড়ি ফেরার পথেই এক মসজিদে সত্যিকার ভাবে আবার কালেমা পাঠ করে মুসলিম হয়।
পাঠ্য উপলব্ধিঃ নিউটনের একটা সূত্র পড়েছিলাম অনেকটা এরকম, প্রত্যেক বলেরই একটা বিপরীত মুখী ক্রিয়া আছে তবে তার জন্য শর্ত হলো কোন কিছুতে সেটা গিয়ে লাগতে হবে। তাহলে সেটা ঠিক যত বেগে আঘাত করবে ঠিক ততটুকু বেগেই আবার ফেরত আসবে। যেমন বল মেঝেতে ফেললে ঠিক সেই বেগেই আবার ফেরত আসে। ঠিক তেমনই, উনাদের ক্ষেত্রে হয়েছে। উনারা হারিয়ে আবার এমন ভাবে ফিরে এসেছেন সত্যের পথে যেন প্রত্যেক জন এক একটা ধারালো অস্ত্র। যাদের সংস্পর্শে আসলে আর সংশয় থাকার সুযোগ নাই। তারা অধিকাংশই এখন দ্বীনের জন্য মেহনত করে যাচ্ছেন। আল্লাহ যেন উনাদের মেধাকে আরো শক্তিশালী করে দেন। আমিন।
sharif.bmb44 –
দেশের শীর্ষ মেডিকেল কলেজ, বুয়েট, কুয়েট, রুয়েট, শীর্ষ বিশ্ববিদ্যালয়, অক্সফোর্ড এবং ক্যামব্রিজ ইউনিভার্সিটিতে অধ্যয়নরত আমাদের এক ঝাঁক তরুণ ভাই-বোনদের দ্বীনে ফিরে আসার গল্প। এদের কেউই মাদ্রাসায় পড়েন নি। বড় হয়েছেন সেক্যুলার অথবা গতানুগতিক মুসলিম পরিবারে। সেসব ভাই-বোনরা যখন দ্বীনে আসে, প্র্যাকটিসিং হয়, তার পেছনে অনুঘটক হিসেবে কাজ করেছে কোন জিনিস? সেসব গল্প নিয়েই ‘প্রত্যাবর্তন’। শুধু নন-প্র্যাকটিসিং থেকে প্র্যাকটিসিং মুসলিম হওয়া ভাই-বোনদের গল্প নয়, আছে ভিন্ন ধর্ম থেকে ইসলামে ফিরে আসা কিছু ভাই-বোনদের গল্পও। এমন একটা বই, যেটা জেনারেল লাইনে পড়ুয়া ভাই-বোনদের দ্বীনে ফেরার জন্য খুব উৎসাহ জোগাবে, ইনশাআল্লাহ।