ফেরা
ফেরা “অতঃপর আল্লাহ ঈমানদারদেরকে হেদায়েত করেছেন সেই সত্য বিষয়ে, যে ব্যাপারে তারা মতভেদে লিপ্ত হয়েছিল। আল্লাহ যাকে ইচ্ছা, সরল পথ বাতলে দেন।”[সূরা বাকারাঃ২১৩]
বইটা পড়ছিলাম আর বার বার ফিরে যাচ্ছিলাম আমার অতীতের দিনগুলাতে। দ্বীনের পথে আসার পর থেকে অতীতের চাইতে হাজার গুণ সুখে আছি,শান্তিতে আছি।আলহামদুলিল্লাহ।ওয়াল্লাহি,ঐ দিনগুলা একটুও মিস করি না।তবে কেন জানি যখনই কারো ফিরে আসার গল্প শুনি/পড়ি কলিজাটা ধুমড়ে মুচড়ে উঠে।মনে পড়ে যায় সেই দিনগুলা…।আর সেই ফিরে আসা মানুষগুলাকে মনে হয় আমার আত্মার আত্মীয়।
বইটার লেখিকা দুই বোন।”ফেরা” নামক বইয়ের প্রথম অংশে তারা ব্যক্ত করেছেন তাদের জীবনের শুরুতে মুসলিমদের প্রতি জন্ম নেওয়া ঘৃণা,বিদ্বেষ,ক্ষোভ।তারপর একটা সময় চির সত্যের পথে তাদের ফিরে আসার গল্প।সংগ্রামের গল্প।মনের মত করে দ্বীন পালন করতে পারার আকুতি।
বইটা পড়ার সময় কয়েকটা জায়গায় এসে আটকে যাচ্ছিলাম বার বার।নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছিল।বিশেষ করে রামাদ্বানের গল্পগুলা আমায় নস্টালজিক করে তুলছিল।রামাদ্বানে লেখিকার রাব্বের আরো কাছে যাওয়ার প্রয়াস-প্রচেষ্টা মনে করিয়ে দিচ্ছিল আমার জীবনের প্রায় বছর চারেক আগের কোন এক রামাদ্বানের কথা।মধ্যরাতে আমি আর আমার বোনেরা মিলে ডিসিশান নিয়েছিলাম ফোন থেকে সব মিউজিক ডিলিট করে দেওয়ার।নিজ হাতে সাজানো বাংলা আর হিন্দি গানের ফোল্ডারগুলা ডিলিট দিয়েছিলাম সেদিন।দিনের বেলা টিভির নিচে সাজিয়ে রাখা সেই ছোটবেলা থেকে জমানো সবগুলা সিডি আর ডিভিডির ক্যাসেট নিয়ে দাড়িয়েছিলাম ছাদের উপর।ঘরের পেছনের ছোট্ট খাদে ক্যাসেটগুলা ছুড়ে ফেলার আগে পেছন ফিরে আপুকে বলেছিলাম, “আপু ফেলে দিব?”আপু বলেছিল,”ফেলে দিব মানে???বুঝতে পারছি তুই পারবি না,আমার হাতে দে।আমি বলেছিলাম, “না না আমিই ফেলবো।” সেদিন সর্বশক্তি দিয়ে ছুড়ে ফেলে দিয়েছিলাম সখের সব ক্যাসেটগুলা।বাবাই বলে বিদায় জানিয়ে ফিরে এসেছিলাম মিউজিক আর মুভির দুনিয়া থেকে।
যখন নাইলা আপুর বর্ণনাগুলো পড়ছিলাম মনে হচ্ছিল এ যেন আমারই প্রতিচ্ছবি।উনার সাথে আমার অনেক মিল।পার্থক্য এটুকুই উনি রিভার্টেড মুসলিমাহ আর আমি রিকানেক্টেড।দ্বীনের পথে আসার ক্ষেত্রে উনার বোনের প্রভাব যেমন মুখ্য ছিল আমার বেলায়ও ছিল অনেকটা সেই রকম।
যখন কোন মেয়েকে দেখি নিজ পরিবারের কারণে দ্বীন পালনে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে তখন খুব খারাপ লাগে।ইচ্ছে করে তাদেরকে আমার বাসায় নিয়ে আসি।নাইলা আপু আর সিহিন্তা আপুর কাহিনী পড়ে ইচ্ছা করছিল উনাদেরকেও আমার বাসায় নিয়ে আসি আর বলি,”যেই সৃষ্টিকর্তা এই পৃথিবীটা সৃষ্টি করেছেন আমার বাসাটাও সেই সৃষ্টিকর্তারই সৃষ্টি।এখানে সৃষ্টিকর্তার বিধান মানতে আপনাদের কেউ বাধা দিবে না।কিছু বলবে না।কিচ্ছুটি না।ইচ্ছা মত নামাজ পড়েন,রোজা রাখেন,পর্দা করেন।”
কিন্তু তার আর প্রয়োজন হয় নাই।আল্লাহ উনাদের সাহায্য করেছেন ইউসুফ আর শরিফ আবু হায়াত অপুর মত দুজন মানুষকে পাঠিয়ে।যখন উনাদের আগমনের কাহিনী পড়ছিলাম মনে হচ্ছিল সিনেমা দেখছি।ভাবছিলাম অবশেষে হিরোদের আগমন ঘটলো।আমার মতো মুসলিম পরিবারের মেয়ে ইউসুফ আর অপুর অনুপস্থিতিতে ভাইদের কাধে মাথা রেখে দিব্যি জীবনটা পার করে দিতে পারবে,আলহামদুলিল্লাহ।কিন্তু উনাদের তো সেরকম কোন ঠাই ছিল না।পরিবারের সবার চোখ ফাকি দিয়ে উনাদের নামাজ পড়তে হয়েছে,কখনো না খেয়ে রোজা রাখতে হয়েছে,কখনো বা ইফতার না করেই রোজা ভাঙ্গতে হয়েছে।ওড়না মাথায় দিতে গিয়েও লোকোচুরি করতে হইছে পরিবারের মানুষগুলার সাথে।ভাবলেই গা শিউরে উঠে।এমন পরিস্থিতিতে ঐ হিরোদের আগমন যে বড্ড প্রয়োজন ছিল।
সেদিন বান্ধবি বলছিল,”তাইবা নিক্বাব নিয়ে অনেক সমস্যায় আছি।পরিবার থেকে কোন সাপোর্টই পাই না।দোয়া করিস আমার জন্য,আমার পরিবারের হিদায়াতের জন্য।”ওর হাতে “ফেরা” ধরিয়ে দিলাম।আর বললাম,”আমরা অনেক সুখে আছি রে বান্ধবী।বইটা পড়লে বুঝতে পারবি দ্বীন পালন করার জন্য মানুষ কত কষ্টই না করতেছে।কত ধৈর্য্যই না ধরতেছে।আলহামদুলিল্লাহ আমরা মুসলিম পরিবারে জন্মেছি বলে।”
দ্বীনের পথে আসার পর একটা মানুষ নিজের ব্যাপারে যতটুকু শান্তি অনুভব করে তার চাইতে দ্বিগুণ অশান্তিতে ভোগে তার পরিবারের মানুষগুলার কথা চিন্তা করে।হোক সে রিভার্টেড কিংবা রিকানেক্টেড।আল্লাহর রহমতে সে ফিরে আসলেও তার কাছের মানুষগুলা যখন রয়ে যায় জাহিলিয়াতে নিমগ্ন তখন সেই ফিরে আসা মানুষটি ছটফট করতে থাকে তার প্রিয় মানুষগুলাকে হিদায়াতের পথে দেখার জন্য।এমন ছটফট করনেওয়ালা অসংখ্য হৃদয় আমি দেখেছি।দেখেছি তাদের ছলছল করা চোখ।চোখের পানি।খুব কাছ থেকে দেখেছি তাদের।আই ক্যান ফিল দ্যাম।আই ক্যান ফিল দেয়ার ব্লিডিং হার্টস…
“আপনি যাকে পছন্দ করেন, তাকে সৎপথে আনতে পারবেন না, তবে আল্লাহ তা’আলাই যাকে ইচ্ছা সৎপথে আনয়ন করেন। কে সৎপথে আসবে, সে সম্পর্কে তিনিই ভাল জানেন।”[২৮:৫৬]
আল্লাহর কাছে সব সময়ই চাই যাতে প্রতিটি প্রিয় মানুষ ফিরে আসে হিদায়াতের সুশীতল ছায়ায়।
সমালোচনাঃ কোরআন-হাদিসের বাইরে অন্যান্য বইয়ের জগতে সদ্য ফিরে আসা এক পাঠক আমি।এই জগতের বইয়ের কোন ভুল বের করার মত জ্ঞান এখনো হয়ে উঠেনি।আরো ৫/১০ টা বই পড়লে হয়তো সমালোচনা করার মত কিছু খোঁজে পেতাম।হয়ত বা।হয়ত না।
যাইহোক,কাভারটা অনেক ভালো লেগেছে।কালো হচ্ছে আমার প্রিয় রঙ।আর সাদা কালোর কম্বিনেশান সবসময়ই আমায় টানে।তার উপর ছোট্ট একটা পাখি হেলায় হেলায় সকালটা পার করে সন্ধ্যা নামার আগে ফিরে এসেছে তার আপন নীড়ে…
আর লিখতে ইচ্ছে করছে না।চোখ দুইটা বুজে আসতেছে।চোখ বন্ধ করে দু’হাত প্রশস্ত করে মুক্ত আকাশের নিচে দাঁড়িয়ে সব্বাইকে আহবান করে বলতে ইচ্ছা করছেঃ হে প্রশান্ত মন,তুমি তোমার পালনকর্তার নিকট ফিরে যাও সন্তুষ্ট ও সন্তোষভাজন হয়ে।আর অন্তর্ভূত হয়ে যাও সেইসব সফলকামদের যাদের কাছে সত্য উপস্থিত হলে তারা বলে,”সামি’না ওয়া আত্বা’না।”
ফেরা
[রিভিউ লেখকঃ Taiyeba Begum]
যে কোন ইসলামী বই পেতে ইসলামিক বইঘর.কম এর সাথেই থাকুন
বি:দ্র: ফেরা বইটি free pdf download করিতে চাহিয়া লেখকদের নিরুৎসাহিত করিবেন না
মুহাম্মাদ নাফিস নাওয়ার –
ফেরা ইসলামিক বইটির পরিচিতি
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম। সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর যিনি আমাদেরকে দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন মুসলিম করে, দিয়েছেন মুসলিম ঘর যেখান থেকে আমরা পেয়েছি সত্য পথের দিশা। পেয়েছি ক্বুর’আনের শিক্ষা, যদিও মানতে পেরেছি তার খুব কমই। তাহলে কি অবস্থা সেই মানুষগুলোর যারা জন্মেছে কাফিরের ঘরে? যারা জন্মেছিলো ফিতরাতের উপর, কিন্তু তাদের পরিবার আর এই সমাজ তাদেরকে সত্যের উপর টিকে থাকতে দেয় নি। সোজা পথ না চেনায় তাদের পথটা বেঁকে গেছে, যার শেষটুকুতে লেলিহান আগুনের হলকা ছাড়া আর কিছুই নেই। বেশির ভাগ বনী আদমই নির্বিকার হেঁটে যায় এই ভয়ানক রাস্তায়, ভাবলেশহীন চিন্তামুক্ত হয়ে। এদের মধ্যেই কারো কারো খটকা লাগে, টনক নড়ে, বুক কাঁপে। তারা আকাশের দিকে চেয়ে দেখে, সূর্য আর তারাগুলোর আলোয় পথ চিনে নিতে চায়। বুঝতে পারে এ বড় ভয়ংকর পথে চলছে তাদের ক্যারাভান। ফিরে আসে তারা, পালিয়ে আসে মিথ্যার বিভীষিকা থেকে। সত্যের ছায়ায় প্রাণ জুড়ায় তাদের, শান্তি পায় তাদের অস্থির তনুমন। এরকমই দুই পথ না চেনা পথযাত্রীর মিথ্যাকে চেনা, সত্যকে খোঁজা আর সবশেষে সেই সত্যকে আঁকড়ে ধরে সত্যের কাফেলার অংশ হওয়ার এক অসাধারণ সত্য কাহিনীর দুর্দান্ত এক বিবরণীই হচ্ছে সরোবরের অসাধারণ এক উপহার – “ফেরা“।
ফেরা বইয়ের রিভিউ
কিছু বই থাকে, অন্য জগতের। এ বইগুলো আমাদের আপ্লুত করে, বিহ্বল করে দেয়। চোখের কোণায় পানি টলটল করে, কেউ লুকোয়, কেউ ঝরঝর কেঁদে ফেলে। ব্যস, এতটুকু বলেই থেমে যাওয়া যায়। একটা বইয়ের রিভিউ লিখতে গিয়ে এতটুকু বলাটাই সম্ভবত পাঠককে বইয়ের মূল্যায়নে সাহায্য করতে যথেষ্ট। কিন্তু না, আরো কিছু বলি।
এ গল্প বাস্তবের। আমাদেরই দেশের, আমাদেরই সমাজের। আমাদেরই মত চোখ কান মাথাওয়ালা মানুষের। তাহলে স্পেশাল কি এখানে? স্পেশাল তো আছেই। এটা সেই সমাজ যে সমাজের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ মুসলিম। অবশ্য কি ধরনের মুসলিম সেই ব্যাপারটুকু না বলাই ভালো। যদিও না বলেই অনেক কিছু বলা হয়ে যায়। এটা সেই সমাজ যেখানে আমরা মুসলিম নামধারীরা অবলীলায় সালাতকে ভুলে থাকি। ভুলে থাকি আমাদের উপর অর্পিত সব দায় দায়িত্বকে, নাকমুখ গুঁজে অবিরাম ছুটতে থাকি দুনিয়া নামের মরিচীকার পেছনে। ধুলো জমে সাত আকাশের ওপার থেকে পাঠানো অমূল্য কিতাবটার ওপর, ভুলে যাই আমরা আমাদের সত্যিকার পরিচয় আর গন্তব্য। এই আমাদের সমাজ, যেখানে আমাদের চারপাশে সত্যকে পৈত্রিক সূত্রে না পাওয়া মানুষগুলো আমাদের কাছ থেকে কিছুই শিখতে পায় না। অথচ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম আর তাঁর সঙ্গীদের চরিত্রেই দা’ওয়াহ পৌঁছেছিলো কাফিরদের কাছে। তাঁদের মুখ, তাঁদের অস্ত্র আর তাঁদের চরিত্র সব কিছু দিয়েই তাঁরা দা’ওয়াহ পৌঁছে দিয়েছিলেন। আর আমরা? তারপরও কিছু সৌভাগ্যবান আর সৌভাগ্যবতীরা থাকেন। মহান আল্লাহ কখনোই সত্যের খোঁজে থাকা তাঁর বান্দা বান্দীকে বিমুখ করেন না।
দুই বোন। বড় মেয়েটা একটু ভাবুক। পড়ুয়া, শান্তশিষ্ট। প্রচন্ড ধর্মানুরাগী। জেসাস ক্রাইস্টের একনিষ্ঠ ভক্ত। বাবা অবশ্য এককালে মুসলিম ছিলেন। প্রেমের টানে কাছে আসতে গিয়ে ছেড়ে এসেছেন পৃথিবীর সবচেয়ে দামী জিনিস। খ্রিস্টান মায়ের মেয়েরা খ্রিস্টধর্মকে বুকে নিয়েই বড় হয়েছেন। বড় মেয়ে একনিষ্ঠ, ছোটটা চঞ্চল। বড়জন চিন্তাশীল, ছোটজন বড় বোনের আদর্শ অনুসারী। ছোটবেলায় এতোটাই ধর্মের অনুসারী ছিলেন যে দাদা বাড়িতে বেড়াতে গিয়ে টিভিতে আযান শুনে চমকে উঠেছিলেন, চেঁচিয়ে সেটা বন্ধ করতে বলেছিলেন। জানতেন বাবার খ্রিস্টান হওয়ার কাহিনী, শুনেছিলেন বাবাকে মারতে এসেছিল গ্রামের সব মানুষ। চারিদিকে অত্যাচারিত নির্যাতিত মুসলিমদেরকেই চিহ্নিত করা হচ্ছিল ‘সন্ত্রাসী’ হিসেবে। মুসলিমদের বিরুদ্ধে তীব্র ঘৃণা নিয়ে নিয়ে বড় হয়েছেন। ধর্মের প্রতি তাঁর অনুরাগ মুগ্ধ করতো আশপাশের সবাইকে, সবাই তাকে জানতো ‘ভালো মেয়ে’ হিসেবে। একদিন স্কুলে এক মুসলিম সহপাঠীর কাছ থেকে ইসলাম বই নিয়ে জানতে পারলেন অনেক কিছু। ভাববাদীরাই মুসলিমদের নবী, বাইবেলে বলা সব ভাববাদীদেরকেই মুসলিমরা নবী হিসেবে মানে। নামগুলো একটু অন্যরকম করে ওরা বলে। বিভিন্ন অনুষ্ঠানের শুরুতে হওয়া ক্বুর’আন তিলাওয়াত গুলো অন্তর ঠান্ডা করে দিত তাঁর, মুগ্ধ হয়ে শুনতেন তিনি। এভাবেই একটু একটু করে মহান রাব্ব তাঁর বান্দীর অন্তরে তাঁর দ্বীনের প্রতি ভালোবাসার বীজ বুনে দিতে থাকেন। আগ্রহ জাগে তাঁর। বাবাকে জিজ্ঞেস করেন সত্য ধর্ম কোনটা, জবাব পান না। তাঁর পড়ুয়া চরিত্র এবার কাজে আসল তাঁর। আবিষ্কার করলেন বাইবেলে সৃষ্টির বর্ণনায় কি বিশাল ভুলই না রয়েছে! তাঁর চিন্তার নিস্তরঙ্গ জগতে দোলা লাগলো। মায়ের কড়াকড়িতে ঘরের বাইরের জগতে বিচরণের সুযোগ কম থাকায় বইই ছিল তাঁর জগত। পড়তে থাকলেন অবিরাম। আশপাশের বিভিন্ন ঘটনায় আর বই পড়ার প্রভাবে একটা সময় ধর্মের প্রতি তাঁর শ্রদ্ধাবোধ আস্তে আস্তে উঠে যেতে থাকলো। কলেজে ওঠার পর ধর্মের প্রতি তাঁর ভক্তি আরো কমতে থাকে। ইন্টারনেটের ব্যবহার বেড়ে যায়। আল্লাহ তাঁর বান্দীকে পথ দেখাতে থাকেন একটু একটু করে। স্প্যাম মেইল চেক করতে গিয়ে পেয়ে যান ক্বুর’আন পড়ার একটা ওয়েবসাইট। কলেজ পাশ করে ভর্তি হলেন প্রাইভেট এক ভার্সিটিতে যেখানে বাধ্য হয়ে তাকে পড়তে হল ইসলামের ওপর কিছু কোর্স। আল্লাহ অবিরাম ধারায় তাঁর দাসীর ওপর রহম করতে থাকলেন। আল্লাহু আকবার! এভাবে চলতে চলতে একদিন হঠাৎ তাঁর জীবনে নেমে আসে এক ছেদ। টাকার অভাবে প্রস্তুতি থাকা সত্ত্বেও পরীক্ষা দিতে পারলেন না। মন ভেঙে গেল। টাকার অভাবে পরের সেমিস্টারও একই দশা। আল্লাহ অবশেষে তাঁর বান্দীর জন্য চূড়ান্ত ক্ষেত্র যেন প্রস্তুত করে দিলেন। ২০০৭ এর দিকে বাসায় নেট কানেকশন কেটে যাওয়ায় ফিরে গেলেন আবার বইয়ের দিকে। শুরু করলেন এক ধারসে সব বই পড়া। গল্প-উপন্যাস-প্রবন্ধ, বাদ গেলো না কিছুই। বাকি থাকলো শুধু বাইবেল।শুরু হল বাইবেল নিয়ে সাধনা। বিস্ময় বাড়তে থাকলো যিশুর কথা আর তাঁর অনুসারীদের কাজের পার্থক্য দেখে। অবাক হয়ে দেখলেন যিশুর আদেশ আর তাঁর ধর্মের নাম নিয়ে চলে আসা কাজ। আগ্রহ বাড়তেই থাকলো তাঁর। পড়তে শুরু করলেন হিন্দুদের ধর্মগ্রন্থ। মোড় ঘুরতে শুরু করলো তাঁর জীবনের। একদিন ছোটবোনের ক্লাসমেটের থেকে পেলেন এক ইসলামি বই। তাঁর আগ্রহের সাথে পড়া প্রথম ইসলামি বই। জানলেন এই দ্বীন কিভাবে মানুষকে তাঁর স্রষ্টার পরিচয় দিয়েছে। মুগ্ধতা আরো বাড়লো তাঁর। রামাদান মাসে ভার্সিটিতে বিশেষ প্রশ্নোত্তর অনুষ্ঠানে গেলেন, জানলেন আরো অনেক কিছু। ইসলামের প্রতি তাঁর আগ্রহ দেখে অনেক সহপাঠীই আন্তরিক হয়ে উপহার দিলো অনেক বই। এভাবেই একদিন উপহার পেলেন ক্বুর’আনের বাংলা অনুবাদ। মুগ্ধ হয়ে পড়ে যেতে থাকলেন তিনি। কালামুল্লাহ তাঁকে কাঁপিয়ে দিলো, প্রশান্ত করে দিলো তাঁর তৃষিত আত্মাকে। সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললেন মুসলিম হতে হবে তাঁকে। পড়তে হবে অনেক। জানতে হবে ইসলামকে। তারপর………
তারপর আরো অনেক কিছু। কিছু বলতে চেয়েছিলাম, বেশিই বলে ফেলেছি। এই বইটি আপনাকে নাড়িয়ে দেবে ইনশাআল্লাহ। আপনাকে বুঝতে শেখাবে যে সোনার খনি আমরা বিনাকষ্টে পেয়েছি সেটাকেই আরেকজন পেয়েছে বহু কষ্ট করে। এই দ্বীন এতো সস্তা নয় যে হাত বাড়ালেই একে পাওয়া যায়। এ এক অমূল্য রত্ন যাকে পেতে হয় আকুল হয়ে, রক্ষা করতে হয় অনেক মূল্য দিয়ে। এই সোনার খনি আসলে এতো সহজে পাওয়া যায় না। এ আমাদের ভ্রান্তিবিলাস যে আমরা সোনার খনি পেয়ে গেছি। আমরা স্রেফ ঢোকার রাস্তাটুক জানি, এটুকুও বা হয়তো অনেকে জানি না। আমরা কি পেয়েছি আর কি পেয়ে কি হারাচ্ছি, সেই বোধ আমাদের অনেকেরই নেই। সৌভাগ্যবান তাঁরাই যারা এই অমূল্য দ্বীনের ক্বদর করতে পেরেছে। এই বই আমার মত পাপিষ্ঠের মুখ দিয়ে বারবার তাকবীর বের করার কারণ হয়েছে। চোখ ভিজে গেছে আমার, এই রিভিউ লিখতে গিয়েও ভিজে গেছে চোখের জমিন। আহ! আমার আল্লাহ তাঁর বান্দাদের কত তীব্রভাবেই না ভালোবাসেন!
আল্লাহ এই প্রচেষ্টা কবুল করুন। কবুল করুন আমাদের মুহতারামা বোনদেরকে। আল্লাহ তাঁদের আমৃত্যু সিরাত্বুল মুস্তাক্বিমের উপর অটল অবিচল রাখুন। আমাদেরও যেন একই পথের ওপর দৃঢ় রাখেন। আমীন। সরোবরকে অন্তর থেকে ভালোবাসা জানাচ্ছি অসাধারণ একটা বই উপহার দেবার জন্য। একটা বই প্রকাশে যতগুলো কোয়ালিটি মেইন্টেইন করা দরকার – কাগজের মান থেকে শুরু করে বিষয়বস্তু নির্বাচন পর্যন্ত – তার সবগুলোই রক্ষা করেছে সরোবর। যদিও বইটি বর্তমানে বের করছে সমকালীন প্রকাশনী। আল্লাহ এই বইয়ের সাথে যুক্ত প্রতিটি মানুষকে তাঁর দ্বীনের জন্য কবুল করে নিন। শেষমেশ মহান রাব্বে কারীমের কাছে তাঁর এই গুনাহগার বান্দার বিনীত আবেদন থাকবে যে, ইয়া রাব্বী! যদি এই বইটি একটি মানুষের হিদায়াতের জন্য বিন্দুমাত্র কারণ হিসেবেও কাজ করে, তাহলে এর সাওয়াবের অংশে আপনার এই গুনাহগার বান্দাকেও যেন আপনি শামিল করে নেন। আমীন ইয়া রাব্বী।
Rafiqul Anower Monju –
ফেরা
আল্লাহ মানুষকে সৃষ্টির সেরা জীব হিসেবে সৃষ্টি করেছেন।
বিবেক, বুদ্ধিতে পরিপূর্ণতা দান করেছেন।তাই কোনটি সঠিক কোনটি ভুল, কোনটি সত্য আর কোনটি মিথ্যা সেটি মানুষ নিজের বিবেক বুদ্ধি কাটিয়ে বুঝতে পারে।সেই কারণে কারো কাছে ইসলামের দাওয়াত না পৌছালেও তার উপর ফরয হয়ে যায় দ্বীন এ ইসলামের উপর ঈমান আনা।
তেমনিভাবে ফেরা বইটিতে বর্ণিত হয়েছে এমনি কিছু বর্ণনা। এই বইয়ের দুই লেখিকা খ্রিষ্টান পরিবারে জন্মগ্রহন করেছে বলে প্রথমে তারা খ্রিষ্ট ধর্মের নিয়ম কানুন মেনেই বড় হচ্ছিল হঠাৎ বড় বোন সিহিন্তা শরীফার মনে নানান প্রশ্নের উদ্বেক হলো।কোন ধর্মটি,কোন ধর্মগ্রন্হটি সঠিক সেটা জানার প্রবল আগ্রহ সৃষ্টি হলো তার মধ্য।কোনটি সত্য ধর্ম তা অনুধাবন করার জন্য সে পড়তে লাগলো খ্রিষ্ট,হিন্দু,ও ইসলাম ধর্মের ধর্মীয় বই সমূহ। সকল ধর্মের ধর্মীয় বই সমূহ পড়ে সে অনুধাবন করতে পারল যে,ইসলাম ধর্মই একমাত্র আল্লাহর মনোনীত জীবনব্যবস্হা।যে ধর্মের প্রত্যকটি বিধি-বিধানে রয়েছে মানব কল্যাণ।তাই সেই খ্রিষ্ট ধর্ম ত্যাগ করে ইসলাম ধর্মকে গ্রহন করে।তার পরিবার খ্রিষ্টান পরিবার হবার দরূণ তাকে অনেক প্রতিবন্ধকতা অতিক্রম করতে হলো দিতে হলো কঠোর ধৈর্য্য পরীক্ষা। তার প্রভাব ও বই পড়ার প্রভাবে একসময় তার ছোট বোন নাইলাহ আমাতুল্লাহ ও সঠিক পথের সন্ধান পেল।
তাদের কয়েকটি চিন্তা ধারার সাথে আমার চিন্তা ধারার প্রভেদ রয়েছে।
পরিশেষে বলতে হয় সবসময় সত্য সমাগত আর মিথ্যা বিতাড়িত।