আমার দেখা পৃথিবী (৩য় খন্ড)
আমার দেখা পৃথিবী (৩য় খন্ড) আলোচ্য গ্রন্থটি লেখকের ভ্রমণকাহিনী “জাহানে দীদাহ”র বাংলা অনুবাদের তৃতীয় খণ্ড। যে দেশগুলোর ভ্রমন বৃত্তান্ত গ্রন্থটিতে এসেছে সেগুলো হল: স্পেন, ব্রুনাই, তুরস্ক, রিইউনিয়ন, দক্ষিণ আফ্রিকা, কাতার, হল্যান্ড, আমেরিকা, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, সৌদি আরব, কেনিয়া, আমেরিকা, জাপান, অস্ট্রেলিয়া, আয়ারল্যান্ড, ইয়েমেন, মালয়েশিয়া, নরওয়ে, সুইডেন ও ফিনল্যান্ড।
সফরনামাটি শুরু হয় স্পেন সফর দিয়ে। উক্ত সফরে লেখক স্পেনের মুসলিম শাসনের স্মৃতিবিজড়িত গ্রানাডা, আলহামরা, কর্ডোভা জামে মসজিদ, ওয়াদিউল কাবীর সেতু, মদিনাতুল যাহারা ইত্যাদি বেদনাবিধুর দর্শনীয় স্থান ভ্রমণ করেন। এসকল স্থান পরিভ্রমণে গিয়ে লেখক আবেগ তাড়িত হয়ে পড়েন। পাঠকের অবগতির জন্য তিনি স্পেন বিজয়ের কাহিনী বর্ণনা করেন। পাশাপাশি তারেক বিন যিয়াদের ভাষণটিও তিনি সফরনামায় তুলে ধরেন যা তিনি স্পেনের ভূমিতে অবতরণ করে মুসলিম সেনাদের উদ্দেশ্যে বলেছিলেন। স্পেন মুসলমানদের হাতছাড়া হওয়ার কারণ তিনি উল্লেখ করেন কবিতার একটিমাত্র ছত্রের মাধ্যমে:
“প্রথমে তীর ও তরবারি, শেষে সুর ও সঙ্গীত”
“মাজমাউল ফিকহিল ইসলামী”র একটি সম্মেলনে অংশগ্রহণ করতে লেখক ব্রুনাই যান। ব্রুনাইয়ের সফরনামায় লেখক ব্রুনাইয়ের রাজনৈতিক ও বিচার ব্যবস্থা সম্পর্কে সামান্য কিছু বর্ণনা পাঠকের জন্য তুলে ধরেন। পুরো সফরটি অতিবাহিত হয় সম্মেলনের বিভিন্ন অধিবেশনে। এখানে লেখক ফিকহ ভিত্তিক মাযহাব, সড়ক দুর্ঘটনা ও তার বিধি-বিধান, নিলাম, মুদ্রা, চিকিৎসা ইত্যাদি নিয়ে বিভিন্ন আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন।
তুরস্কের সফরনামাটি ছিল খুবই সংক্ষিপ্ত। সেখানে লেখক তুরস্কের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের বিভিন্ন উল্লেখযোগ্য দিক তুলে ধরেন।
এরপরের সফরনামাটি লেখকের আফ্রিকা মহাদেশের একটি ছোট্ট দ্বীপ রিইউনিয়নে অবস্থানকালীন সময়ের। সফরনামাটি না পড়লে কখনো জানা হত না যে, এই নামে একটি দ্বীপ আছে যেখানে প্রচুর সংখ্যক মুসলমান রয়েছে এবং রয়েছে সুন্দর সুন্দর অনেকগুলো শানদার ও পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন মসজিদ।
রিইউনিয়ন থেকে লেখক দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে যান। স্বাধীনতার পর দক্ষিণ আফ্রিকায় লেখকের এটি প্রথম সফর। এর আগেও লেখক দক্ষিণ আফ্রিকা সফর করেছেন যা তিনি সফরনামায় উল্লেখ করেছেন। এই সফরনামাতেও লেখক দক্ষিণ আফ্রিকায় মুসলমানদের স্বাধিকার প্রতিষ্ঠার এক ঈমানদীপ্ত ঘটনা বর্ণনা করেন।
“পাশ্চাত্যে দু’সপ্তাহ” নামক সফরনামায় তিনি যেসব দেশের সফরনামা লিপিবদ্ধ করেন। দেশগুলো হলো কাতার হল্যান্ড, কানাডা, আমেরিকা। এ সফরনামায় তিনি মূলত পাশ্চাত্য মিডিয়ায় ইসলাম বিরোধী প্রোপাগান্ডা ও পাশ্চাত্যে মুসলমানদের জীবন ব্যবস্থা নিয়ে আলোচনা করেন।
এরপরে লেখক আবারও তুরস্কের ইস্তাম্বুলের সফরনামা লিপিবদ্ধ করেন। এ সফরনামায় তিনি তুরস্কের রাজনৈতিক অবস্থা সম্পর্কে আলোচনা করেন। আল্লামা ইকবাল রহ.’র কবিতার কয়েকটি ছত্রের মাধ্যমে তিনি তুরস্কের অবস্থা বর্ণনা করেন এভাবে:
“নির্বোধ তুর্কিরা খেলাফতের পরিধেয় চিহ্ন করে ফেলল।
নিজেদের নির্বুদ্ধিতাও প্রত্যক্ষ করো, শত্রুদের চতুরতাও লক্ষ্য করো।”
কানাডার টরেন্টোতে ইসলামী ব্যাংকিং শীর্ষক কনফারেন্সে অংশগ্রহণ করতে লেখক কানাডায় গমন করেন। কনফারেন্স শেষে লেখক কানাডার বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান পরিভ্রমণ করেন ও কানাডার মুসলিমদের সাথে মতবিনিময় করেন। ওখান থেকে লেখক আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়ায় সফর করেন।
আমেরিকা থেকে ফিরতি সফরে লেখক জাপানে কিছুদিন অবস্থান করেন। জাপানের সফরনামায় লেখক জাপানের ইসলাম ও মুসলমানদের নিয়ে আলোচনা করেন। পাশাপাশি জাপানি মুসলিমদের কিছু প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করে সারা বিশ্বের মুসলিমদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
অস্ট্রেলিয়ার কিছু মুসলমানের আমন্ত্রণে লেখক অস্ট্রেলিয়ায় যান। সফরনামার এ অংশে লেখক অস্ট্রেলিয়ার ভূখণ্ড ও অধিবাসীদের ইতিহাস তুলে ধরেন। পাশাপাশি সেখানে ইসলামের আগমন নিয়েও আলোচনা করেন। উক্ত সফরনামায় তিনি উল্লেখযোগ্য যে বিষয়টি উল্লেখ করেন তা হলো অস্ট্রেলিয়ার মুসলমানগন দেশব্যাপী বিশাল সংগঠন “অস্ট্রেলিয়ান ফেডারেশন অব ইসলামিক কাউন্সিল” (AFIC) নামে একটি সংগঠনের মাধ্যমে ঐক্যবদ্ধ। সেখানে ভাষা বা চিন্তাধারা ভিত্তিক কোন দলাদলি নেই।
শায়খ ইউসুফ আল-কারদ্বাভীর আমন্ত্রণে “European Council for Fatwa and Research” এর সমাবেশে অংশ গ্রহণের জন্য লেখক আয়ারল্যান্ডের ডাবলিনে গমন করেন। সমাবেশ শেষে তিনি আয়ারল্যান্ডের বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান ও গ্রন্থাগার পরিদর্শন করেন। সেসকল গ্রন্থাগারে প্রাচীন বিভিন্ন গ্রন্থের পান্ডুলিপি নিজ চোখে প্রত্যক্ষ করেন। আয়ারল্যান্ড থেকে লেখক অক্সফোর্ডে গমন করেন। সেখানে তিনি সাইয়েদ আবুল হাসান আলী নদভী প্রতিষ্ঠিত “অক্সফোর্ড ইসলামিক সেন্টার” পরিদর্শন করেন। এছাড়াও সেখানে বিভিন্ন সেমিনার ও সিম্পোজিয়ামে অংশ গ্রহণ করেন।
ইয়েমেনের সান’আ নগরীতে “জামিয়াতুল ঈমান বিশ্ববিদ্যালয়”র শিক্ষা সমাপনী অনুষ্ঠানে নিমন্ত্রণ পেয়ে লেখক ইয়েমেন যান। অনুষ্ঠানে শায়খ ইউসুফ আল-কারদ্বাভীর পাশাপাশি লেখকও বক্তৃতা দেন। সফরনামায় লেখক ইয়েমেন সম্পর্কিত বিভিন্ন হাদিস বর্ণনা করেন। এরমধ্যে একটি হাদিস উল্লেখযোগ্য:
“তোমাদের নিকট ইয়েমেনে লোক এসেছে তাদের মন বড় কোমল এবং তাদের হৃদয় বড় বিনম্র। ঈমান ইয়েমেনের এবং হেকমত ইয়েমেনের।”
এছাড়াও লেখক ইয়েমেনের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ও ঐতিহাসিক স্থান পরিদর্শন করেন।
“Malaysian Securities Commission” এর আমন্ত্রণে শায়খ ইউসুফ আল-কারদ্বাভীর সাথে লেখক মালয়েশিয়ায় গমন করেন। সেখানে “Islamic Capital Market” শীর্ষক একটি আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন। এ সফরনামায় লেখক মালয়েশিয়ার বিভিন্ন অর্থ লগ্নি প্রতিষ্ঠান নিয়ে আলোচনা করেন। বিশেষ করে মালয়েশিয়ার হজ্জ্ব ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠান “Malaiyan Pilgrim Saving Corporation” এর চমৎকার ব্যবস্থাপনা নিয়ে আলোচনা করেন।
এরপর লেখক পৃথিবীর উত্তর প্রান্তে অবস্থিত নরওয়ে, সুইডেন, ফিনল্যান্ড ভ্রমণ করেন। অবাক করা বিষয় পৃথিবীর এই উত্তর প্রান্তেও, যেখানে আবহাওয়া খুবই ঠাণ্ডা ও বিরূপ, যেখানে প্রায় ছয় মাস রাত, ছয় মাস দিন হয়, সেখানেও অনেক মুসলমান রয়েছে। লেখক তাদের সাথে মত বিনিময় করেন ও সেখানকার বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান পরিভ্রমণ করেন। যেহেতু সেখানে দিন-রাতের পার্থক্য ব্যাপক অর্থাৎ প্রায় ছয় মাস একটানা দিন ও প্রায় ছয় মাস একটানা রাত হয় তাই লেখক সেখানকার নামাজ পড়ার নিয়ম কানুন নিয়ে কিছুটা আলোচনা করেন।
এরপর লেখক জার্মানি ও ইতালির সফরনামা লিপিবদ্ধ করেন। বিভিন্ন দর্শনীয় কিন্তু মানব জাতির জন্য শিক্ষণীয় স্থান বিশেষ করে প্রাচীন রোমান ধ্বংসাবশেষ পরিদর্শন করেন। ভ্যাটিকান শহর ভ্রমণের সময় লেখক উহার রাজনৈতিক ইতিহাস ও বর্তমান সার্বিক অবস্থা বর্ণনা করেন। পাশাপাশি সেখানকার মুসলমানদের সাথেও মতবিনিময় করেন।
লেখকের এই সফরনামার বেশিরভাগই ছিল অমুসলিম দেশসমূহে। সেখানকার দ্বীনি তৎপরতা নিয়ে লেখক যেমন আশাবাদী, আবার শঙ্কা থেকেও মুক্ত নন। কারণ প্রজন্মের পরম্পরায় অনেক মুসলিমই তাদের স্বকীয়তা হারিয়ে ফেলছে। আবার অনেক আলেমে-দ্বীন দিনরাত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন দ্বীন ইসলামকে উজ্জীবিত রাখতে। সেখানে এখনও প্রচুর মেহনত প্রয়োজন। সেইসাথে সংশ্লিষ্ট দেশের ভাষায় বিভিন্ন কিতাবাদিরও প্রয়োজন আছে। লেখক পুরো সফর নামায় এধরনের মেহনতের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন।
আমার দেখা পৃথিবী (৩য় খন্ড)
[রিভিউ লেখক : Riaz Ud-daula ]
বি:দ্র: আমার দেখা পৃথিবী (৩য় খন্ড) বইটি free pdf download করিতে চাহিয়া লেখকদের নিরুৎসাহিত করিবেন না
Reviews
There are no reviews yet.