সালাহউদ্দীন আইয়ুবী
সুলতান সালাহউদ্দিন আইয়ুবী দুর্ভাগ্যবশত আজ কিছু মুসলিম এই ভেবে হতাশ ও নিষ্ক্রিয় হয়ে বসে আছে যে, মুসলিমদের পুরনো গৌরব ফিরিয়ে আনার কোনো পথ এখন আর নেই। আবার কিছু মুসলিম আমাদেরকে সন্ন্যাসবাদের দিকে আহবান করে, কারণ তারা ভাবে ফিতনা থেকে বাঁচার জন্য বকরি নিয়ে পাহাড়ে ও বৃষ্টিময় স্থানে চলে যাওয়ার সময় চলে এসেছে। সহীহ বুখারিতে রয়েছে, “এমন এক সময় আসবে, যখন মুসলিমের সর্বশ্রেষ্ঠ সম্পত্তি হবে বকরি যা নিয়ে সে পাহাড় ও বৃষ্টিস্নাত স্থানে (উপত্যকায়) চলে যাবে, যাতে সে তার দ্বীন নিয়ে ফিতনা থেকে পালাতে পারে।” কিন্তু নবীজী ﷺ তাদের কথা বলছেন, যাদেরকে মুরতাদ হতে বাধ্য করা হবে। মুসলিমদের যতদিন ইসলামী বিধান পালনের ও পরস্পর সাহায্য-সহযোগিতা করার সুযোগ রয়েছে, ততদিন বৈরাগী জীবনযাপন হারাম।
আবার কিছু ‘আলিম বলে থাকেন যে, ইমাম মাহদি ও ‘ঈসা (‘আলাইহিমাসসালাম) আসা ছাড়া এ সমস্যা থেকে উত্তরণের কোনো পথ নেই। এ ধরনের হতাশ মনোভাব রাখা মুসলিমরা অন্য মুসলিমদের আগেই ধ্বংস হয়ে যাবে। নবীজী ﷺ বলেছেন, “যে বলবে যে মুসলিমরা ধ্বংস হয়ে গেছে, সে তাদের আগেই ধ্বংস হয়ে যাবে।”
কে ভেবেছিলো যে, ক্রুসেডারদের হাতে একশ বছর পরাধীনতার পর জেরুজালেমসহ অন্যান্য মুসলিম ভূখণ্ড আবারও মুক্ত হবে?
কে ভাবতে পেরেছিলো যে, বীর সালাহউদ্দীন এসকল ভূখণ্ড মুক্ত করবেন এবং হাত্তিনের যুদ্ধে জয়লাভ করে মুসলিমদের ক্ষমতা-প্রতিপত্তি ফিরিয়ে আনবেন?
কে ভাবতে পেরেছিলো যে, তাতারদের হাতে সারা মুসলিম সাম্রাজ্যের পতন এবং মুসলিমদের উপর ব্যাপক হত্যা ও ধর্ষণের পর আবারও ইসলাম গৌরব ও ক্ষমতা সহকারে মাথা তুলে দাঁড়াবে? অথচ বলা হয়ে থাকে তাতারি নেতা হালাকু খাঁ মুসলিমদের খুলি দিয়ে পাহাড় গড়েছিলো।
কে বিশ্বাস করতে পেরেছিলো যে, বীর সাইফুদ্দীন কুতুয ‘আইন জালুতের যুদ্ধে জয়লাভ করে মুসলিম বিশ্বকে মুক্ত করে হারানো গৌরব ফিরিয়ে আনবেন?
ইতিবাচক মনোভাব একটি জাতির উপর বিরাট প্রভাব ফেলে। জাতির মানুষেরা উদ্বুদ্ধ হয়ে বিজয় ছিনিয়ে আনে।
যুবসমাজের প্রতি আমার পরামর্শ থাকবে সালাহউদ্দীনের (রাহিমাহুল্লাহ) জীবনী ও তাঁর বিজয়ের কারণগুলো অধ্যয়ন করার জন্য। আমি নিশ্চিত যে, মুসলিম শাসক ও যুবসমাজ যদি সালাহউদ্দীনের দৃষ্টান্ত অনুসরণ করে, তাহলে তারা আবারও জেরুজালেম মুক্ত করবে, ফিলিস্তিন পুনরুদ্ধার করবে এবং ইসলামের পতাকা আবারও উঁচিয়ে ধরবে।
বি:দ্র: সালাহউদ্দীন আইয়ুবী বইটি free pdf download করিতে চাহিয়া লেখকদের নিরুৎসাহিত করিবেন না
Samir Saleh –
সালাহউদ্দীন আইয়ুবী
[উৎসর্গ: উম্মাহর মায়েদের প্রতি—তারা যেন অন্তত আর একজন সালাহউদ্দীন আইয়ুবীর জন্ম দিতে পারেন।]
ইবনে তাইমিয়া রহ. বলেন: ‘‘নূরুদ্দীন, সালাহ উদ্দীনের জীবনি থেকে শিক্ষা নাও; আর আল-আদেলের জীবনি থেকেও। তারা যে আমল করার (জিহাদ) মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা তাদেরকে তামকীন দিয়েছেন, দেশ থেকে দেশ বিজয় করার তাওফীক দিয়েছেন, শত্রুদেরকে লাঞ্ছিত করেছেন—তা থেকে শিক্ষা নাও। ’’ ––––মাজমুউল ফাতাওয়া: ২৮/৬৪৩।
✱যে কারণে সালাহউদ্দীন আইয়ুবী বইটি কেনা হল:
সালাহ উদ্দীন আইয়ুবী নিয়ে ঈমানদীপ্ত দাস্তান পড়েছি। ঐতিহাসিক উপন্যাস। যতোটা উপকারী, ক্ষতিকর তারচে’ বেশি । অনেক দিন থেকেই সালাহ উদ্দীন আইয়ুবী রহ. নিয়ে বাংলায় জীবনির একটা বই খুঁজছিলাম। যেটা আমি ছোট ভাই থেকে শুরু করে যে কাউকে পড়তে দিতে পারি। নিজে জোর-স্বরে আবৃত্তি করে পড়তে পারি। যাতে পাঠক টানার জন্য ‘পর্ণগ্রাফি’র ছোঁয়া থাকবে না। পেয়েও যাই এমন একটা বই। আলী নদভির একটা বই বাংলাতে এসেছে অনুবাদ হয়ে। কিন্তু সালাহ উদ্দীন রহ. এমন একজন মানুষ, যাঁকে এক ভাবে পড়লে, এক লেখক থেকে জানলে—যথেষ্ট নয়, যথেষ্ট হয় না।
একটা বই কিনলাম। কিনে পড়লাম। ‘কিন্তু কি বুঝলাম না বুঝলাম। বুঝেছি কি বুঝিনি, তাও তো বুঝিনি।’ বই পড়ার পর এমন একটা ভাব থেকে যায়। যদি আমার মতো ভুলো মনের পাঠক হয়, তবে তো এ বিষয়ে আমাকে একটা ছোট-খাটো ডিগ্রি অবশ্যই দিতে হবে। সেক্ষেত্রে জীবনি গ্রন্থগুলোতে যদি ‘শিক্ষা বা জীবন-পর্যালোচনা’ যুক্ত থাকে তবে তা সোনায় সোহাগা। যে কাজটা ঘুটি কয়েক লেখকের বইতে দেখা যায়। কোন বইতে পড়েছি এখন আর বইটির নাম মনে নেই। ওই যে বলালম না—‘ভুলো মনা পাঠক’—তাই নামটা মনে নেই বা ডাইরি খুঁজেও উদ্ধার করতে পারিনি বলে দুঃখিত। তো যা বলছিলাম, দু বছর আগে একটা বইয়ে দেখেছিলাম যে, প্রতিটি পরিচ্ছেদ শেষে লেখক এক লাইনে পরিচ্ছেদের সারাংশ লিখে দিয়েছেন। তাছাড়া অনেক সময় দেখা যায়—একটি লেখা পড়ে বিভিন্নজনে বিভিন্ন শিক্ষা বের করেন। ফলে মূল শিক্ষাটা তার নাগালের বাইরে থেকে যায়। এটা হয় পরিপার্শ্বিকতা-পরিবেশের কুপ্রভাবে। শিক্ষা বা পর্যালোচনা লিখে দিয়ে কৃতার্থ করার এ ধারাটা বাংলায় প্রথম দেখেছিলাম—রুহামা প্রকাশনীর ‘উসওয়াতুন হাসানাহ’ নামক সিরাতগ্রন্থে, যা অত্যন্ত উপকারী প্রমাণিত হয়েছে। আলোচ্য বইটিতে এ ধারাটা বজায় আছে। এখানে পর্যালোচনারূপে গ্রন্থ শেষে এমন কিছু মূল্যবান অধ্যায় সন্নিবিশিত করা হয়েছে। যা পড়লে এ বইটি পড়ে কী বুঝিনি, সেটা বোঝা সহজ হয়ে যাবে। এটিই হলো বইটি কেনার দ্বিতীয় কারণ। এর সাথে অন্য অনেক কারণও আছে, মূল কারণটি সামনে আসছে। ইন শা আল্লাহ।
✱কেন তাঁরা সালাহউদ্দীন আইয়ুবী বইটি বাছাই করলেন:
তারা বলতে ‘সালাহউদ্দীন আইয়ুবী রহ.’- বইটি যাদের পরিশ্রমে আজ আমরা বাংলা ভাষায় পড়তে পারছি, তারা। শাইখ উলওয়ানের এ কিতাবটি বাছাই করার কারণগুলো আমরা জানতে পারি ‘আমাদের কথা’ নামক সম্পাদকের কলম হতে নির্গত পরিচ্ছেদটিতে। তিনি সেখানে বলছেন:
‘বর্তমান বিশ্বব্যাপী মুসলিমদের এ লাঞ্ছনা , আমাদের উপরে কাফের-মুশরিকদের এ আগ্রাসন—আমরা ইতিহাসের মহাবীর সালাহ উদ্দীনের সময়ের সাথে কিছুটা মেলাতে পারি। সেদিন মুসলমানদেরকে ঘুমন্ত অবস্থা থেকে জাগিয়ে তুলেছিলেন সালাহ উদ্দীন। আবির্ভাব হয়েছিল এক মহান ত্রাণকর্তার। ’ এরপরে মুহতারাম সম্পাদক বইটি বাছাইয়ের কয়েকটি কারণ বর্ণনা করেন এভাবে:
০১. বইটি কলবরে বিশাল নয় যে পাঠকের ধৈর্যচ্যূতি ঘটবে। সহজেই বইটি থেকে সুশৃঙ্খল ধারণা পাওয়া যাবে।
০২. এত বিশাল উম্মাহ আজ মার খাচ্ছে। এমন একটি পরিস্থিতি সালাহ রহ. এর সময়েও ছিল। তিনি সে সময় উম্মাহর নেতৃত্ব দিয়েছিলেন ক্রুসেডারদের বিরুদ্ধে। আজ মুসলমানরা কিছু জায়গায় বিজয়ী হলেও অধিকাংশ জায়গাতেই পরাজিত। সালাহ রহ. ছিলেন বিজয়ী। তাহলে তার বিজয়ের ক্ষেত্রে কোন শক্তি, কোন কৌশল কাজ করেছে। এমন একটা পর্যালোচনা রয়েছে বইটিতে। [বইটি পড়ার মূল কারণই এটি]
০৩. লেখক বইটি লেখার কিছুকাল আগে জেরুজালেম দখলে রাখা ইসরায়েল ও আরবদের মাঝে যুদ্ধ হয়। সে সময় কীভাবে ইসলামি জিহাদ আরব জাতীয়বাদ সহ বিভিন্ন স্লোগানের ভিড়ে হারিয়ে গেছে—এমন একটা মূল্যবান ইস্যু তুলে ধরা হয়েছে বইটিতে।
✱ সালাহউদ্দীন আইয়ুবী বইয়ের উপরে সাধারণ একটা ধারণা:
বইটির একটা সংক্ষিপ্ত রূপ তুলে ধরছি। যেন পাঠক বইটি নিয়ে কিছুটা ধারণা পান। আমি নিজের হীন যোগ্যতাবলে যতটুকু পেরেছি তা তুলে ধরছি। সচেতন পাঠক আরো অনেক কিছুই জনতে পারবেন।
*জন্ম, পরিবার, বেড়ে ওঠা, অবস্থান উত্থান-পতন নুরূদ্দীনের নিকটে কিছু দিন।
* মিশরের করুণ অবস্থার বর্ণনা
* মিশর অভিযানে সালাহ উদ্দীনের অংশগ্রহণ
* মিশরে উযির পদে (ফাতিমী আল-আদিদের অধীনে)
* ঘরের শত্রু নিধন: মুসলমানদের মাঝে লুকিয়ে থাকা শত্রুদের শায়েস্তা করা।
* বহিঃশত্রু হতে মিশর রক্ষা: দামিয়েট্টা ও আলেকজান্দ্রিয়া বাঁচানো।
* মিশরকে শিয়া মতবাদ থেকে আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামআহর আকীদাতে আনা।
*১১৭১ ঈসায়ীতে আল-আদিদের মৃত্যুর পর মিশরের পূর্ণনিয়ন্ত্রণ সালাহ উদ্দীন রহ. এর হাতে।
* নুরুদ্দীনের সাথে সদ্ভাব বজায় রাখা।
* নুরুদ্দীনের মৃত্যুর পর, তার ছেলেদের মধ্যকার কোন্দল মেটাতে ও আল-মালিকের তত্ত্বাবধানে সিরিয়ায় সালাহ উদ্দীন রহ.।
* দামেস্ক, হোমস, হালাব আক্রমণ।
* সাইফুদ্দীনের সাথে সংঘর্ষ।
* আল-মালিকের সাথে সমঝোতা।
* মিসরে এসে অবস্থার তদারকি।
* আল-মালিকের মৃত্যু ও হালব বিজয়।
* মুসলিমদের এক পতাকাতলে আনার ক্ষেত্রে উদ্ভূত প্রতিবন্ধকতা দূর করা।
* আব্বাসী খলিফার নিকট বার্তা ও প্রতিনিধি প্রেরণ করা
* ক্রুসেড সংঘটিত হওয়ার কারণ-বর্ণন
—১ম ক্রুসেড ও জেরুজালেম দখল
—ক্রুসেডারদের বিজয়ের কারণ
* হাত্তিনে বিজয়ের পূর্বাভাস, হজ যাত্রীদের রক্ষা করা
—অতঃপর কয়েকটি শহর বিজয়ের পর জেরুজালেম বিজয়। বিধর্মীদের জেরুজালেম ত্যাগ, মুক্তিপণ, ইতিপূর্বে ক্রুসেডাররা জেরুজালেম দখল করে মুসলিমদের উপরে নির্যাতন চালিয়েছে কিন্তু এবার খ্রিস্টানরা মুসলমানদের বদান্যতা দেখেছে সুলতানের বদান্যতা গুণে।
—ক্রুসেডারদের অ্যাকর অবরোধ, ৩য় ক্রুসেড, অ্যকর উদ্ধারে মুসলমানদের ব্যর্র্থতা। অন্য কোন মুসলিম এলাকা দখলে খ্রিসাটনদেরকে ঠেকিয়ে রাখা। রামাল্লা চুক্তির মাধ্যমে ৩য় ক্রুসেডর পরিসমাপ্তি।
(মোটামুটি অধ্যায় এক থেকে সাতের সারসংক্ষেপ এরকম।)
* অধ্যায় আটে, মৃত্যুর পূর্বের বিবিধ ঘটনা বর্ণনা।
* অধ্যায় নয়: সালাহ উদ্দীন রহ. এর অমরনীতির বর্ণনা এবং মুসলিমদের সামগ্রিক বিজয়ের কারণ বর্ণনা।
* অধ্যায় দশ: মুসলিমরা আজ যে কারণে পরাজিত ।
* অধ্যায় এগারো: সালাহউদ্দীন আইয়ুবী রহ. এর চারিত্রিক গুণাবলি।
* অধ্যায় বারো: সালাহউদ্দীন আইয়ুবী রহ. এর সংস্কারমূলক কাজসমূহ।
বইয়ের মূল লেখকের কথা থেকে:
কে ভাবতে পেরেছিল যে, বীর সালাহ উদ্দীন এসকল ভূখণ্ড মুক্ত করবেন এবং হাত্তিনের যুদ্ধে জয়লাভ করে মুসলিমদের ক্ষমতা-প্রতিপত্তি ফিরিয়ে আনবেন?
ইতিবাচক মনোভাব একটি জাতির উপর বিরাট প্রভাব ফেলে। জাতির মানুষেরা উদ্বুদ্ধ হয়ে বিজয় ছিনিয়ে আনে।
যুবসমাজের প্রতি আমার পরামর্শ থাকবে সালাহ উদ্দীন রহ. এর জীবনি ও তাঁর বিজয়ের কারণগুলো অধ্যয়ন করার। আমার বিশ্বাস মুসলিম শাসক ও যুবসমাজ যদি সালাহউদ্দীন রহ. এর দৃষ্টান্ত অনুসরণ করে, তাহলে তারা আবারও জেরুজালেম মুক্ত করবে, ফিলিস্তিন পুনরুদ্ধার করবে এবং ইসলামের পতাকা আবারও উঁচিয়ে ধরবে।
গুণ বিচারে সালাহউদ্দীন আইয়ুবী বইটি:
বইটির অনুবাদ সাবলীল হয়েছে। এক দুটি জায়গা ব্যতীত অনুবাদের ছাপ তেমন বোঝা যায় না। অনুবাদ-কর্ম অনেক ক্ষেত্রে কঠিন হলেও সে কঠিন দেয়াল ভেঙে ভাব প্রকাশ করা হয়েছে উত্তমরূপে। বইতে শব্দচয়ন-বাক্যচয়ন প্রশংসনীয়। এর সাথে বিভিন্ন ক্ষেত্রে কবিতার সংযুক্তিতে বইটিকে আরো আকর্ষণীয় করে তুলেছে।
তবে কিছু ক্ষেত্রে দুয়েকটি টীকার অভাব অনুভূত হয়েছিল। কবিতার মান আরেকটু উন্নত হতে পারতো। বাঁধাই উন্নত। দাম সাধ্যের মধ্যে। দাম নির্ধারণের ক্ষেত্রটিতে বোঝা যায় যে, ব্যবসায়িক নয়, বরং আদর্শিক মান ধরে রাখাতেই সংশ্লিষ্টরা বিশ্বাসী। বানানের ভুল তেমন একটা নেই। তবে বইয়ের প্রচ্ছদে জন্ম সাল লেখা —৫৩২ হিজরী কিন্তু ভেতের বর্ণনায়—৫২৩ হিজরী। প্রচ্ছদের কথা বলতে গেলে, আরেকটু আকর্ষণীয় হওয়া উচিত ছিল। তবে পেজ মেকআপ মা শা আল্লাহ ভালো হয়েছে।
সালাহউদ্দীন আইয়ুবী বই থেকে কয়েকটি ঝলক:
* সালাহ উদ্দীন রহ. এর জন্মের সময়টিতে তাঁর পরিবারটি বিপাকে পড়েছিলেন। তাঁর সম্মানিত পিতা তখন বিরক্ত হয়ে এ দুর্ভোগের জন্য তাকেই দায়ী করতে চাইছিলেন। তাঁকে হত্যা করতে চাইছিলেন! তখন কেউ একজন সাবধান করে তাকে বলেন: ‘‘এতো আল্লাহর নির্ধারিত তাকদীর। বাচ্চার এতে দোষ কী? কে জানে এ শিশুই হয়তো ভবিষ্যতে বিখ্যাত বাদশাহ হয়ে উঠতে পারে। কাজেই তার যত্ন নিন।’’
* তারপর রাজা গায় অব লুসিগান ও কেরাক সম্রাট রেজিনাল্ডকে সালাহউদ্দীনের সামনে আনা হয়। তিনি তাদের জন্য পানি আনতে বললেন। পেয়ালার বেশিরভাগ পনি রাজা একাই সাবড়া করে দেয়, বাকীটা দেয় রেজিনাল্ডকে। সুলতান বললেন: আমরা তার প্রাণ বাঁচাতে পানি দিইনি।’’ তিনি রেজিনাল্ডকে মুসলিমদের কাফেলা আক্রমণ ও রাসূলুল্লাহ সা. কে নিয়ে কটূক্তি করার অপরাধে তিরস্কার করেন। পূর্বের শপথ অনুযায়ী রেজিনাল্ডকে হত্যা করেন।…
* কাজী বাহাউদ্দীন তাঁর জিহাদ ফী সাবী লিল্লাহর আগ্রহের বর্ণনায় বলেন:
‘‘তিনি জিহাদকে এতই ভালোবাসতেন যে, এটি তাঁর মন, মুখ, হাত জুড়ে থাকতো। সৈন্য, গোলাবারুদ আর জিহাদপ্রেমীদের নিয়েই ছিলো তাঁর দিনকাল। আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করার জন্য তিনি তাঁর পরিবার ও স্বদেশ থেকে দীর্ঘদিন দূরে থাকেন। ঝড়-ঝঞ্ঝায় পতনশীল তাঁবুর নিচে বাস করেই তিনি ছিলেন সন্তুষ্ট। অসুস্থতা সত্ত্বেও তিনি বেশ কয়েকবার সৈনিকদেরকে নেতৃত্ব দিয়ে শত্রুর মুখোমুখি হন!’’
তখন ইবনু শাদ্দাদের বিস্ময় প্রকাশে সালাহউদ্দীন রহ. তাঁকে বলেছিলেন: ‘‘ লড়াই শুরু করলেই আমার অসুস্থতা কেটে যায়।’’
* তিনি একবার কাজী বাহাউদ্দীনকে বলেন: ‘‘আমি আপনাকে কিছু কথা জানাতে চাই—আল্লাহ যদি আমাকে উপকূলের বাকী অংশগুলো জয় করার তাওফীক দেন, তাহলে আমি শহরগুলো (আমার ছেলেদের মাঝে) ভাগ-বাটোয়ারা করে দেবো। তারপর আমার উইল লিখে আপনার হাতে দিয়ে জাহাজে করে ক্রুসেডারদের দ্বীপগুলোতে চলে যাবো, যাতে কুফফারদের সব দলগুলোকে পরাস্ত করতে পারি অথবা আল্লাহর রাস্তায় শহীদ হয়ে যেতে পারি।’’
* আল-কাযী আল-ফাদলের আনা একটি কাফনে মোড়া অবস্থায় আসরের আগে সালাহউদ্দীনকে তাঁর কবর নামক আবাসস্থলে নিয়ে যাওয়া হয়। তাঁর কফিন দেখামাত্র সবাই একসাথে কান্না জুড়ে দেন। দামেস্কের দূর্গের প্রাঙ্গনে তাঁকে দাফন করা হয়।’’
☑পরামর্শ:
বইকে বলা হয় মানুষের বন্ধু। কিন্তু কথাটা কতটুকু সঠিক? এক্ষেত্রে আমার বিশ্বাস:- যে বই আমাকে ইসলাম বিমুখ করে সে বই বই-ই নয়। স্রেফ আবর্জনা। আর যে বই আমাকে ইসলামের পথে সাহায্য করবে, সে বই আমার বন্ধু, প্রকৃত বন্ধু। অনেক ইসলামী বইতে নেফাকীর ধূর্ততা থাকে। সে বিচারে এ বইটি ইসলামী শরীআহ ও মানহাজের অধিক নিকটবর্তী। তাই আমার পরামর্শ থাকবে—আপনি বইটি পড়ুন। অন্যকে পড়তে উৎসাহিত করুন।
Alamgir Hossain Manik –
সালাহউদ্দীন আইয়ুবী (রাহিমাহুল্লাহ)
কে ভেবেছিলো যে, ক্রুসেডারদের হাতে ৮৮ বছর পরাধীনতার পর জেরুজালেমসহ অন্যান্য মুসলিম ভুখন্ড আবারও মুক্ত হবে?
কে ভাবতে পেরেছিলো যে, বীর সালাহউদ্দীন এসকল ভুখন্ড মুক্ত করবেন এবং হাত্তিনের যুদ্ধে জয়লাভ করে মুসলিমদের ক্ষমতা-প্রতিপত্তি ফিরিয়ে আনবেন?
কে ভাবতে পেরেছিলো যে, তাতারদের হাতে সারা মুসলিম সাম্রাজ্যের পতন এবং মুসলিমদের উপর ব্যাপক হত্যা ও ধর্ষনের পর আবারও ইসলাম গৌরব ও ক্ষমতা সহকারে মাথা তুলে দাড়াবে?অথচ বলা হয়ে থাকে তাতারি নেতা হালাকু খাঁ মুসলিমদের খুলি দিয়ে পাহাড় গড়েছিলো।
কে বিশ্বাস করতে পেরেছিলো যে, বীর সাইফুদ্দীন কুতুয ‘আইন জালুতের’ যুদ্ধে জয়লাভ করে মুসলিম বিশ্বকে মুক্ত করে হারানো গৌরব ফিরিয়ে আনবেন?
ইতিবাচক মনোভাব একটি জাতির উপর বিরাট প্রভাব ফেলে।জাতির মানুষেরা উদ্বুদ্ধ হয়ে বিজয় ছিনিয়ে আনে।
যুবসমাজের উচিত সালাহউদ্দীন আইয়ুবীর (রাহিমাহুল্লাহ) জীবনী ও তার বিজয়ের কারনগুলো অধ্যয়ন করা।আমি নিশ্চিত যে, মুসলিম শাসক ও যুবসমাজ যদি সালাহউদ্দীনের দৃষ্টান্ত অনুসরন করে, তাহলে তারা আবারও জেরুজালেম মুক্ত করবে, ফিলিস্তিন পুনরুদ্ধার করবে এবং ইসলামের পতাকা আবারও উঁচিয়ে ধরবে।
আল্লাহ বলেন – ‘দেশে যাদেরকে দুর্বল করে রাখা হয়েছিলো, আমি তাদের প্রতি অনুগ্রহ করার এবং তাদেরকে নেতা ও উত্তরাধিকারী করার ইচ্ছে করলাম।’ (সূরা আল ক্বাসাস ২৮:৫)
হে যুবসমাজ! ভবিষ্যতে একদিন না একদিন মুসলিমরা অবশ্যই বিজয়ী হয়ে ইসলামের গৌরব পুনরুদ্ধার করবে।এটি নবীজীর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) হাদীস থেকে প্রমানিত,
“তোমাদের মধ্য নবুওয়াত থাকবে যতক্ষন আল্লাহ ইচ্ছা করেন, তারপর আল্লাহ তার সমাপ্তি ঘটাবেন।তারপর প্রতিষ্ঠিত হবে নবুওয়াতের আদলে খিলাফত।তা তোমাদের মধ্যে থাকবে যতক্ষন আল্লাহ ইচ্ছা করেন, অতঃপর তিনি তারও সমাপ্তি ঘটাবেন।তারপর আসবে যন্ত্রনাদায়ক বংশের শাসন, তা থাকবে যতক্ষন আল্লাহ ইচ্ছা করবেন।এক সময় আল্লাহর ইচ্ছায় এরও অবসান ঘটবে।তারপর প্রতিষ্ঠিত হবে জুলুমের শাসন এবং তা তোমাদের উপর থাকবে যতক্ষন আল্লাহ ইচ্ছা করবেন।তারপর তিনি তা অপসারণ করবেন।তারপর আবার ফিরে আসবে নবুওয়াতের আদলে খিলাফত।তখন ইসলামের শিক্ষা পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হবে।ফলে জমিন ও আসমানবাসীরা খুশি হবে।তখন আসমান থেকে অবারিত বৃষ্টি ঝরবে এবং জমিন থেকে সবরকম উদ্ভিদ জন্মাবে।”
প্রতিয়মান হয় যে, বংশীয় শাসন উসমানী খেলাফতের মাধ্যমে শেষ হয়ে গেছে।এখন আমরা জুলুমের শাসনের অধীনে আছি, যা তুরস্কে কামাল পাশার হাতে শুরু হয়ে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে গেছে।কিন্তু ইসলামী পুনর্জাগরনের আভাস থেকে বুঝা যায় যে এই শাসন কখনই স্থায়ী হবে না।নবুওয়াতের আদলে খিলাফাত আবার ফিরে আসবে।ইনশাআল্লাহ শীঘ্রই তা বাস্তবায়িত হবে বলে আশা রাখি।