সহীহ হাদীসের আলোকে হানাফীদের নামায
সহীহ হাদীসের আলোকে হানাফীদের নামায ❝গ্রন্থটি লেখার প্রেক্ষাপটঃ
ভারত উপমহাদেশে বসবাসরত আমাদের কারও অজানা নয় যে, এদেশে কিছু মানুষের মেজাজ খুবই উগ্র। নিজ মত বা দর্শনের বিপরীত কোনো কিছু দেখলেই তার বিরোধিতা করে। এমনিতে বিরোধিতা করা দোষের কিছু নয়, কিন্তু কেউ সমালোচনার সীমা ছাড়িয়ে কারও বিরোধিতা করলে তা হয় চরম অন্যায়। আমাদের দেশে দুধরনের আহলে হাদিস ভাই আছেন। কিছু ভাই আছেন, মাশাআল্লাহ! যথেষ্ট বিনয়ী, ভদ্র ও ভিন্ন মতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। আর কিছু ভাই আছে, যারা অনেকটা উগ্র টাইপের। নিজ মতের বাইরে কাউকে যেতে দেখলে গোমরাহ, জাহান্নামি ও মুশরিক বলে অভিহিত করে। অশ্রাব্য ভাষায় বড় বড় ইমামদের গালিগালাজ করে। এরা মূলত বিচ্ছিন্ন একটি শ্রেণি,যাদের সাথে না সমাজের কোনো নিবিড় সম্পর্ক আছে আর না ইসলামের মৌলিক নীতিমালার সাথে কোনো যোগসাজস আছে। এদের কাজ হলো, সমাজে ভিন্ন মতালম্বীদেরকে বিভিন্নভাবে বিভ্রান্ত করা। আমাদের সমাজে যেহেতু হানাফি মতালম্বী লোক বেশি, তাই ক্ষুদ্র এ গোষ্ঠি হানাফি মাযহাবের ওপর নগ্ন হামলা শুরু করেছে। হানাফি মাযহাবের বিভিন্ন প্রমাণিত মাসআলাগুলোকে সমাজে ভুয়া বলে অপপ্রচার চালাচ্ছে। অথচ এগুলো ভুয়া ও ভিত্তিহীন কোনো মাসআলা নয়। সবগুলোর পিছনেই রয়েছে শক্তিশালী ও মজবুত দলিল। আপনি বেশির চেয়ে বেশি উত্তম-অনুত্তম নিয়ে ইখতেলাফ করতে পারেন। কিন্তু প্রতিষ্ঠিত কোনো মাসআলাকে ভুয়া বলার দুঃসাহস আপনাকে কে দিয়েছে? এ ধরনের সীমালঙ্ঘনকারী কিছু আহলে হাদীসদের প্রচারিত একটি লিফলেটের জবাবেই মূলত এ গ্রন্থটি রচনা করা। ২০১৩ সাল থেকে কাজ শুরু করেছি। ২০১৬ সালে এসে কাজ শেষ হয়েছে। এরপর ২০১৮ পর্যন্ত সম্পাদনা, পরিমার্জন-পরিবর্ধনসহ বিভিন্ন ঘষামাজার কাজ চলেছে। অবশেষে ২০১৮ সালের শেষদিকে এসে বইটি আলোর মুখ দেখল।
গ্রন্থটির সংক্ষিপ্ত পরিচিতিঃ
গ্রন্থটির শুরুতে দীর্ঘ একটি ভূমিকা লিখেছি। এতে গ্রন্থটি লেখার প্রেক্ষাপট, আমাদের সমাজের অবস্থা, মুসলিম উম্মাহর হাল ও পারস্পরিক মতানৈক্য, আমাদের করণীয়, আহলে হাদীসদের সীমলঙ্ঘন ও কর্মপন্থা, ইখতেলাফি বিষয় থেকে উত্তরণের উপায় ইত্যাদি বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছি। এরপর গ্রন্থটির জন্য সংক্ষিপ্ত একটি ভূমিকা লিখে মূল বইয়ে প্রবেশ করেছি। বইটিতে দুটি অধ্যায়ে আলোচনা করা হয়েছে। প্রথম অধ্যায়ে আহলে হাদীসদের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি, তাদের উত্থান, কর্মপন্থা, লক্ষ্য ও উদ্শ্যে নিয়ে কিছুটা আলোকপাত করেছি। এটা মূলত গ্রন্থটির মূল অংশ নয়। বইটি রচনা শেষ করার পর এ অধ্যায়টি যুক্ত করেছি।
এর দ্বিতীয় অধ্যায়ই হলো আসল অংশ। এতে মোট ৪২টি পাঠ রয়েছে। এটা যেহেতু একটি লিফলেটের জবাবে লেখা হয়েছিল, তাই লিফলেটে থাকা বিয়াল্লিশটি অভিযোগ উল্লেখপূর্বক তার প্রামাণ্য প্রতিউত্তর লিখেছি। লিফলেটের ভাষা ও কথা পরিবর্তন করিনি। যথাবস্থায় রেখে তার ইলমী খণ্ডন করেছি।
বিয়াল্লিশটি পাঠ হলোঃ
১। গোসলের ফরজ, ২। তায়াম্মুমের ফরজ, ৩। অজুর ফরযের সংখ্যা, ৪। গরদান মাসেহ করা, ৫। আজানের উত্তরের বাক্য, ৬। ❝আসসালাতু খাইরুম মিনান্নাওম❞ এর জবাব, ৭। নিয়ত মুখে উচ্চারণ করা, ৮। আজান – ইকামতের শব্দসংখ্যা, ৯। আজান পরবর্তী দুআ, ১০। জোহরের শেষ ও আসরের শুরু ওয়াক্ত, ১১। জায়নামাজে দাঁড়ানোর দোয়া, ১২। উচ্চারণ করে নামাজের নিয়ত, ১৩। নামাজে হাত বাঁধার স্থান, ১৪। ❝সুবহানাকা আল্লাহুম্মা……❞ সানা পড়া, ১৫। ইমামের পিছনে মুক্তাদির কিরাত পড়া, ১৬। এক নিঃশ্বাসে সুরা ফাতিহা পড়া, ১৭। দুই সিজদার মাঝে দোয়া পড়া, ১৮। রাফউল ইয়াদাইন করা, ১৯। জামাতের সময় পায়ে পা মিলিয়ে দাঁড়ানো, ২০। সেজদায় যাওয়ার সময় প্রথমে হাঁটু রাখা, ২১। সেজদা শেষে না বসে মাটিতে ভর না দিয়ে সরাসরি দাঁড়ানো, ২২। নামাজের প্রথম ও তৃতীয় রাকাত শেষে না বসে দাঁড়ানো, ২৩। সুরা ফাতিহা পড়ার পর নীরবে আমীন বলা, ২৪। তাশাহুদে শাহাদাত আঙ্গুল দ্বারা ইশারা করা, ২৫। দোয়া কুনুতের পূর্বে তাকবির বলা, ২৬। তিন রাকাত বেতর নামাজে দুই বৈঠক করা, ২৭। বেতরের নামাজে ❝আল্লাহুম্মা ইন্না নাস্তাঈনুকা…..❞ দোয়া কুনুতটি পড়া, ২৮। নামাজ শেষে ইমামের মুক্তাদিদের দিকে ফিরে বসা, ২৯। নামাজের মধ্যে বিভিন্ন দিকে আড়চোখে তাকানো, ৩০। ফরজ নামাজ বাদ সম্মিলিত মুনাজাত করা, ৩১। নামাজে ইমামের ভুল হলে ❝সুবহানাল্লাহ❞ বলা ও হাততালি দেওয়া, ৩২। নামাজে দুইবার সালাম ফেরানোর মাধ্যমে সাহু সিজদা করা, ৩৩। জুমআর খুতবা চলাকালীন মসজিদে এলে নামাজ না পড়া, ৩৪। জুমআর নামাযে তিন খুতবা দেওয়া, ৩৫। জানাজার নামাজে সুরা ফাতিহা পাঠ করা, ৩৬। তারাবিহ নামাজের রাকাত সংখ্যা, ৩৭। তারাবিহ নামাজ তাড়াতাড়ি পড়া, কুরআন খতম করা ও বিশেষ দোয়া পড়া, ৩৮। রমজানে রোজার নিয়ত ও ইফতারের দোয়া, ৩৯। ঈদের নামাজে অতিরিক্ত ছয় তাকবির দেয়া, ৪০। ❝আধা সা❞ গম দিয়ে সাদকাতুল ফিতর দেওয়া, ৪১। প্রথম ও তৃতীয় রাকাতে লম্বা টানে তাকবির বলে দাঁড়ানো, ৪২। দুজন মিলে জামাত করাকালীন অন্য কেউ এলে ইমামের করণীয়।
শেষে একটি উপসংহার এবং সর্বশেষ আহলে হাদীস ভাইদের প্রতি লা-জবাব কিছু প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার আহবান জানিয়ে গ্রন্থটি শেষ করেছি। গ্রন্থটির শেষে দেড় শতাধিক উৎসগ্রন্থের তালিকা উল্লেখ করেছি। যথেষ্ট সময় নিয়ে গ্রন্থটি রচনা করেছি। কোনো কোনো সময় এমনও হয়েছে যে, একটিমাত্র উদ্ধৃতি মূল গ্রন্থ থেকে খুঁজে বের করতে এক সপ্তাহ লেগে গেছে। কোথাও এমন হয়েছে যে, চার থেকে পাঁচ পৃষ্ঠা লিখতেই মাস লেগে গেছে। এ গ্রন্থটি রচনার সময়ই তৈরি করেছি ❝আল মাকতাবাতুল কামিলা❞ নামক দশ কোটি টাকা সমমূল্যের অফলাইন পিডিএফ মাকতাবা । গরিবের কিতাবের সঙ্কট মেটাতে গিয়ে অসংখ্য আলেমের কিতাবের ঘাটতি পূরণ করে চলছে এ মাকতাবাটি।
গ্রন্থটির বিশেষ কয়েকটি বৈশিষ্ট্যঃ
প্রামাণ্য ইতিহাস থেকে আহলে হাদীসদের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি তুলে ধরা হয়েছে।
হানাফি মাযহাবের আমল, বিশেষত নামাজের বিরুদ্ধে আরোপিত সকল অভিযোগ দালিলিকভাবে খণ্ডন করা হয়েছে।
দেড় শতাধিক নির্ভরযোগ্য গ্রন্থ সামনে রেখে পাঁচ বছরের লাগাতার পরিশ্রমে সম্পূর্ণ ভিন্ন আঙ্গিকে গ্রন্থটি রচনা করা হয়েছে।
তথ্যসূত্রে গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে উদ্ধৃতিনির্ভর গ্রন্থগুলোর পরিবর্তে মূল গ্রন্থ যাচাই করে মূল গ্রন্থের উদ্ধৃতি দেওয়া হয়েছে।
সামান্য দু’চারটি ব্যতিক্রম বাদে এতে উল্লেখিত প্রায় সবগুলো হাদিসই সহিহ ও হাসান তথা প্রমাণযোগ্য।
নির্ভরযোগ্য স্বীকৃত ইমাম ও মুহাক্কিকদের সিদ্ধান্ত কিংবা সরাসরি দিরাসাতুল আসানিদের মাধ্যমে প্রায় সব হাদিসের মান তথা শুদ্ধতা-অশুদ্ধতা যাচাই করা হয়েছে।
পক্ষের বা বিপক্ষের ওলামায়ে কেরামের সুবিধার জন্য প্রত্যেকটি হাদিসের সাথে তার পূর্ণ সনদ উল্লেখ করে দেওয়া হয়েছে।
সাধারণ পাঠকদের সুবিধার্থে হাদিসসহ প্রতিটি আরবি ইবারতে হরকত ও তার অনুবাদ লিখে দেওয়া হয়েছে।
হাদিসভিত্তিক আলোচনার পাশাপাশি ক্ষেত্রবিশেষে প্রয়োজনানুসারে তথ্যবহুল ফিকহি আলোচনাও এতে স্থান পেয়েছে।
অশোভনীয় বাক্য, প্রমাণহীন ভুল ব্যাখ্যা ও পক্ষপাতিত্ব পরিহার করে সম্পূর্ণ ইনসাফ ও গবেষণার দৃষ্টিতে গ্রন্থটি রচনা করা হয়েছে।
গ্রন্থটি কাদের জন্য উপকারী হবে?
আপনি যদি হানাফি মাযহাবের আমল; বিশেষত নামাজের বিধিবিধান নিয়ে গবেষণা করতে চান বা গবেষণামূলক কোনো প্রবন্ধ লিখতে চান, আপনার যদি হানাফি মাযহাবের আমলের দৃঢ়তা নিয়ে কোনো সন্দেহ-সংশয় থাকে, আপনি যদি কোনো আহলে হাদিস ভাইয়ের অভিযোগ যথাযথভাবে খণ্ডন করতে সক্ষম না হোন, আপনি যদি মসজিদের ইমাম বা খতিব হোন এবং আপনার মুসল্লিদের অনেকে আহলে হাদিস হয়ে থাকে, আপনি যদি এককভাবে বা সম্মিলিতভাবে আহলে হাদিসদের সাথে বিতর্ক করতে চান, আপনি যদি মধ্যপন্থী আহলে হাদিস হয়ে থাকেন এবং হানাফি মাযহাবের দলিলগুলো জানতে চান; তাহলে বলব, এ গ্রন্থটি অধ্যায়ন করুন। ইন-শা-আল্লাহ গ্রন্থটি আপনার উদ্দেশ্য পূরণে সহায়ক হবে। আল্লাহ আমাদের তাওফিক দিন।
বিঃ দ্রঃ গ্রন্থটি আহলে হাদিস ভাইদের সাথে বিরোধিতা সৃষ্টির জন্য রচনা করা হয়নি; বরং তাদের কিছু উগ্রপন্থী ও সীমালঙ্ঘনকারী ভাইদের অপপ্রচারের প্রতিউত্তরে এটি রচিত হয়েছে। তাই এটা অনেকটা রক্ষণাত্মক ভঙ্গিতে লেখা, আক্রমণাত্মকভাবে নয়। আশা করি, এ থেকে হানাফি ও আহলে হাদিস উভয় জামাতের ভাইয়েরাই উপকৃত হবেন।❞
বি:দ্র: সহীহ হাদীসের আলোকে হানাফীদের নামায বইটি free pdf download করিতে চাহিয়া লেখকদের নিরুৎসাহিত করিবেন না

মৃত্যু যবনিকার ওপারে
কিয়ামত আসবে যখন
মহাপ্রলয়
নীল সবুজের দেশে
আত্মপরিচয়ের সংকট (১)
ইসলামের মর্মকথা
আসল বাড়ির খোঁজে হাত বাড়ালেই জান্নাত
দুখের পরে সুখ
নতুন প্রজন্মের শিক্ষা ভাবনা
দুই জান্নাত পরকালের জান্নাতের আগে দুনিয়ার জান্নাতে বাস করুন
জাহান্নামের ভয়াবহতা
হযরত উমর ফারূক রাযি. জীবনকথা
ইসলামী দিবসসমূহ বারো চাঁদের ফযিলত ও আমল
কবরবাসীর সুখ-দুখ
জান্নাতের সহজ পথ
আল কুরআনুল কারীম কতিপয় হক ও আদব এবং অধ্যয়নের পথ ও পন্থা
উসওয়ায়ে আসহাবে রাসুল
পরকাল ও ভাগ্য কী
গল্পে গল্পে হযরত উসমান (রা.)
মরণের আগে ও পরের জীবন
আরশের ছায়া পাবে যারা
কুরআনে বর্ণিত ৩০জন নবী-রাসূলের জীবন ও কর্ম
আবু বকর আস-সিদ্দীক রাযিয়াল্লাহু আনহু: জীবন ও কর্ম (১ম ও ২য় খন্ড)
মৃত্যুর স্মরণ
শত গল্পে ওমর
মৃত্যুর পরে অনন্ত জীবন
বড়দের তাহাজ্জুদ ও রাত জাগরণ 
মোঃ হেলালমুন্সী –
মাশাআল্লাহ