পুনর্পাঠ – (জানুয়ারি-মার্চ ২০২০)
কেন ‘পুনর্পাঠ’?
এক.
আত্মভোলা মানুষকে যেমন সহজে পথহারা করা যায়, তেমনি আত্মভোলা জাতিকেও দিকভ্রান্ত করা যায় অনায়াসে। আত্মপরিচয়হীন মানুষকে যেমন দ্রুত অন্যের দাস বানানো যায়, তেমনি আত্মপরিচয়হীন জাতিকেও সেবাদাস বানাতে বেগ পেতে হয় না। মানুষের সমষ্টিই জাতি। আমরা একটি আত্মভোলা জাতি, বিশ্বের শক্তিশালী জাতিগুলো তাদের সেবাদাস হিসেবে বারবার ব্যবহার করছে আমাদের। এ থেকে মুক্তি প্রয়োজন। আর মুক্তির জন্যে প্রয়োজন নিজেদের পরিচয় জানা। আমরা যে অন্য জাতির সেবাদাস নই, অন্তত সেইটুকু জানার বিকল্প নেই। জানা দরকার—আমাদের একটি নিজস্ব ঠিকানা রয়েছে এবং এখন, এই এখনই অন্যের দাসত্ব থেকে মুক্ত হয়ে ঘরে ফেরা দরকার। আমাদের নিজ পরিচয় ও ঠিকানা খুঁজে পাবার প্রয়োজনে জাতিপরিচয়ের ভাবনাগুলি নতুন করে ভাবা দরকার, নিজেদের পাঠ করা দরকার—এজন্যেই ‘পুনর্পাঠ’।
শিক্ষা, দর্শন ও রাজনীতি—সব ক্ষেত্রে আমরা পরনির্ভরশীল। আমাদের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও দর্শন তো রয়েছে—আমরা সব ভুলে গেছি, তাই অন্যের দ্বারে ভিক্ষা করছি শিক্ষা, অন্যের চিন্তায় প্রভাবিত হচ্ছি প্রতিনিয়ত, রাজক‚টের ভুলভুলাইয়ায় পড়ে হারিয়েছি রাজবিবেক। অথচ এভাবে পরাশ্রিত থাকার জাতি আমরা নই—কখনও ছিলাম না। ছোট হোক, হোক বাবুই-ঘর; আমার ঘরে আমিই ছিলাম রাজা—কেনা দাস হলাম কেনো? নিজ ঘরটি খুঁজে না-পেলে দাসত্ব কিন্তু ঘুচবে না। আপন ইতিহাস, ঐতিহ্য, চিন্তা ও দর্শনের জমিনে দাঁড়িয়ে সাহসে স্পর্ধায় ভর করে নিজের কথাটি বলতে না-পারলে পরাভূত থাকব চিরকাল, নিভু নিভু দেউটি নিভে যাবে চিরজনমের মতো। সেই জমিনটা খুঁজে পাবার জন্যেই ‘পুনর্পাঠ’।
প্রথমে আসি শিক্ষা প্রসঙ্গে। বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও ভারতে বেড়ে ওঠা শিক্ষাব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হয় উপনিবেশ-সময়ে ব্রিটিশ স্কুলের ওপর ভিত্তি করে। অথচ ব্রিটিশরা এ দেশে আসার আগে এ-অঞ্চলে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় ছিলো স্বাতন্ত্র্য, আপন মহিমায় ভাস্বর। এখন আমরা পশ্চিমাদের কাঠামোয় গড়া বিদ্যালয়ে পড়ছি, আর আমাদের চিন্তা-চেতনা পশ্চিমা মতবাদ দিয়ে পূর্ণ হচ্ছে। এমনকি যারা খুব জাতীয়তাবাদী কিংবা ধার্মিক, তাদের মনন-মানসও পশ্চিমা প্রভাবমুক্ত হতে পারছে না। তাই তারা যে পরিচয় লিখে দিচ্ছে, সেভাবে আপন পরিচয় সাজাতে গর্ববোধ করছি। যে ঠিকানা বলে দিচ্ছে, সেদিকে যাচ্ছি। যেতে যেতে আপন বাড়ির পথ হারিয়ে ফেলেছি। ফিরে আসার ম্যাপ খুঁজে পাচ্ছি না। নিরুপায় হয়ে তাদের দুয়ারে একটু মাথা গোঁজার ঠাঁই পেতে নিরীহ অনুরোধ করছি। মালিকের সব শর্ত মেনে নিতে রাজি—হোক তা দাসত্বের ন্যায় ঘৃণিত। ধীরে ধীরে আত্মসম্মানের সঙ্গে আত্মসম্ভ্রমবোধও ক্ষয়ে গেছে। এখান থেকে বেরুতে হবে। নিজস্ব শিক্ষাধারা আবিষ্কার করতে না-পারলে মুক্তি আর মিলবে না। তাই প্রচলিত ‘শিক্ষার’ পর্যালোচনা এবং আপন ‘শিক্ষার’ পুনর্পাঠ প্রয়োজন।
দর্শন ও রাজনীতির বেলায়ও কথা একই। অন্যের হাতে চলে গেছে দরোজার চাবি। পশ্চিমা তো বটেই, প্রতিবেশী দেশগুলোও আমাদের শিক্ষা, সংস্কৃতি ও রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করছে। বলা ভালো চাপিয়ে দিচ্ছে, জোর করে গিলে খাওয়াচ্ছে। অবস্থা এমন যে, তাদের আনুগত্য করা এখন আমাদের একমাত্র দায়িত্ব। এই আনুগত্য-পরায়ণতা, গোলামির এই শৃঙ্খল ফুঁ দিয়ে ভেঙ্গে ফেলা যাবে না। স্বজাতীয় শিক্ষা, সংস্কৃতি, দর্শন ও রাজনীতির বিনির্মাণ ছাড়া বিবেকের জিঞ্জির খোলা সম্ভব হবে না। আবার শূন্য থেকে পুনর্নির্মাণও সহজ নয়। সবকিছু মুখের বুলিতে ‘বাতিল’ করে দেওয়াও যথার্থ নয়। বিদ্যমান শিক্ষা-দর্শন-রাজনীতি পর্যালোচনা করে, নতুন পাঠ ও পুনর্পাঠ করে শক্তিমান জাতি নির্মাণের উদ্বোধন করতে চায় ‘পুনর্পাঠ’।
তাই, বাংলাদেশের সমকালীন জাতীয় সঙ্কট অনুসন্ধান এবং সেসবের সমাধানকল্পে বিদ্যমান চিন্তা, তত্ত্ব ও বুদ্ধিবৃত্তিক প্রবণতার সার্বিক পর্যালোচনা করা পুনর্পাঠের লক্ষ্য। শক্তিশালী আত্মপরিচয় রচনার জন্যে তুলনামূলক কার্যকর ও উন্নত শিক্ষাব্যবস্থার অনুসন্ধান করা; সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের লক্ষ্যে বৈশ্বিক রাজনৈতিক গোলকধাঁধা থেকে মুক্তির পথ খোঁজা; এবং বিদ্যমান দার্শনিক ও রাজনৈতিক চিন্তার যাচাই করে ক্লাসিক্যাল ইসলামি চিন্তার পুনর্পাঠ করা আমাদের উদ্দেশ্য।
প্রথম সংখ্যার প্রচ্ছদে ‘পুনর্পাঠ’-এর লক্ষ্য-উদ্দেশ্যকে চিত্রায়িত করার একটা চেষ্টা করা হয়েছে। প্রচ্ছদের রেখাগুলো হলো অক্ষরের লাইন; যার পুনর্পাঠ হবে। বিভিন্ন কালার হলো ভিন্ন ভিন্ন চিন্তার রঙ; যা ধারণ করে পথ নির্মাণ করতে হবে। সাদা জায়গা হলো আমাদের চিন্তার শূন্যতা; যা পূরণ করতে হবে। ‘পু’ ও ‘ন’-এর সংযোগরেখার অর্থ পুরাতনের সঙ্গে নতুনের যোগাযোগ; ক্লাসিক্যাল ভাবধারার সঙ্গে বর্তমান ভাবনার যোগসূত্র।
দুই.
এ-সংখ্যায় আব্বাস ইসলাম খান লিখেছেন আমাদের ভবিষ্যৎ বাংলাদেশকে নিয়ে—কেমন দেশ আমরা চাই। কেবল প্রত্যাশা করলেই তো হচ্ছে না, চারপাশের পরিবেশেরও খোঁজখবর রাখতে হয়। তাই প্রতিবেশী দেশ ভারতের রাজনীতি নিয়ে লিখেছেন গৌতম দাস। সেখানে কিভাবে মনিপুরের স্বাধীনতাকে অস্বীকার করা হয়েছে, কোন শৃঙ্খলে বেঁধে রাখতে চায় তাদের, তা নিয়ে তিনি সবিস্তার আলাপ করেছেন। ভারতবর্ষের উপনিবেশ সময় থেকে এর সূচনা। তখন থেকে যে-সকল মুসলিম মনীষী মুক্তির অন্বেষণে অবদান রেখেছেন, আশরাফ আলী থানভী তাদের অন্যতম। তার রাজনৈতিক চিন্তাভাবনা নিয়ে সুদীর্ঘ প্রবন্ধ লিখেছেন ফাহমিদ-উর-রহমান। আলোচনায় উঠে এসেছে মুসলিম জাতীয়তাবাদ ও ভারতীয় সেক্যুলারিজমের নানা দিক। এ সূত্র ধরে ফরীদ আহমদ রেজা লিখেছেন ‘মুসলিম বিশ্বে সেকুলারিজমের বিভিন্ন বয়ান: প্রেক্ষিত বাংলাদেশ’। তিনি সেক্যুলারিজমের নেতিবাচক ও ইতিবাচক দিকগুলো ফুটিয়ে তুলেছেন। কেবল অন্যদের পর্যালোচনা নয়, বরং নিজেদের চিন্তারও পুনর্গঠন দরকার। ইতিহাসবিদ ওভামির আঞ্জুম দেখিয়েছেন, ইসলামপন্থীদের কোন ধরণের বুদ্ধিবৃত্তিক দীনতা রয়েছে।
আমাদের বুদ্ধিবৃত্তিক দীনতার একটি হলো, ক্লাসিক্যাল স্কলারদের ভাবনা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল না-থাকা। আজকালের রাজনীতিকদের অনেকে ইবনে খালদুনকে গুরুত্ব দিয়ে পাঠ করেন না, যতটা করেন প্লেটো ও এরিস্টটলকে। অথচ কয়েকশ’ বছর ধরে খালদুনের তত্ত্ব-চর্চা বিশ্বের নানা রাজনৈতিক ঘরনায় নিয়মিত প্রাসঙ্গিক। খালদুনের রাজনৈতিক বোঝাপড়ার কথা বলেছেন অটোমান আমলের বুদ্ধিজীবী ও রাজনীতিবিদ শাকিব আরসালান—‘ইবনে খালদুন কেন প্লেটো, এরিস্টটল ও আল ফারাবি থেকে ভিন্ন’ শিরোনামে। এর ধারাবাহিকতায় আল ফারাবির সাথে ইমাম গাজালির দ্বন্দ্ব নিয়ে লিখেছেন মিশরের স্কলার মুহাম্মদ ইউসুফ। প্রসঙ্গক্রমে এ সংখ্যায় আমরা বাংলাদেশের অন্যতম দার্শনিক ও ইতিহাসবিদ মুঈনুদ্দীন আহমদ খানের দর্শন বিষয়ক একটি আলাপচারিতাও নিয়ে এসেছি; ‘ফ্রিডম অব চয়েস অ্যান্ড ডিটারমিনিজম’ শিরোনামে। তার ‘অরিজিন এন্ড ডেভেলপমেন্ট অব এক্সপেরিমেন্টাল সায়েন্স’ বইয়ের রিভিউ করেছেন মনোয়ার শামসী সাখাওয়াত।
বাঙালি বুদ্ধিজীবীদের যাবতীয় ফাঁকিবাজি নিপুণভাবে দেখিয়ে দিয়েছেন আহমদ ছফা—যা ‘আহমদ ছফার বুদ্ধিজীবী-বিচার’ নিবন্ধে আবদুস সাত্তার আইনী তুলে ধরেছেন। কিন্তু কিছু সমালোচনা করলেও আমরা আমাদের বুদ্ধিজীবীদের সর্বাংশে খারিজ করে দিতে পারি না। কেননা, তাহলে ইউরোপীয়-দ্বিচারিতা আমাদের ওপর ভর করবে। যেমন তারা মনে করে, তারা ছাড়া সভ্য-চিন্তা আর কেউ করতে পারে না। তাদের এমন ধারণার জবাব দিয়েছেন হামিদ দাবাশি পুনর্পাঠের সর্বশেষ প্রবন্ধে।
বি:দ্র: পুনর্পাঠ – (জানুয়ারি-মার্চ ২০২০) বইটি free pdf download করিতে চাহিয়া লেখকদের নিরুৎসাহিত করিবেন না

খাওয়ারিজম সাম্রাজ্যের ইতিহাস (দুই খণ্ড)
হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) জীবন ও আদর্শ
কুরআন ও হাদীস সংকলনের ইতিহাস
হেজায থেকে ইরান
সন্তান প্রতিপালন
দরুদমাখা সবুজ চিঠি
ছোটদের মহানবি
সুলতান আবদুল হামিদ খান ও উসমানি খিলাফত পতনের ইতিহাস
মহিমান্বিত জীবনের শেষ ১০০ দিনের অসিয়্যতসমূহ
মানবীয় দুর্বলতায় নবিজির মহানুভবতা
মুসলিম সংস্কৃতি ও বাঙালি মুসলমান
ফিরআউনের দেশে
রাসূলুল্লাহ (সা) এর বিচারালয়
রাসূলে আরাবি (সা.) (দাওয়াহ সংস্করণ)
যেমন ছিল নবীজীর আচার ব্যবহার
উসমানী খেলাফতের ইতিহাস
দিঘলীতলার কান্না
খুলাফায়ে রাশিদিন সিরিজ
আরব উপদ্বীপ
মূর্তি ভাঙার ইতিহাস
রিজালুল হিন্দ
ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে মুসলমানদের অবদান
আসহাবে সুফফাহ
সুলতানা শাজারাতুদ দুর
উমাইয়া খেলাফতের ইতিহাস
মুসলমানদের পতনে বিশ্ব কী হারালো
উমাইয়া শাসনের ভেতর বাহির
ইসরায়েল সমস্যা ও প্রতিশ্রুত ভূমি: তত্ত্বীয় বিচার
শত গুণে নবী (ﷺ)
আলপ আরসালান
ইতিহাসের সোনালি আস্তিন
ইসলাম সভ্যতার শেষ ঠিকানা
জীবন সাজানোর গল্প
ইসলামি ইতিহাস - সংক্ষিপ্ত বিশ্বকোষ (৫ খণ্ড)
বুদ্ধিবৃত্তিক যুদ্ধ
কুরআন ইসলামী ইতিহাসের মানচিত্র
নকশে হায়াত (১ম ও ২য় খণ্ড)
উম্মাহর মহিরুহ আবদুল্লাহ আযযাম রহিমাহুল্লাহ
ক্রুসেড
সীমান্ত ঈগল
পারিবারিক অশান্তি কারণ ও প্রতিকার
এ গল্প কোন মানবের নয়
উসওয়াতুল লিল আলামিন
কারবালা ও ইয়াজিদ
নীড়ে ফেরার গল্প
চলো পাল্টাই
আবু বাকর আস সিদ্দিক: জীবন ও শাসন
সীরাতুন নবি ১
মোল্লা ওমর ও তালেবান
বিমর্ষ বিকাল
নবিজি (সা.)-(শৈশব, কৈশোর, উপদেশ)
স্বর্ণযুগের সম্রাট
ছোটদের খুলাফায়ে রাশেদীন 
Reviews
There are no reviews yet.