জীবনঘড়ি
প্রিয় ছোট,
খুব অবাক হচ্ছিস তাই না! এত এত দিন পর তোকে লিখছি। তুই কেমন আছিস রে? আমাকে ছাড়া তুই কীভাবে আছিস? মনে আছে, তুই কী বলতিস? আমার বিয়ে হলে তুই আমার সঙ্গে শ্বশুরবাড়ি যাবি। আমার বরকে বাসর ঘরের বাইরে বসিয়ে রাখবি। আর তুই বাসর ঘরে আমার গলা জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে থাকবি। তুই এখন কার কাছে ঘুমাসরে ছোট?
দেখদিনি, শুরুতেই কীসব বাজে বকছি। বাবা-মার খবর বল। তারা এখন কেমন আছেন? বাবার অফিসের সেই কালো ব্যাগ কি এখনো আছে? অফিস থেকে ফিরলে সবার আগে তার কালো ব্যাগটা কে ধরে? বাবা এখন নিশ্চয় বলেন না, কই মা ঝুম্পা আমার অফিসের ব্যাগটা ধর তো।
বাবার বুকের ব্যথা কমেছে না বেড়েছে? গ্যাসট্রিকের ওষুধ নিয়মিত খান তো? আমি থাকতে রোজ শোবার আগে খাইয়ে দিতাম। এখন কে দেয় রে? তুই একটু খেয়াল রাখিস ছোট।
মায়ের বাতের ব্যথা ট্যথা কি এখনো আছে? আমার পাশেই এক হোমিও ডাক্তার বসে। বাতের উপর তার আলাদা পড়াশোনা আছে। দুনিয়ার লোক তার ওষুধ খেয়ে ভালো হচ্ছে । পরের বার দুই ফাইল পাঠিয়ে দেব। যদিও ডাক্তারের রেট একটু বেশি। তাতে সমস্যা নেই। আমার তো এখন আর টাকার অভাব নেই। তুই মাঝে মাঝে মায়ের পা’টা গরম পানি দিয়ে ছেঁকে দিস।
টুলু ভাইয়ার খবর বল। তার চাকরি বাকরি কিছু হলো? তার তো এতদিন পড়াশোনা শেষ করে বিয়ে থা করার কথা। আমাদের ভাবিটা নিশ্চয় খুব সুন্দরী! বড় ভাইয়ার কথা বলতে হবে না। তার ঘটনা খবরের কাগজে পড়েছি। আমরা চারজন ভাইবোন তার মধ্যে একজন আবার মরেও গেল। কী আশ্চর্য কাণ্ড!
পুকুরপাড়ে কৃষ্ণচূড়া গাছটা কি এখনো আছে? ফাগুন এলে এখনো কি আগুন রঙে ঝলমল করে আমাদের কৃষ্ণচূড়া? শুনছি গ্রাম আর গ্রাম থাকছে না। গাছপালা কাটা পড়ে যাচ্ছে। মানুষ বাড়ছে। নতুন নতুন ঘরবাড়ি তৈরি হচ্ছে। আমাদের কৃষ্ণচূড়া নিশ্চয় কাটা পড়েনি? আমাদের তো লোক বাড়েনি। আমি নেই বড় নেই। আছিস কেবল তুই আর মেজ। দুজনের কি অত জায়গা লাগে!
আচ্ছা ছোট তুই প্রেম ট্রেম কিছু করিস নাকি? মনে আছে একবার তোকে ইস্কুলে নিয়ে গেছিলাম। রেখা কোলে নিতেই ভেউ ভেউ করে তোর সেকি কান্না! বোকা ছেলে মেয়ে মানুষ দেখে কেউ অমন কাঁদে?
তোর কি এখনো টাকা হারানোর ব্যরাম আছে? ছোটবেলায় তো খুব টাকা হারাতিস। সেই বারের ঘটনা মনে আছে? মা তোকে কেরোসিন আনতে পাঠাল দোকানে। তুই ফেললি টাকা হারিয়ে। মারের ভয়ে তুই বাড়ি যাবি না। কত কৌশলে সেবার তোকে বাঁচিয়েছিলাম। এখন তো বড় হয়েছিস। বুদ্ধি সুদ্ধি করে চলিস।
তোর ছবি আঁকার খবর কি? এখনো আঁকিস নাকি ছেড়ে দিয়েছিস? তোকে নিয়ে বাবার কিন্তু অনেক সপ্ন। তুই বিখ্যাত শিল্পী হবি। দেশ বিদেশে তোর নাম ছড়িয়ে পড়বে। বাবার এই স্বপ্নটা ভেঙে দিস না ছোট। বাবাকে কষ্ট দিস না। আমাদের বাবার মত দুঃখী বাবা যেন আর একটাও না আসে পৃথিবীতে।
ইতি
তোর বুবু
জীবনঘড়ি
বি:দ্র: জীবনঘড়ি বইটি free pdf download করিতে চাহিয়া লেখকদের নিরুৎসাহিত করিবেন না
Reviews
There are no reviews yet.