জাদুর বাস্তবত
ছেলেটির বয়স ১২ কিংবা ১৩ বৎসর। গত বৎসর পি.এস.সি. পরীক্ষায় খুব ভালো রেজাল্ট করেছে সে। নামকরা একটি হাইস্কুলেও চান্স পেয়েছে। তাকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন তার মা-বাবার, যেমন স্বপ্ন দেখে আজকের অনেক মা-বাবাই – ছেলে বড় হয়ে ডাক্তার কিংবা ইঞ্জিনিয়ার হবে। যাহোক খুব স্বাভাবিকভাবেই অন্য দশটা ছেলের মতো জীবন কাটছিল ছেলেটির। তাকে নিয়ে তার মা-বাবাকে কখনো এতটা দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হতে হয়নি। কিন্তু হঠাৎ এ কী হলো!? ছেলেটি আর আগের মতো আচরণ দেখায় না। পড়ালেখাতেও মনোযোগ নেই তার। স্কুলে পরীক্ষার সময় বেঞ্চের ওপর শুয়ে থাকে সে। একদিন তো তাকে আর পাওয়াই যাচ্ছিল না। শুনলাম, তার মা-বাবাসহ পরিবারের সবাই বেশ খোঁজাখুঁজি করেছে তাকে। একটি ছেলে হারিয়ে গেছে, হয়েছে এমন এলানও । রাত বাড়ছে তবু তার দেখা নেই। এমন অবস্থায় তার মা-বাবার যে কী অবস্থা হয়েছিল, তা সহজেই উপলব্ধি করা যায়!
সহসা ছেলেটির মাঝে চেতন আসে। সে নিজেও অবাক, পড়ে আছে একটি পরিত্যক্ত বাড়ির ভেতর। একাকী অন্ধকারে! ভয়ে আঁতকে ওঠে সে। এরপর থেকে তার আচরণ হয়ে ওঠে আরও অস্বাভাবিক।…
ছেলেটি আমার নিকট আত্মীয়দের একজন। তার বাবার সাথে কথা বলে জানলাম, ইতোমধ্যে তার চিকিৎসার পেছনে প্রায় ৩৫,০০০ টাকার মতো শেষ! এখনো কোনো উন্নতির মুখ দেখেননি তারা। জিন তাড়ানোর জন্য যাদের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়েছে, কিছুদিন পরপরই তারা নতুনভাবে টাকা চায়। প্রথমে তাদের কিছুটা বকা-ই দিয়েছিলাম। এত টাকা খোয়ানোর পর এখন আলাপ করলেন!? অবশ্য তখনই আমি তার ছেলের এমন অবস্থার কথা ভালোভাবে জানলাম।
প্রিয় পাঠক, এভাবে আমাদের সমাজের অনেক লোকই একদিকে যেমন নিজের বা পরিবারের কারও জিনগ্রস্ততার কারণে পেরেশানির শিকার হচ্ছে, অন্যদিকে ভণ্ড-প্রতারক খোনার, কবিরাজ বা জাদুকরের কাছে গিয়েও মোটা অংকের অর্থ-সম্পদ, এমনকি ঈমানও বরবাদ করছে!!
জিন-জাদু ইত্যাকার বিষয়গুলোতে অজ্ঞ থাকাটাই এমন প্রতারিত হওয়ার মূল কারণ। অথচ, ঠিকমতো মাসনূন আমল জারি রাখলে এমন সমস্যা থেকে সহজেই বেঁচে থাকা যায়। আর কেউ জিনগ্রস্ত হলে কুরআন-হাদীস সম্পর্কে ভালো ইলম রাখেন এমন বিজ্ঞ মুত্তাকী রাকীর মাধ্যমেও সহজে চিকিৎসা করিয়ে নিতে পারে। দুঃখজনক হলেও সত্য, আমাদের সমাজে এমন মুত্তাকী রাকীর সংখ্যা একেবারে কম।
আসলে জিন-জাদুর বিষয়ে আমারও এতটা স্টাডি ছিল না। ছিল না কোনো অভিজ্ঞতাও। আল্লাহর আনুগ্রহ, ভাই শোআইব আহমাদ সাহেব জিন-জাদু-বদনজর ইত্যাদি বিষয়গুলোর আলোচনা কতই না চমৎকারভাবে বইয়ের পাতায় জমা করেছেন। তিনি হয়তো বেশ ব্যস্তই ছিলেন কয়েকদিন, এরই সুবাদে তাঁর সংকলিত এ বইটিতে আমার কিছু ঘষামাজা করার সুযোগ হয়েছে। আলহামদুলিল্লাহ, অনেক অস্পষ্টতা দূর হলো। জানতে পারলাম নতুন কিছু। মাঝে মাঝে ভাবি, হুম রাকী হয়ে যাব নাকি!! শুকরান, প্রিয় রুহামা পাবলিকেশন। আপনাদের প্রচেষ্টাগুলো সত্যিই অসাধারণ। মহান আল্লাহ আপনাদের উম্মাহর উপকারে এমন জরুরি বিষয়গুলোকে সামনে রেখে আরও বেশি বই প্রকাশ করার তাওফীক দান করুন। আমীন।
প্রিয় পাঠক, শোআইব আহমাদ ভাইয়ের এই জাদুর বাস্তবতা বইটি পড়ে আমরা কী শিখতে পারব:
১. যারা মনে করে, জিন-জাদু এমন বিষয়গুলোর কোনো অস্তিত্বই নেই। তারা বুঝতে পারবে, এগুলোর অস্তিত্ব ও বাস্তবতা কুরআন ও হাদীসের দলিল দ্বারাই প্রমাণিত। সুতরাং এগুলোকে ভিত্তিহীন, অবৈজ্ঞানিক, কাল্পনিক ইত্যাদি বলা মূলত বহু আয়াত-হাদীসকেই অস্বীকার করার নামান্তর।
২. যারা জিন-জাদুর মতো বিষয়গুলোর অস্তিত্ব তো স্বীকার করে; কিন্তু অজ্ঞতার কারণে এসব নিয়ে ঈমানবিধ্বংসী কাজ যেমন অন্যের ক্ষতিসাধনের চেষ্টা, কুফরি কালাম করা, জাদু বিদ্যা বা জাদুকরের কাছে যাওয়া- এসবে লিপ্ত, তারা বুঝতে পারবে এসব ব্যাপারে শরীয়ার হুকুম কী?
৩. আরও জানা যাবে জিন বা জাদুগ্রস্ত হলে কী করনীয়? কীভাবে করা যায় সঠিক চিকিৎসা?
৪. জানা যাবে বদনজর ও ঝাড়ফুঁক সম্পর্কেও।
৫. জানা যাবে এসব বিষয়ে ভণ্ড-প্রতারক শ্রেণি কীভাবে প্রতারণা করে থাকে, অর্থাৎ তাদের বাস্তব কিছু আলামত।
৬. সর্বোপরি বইটিতে এমন বেশ কিছু আয়াতে কারীমাহ ও দুআ উল্লেখ করা হয়েছে, নিয়মিত এগুলো তিলাওয়াত ও আদায় করলে ইন শা আল্লাহ জিন-জাদুর আছর থেকে বেঁচে থাকা সম্ভব হবে।
* বইটির নির্বাচিত কিছু অংশ:
জাদুকরকে চেনার উপায়
নিম্নলিখিত আলামতের মধ্য থেকে কোনো একটি আলামত যদি কোনো চিকিৎসকের মাঝে পাওয়া যায়; তবে নিশ্চিত হয়ে নিন, সে জাদুকর।
জাদুকরের আলামতসমূহ:
– জাদুকর রোগীকে তার নাম ও মায়ের নাম জিজ্ঞেস করে।
– জাদুকর রোগীর কোনো একটি কাপড় তালাশ করবে। যেমন, জামা, টুপি, রুমাল ইত্যাদি।
– জাদুকর কখনো কখনো কোনো পশু তলব করবে, যা সে বিসমিল্লাহ ব্যতীত জবাই করে এবং তার রক্ত রোগীর গায়ে মালিশ করে ও অনাবাদি স্থানে ফেলে দেয়।
– জাদুর মন্ত্র লিখে।
– জাদুর মন্ত্র পাঠ করে, যা সাধারণ মানুষের জন্য বুঝা সম্ভব হয় না।
– রোগীকে এই আদেশ দেবে যে, সে যেন মানুষ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত এমন কামরায় অবস্থান করে, যেখানে সূর্যের আলো পৌঁছায় না।
– কখনো রোগীকে এই বলে সতর্ক করে যে, নির্দিষ্ট সময় (সাধারণত চল্লিশ দিন) পর্যন্ত হাত দিয়ে পানিকে স্পর্শ না করতে বলে।
– রোগীকে এমন কোনো জিনিস দেবে, যা জমিনে দাফন করতে হয়।
– রোগীকে এমন কাগজ দেয়, যা জ্বালিয়ে তার ধুয়া থেকে ধুপ নিতে হয়।
– জাদুকরের কাছে গেলে জাদুকর রোগীকে দেখামাত্র তার নাম, স্বামীর নাম, কোথা থেকে কী উদ্দেশ্যে এসেছে, সব বলে দেয়। (জাদুকর কীভাবে বলে তা পূর্বে গত হয়েছে।)
– জাদুকর কোনো কাগজ বা পাত্রে কোনো কিছু লিখে দেবে এবং তা ধুয়ে পান করতে বলবে।
এই আলামতগুলো যদি কোনো চিকিৎসকের মাঝে পাওয়া যায়; তবে জেনে রাখুন, সে জাদুকর। আর জাদুকরের কাছে চিকিৎসা করানো নিষিদ্ধ ও অনুচিত।
উল্লেখ্য, শুরুতে যে ছেলেটির কথা বললাম, তার বাবা এখনো আমাকে ফোন করে বলেন, তার ছেলের জন্য এ ব্যাপারে ভালো কোনো চিকিৎসকের সন্ধান দিতে। ভাবছি, তাকে শোআইব আহমাদ ভাইয়ের ‘জাদুর বাস্তবতা’ বইটি পড়তে দেবো, যাতে তারা স্বচ্ছ কিছু ধারণা পেয়ে সঠিকভাবে চিকিৎসা গ্রহণ করতে পারেন; কিন্তু কবে পাব বইটি, আমিও আছি সে প্রতীক্ষায়!! আর রাকী হিসেবে শোআইব আহমাদ ভাইয়ের ঠিকানা দেবো কিনা সেটাও ভাবছি।
বি:দ্র: জাদুর বাস্তবতা বইটি free pdf download করিতে চাহিয়া লেখকদের নিরুৎসাহিত করিবেন না
Reviews
There are no reviews yet.