উসমান ইবনে আফফান রা.
উসমান ইবনে আফফান রা. -এর কিছু মূল্যবান বাণী
একজন ইমানদারের অন্তরে পাঁচ রকম ভয় কাজ করে :
তার ইমান ছিনিয়ে নেওয়া হতে পারে; এই ভয়।
ফেরেশতারা এমন কিছু লিখতে পারে; যা তার উপর কিয়ামত দিবসে আরোপিত হবে।
শয়তান তার নেক আমল বিনষ্ট করে দিতে পারে।
মৃত্যুর ফেরেশতা কোনো সতর্কতা ছাড়াই চলে আসতে পারে।
দুনিয়া তাকে আখিরাত থেকে প্রতারিত ও বঞ্চিত করতে পারে।’
আমি চারটি জিনিসে ইবাদাতের মজা লাভ করেছি :
আল্লাহ যা ফরজ করেছেন; তা আমল করে।
আল্লাহ যা নিষেধ করেছেন; তা থেকে বিরত থেকে।
আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য ভালো কাজে উৎসাহ দিয়ে।
আল্লাহর শাস্তির ভয়ে মন্দ কাজ থেকে মানুষকে ফিরিয়ে রেখে।’
— উসমান ইবনে আফফান রা.
বিদ্রোহীদের অভিযোগের জবাব ও তাদের বিরুদ্ধে উসমান রা.-এর প্রমাণ স্থাপন
— — —
উসমান রা. সকল মুসল্লি ও সাহাবাদের সামনে মসজিদের একটা বৈঠকে সাবায়িদের ডাকলেন এবং তারা কেন অনিশ্চিত বোধ করছে, তা ব্যাখ্যা করতে বললেন। উসমান রা. যতগুলো ভুল বা সীমালঙ্ঘনের কাজ করেছেন তার তালিকা করতে বললেন। ফলে সাবায়িরা মুখ খুলল এবং তাদের অভিযোগ অনুযায়ী উসমানের ভুলগুলো ব্যাখ্যা করল। এরপর উসমান রা. তাঁর কাজের ভিত্তি ও অবস্থানকে সুস্পষ্ট ও অলঙ্কারপূর্ণভাবে বর্ণনা করলেন। নিরপেক্ষ মুসলমানরা এই স্বচ্ছ আলোচনা ও জবাবদিহিতা মন দিয়ে শুনছিল। উসমান রা. কথিত অভিযোগের কথা উল্লেখ করলেন এবং প্রকৃত অবস্থা বর্ণনা করলেন। এরপর নিজের ভালো কাজের সমর্থনে কথা বললেন ও মসজিদে উপস্থিত সাহাবিদের সাক্ষী চাইলেন।
১. তিনি বললেন; তারা বলে, আমি সফরের সময় পুরো নামাজ আদায় করি এবং আমার পূর্বে আল্লাহর রাসুল সা., আবু বকর ও উমর রা. এমন করতেন না। কিন্তু আমি পুরো নামাজ আদায় করেছি—যখন আমি মদিনা থেকে মক্কায় সফর করেছি। আর মক্কায় আমার একটা পরিবার আছে। তাই আমি যখন আমার পরিবারের সাথে থাকি তখন মুসাফির নই। তাই নয় কি? সাহাবিরা বললেন, ‘আল্লাহর কসম, হ্যাঁ’।
২. তারা বলেছে, আমি নিজের জন্য চারণভ‚মি বরাদ্দ করেছি। মুসলিমদের জন্য জীবনযাত্রা কঠিন করে দিয়েছি এবং আমার উটের জন্য একটা বিশাল অঞ্চল আলাদা করে রেখেছি। অথচ আমার আগেও জাকাতে প্রদত্ত উটের জন্য চারণভূমি বরাদ্দ ছিল এবং জিহাদে ব্যবহার করা হয়েছিল। রাসুলুল্লাহ সা., আবু বকর ও উমর রা. তাঁরা সবাই চারণভূমি বরাদ্দ করেছিলেন। আমাকে ভূমি বর্ধিত করতে হয়েছে; কারণ, জাকাত ও জিহাদের জন্য প্রদত্ত উটের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। উপরন্তু, আমি গরিব মুসলমানদের জন্য সেই ভূমিতে পশুচারণ করা নিষিদ্ধ করিনি। আমি নিজের পশুর জন্য কখনোই জমি বরাদ্দ করিনি। আমাকে খলিফা নিযুক্ত করার সময় আমি মুসলমানদের মধ্যে সম্পদশালীদের একজন ছিলাম। আমার অনেক উট ও মেষ ছিল; কিন্তু আমি তার সব ব্যয় করেছি। এখন আমার কেবল দুটো উট ছাড়া আর পশুসম্পদ নেই। দুটো উটকে আমি হজের জন্য রেখেছি। তাই নয় কি? সাহাবিরা বললেন, ‘আল্লাহর কসম, হ্যাঁ’।
৩. তারা বলে, আমি এক কপি মাসহাফ রেখে বাকি সব পুড়িয়ে দিয়েছি এবং আমি সকলকে একটি মাসহাফ পড়তে মিলিত করেছি। কিন্তু কুরআন নিঃসন্দেহে আল্লাহর কালাম, যা আল্লাহর পক্ষ থেকে এসেছে। আর সব কুরআন একই। আমি তো কেবল সকল মুসলিমকে কুরআনের পেছনে ঐক্যবদ্ধ করেছি এবং এ বিষয়ে মতবিরোধ করতে নিষেধ করেছি। আমি এ কাজ করার মাধ্যমে আবু বকর রা.-এর পদাঙ্ক অনুসরণ করেছি; যিনি কুরআন সংকলন করেছিলেন। তাই নয় কি? সাহাবিরা বললেন, ‘আল্লাহর কসম, হ্যাঁ’।
৪. তারা বলে, আমি হাকাম ইবনুল আসকে মদিনায় ফিরে যেতে দিয়েছি; অথচ আল্লাহর রাসুল সা. তাকে তায়েফ থেকে বিতাড়িত করেছিলেন। হাকাম ইবনুল আস একজন মক্কি; মাদানি নন। আল্লাহর রাসুল সা. তাঁকে মক্কা থেকে তায়েফে বিতাড়িত করেছিলেন এবং রাসুল সা. তার ওপর সন্তুষ্ট হওয়ার পর তাকে মক্কায় ফিরে আসার অনুমতি দিয়েছিলেন। আল্লাহর রাসুল সা. তাঁকে তায়েফে প্রেরণ করেছিলেন এবং স্বয়ং তিনিই তাঁকে মক্কায় আসতে দিয়েছেন। তাই নয় কি? সাহাবিরা বললেন, ‘আল্লাহর কসম, হ্যাঁ’।
৫. তারা বলে, আমি তরুণদের চাকুরি দিয়েছি এবং তাদের গভর্নর নিযুক্ত করেছি; কিন্তু আমি কখনোই ন্যায়পরায়ণ, দয়াশীল ও উত্তম চরিত্রের অধিকারী ব্যতীত কাউকে নিযুক্ত করেনি। এরাই হচ্ছে সেসব লোক, যাদের ওপর আমি তাঁদের নিযুক্ত করেছি। যাও, নিযুক্তদের বিষয়ে তাদের জিজ্ঞেস করো। আমার পূর্বে যারা ছিলেন তারা এদের থেকেও কমবয়সীদের নিযুক্ত করেছিলেন। আল্লাহর রাসুল সা. উসামা ইবনে জায়দকে এদের থেকে কমবয়সী থাকাকালে নিযুক্ত করেছিলেন। আর তারা আল্লাহর রাসুল সা.-এর সাথে আমার তুলনায় আরও কর্কশকণ্ঠে কথা বলেছিল। তাই নয় কি? সাহাবিরা বললেন, ‘আল্লাহর কসম, হ্যাঁ। এই লোকেরা অন্যের সমালোচনা করে; কিন্তু বাস্তবতা বোঝে না’।
৬. তারা বলে যে, আমি আবদুল্লাহ ইবনে সাদ ইবনে আবি সারহকে গনিমতের মাল দিয়েছি। কিন্তু যখন সে উত্তর আফ্রিকা জয় করেছিল, তখন তাঁর কাজের পুরস্কারস্বরূপ আমি কেবল খুমুসের এক পঞ্চমাংশ দিয়েছি। আমি তাকে বলেছি, আল্লাহ যদি তোমাকে উত্তর আফ্রিকা জয়ী করেন, তাহলে তোমার জন্য রয়েছে এক পঞ্চমাংশ খুমুস পুরস্কার। আবু বকর এবং উমর রা.-ও আমার পূর্বে এমন করেছেন। তা সত্ত্বেও মুজাহিদ বাহিনী আমাকে বলেছে, ‘এক পঞ্চমাংশ দেওয়ার ব্যাপারে আমরা আপত্তি জানাই’—যদিও তাদের আপত্তি জানানোর কোনো অধিকার ছিল না। কিন্তু আমি ইবনে সাদের কাছ থেকে এক পঞ্চমাংশ নিয়ে মুজাহিদদের দিয়েছি। অর্থাৎ, ইবনে সাদ তো কোনো কিছুই নেয়নি। তাই নয় কি? সাহাবিরা বললেন, ‘আল্লাহর কসম, হ্যাঁ’।
৭. তারা বলে, আমি আমার পরিবারকে ভালোবাসি। আর আমি তাঁদের প্রতি উদার। আমার পরিবারের প্রতি ভালোবাসা আমাকে কখনোই তাদের প্রতি পক্ষপাতী করেনি এবং অন্যায় আচরণে তাদেরকে সমর্থনে বাধ্য করেনি; বরং আর সবার মতোই তাঁদের দায়িত্ব আছে এবং আমি তাঁদের কাছ থেকে পাওনা বুঝে নিই। আর উদারতা প্রসঙ্গে; তাঁদেরকে আমি আমার নিজ সম্পদ থেকে দিয়েছি; মুসলমানদের সম্পদ থেকে নয়। কারণ, আমি মুসলমানদের সম্পদ আমার জন্য জায়েজ মনে করি না। অন্য কারও অধিকার নেই তাদের সম্পদ কেড়ে নেওয়ার। আমি আল্লাহর রাসুল সা., আবু বকর ও উমর রা.-এর সময় থেকেই তাঁদেরকে আমার সম্পদ থেকে দান করেছি। সে সময় আমি খরচের ব্যাপারে অত্যন্ত সতর্ক ছিলাম। কিন্তু আমি এখন আমার পরিবারের সবচে জ্যেষ্ঠ এবং জীবনের শেষ সময়ে উপনীত হয়েছি আর পরিবার ও আত্মীয়দের আমার সম্পদ দিয়ে দিয়েছি। দুর্বৃত্তদের যা ইচ্ছে তাই বলতে দাও। আল্লাহর কসম, আমি কোনো মুসলিম প্রদেশ থেকে কোনো সম্পদ বা অতিরিক্ত কিছু নেইনি। আমি সেসব প্রদেশকে তাদেরকে সম্পদ রাখতে দিয়েছি এবং আমি মদিনায় গনিমতের এক পঞ্চমাংশ ছাড়া আর কিছুই নিয়ে আসিনি। মুসলমানরা বাকি চার পঞ্চমাংশের বণ্টন সম্পন্ন করেছিল এবং প্রাপ্যদের পাওনা বুঝিয়ে দিয়েছিল। আল্লাহর কসম, আমি এক পয়সা বা অন্য কিছু সেই গনিমত থেকে নেইনি। আমি শুধু নিজ সম্পদ থেকেই আহার করি এবং শুধু নিজ সম্পদ থেকেই পরিবারকে দান করি।
৮. তারা বলে, আমি বিজিত অঞ্চলসমূহ নির্দিষ্ট কিছু মানুষকে দিয়েছি। মুহাজিরিন, আনসার ও অন্যান্য মুজাহিদরাও জিহাদে অংশ নিয়েছিল। আমি যখন বিজিতদের মাঝে ভ‚মি ভাগ করে দিয়েছিলাম, তখন তাঁদের কেউ সেখানেই বসতি গড়েছিল, আবার কেউ মদিনা বা অন্যত্র তাঁদের পরিবারের কাছে ফিরে গিয়েছিল। কিন্তু জমি তাদের দখলেই ছিল। আবার কেউ জমি বিক্রি করে দিয়েছিল এবং তাদের কাছে প্রাপ্ত অর্থ রেখেছিল।
উসমান রা. তাঁর বিরুদ্ধে তাদের প্রধান অভিযোগগুলোর জবাব দিয়েছিলেন। তিনি তাঁর অবস্থান পরিষ্কার করেছিলেন। প্রকৃত অবস্থা সম্পর্কে সবাইকে অবগত করেছিলেন।
বি:দ্র: উসমান ইবনে আফফান রা. বইটি free pdf download করিতে চাহিয়া লেখকদের নিরুৎসাহিত করিবেন না
Reviews
There are no reviews yet.