অনেক আঁধার পেরিয়ে
স্বপ্ন ঠিক করে দেয় ওরা…
বড়সড় একটা ফ্ল্যাট, সিক্স ডিজিট স্যালারির জব, সুন্দরী বউ, গ্যারাজে লেইটেস্ট মডেলের গাড়ি, বছরে দুবার ট্যুর অথবা সাদা চামড়ার দেশের গ্রিন কার্ড… ব্যস তুমি সফল।
সততা? আদর্শ? মূল্যবোধ?
ধুর, ভুলে যাও ওসব! ছলচাতুরির চাদর গায়ে জড়িয়ে নাও নির্দ্বিধায়, দুরভিসন্ধির খেলা খেলে যাও শর্তহীনভাবে। সফল হতেই হবে নাহলে তুমি পিষ্ট হয়ে যাবে জন-অরণ্যের-সামাজিকতার-চাপে। তোমার জীবন হবে ষোলো আনাই বৃথা।
আমরা ভুল করি। স্বপ্ন-সুখ ছোঁয়ার মাতাল নেশায় মত্ত হয়ে আর সবকিছুকে দূরে সরিয়ে গৃহপালিত জীবনযাপন করে পার করে দিই মাটির পৃথিবীর এই এক জীবন। সুখ পাই না। যারা লক্ষ্যে পৌঁছে তারাও অবাক হয়ে দেখে সেখানেও সুখ নেই। সুখ তা হলে কোথায়?
কিছু কিছু মানুষ থাকেন ব্যতিক্রম। সুখ, সফলতা, স্বপ্নের আলেয়াকে ঠিকই তারা চিনতে পারেন। স্বপ্ন-বেচা চোরাকারবারিদের মধুর কথাও ভোলাতে পারে না তাদের। ঠিকই তারা চিনে নেন চিরসুখের, চিরশান্তির, চিরসফলতার সেই পথ। সুখ সন্ধানীদের ভালোবেসে চিনিয়ে দেন…
পথিক, সুখ এই পথে, এ পথেই আছে…
কী সেই পথ ? সেই পথের দিশা নিয়েই ‘অনেক আঁধার পেরিয়ে’
বি:দ্র: অনেক আঁধার পেরিয়ে বইটি free pdf download করিতে চাহিয়া লেখকদের নিরুৎসাহিত করিবেন না
abidalam2559 (verified owner) –
বইয়ের নাম: অনেক আঁধার পেরিয়ে
লেখক: মুহাম্মদ জাভেদ কায়সার রহ.
“জাভেদ কায়সার রহ.” এই দুনিয়াতে নেই, আছেন তার রবের কাছে। যেই রব তাকে “অনেক আধার পেরিয়ে আলোর পথ দেখিয়েছিলেন” এবং সেই আলো তিনি শুধু নিজের মধ্যে জমা করে রাখেননি ছড়িয়ে দিয়েছেন এবং ভবিষ্যতে ও ছড়াতে থাকবে লাখ লাখ মানুষের কাছে।
ভাইয়ের বইটি পড়ছিলাম যদিও তিনি যখন জীবিত ছিলেন তখন বইটি প্রকাশিত হয়নি, তার ইন্তেকালের পর সমর্পণ প্রকাশনী তার ফেসবুক স্ট্যাটাস থেকে লিখাগুলো সংগ্রহ করে এবং আমাদের জন্য বই আকারে আলোর পথ উন্মুক্ত করে দেয়।
এমন এক উদ্যোগের জন্য সমর্পণ প্রকাশনী কে জানাই অনেক ধন্যবাদ আল্লাহ তাদের উত্তম প্রতিদান দিক।
ববইটিতে ৩৭ টি লিখা আছে প্রতিটি লিখাগুলোর মূল বিষয়বস্তু ছিল আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন, কিভাবে নিজেকে আরো উন্নত করা যায়, নিজের ভুলগুলো সংশোধন করা যায় এবং অন্ধকার থেকে আলোতে আসা যায়।
ভাই মৃত্যুর পরেও তার দাওয়াতি কাজে সফল, তার রেখে যাওয়া এই বই থেকে প্রতিদিন অনেক মানুষ অনুপ্রাণিত হচ্ছে নিজের আত্মশুদ্ধি করার জন্য যার সোওয়াব ভাইও পাচ্ছেন।
বইটি থেকে কিছু লাইন নোট করেছি তা আপনাদের জন্য পেশ করছি :
১. মানুষ মাত্রই উন্নতি চায়
২. সময় মানুষকে অনেক পাল্টে দেয়
৩. অন্ধকার যত গভীর হয়, ভোর ততই কাছে চলে আসে
৪. জন্মের পরে প্রত্যেক মানুষের জন্য সব সবচেয়ে বড় সত্যটি হচ্ছে মৃত্যু
৫. পৃথিবীর সবচেয়ে উওম বিষয়ের মধ্যেও আপনি কিছু না কিছু মন্দ বিষয় খুঁজে পাবেন
৬. জ্ঞানী মানুষের জ্ঞানের পরিচয় মিলবে তখনই যখন তিনি অকপটে কোন বিষয়ে স্বীকার করবেন “আমার জ্ঞান নেই” এই বিষয়ে
৭. দুর্গন্ধময় স্থানে বেশি দিন থাকলে সেই দুর্গন্ধ সহ্য হয়ে যায়। একইভাবে, হারামের সাথে বসবাস করতে করতে ইদানীং আমাদের ভয়ংকর বিষয়কেও তুচ্ছ মনে হয়
৮. আমার আজকের সমস্যাই হয়তো আগামীকাল আপনার সমস্যা হয়ে উঠতে পারে। কারও সমস্যাকেই তুচ্ছ মনে করার কারণ নেই
৯. মানুষের বিচ্যুতি হতে পারে। এটি অস্বাভাবিক কিছু না। কিন্ত যেই বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ সেটি হলো, নিজের ভুলকে স্বীকার করার মানসিকতা।
এই ছিলো বই নিয়ে আমার মতামত..
আসুন নিজে বই পড়ি অন্যকেও পড়তে বলি।
পড়বে সারা দেশ,তাহলেইতো এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ।
Tahnia Islam Khan –
আলহামদুলিল্লাহ, বইয়ের বেশিরভাগ লেখা আমার আগেই পড়া আছে। কারণ লেখাগুলো উনি স্ট্যাটাস আকারে উনার ফেইসবুকে প্রকাশ করেছিলেন।
বইটা যখন প্রকাশ হবে শুনেছিলাম, তখনই ঠিক করেছিলাম বইটা সংগ্রহে রাখবো ইন শা আল্লাহ্ ।
সংগ্রহ করবো তিনটি কারণে।
প্রথমত, ভদ্রলোকের লেখার ভক্ত ছিলাম আমি। প্রতিটি লেখাতে একটা ম্যাসেজ আছে।
দ্বিতীয়ত, ভদ্রলোক দ্বীনের পথে হাটা শুরু করেছিলেন। কেউ যখন হেদায়েত প্রাপ্ত হয়ে দ্বীনের পথে হাটা শুরু করেন, তাঁদের কথা শুনতে, লেখা পড়তে ভালো লাগে অনেক, অনুপ্রাণিত হই, শিখি অনেক কিছু। ভালো লেখা বারবার পড়তে হয় নিজেকে রিমাইন্ডার দেওয়ার জন্য।
তৃতীয়ত, বইটা যত বিক্রি হবে, ইন শা আল্লাহ্ তার রয়্যালিটি পাবেন উনার পরিবার। শুধু আল্লাহ’র জন্য উনার পরিবারকে ভালোবেসে আমার একটা ক্ষুদ্র প্রয়াস।
এখন বইয়ের কথায় আসি। আল্লাহ্’র দেওয়া সব ইবাদতের মধ্যে হজ্জের প্রতি আমার আলাদা একটা টান কাজ করে। আসলে বায়তুল্লাহ’র প্রতি একটা আলাদা ভালোবাসা আমার ছোটবেলা থেকেই ছিল। আমার অনেক লেখায় সেটা প্রকাশ করেছি। তাই যখনই কারো হজ্জের গল্প শুনি, আমি আগ্রহ নিয়ে শুনি। একেক জনের গল্প একেকরকম। তবে সবার গল্পে একটা ব্যাপার মিল পাই, সবাই একই কথা বলেন, সেটা হচ্ছে জীবনের কোনো না কোনো সময়, সবাই মন থেকে চেয়েছেন বা নিয়ত করেছেন হজ্জে যাওয়ার। উনার লেখাতেও আমি সেটা পেয়েছি। কি আগ্রহ আর টান ছিল উনার বায়তুল্লাহর প্রতি। বিশেষ করে উনার প্রথমবার হজ্জে যাওয়ার ঘটনা যখন আমি আমার পরিবারের সাথে গল্প করেছিলাম , তখন সবাই অবাক হয়েছিল। এরকম ঘটনাও ঘটে মানুষের জীবনে! উনার হজ্জ সম্পর্কিত সবগুলো লেখা আমার সবচেয়ে প্রিয়। এই প্রসঙ্গে বলি, লেখকের সাথে ২০১৬ সালে ম্যাসেঞ্জারে আমার কথা হয়েছিল হজ্জ সম্পর্কে।
তারপর উনার দ্বীনের পথে আসার গল্পটাও খুব ভালো লেগেছে। প্রতিটি মানুষের দ্বীনের পথে আসার গল্পটা শুনতে খুব ভালো লাগে। আল্লাহ’র প্ল্যানিংটা দেখি তখন। আল্লাহ্’র প্রতি টানটা বেড়ে যায় অনেক, কৃতজ্ঞতায় মাথা নুয়ে আসে।
উনার ছোটবেলার ঘটনা, চলতি পথে উনার জীবনের টুকরো টুকরো গল্পের মাঝ থেকে উনার উপলব্ধিগুলো ভাবনার খোরাক জোগায়।
কিছু লেখা পড়ে মনে হয়েছে, আলেয়ার পিছেই কি ছুটে চলছি আমরা? কিছু লেখা আমাকে ভাবিয়েছে আল্লাহ্’র নিয়ামতের কথা, নিজের মৃত্যুর কথা, দুনিয়ার মোহের কথা, নিজেকে ঠকানোর কথা।
শিক্ষনীয় কিছু বিদেশি গল্পের অনুবাদগুলো পড়ে অভিভূত হয়েছি। বিদেশি গল্পগুলো আমার আগেই পড়া ছিল। প্রাঞ্জল ভাষায় অনুবাদ করেছেন তিনি।
এত সাবলীল ভাষায় কিছু সাহাবী রাদিআল্লাহু তাআ’লা আনহুর কথা বলেছেন যে, পড়ার পর মনে হয়েছে, আহা! আরো কিছু লিখতো, শেষ হয়ে গেলো কেনো লেখাটা।
কাছে আসার গল্প, অপ্রিয় কথন, অগ্নুৎসব শিরোনামের লেখাগুলো পড়লে মনে হবে, আমাদের চারপাশে এমন দুর্গন্ধযুক্ত পরিবেশেই আমরা বাস করছি, কোনো ভাবান্তর নেই আমাদের মাঝে। যেন এগুলোই স্বাভাবিক। অথচ ভুলে নিমজ্জিত আমরা।
উনি নিজেকে পরিবর্তন করেছিলেন, কিভাবে পরিবর্তন এসেছিলো উনার মাঝে, সে গল্প করেছেন। উনার লেখা দিয়ে অন্যকে পরিবর্তন করতে চেয়েছিলেন, দ্বীনের প্রতি অন্যকে আহবান করেছিলেন।
বইটা পড়তে ভালো লাগবে ইন শা আল্লাহ্। সবচেয়ে বড় কথা ভাবনার খোরাক জোগাবে। একটু হলেও আপনি চিন্তা করবেন যে, কি করছেন, কোন পথে হাটছেন আপনি।
লেখকের মৃত্যুর ঘটনা আমাকে খুব নাড়া দিয়েছিল। উনার মৃত্যুর কথা যখন শুনেছিলাম, বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। সবচেয়ে বড় কথা উনি কালিমা পড়তে পড়তে চলে গিয়েছেন আল্লাহ্’র কাছে। এরকম নসিব কয়জনের হয়? এটা তো ভালো মৃত্যুর লক্ষ্মণ। নিজেও ভালো মৃত্যুর লক্ষ্মণগুলো লিখে গিয়েছেন।
উনার দু’আ কবুলের ঘটনাগুলো আমার জন্য রিমাইন্ডার হিসাবে কাজ করেছে। মনে হয়েছে মন থেকে চাওয়ার মতো চাইতে পারলে, আল্লাহ্ সেই চাওয়া পুরণ করেন।
সবশেষে বলবো, বইটি পড়ুন, নিজেকে ভালোর দিকে পরিবর্তন করুন। উনার ভাষাতেই বলি, পরিবর্তনের যাত্রা শুরু হোক এই মুহুর্ত থেকেই- বিইযনিল্লাহ।