সুবোধ
উপন্যাসের চরিত্রগুলো বাস্তবেই পাঠকের মননে একটা প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। সে গল্পের প্রতিটি চরিত্র নিয়ে কল্পনার জগতে ভাসে।নিজেকে গড়তে চায় সেই সব চরিত্রে,ভাবতে শিখে গল্পের আদর্শে।এটিও সেরকম একটি উপন্যাসের বই।যা আপনাকে তার রঙে রঙিন হতে উদ্দীপক করে তুলবে।পাঠপর্যালোচনাঃ
হুমায়ুন হিমু পড়েছে আর হলুদ পাঞ্জাবি পড়ে খালি পায়ে হাঁটার শখ করেনি,এমন লোক খুব কমই আছে। হিমুর চরিত্রে বাস্তব জীবনে নিজেকে অভিনয় করার প্রয়াস করে।
সুবোধ বইটি পড়ে আমার ও ঠিক একই প্রতিক্রিয়া। নিজেকে আব্দুল্লাহ ভাবতে মন চাচ্ছে। তার চরিত্রটাকে নিজ সত্ত্বায় ফিট করার শখ হচ্ছে।
রাতে রাস্তায় হাঁটা, মসজিদের উদ্দেশ্য কদম, আপন রবের সামনে উপস্থিতি রাতের নির্জন মূহুর্তে সবই ছিল এক স্বর্গীয় ইন্টারেস্টিং কিছু।
অভির মাছের কাটায় আক্রান্ত হওয়া, আরশের অধিপতির ইচ্ছায় আব্দুল্লাহর ওসিলায় সেই কাটা দূর হওয়া।আর অভির প্রাক্টিসিং মুসলিম হয়ে যাওয়া সবই ছিল সুখ পাঠ্য। তবে এর ফলটা তিক্ত যে, আপন ফুপা-ফুপির বাড়ি থেকে চিরদিনের জন্য বিদায়। ইরাম ছেলেটা কথিত সুবোধ ছিল। শেষে সেও আব্দল্লাহর কাতারে আসে তার চরিত্র মাধুর্যতা, সাহায্যপরায়ণ ক্ষমতা বলে।
গুলশানে অবস্থিত রাহেলা খালার বাড়ির বিবরণ পড়ে আমার লোভী আত্মা জেগে উঠলেও আব্দুল্লাহর কোন পরোয়া ছিল না। আল-ওয়ালা ওয়াল- বারার বাস্তব ছিত্র ছিল সে।
নামাজ ঘরটা আব্দুল্লাহর সাথে সাথে আমার ও বেশ পছন্দ হয়েছে। ফ্লোর সবুজ মার্বেলের। চারদিকে কুরআন শরীফের আয়াত ফ্রেমে বেঁধে রেখেছে।ইসলামিক আর্চ ডিজাইন।কন্সিল্ড লাইটিং ব্যবস্থা।পুরো শরীফ রেকর্ড করা, এক টিপে অটোমেটিক কুরআন খতম হয়ে যায়।পুরো প্রেয়ার রুম মুখরিত হয়ে উঠে মধুর তিলাওয়াতে।
আব্দুল্লাহর ঘনিষ্ঠ মানুষ হচ্ছেন জহিরুল ইসলাম সাহেব। তার মেয়ের চিঠিটা পড়ে আমার বিবাহের শখ জাগ্রত হয় এমন কন্যার আশায়!ব্যক্তিগত অভিমতঃ
প্রথম ছাপা হিসেবে আমার চোখে বানান ভুল পড়েনি। অন্য কারো চোখে পড়তে পারে।
তবে বইটি হিমু নামক একটি উপন্যাস থেকে ইস্পায়ার্ড। যার দরুন বইটির উপর চরিত্র বিকৃতির অভিযোগ আসতে পারে। তবে তার আগে কিছু পয়েন্ট স্বরণ রাখলে আপনার কাছে দেই অভিযোগ অসার মনে হবে।১- স্বয়ং হুমায়ুন আহমেদই তার মৃত্যুর পরে কলমের কালিতে হিমুর চরিত্রটি জিয়ে রাখার কামনা করে গেছেন।
২- স্বয়ং হুমায়ুন আহমাদ ও বিভিন্ন উপন্যাসে বিভিন্ন ইসলামী চরিত্রকে খারাপ করে উপস্থাপন করেছেন। অর্থাৎ আপনাদের ভাষায় টান দিয়েছেন।
৩- একজন মুসলিম ও কলমযোদ্ধা হিসেবে তার জবাব স্বরূপ হিমুর চরিত্রকে ইসলামিক করে উপস্থাপন করা লেখকের দায়িত্ব ও বটে। ( তবে এটাই চূড়ান্ত না)
৪- হিমু উপন্যাস জগতের কাল্পনিক অসভ্য চরিত্র হলেও সে লিডিং দিচ্ছে বাস্তব শত হিমু চরিত্রের। তাই একজন দায়ী হিসেবে অসভ্য চরিত্রকে সভ্য চরিত্রের দিকে ধাবিত করা আমাদের ফরজিয়া।
৫- যদি প্রশ্ন আসে সেটা হিমু নামে কেন।তাহলে বলব বাস্তব চরিত্রের কত হিমুই এখন আব্দুল্লাহর পথে কদম রেখেছে। তাদের জীবনধারার পরিবর্তন কাহিনী হিমু শিরোনামেই যুক্তিযুক্ত।
৬- যদি বলেন আপনার লেখা চরিত্র নিয়ে কেউ টান দেয়, তাহলে আপনার কেমন লাগবে। তাহলে বলব খারাপ লাগাটাই স্বাভাবিক। কারন এটা যুদ্ধক্ষেত্র। আর যুদ্ধক্ষেত্রের নিয়মই হচ্ছে মারা-মার খাওয়া। সূরা তাওবার ১১১ নং আয়াতে আল্লাহ তায়ালা এই নীতিই বর্ণনা করেছেন।গুণগত মানঃ
সমর্পণ প্রকাশনী রীতিমতই আমাদেরকে দারুন ও আকর্ষণীয় রূপে বই উপহার দিচ্ছে। কাগুজে মান যথেষ্ট উন্নত।তবে এই প্রকার বাইন্ডিং গুলোতে একটা সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। কোনাগুলো নষ্ট হয়ে যায়।
আর প্রচ্ছদের ব্যপারে কিছুই বলার নেই। প্রচ্ছদই গল্পের চরিত্রের জানান দিচ্ছে।
উপসংহারঃ
বর্তমান জেনারেশন অনেক বেশিই ইমোশনাল। মুভি বা কোন গল্পের মূল চরিত্রটা নিজের মাঝে নিয়ে আসতে কত জঘন্য ও ভয়ংকর পদক্ষেপ নিতে সামান্য ও ভাবে না।
বিশেষত উপন্যাস জগতের জনপ্রিয় চরিত্র হিমু হতে আমাদের তরুনরা আজ প্রতিযোগীতায় ব্যস্ত।
তাই তাদের ইমোশনটাকে ইসলামী তাহযীব ও তামাদ্দুনের প্রতি পরিচালিত করতে এসব উপন্যাস আরো প্রয়োজন।এর আরো ব্যাপক প্রচার-প্রসার কামনা করছি।
পরিশেষে আন্তরিক ভালবাসায় সিক্ত করছি বইটির সাথে
সম্পৃক্ত সকল মানুষগুলোর। লেখকের প্রতি কী বলে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করব তা বুঝতে পারছিনা।উত্তম বদলা নসীব হোক!
যে কোন ইসলামী বই পেতে ইসলামিক বইঘর.কম এর সাথেই থাকুন
বি:দ্র: সুবোধ বইটি free pdf download করিতে চাহিয়া লেখকদের নিরুৎসাহিত করিবেন না
Alamgir Hossain Manik –
“সুবোধ”
ছেলেটার নাম ছিল সুব্রত রায়হান।তার বাবা এই নাম রেখেছিলেন।কিন্তু তার বাবা তাকে ‘সুবোধ’ বলে ডাকতেই পছন্দ করতেন।মানুষের বাবারা স্বপ্ন দেখে তাদের ছেলে বড় হয়ে ডাক্তার হবে,ইঞ্জিনিয়ার হবে।কিন্তু সুবোধের বাবার স্বপ্ন উনার ছেলে বড় হয়ে একজন মহাপুরুষ হবে।
ছেলেটার মা মারা যায় সেই ছোটবেলায়।তারপর বাবার হাত ধরেই বড় হওয়া।একসময় বাবাও চলে যান এই দুনিয়া ছেড়ে।বাবা তার মৃত্যুর আগে ছেলের হাতে একটা ডায়েরী ধরিয়ে দিয়েছিলেন।তার মৃত্যুর পর সেটা পড়তে বলেছিলেন।সেটাকে ডায়েরী না বলে উপদেশনামা বলা ভালো।জীবনে চলার নানা উপদেশ তিনি ডায়েরীতে লিখে গিয়েছেন তার সুবোধের জন্য।
ছেলে বড় হয়ে মহাপুরুষ হতে পেরেছে কিনা জানেনা, তবে কুরআন পড়ার পর আব্দুল্লাহ হয়ে গেছে। ‘আব্দুল্লাহ’ অর্থ আল্লাহর গোলাম।সুবোধ থেকে আব্দুল্লাহ হওয়ার এই প্রক্রিয়াটা জটিল কোন প্রক্রিয়া নয়।অল্প কিছু আমলের মাধ্যমে আব্দুল্লাহ হতে পারাটা অনেক বড় একটা সম্মানের ব্যাপার।
পকেট ছাড়া একটা জোব্বা পড়ে সারাদিন রাস্তায় ঘুরঘুর করা আর দিনশেষে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কাছে গবম্ভীর রাতে একটু আলাপ – আলোচনা চালিয়ে যাওয়া তাহাজ্জুদ নামাজের মাধ্যমে এতেই যেন আব্দুল্লাহর জীবনের প্রশান্তি।
কিছু মানুষ তাকে পরিচিত আপনজনদের চেয়েও খুব আপন করে নেয় আর কিছু মানুষ তার ইসলামের উপর অবিচল থাকাটা এক প্রকার মৌলবাদী চিন্তার উদ্রেক করে নেয়।
বইটা ফার্স্ট টু লাস্ট ইন্টারেস্টিং একটা ক্যারেক্টার নিয়ে রচিত একটা গল্প।বইটা পড়তে পড়তে নিজেকেও মাঝে মাঝে সুবোধের মত বানিয়ে নিতে ইচ্ছা হয়েছে।গল্প ভালো লাগলে এরকম উদ্ভট চিন্তা আসবেই আর সেটাই স্বাভাবিক। ‘সুবোধ’ কে খুব ভালো লেগেছে।সামনে হয়তো ‘সুবোধ – ২’ আসতে পারে।তার জন্য অপেক্ষায় রইলাম।