বেলা ফুরাবার আগে – Bela Furabar Age
জীবনটা কেমন যেন! ঘড়ির কাটার সাথে সাথে ছন্দ মিলিয়ে টিকটিক শব্দে কেটে যায় একজীবনের রঙীন সব বসন্ত। সময়ের পথ-পরিক্রমায় বাঁধা আছে আমাদের জন্ম আর মৃত্যু। সেই জন্ম আর মৃত্যুর মাঝামাঝি সময়ের যে সমষ্টি, তার নামই জীবন! কিন্তু সেই জীবনটা বড্ড অদ্ভুতুড়ে! এই জীবনে আমাদের চোখ মেলে দেখা হয়না সুবহে সাদিকের প্রথম প্রহর। ভোরের পবিত্র হাওয়া গায়ে লাগিয়ে, জীবনের সমস্ত ক্লান্তিকে ঝেড়ে ফেলে আমাদের ছুটে আসা হয়না মিনার থেকে ধেয়ে আসা আহ্বান পানে, যেখান থেকে ভেসে আসে কল্যাণের ডাক। কোন এক অদ্ভুত কারণে, আমরা যেন ডুবে আছি অবাধ্যতার এক অতল গহ্বরে, যেখানে পৌঁছায়না আলো, ভোরের স্নিগ্ধ কিরণ যার নাগাল পায়না।
তবে কি একটা জীবন ঠিক এভাবেই কেটে যাবে? অন্ধকারের করাল গ্রাসে, একটা জীবন কুরে কুরে হবে নিঃশেষ? জীবনের যে মহান উদ্দেশ্য, অনন্ত অবসরের জন্য যে মহা প্রস্তুতি নিতে আমাদের আগমন, জীবন কি সেই অধ্যায় থেকে বিচ্যুত হবে?
জীবনের সঠিক গতিপথ ভুলে, একটা জীবন যে বিভ্রান্তিতে বিভোর হয়ে আছে, হৃদয়াকাশ থেকে বিভ্রান্তির সেই কালোমেঘ সরিয়ে, জীবনকে তার কক্ষপথে ফেরাতে লেখক আরিফ আজাদের এবারের নতুন এবং ভিন্নধর্মী প্রয়াসের নাম ‘বেলা ফুরাবার আগে’।
‘বেলা ফুরাবার আগে’-তে লেখক তার অভিজ্ঞতার ঝুলি থেকে আমাদের জন্য এমনকিছু বিষয় তুলে এনেছেন, যা আমাদের প্রাত্যহিক জীবনের জন্য একান্তভাবে অপরিহার্য। আমাদের ভুলে থাকা মন, ডুবে থাকা হৃদয় আর বুঁদ হয়ে থাকা অন্তরকে তিনি নতুন করে জাগানোর চেষ্টা করেছেন। হৃদয়ের কোণে, সম্ভাবনার যে সুপ্ত আগুন আমরা লুকিয়ে রাখি, সেই আগুনকে জ্বালানোর জন্যে ‘সলতে’ দরকার, আর সলতে সরবরাহের কাজটা লেখক আরিফ আজাদ যুতসইভাবে করার চেষ্টা করেছেন এই বইটিতে।
বইটির মূল কেন্দ্রে আছে আমাদের যুবকশ্রেণী। তবে, লেখকের ভাষায়, বইটি একইসাথে সকল শ্রেণীর মানুষের জন্যও। জীবনে বারংবার হতাশ হয়ে পড়া, আপতিত দুঃখ-কষ্টগুলোতে খেই হারিয়ে ফেলা, নিজের নফসের সাথে সংগ্রাম, কিংবা জীবনকে ঢেলে সাজানোর পদ্ধতি, এককথায় সমস্তকিছুর ‘বাণ্ডেল’ বলা যাবে এই বইটিকে। যারা দ্বীন থেকে দূরে, অবাধ্যতা আর অসংলগ্নতায় যাদের একটা জীবন অবলীলায় কেটে যাচ্ছে, ‘বেলা ফুরাবার আগে’ কিভাবে নিজেকে আবিষ্কার করতে হবে, তা নিয়েই লেখকের এবারের এই ভিন্নধর্মী আয়োজন।
বি:দ্র: বেলা ফুরাবার আগে বইটি free pdf download করিতে চাহিয়া লেখকদের নিরুৎসাহিত করিবেন না


 
				 
				 
				 
				 
				 
				 
				 
				
Aynul Islam –
অসাধারণ একটি বই, বেলা ফুরাবার আগেই বইটি পড়া শেষ!
Tanjina Akter Rimi –
অসাধারণ! খুব ভালো লেগেছে। পড়ে তৃপ্তি পেয়েছি। অন্তরে এক অসাধারণ ভালো লাগা কাজ করেছে।
Fowjia Arefin Salwa –
বইয়ের নাম: “বেলা ফুরাবার আগে”
লেখকের নাম:আরিফ আজাদ
প্রথমেই বলি “প্যারাডক্সিক্যাল সাজিদ” পড়ার পর এত ভালো লেগেছে যে কি বলব।সেই আত্মবিশ্বাস থেকেই আর এই বইটার রিভিউ দেখে আমার মনে হয়েছে এ বইটা একবার পড়তেই হবে।সেজন্যই কেনা…..
বইয়ের সূচিপত্র দেখে সব পার্ট সিরিয়ালি পড়িনি।যেগুলো নিয়ে আমার সবচেয়ে বেশি আগ্রহ ছিলো সেগুলো আগে পড়েছি।এখানে প্রতিটি পার্ট সম্পর্কে সিরিয়ালি বলছি………..
১|”শুরুর আগে”—— এ পার্টটির মেইন পয়েন্টটা সম্পর্কে আগের একটু ধারনা ছিলো।যখন ক্লাস টেন এ বাংলা বইয়ে মোহাম্মদ ওয়াজেদ আলীর “মানুষ মুহাম্মদ (স:)” পড়েছিলাম।
২|”মন খারাপের দিনে”——- এই পার্ট থেকে বুঝেছি, আমাদের সবচেয়ে হতাশের কারণ যেমন:- না পাওয়া, হারিয়ে ফেলা এগুলো থেকে দূরে থাকতে হবে।একজন মুমিন কখনোই এসবে হতাশ হন না।কারণ জীবন কখনোই রেল লাইনের মতো সমান্তরাল হয় না।খুব বেশি মন খারাপ হলে কুরআন তিলাওয়াত ও সালাতের সিজদার মধ্যে আল্লাহর সাথে বেশি বেশি কথা বলতে হবে।
৩|”আমার এত দুঃখ কেন?”—— মূলত কঠিন পরিক্ষার মাধ্যমে বান্দাকে পরিশুদ্ধ করাই আল্লাহর ইচ্ছা।তাই জীবনের কঠিন মুহূর্তগুলোকে আল্লাহর পরিক্ষা হিসেবে বরণ করে নেওয়া একজন মুমিনের কাজ।
৪|”বলো সুখ কোথা পাই”——–ক্ষণিকের এ দুনিয়ায় অসুখি হওয়ার সবচেয়ে বড় কারণ দুনিয়াপূজাই। কারণ সম্পদশীলতার প্রতিযোগিতাই সুখ কেড়ে নেয়।যা পাই তাতেই মন ভরে না।
৫|”জীবনের ইঁদুর দৌড় কাহিনি”——– আমাদের পরম আরাধ্যের স্বপ্ন জান্নাতকে ভূলে আমরা দুনিয়ার পেছনে ছুটে চলি।যেসবের পিছনে ছুটে চলি মৃত্যুর পর তা কোনো কাজেই আসবে না।একদিন হুট করে মৃত্যু সামনে চলে আসলে আমাকে অপ্রস্তুত দেখে মালাকুল মাউত কখনোই ফিরে যাবে না।আমাকে আরেকটাবার শুধরে নেওয়ার সুযোগ ও দেওয়া হবে না।
৬|”চোখের রোগ”——- এই চোখ দুটোই তো কত গুনাহর মূল।ক্রাশ নামে চলছে আরেক শয়তানি কাজ।অনেকের মুখে যখন এ শব্দটা শুনতাম তখন মনে হত কি সহজেই ওরা বলে পেলে।পরে মনে হতো এটাতো স্বাভাবিক (আসতাগফিরুল্লাহ)।যেখানে ননমাহরামদের দিকে দ্বিতীয়বার তাকাতে ও নিষেধ আছে।কারণ দ্বিতীয়বারের তাকানোতে শয়তানের কুমন্ত্রণা থাকে।এ পার্ট পড়ে ফেসবুকে “ক্রাশ এন্ড কনফেশন” পেজগুলোকে আনলাইক করে দিয়েছি।
৭|”আমরা তো স্রেফ বন্ধু কেবল”——– যেহেতু আমি কনজারভেটিভ ফ্যামিলির মেয়ে সেহেতু হারাম রিলেশনশিপতো দূরের কথা স্কুল, কলেজ লাইফে কোনো ছেলে ফ্রেন্ড কখনোই ছিলো না।দু- একজন সমবয়সী কাজিনের সাথে মাঝেমধ্যে কথা হতো।এখন তাদের সাথে অপ্রয়োজনে কথা বলা ছেড়ে দিয়েছি(আলহামদুলিল্লাহ)। এখন থেকে পরিপূর্ণ পর্দা করবো (ইনশা- আল্লাহ)।
৮|”চলে যাওয়া মানে প্রস্থান নয়”——–একটি খারাপ কাজ,মিথ্যা,অসততা অনেকগুলো খারাপ কাজ,মিথ্যা আর অসততার সূত্রপাত ঘটায়।মৃত্যুর পর ও মৃত ব্যক্তির ৩ টি আমল বন্ধ হয় না – দান সদকা,উপকারী জ্ঞান, নেককার সন্তান সন্ততি।এ বড় সুযোগটি হাত ছাড়া করার কোনো কারণ দেখছি না।ইনশা-আল্লাহ চেষ্টা করব।
৯|”বেলা ফুরাবার আগে”——–আজ যদি আমার মৃত্যু হয়, আমি কি আল্লাহর সামনে দাঁড়ানোর জন্য প্রস্তুত?দুদিনের এ জীবনে জন্মের ক্রমধারা আছে কিন্তুু মৃত্যুর কোনো ক্রমধারা নেই।মৃত্যু যৌবন,শৈশব, বৃদ্ধাবস্থা কিছুই বোঝেনা।তাই মৃত্যুর জন্য সবসময় প্রস্তুত থাকতে হবে।
১০|”মেঘের কোলে রোদ হেসেছে”——-যেহেতু ভূল করা আমাদের স্বভাবজাত বৈশিষ্ট্য তাই আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়ার দরজা ও খোলা আছে।কারণ তিনি পাপে নিমজ্জিত ব্যক্তির জন্য ও রহমতের দরজা বন্ধ করে দেন না।
১১|”বসন্ত এসে গেছে”——- যারা সত্যিকার অর্থেই আল্লাহর জন্য বদলাতে চায়, তাদের জন্য অসম্ভব খুব সহজে সম্ভব হয়ে যায়।আলহামদুলিল্লাহ মোবাইল থেকে সকল অডিও,ভিডিও গান এবং মডেলদের ছবি আমি ডিলেট করতে পেরেছি।কারণ এক ক্লিকে ডিলেট কথাটা আমার মনে ভীষণভাবে নাড়া দিয়েছে।
১২|”সালাতে আমার মন বসেনা”——-এ পার্টটা মনে হয়েছে আমার জন্যই লেখা হয়েছিল।প্রিয় লাইন:-
১|সালাত হচ্ছে সেই মুহূর্ত, যে মুহূর্তে বান্দার সাথে তার রবের কথোপকথন হয়।
২|সালাত আদায় করলে চোখের আর মনের প্রশান্তি লাভ করা যাবে।
১৩|”তোমায় হৃদমাঝারে রাখব”—— এ পার্টে বেশ কয়েকটি প্রশ্ন করা হয়েছে যেমন:-আমি কি সিনেমা দেখি?,গান শুনি?,হারাম রিলেশনশিপে আছি?, অন্যের হক নষ্ট করি?,মিথ্যে বলে মানুষ ঠকাই?,পিতা মাতার প্রতি যে কর্তব্য তা পালন করছি?সহপাঠী মেয়ের দিকে কুনজরে তাকাই? নিজেকে এসব প্রশ্ন করে সাজাতে বলা হয়েছে। প্রশ্নগুলো দেখতে কত সহজ,কিন্তু উত্তর দিতে সত্যিই গা কেঁপে উঠে।
১৪|”যুদ্ধ মানে শত্রু শত্রু খেলা”——–শয়তান শয়তানি যুক্তি দিয়েই খারাপ কাজ করাতে চাইবে,কিন্তু আমাদের মনে হবে ঠিক।যেমন একটি শয়তানি বাক্য ” ধর্ম যার যার উৎসব সবার”।তাই শয়তানের এ খেলায় আমাদের জিততেই হবে।
১৫|”মেঘের ওপার বাড়ি”——-১২ রাকাত সুন্নত পড়ে জান্নাত লাভের সুযোগটি কোনোভাবে হাতছাড়া করা যাবে না।
১৬|”আমি হব সকাল বেলার পাখি”——-সবচেয়ে লজ্জার বিষয় হচ্ছে আগে আমি প্রতিদিন ৪ ওয়াক্ত নামাজ পড়লে ও ফজর নামাজটা মিস হয়ে যেত।৪—–৫ টা অ্যালার্ম বাজতো তবু হুশ হতো না।আম্মু রেগে গিয়ে বলত “ফজরের নামাজ না পড়লে সকালের নাস্তা ও বন্ধ”।তবুও উঠতে পারতাম না।এ পার্ট পড়ে ও কি নামাজ মিস যায়?কোনোভাবেই না।আলহামদুলিল্লাহ এখন নিয়মিত ৫ ওয়াক্ত নামাজ পড়ি।ফজরে ১/২ টা অ্যালার্ম যথেষ্ট।মজার ব্যাপার হলো আমার ছোটবোন যে কিনা আগে মাঝেমধ্যে দু- এক ওয়াক্ত পড়তো,সে এখন আমাদের আগে নামাজ পড়ার জন্য প্রস্তুত হয়(আলহামদুলিল্লাহ)।
১৭|”তুলি দুই হাত করি মোনাজাত”——- সত্যিই আমরা খুব তাড়াহুড়োপ্রবন,যার কারণে দুআ করা ছেড়ে দিই।বিশাল ফজিলতপূর্ণ ছোট্ট একটি দোয়া এ পার্ট থেকে শিখেছি।
১৮|”চলো বদলাই”——-মুসলিম হয়ে কি লাভ হলো,যদি আমি পদে পদে আল্লাহ তায়ালার অবাধ্যতায় লিপ্ত থাকি?তাই চলো বদলাই………।লেখক বলেছেন নিজেকে পরিবর্তন করলেই আশেপাশে পরিবর্তন করা সহজ হয়ে যায়।
সবশেষে লেখকের অনুরোধটি রেখেছি।বেশ কয়েজনকে পড়তে দিয়েছি।এ পরিস্থিতি কেটে গেলে আরো কয়েকজনকে পড়তে দিবো।ইনশা- আল্লাহ।সত্যিকার অর্থে এ বইটি পড়ে আমি বিন্দুমাত্র ঠকিনি।বরং মনে হয়েছে আরো আগে কেন বইটি পেলাম না।