প্রিয় অপ্রিয়
এ দেশের অনেক আলিম-পির-মাশায়েখ কখনো কারো স্বীকৃতির কাঙাল ছিলেন না। বরং শাসক শ্রেণি সব সময় এদের কাছে ধন্না দিয়ে স্বীকৃতি চাইতেন। এটাই আসল ইতিহাস। পরবর্তীতে ইংরেজ শাসন এ ধারার ব্যত্যয় ঘটায়।
এখন আলেম সমাজ এ দেশ, সমাজ ও রাষ্ট্রের অংশ। ইংরেজদের সাথে আলেম সমাজের সম্পর্ক ছিল বৈরী এবং স্বাধীনতাকামী হিসেবে প্রতিপক্ষ। ইংরেজরা জানতো এবং মানতো, আলেম সমাজ আপোশহীন, লড়াকু ও প্রতিবাদী। তারা শাসন ক্ষমতার হিস্যা চায় না—স্বাধীনতা চায়। সে স্বাধীনতা বা আজাদি প্রাপ্তির পর আলেম সমাজ জাতির ক্রান্তিলগ্ন ছাড়া সামনে আসার দায়বোধ করেননি। জাতি যখনই সমস্যায় পড়েছে কিংবা দুঃসময় অতিক্রম করেছে, তখনই আলেম সমাজ সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। এখন বাংলাদেশের আলেম সমাজ শুধু ধর্মীয় গোষ্ঠী নয়; সামাজিক শক্তি, রাজনৈতিকভাবেও প্রতিষ্ঠিত এবং প্রভাবশালী অংশ। তাই প্রতিপক্ষ সজাগ ও ভীত। তারই ফলে আলেমরা আলোচিত হচ্ছেন, সমালোচিত হচ্ছেন। আবার বিবেচনায়ও থাকছেন। এখন আলেম সমাজকে উপেক্ষা করে জাতীয় কোনো বিষয়ে সর্বসম্মত সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া সম্ভব নয়। আলিমদের স্বীকৃতির এমন একটি প্রেক্ষাপটে কওমি মাদরাসা সনদের স্বীকৃতির দাবি ওঠেছে। এ দাবি বিলম্বে হলেও সরকার সম্মানের সাথে বিবেচনা করেছে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, এর লাভ-ক্ষতি নিরূপণ করা হবে কীভাবে? এর একটি রাজনৈতিক দিক আছে, কিন্তু সেটি কোনোভাবেই মুখ্য বিষয় নয়। প্রধান বিবেচ্য বিষয়, এর গুণ ও মানগত দিক, প্রাপ্তি-প্রত্যাশার যোগ-বিয়োগ।
দেশের আলেম সমাজ কী চেয়েছিলেন, কী পেলেন। কওমি মাদরাসার সনদের স্বীকৃতির পর এখন একটি জিজ্ঞাসা বা প্রত্যাশা-প্রাপ্তির হিসাব মিলাবার দায়বোধ অনেকে উপলব্ধি করছেন। কওমি মাদরাসার ছাত্র-শিক্ষক এবং শুভাকাঙ্ক্ষীরা আসলে কী চেয়েছিলেন। তারা কি সনদের স্বীকৃতি চেয়েছিলেন, না কওমি শিক্ষা ধারার একটি সামগ্রিক স্বীকৃতি আশা করেছিলেন। প্রশ্নগুলো উঠছে প্রথমত দুটো কারণে— এক. কওমি ধারা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এক ‘না’ ধারণা মাথায় নিয়ে। এর সহজ অর্থ কওমি মাদরাসা প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে দীর্ঘদিন পর্যন্ত কখনো সরকারি স্বীকৃতি আশা করেনি। সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা কামনা করেনি। বরং ইংরেজ শাসনের বিরুদ্ধে শাহ আবদুল আজিজ দেহলবি রাহ.-এর বিপ্লবী ফতোয়ার প্রত্যক্ষ ফলশ্রুতিই দেওবন্দ সাহরানপুর কেন্দ্রিক শিক্ষা আন্দোলনের এটি একটি বিকল্প ধারা। সে সময়ের অঙ্গীকার ছিল ইংরেজদের সমর্থন না করা। তাদের সাহায্য না করা। তাদের দান-অনুদান গ্রহণ করা তো দূরের কথা, শিক্ষা-দীক্ষায় যোগ্যতা অর্জন করে ইংরেজ তাড়ানোই হবে আসল লক্ষ্য। দুই. দীনি শিক্ষা হবে নির্ভেজাল। এর সাথে শুধু নিখাদ ইসলামের সম্পর্ক থাকবে, অন্য কোনো সম্পর্ক থাকবে না। তা ছাড়া প্রতিকূল পরিবেশের ভেতর মুজাহিদ তৈরির জন্য এর চেয়ে ভিন্ন কিছুর প্রয়োজন নেই—এমন ধারণাই প্রতিষ্ঠাকারীদের মনে সুপ্ত ছিল। তা ছাড়া তারা চেয়েছিলেন আলেম তৈরি করতে। সে আলেম ভাবনায় শাব্দিক অর্থের প্রতি গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। তখন ইসলামের সাথে তুলনামূলক অধ্যয়নের ভাবনার চেয়েও ইসলাম সম্পর্কে জ্ঞানার্জনের দিকটি প্রাধান্য পেয়েছিল।
বি:দ্র: প্রিয় অপ্রিয় বইটি free pdf download করিতে চাহিয়া লেখকদের নিরুৎসাহিত করিবেন না
Reviews
There are no reviews yet.