পুত্রের প্রতি পিতার পত্র ও উপদেশ
সৃষ্টির শুরু থেকে নিয়ে আজ পর্যন্ত অসংখ্য মানুষ জন্মগ্রহণ করেছে। জন্মের পর তারা হাসে-কাঁদে, কিছু কাল সময় কাটায়। তারপর আল্লাহর হুকুমে একদিন দুনিয়া ছেড়ে চলে যেতে হয়। তাদেরকে আর কেউ মনে রাখে না। এটাই সাধারণ নিয়ম। এই সাধারণ নিয়মের যে ব্যতিক্রম ঘটে না—এমনটি নয়। মুসলিম জাহানে এমন বহু লোক জন্মগ্রহণ করেছেন যাঁরা অসাধারণ জ্ঞানী ও মহান। তাঁদেরকে আমরা আকাবির বা মনীষী বলে থাকি। ইসলামের ইতিহাসে তাঁদের অবদান অনেক। মুসলমান জাতির কাছে তারা স্মরণীয় ও বরণীয়। এমনি কয়েকজন নামকরা মুসলিম মনীষীর তাঁদের পুত্রদের সাথে সংঘটিত খ-িত ঘটনাবলী ও উপদেশমালা দিয়ে সাজানো হয়েছে ‘পুত্রের প্রতি পিতার পত্র ও উপদেশ’ গ্রন্থটি।
এটি পিতা ও পুত্রের সম্পর্কে এক অনবদ্য গ্রন্থ। যেখানে পিতা তাঁর পুত্রকে নববী শিক্ষার আলোকে জীবন ও মানসিকতা গড়ার প্রতি উদ্বুদ্ধ করেন। পত্র ও উপদেশ দিয়ে এবং একজীবনের আহরিত অভিজ্ঞতার উপলব্ধি শেয়ার করেন। আম্বিয়া আলাইহিমুস সালাম থেকে নিয়ে সাহাবায়ে কেরাম, রাজা-বাদশা, মহান আকাবিরসহ অন্যান্য শিক্ষামূলক বিভিন্ন ঘটনা বিবৃত হয়েছে আলোচ্য গ্রন্থে।
আমরা জানি—ধর্ম-বর্ণনির্বিশেষে উপদেশের গুরুত্ব অপরিসীম। ইসলাম গুরুত্ব দিয়েছে সবচেয়ে বেশি। তার কারণ, উপদেশের সারবাণী ব্যক্তিবিভায় ও ব্যক্তিপ্রতিভার অনন্যতায় সমগ্রে ছড়ায়। এ সমগ্রের শুদ্ধতার ভেতরেই বেঁচে থাকে ব্যক্তি-জাতি ও ধর্ম-কর্মের পরিশুদ্ধতা। পুত্রকে পিতার উপদেশের স্বর্ণালি ইতিহাসের সূচনা হয় হজরত আদম আ. থেকে। তিনি নিজ পুত্র শীসকে উপদেশ দিয়েছিলেন বর্ণালি বিভিন্ন বিষয়ে। বর্তমান বইয়ের পাঠসূচনা সেই প্রজ্ঞাদীপ্ত উপদেশ দিয়ে।
বইটির লেখক সম্পর্কে বিশিষ্ট ইসলামি কথাসাহিত্যিক মুহাম্মাদ হাবীবুল্লাহ লিখেন—“কলম-খেতের সহচাষী ও সহপাঠী কাজী আবুল কালাম সিদ্দীককে পাঠকবলয়ে পরিচিত করে দেবার প্রয়োজন নেই। লেখালেখির অঙ্গনে এটি একটি পরিচিত নাম। দেড় যুগের লেখকতায় বলিষ্ঠ আবুল কালাম শুধু ‘আবুল কালাম’ নন এখন, ‘আবুল কলম’ও হয়ে ওঠছেন তিনি। অনুবাদ ও মৌলিক রচনা উভয় ক্ষেত্রে তিনি শক্তি ও সৃষ্টির পরিচয় দিয়েছেন। দিয়ে চলছেনও।”
উপদেশের কথা ভাষায় সহজ, ভাবে গম্ভীর। হৃদয়ের আশ্চর্য দরদ ও উদারতার দীপ্তিতে মধুর সে কথামালা। হৃদয়ভেদী আবেদনমাখা কথার কী সহজ ভাষারূপ হতে পারে, তা একটু দেখতে পারি কুসুম কুমারী দাশের কয়েকটি পঙক্তিতে, আমাদের দেশে হবে সেই ছেলে কবে? কথায় না বড় হয়ে কাজে বড় হবে।
মুখে হাসি বুকে বল তেজে ভরা মন / মানুষ হইতে হবে এই তার পণ।
এরকম হৃদয়গ্রাহী ভাষারূপ কাজী আবুল কালাম সিদ্দীকের গ্রন্থেও পাওয়া যাবে ঢের। একটু পড়া যাক,সাআদ, তুমি তখনো পৃথিবীর বুকে পা রাখোনি। তোমার মায়ের জঠরে থাকতেই তোমার মায়ের সে কী আকুতি, আপ্লুত প্রাণের সে কী শিহরণ! নয়নজুড়ে সে কী আশা জাগানিয়া চাহনী! তোমার বাবা হিসেবে তার সবই আমি অবলোকন করেছি। যতই দিন যেতো তোমার মায়ের স্বপ্ন-আশারা ততই উচ্চতায় ডানা মেলে উড়তো। পাশাপাশি সমান্তরালে অথৈ সাগরে ভেসে বেড়াতো হারাবার শঙ্কা, না পাওয়ার অযাচিত ভয়। আমি তখন তোমার মা’কে মহান আল্লাহর ওপর ভরসা রাখার অভয় দেখাতাম। তাঁর ইচ্ছায় সব কিছু হয়—সেই বিশ্বাস তোমার মায়ের ভেতরও ছিল প্রবলভাবে। তাই কখনো ঘাবড়াইনি আমরা। (পৃষ্ঠা, ২১৭)
সন্তানের প্রতি পিতা-মাতার উপদেশ যেমনি দিলছেঁড়া, তেমনি দরদভরা, দহনঘেরা। সে দহনে পুড়ে ছাই হয় না। হয় স্বর্ণ। একেবারে খাঁটি স্বর্ণ। সেই খাঁটি স্বর্ণ বানানোর রসায়ন-মাঠে বিচরণের সুযোগ করে দিয়েছেন আমাদের কাজী ভাই। সোনার বাংলার সন্তানদেরকে খাঁটি সোনার মানুষ বানাবার একটি বুদ্ধিবৃত্তিক প্রকল্প হাতে নেওয়ার জন্য লেখককে ধন্যবাদ দিতেই হয়।
বইটি উৎসর্গ করা হয়েছে ‘আবদুল্লাহ’-কে—যাঁর পুত্র মুহাম্মাদ (সা.)-এর মতো পুত্র কেউ জন্ম দিতে পারেনি পৃথিবীতে। বইটির শেষে তথ্য নির্দেশিকা গ্রন্থপঞ্জি দেয়া আছে। ৫৭টি আরবি গ্রন্থ, ৮টি বাংলা গ্রন্থ ও ১৩টি উর্দু গ্রন্থ হতে রেফারেন্স নেয়া হয়েছে। এছাড়া প্রতিটি বক্তব্য বা ঘটনার শেষে রয়েছে তথ্যসূত্র।
বইটি ছয়টি অধ্যায়ে বিভক্ত। প্রথম অধ্যায়ে পুত্রের প্রতি নবী-রাসূল শিরোনামে পাঁচজন নবীর আলোচনা এসেছে। হযরত আদম, নূহ, ইব্রাহীম, ইয়াকুব ও সুলাইমান (আলাইহিমুস সালাম)। যেখানে তাঁদের জীবনের অন্তিম মুহূর্তে কিংবা অন্যান্য সময় পুত্রের প্রতি নসীহত করে যান। যার কোনো কোনোটি পবিত্র কুরআনও বর্ণনা করেছে। এ অধ্যায়ে লুকমান হাকীম রহ. ও তাঁর পুত্র সম্পর্কেও আলোচনা করা হয়েছে। দ্বিতীয় অধ্যায়ে সাহাবায়ে কেরাম ও তাঁদের পুত্রদের সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। সতেরজন সাহাবীর আলোচনায় তাঁদের ব্যক্তিত্ব ও পুত্রের প্রতি তাঁদের সচেতনতা, উপদেশ, পিতার প্রতি পিতৃভক্তি ইত্যাদি উঠে এসেছে। তৃতীয় অধ্যায়ে রাজা-বাদশা শিরোনামে পুত্রের প্রতি এগারজন শাসকের নসীহত, পত্র ও ঘটনাবলির দ্বারা আলোচনা করা হয়েছে।
যেখানে ওমর বিন আব্দুল আজীজ রহ. থেকে নিয়ে আমেরিকার মহান প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকন পর্যন্ত আছেন। চতুর্থ অধ্যায়ে পুত্রদের প্রতি আকাবির তথা বিভিন্ন মনীষীগণের আলোচনা করা হয়েছে। ইমাম যাইনুল আবেদীন রহ., ইবনে সিরীন রহ., আব্দুল কাদের জিলানী রহ., ইবনুল জাওযী রহ., থানবী রহ., মুফতী শফী রহ., পাহাড়পুরী রহ. হুজুরসহ এযাবৎ কালের কয়েকজন আকাবিরের সঙ্গে পুত্রদের সম্পর্ক, তাঁদের প্রতি নসীহত, পত্র, নির্দেশনা ইত্যাদি বিবৃত হয়েছে। পঞ্চম অধ্যায়ে কিছু অবাধ্য পুত্রের প্রতি পিতার পত্র ও কাহিনি আলোচিত হয়েছে। ষষ্ঠ অধ্যায়ে এ যুগের পিতা ও পুত্র সম্পর্কিত আলোচনা করা হয়েছে।
বি:দ্র: পুত্রের প্রতি পিতার পত্র ও উপদেশ বইটি free pdf download করিতে চাহিয়া লেখকদের নিরুৎসাহিত করিবেন না
Santab Saikh –
আপনার বই টি পড়ে খুব ভালো লাগছে আমি পুরোটা পড়তে চাই।