জীবনের রকম-ফের
“পৃথিবীর কোনো শক্তি তোমাকে আমার থেকে আলাদা করতে পারবেনা।”
ছোটবেলায় বাংলা সিনেমায় নায়কের মুখে এমন ডায়ালগ শুনলে দারুণ রোমাঞ্চ অনুভব করতাম। নায়ক যখন নায়িকার জন্য রোদে পুড়ে বৃষ্টিতে ভিজে ঠোঁটের রক্তে গাল ভরিয়ে ফেলত…মনে মনে ভাবতাম ‘মেয়েটা কত ভাগ্যবতি! এমন জান উজাড় করা ভালোবাসা কজনের ভাগ্যে জুটে!’
নায়িকা যেভাবে নায়কের জন্য বাবার বাড়ির সব আরাম আয়েশ দূরে ঠেলে নায়কের কুঁড়েঘরে আশ্রয় নেয়, সকাল বেলায় অনভ্যস্ত হাতে রুটি ছেকতে গিয়ে হাত পুড়িয়ে ফেলে, স্বামীর কল্যাণের কথা ভেবে সব অপমান মুখ বুঝে হজম করে…মনে মনে ভাবতাম,‘আহা! এমন বউ পাওয়া সাত জনমের ভাগ্যি!’
ভরাট, মিষ্টি কিংবা কিন্নরী কণ্ঠে যখন গান শুনতাম,‘তোমায় নিয়ে হাজার বছর, বাঁচতে বড় ইচ্ছে হয়,’ মনে হত এমন গায়ক বা গায়িকা জীবন সঙ্গী হিসেবে পেলে জীবনটা একদম বর্তে যেত। সারারাত গান শুনেই কেটে যেত, ঘুম আর আসতো না দু চোখে।
ছোটবেলা ছেড়ে বড়বেলায় এসে এখন দেখি, বাস্তবতা আর সিনেমার পর্দায় কত্ত ফারাক! সিনেমার সেই সব রোমান্টিক নায়ক নায়িকারা কথায় কথায় বিয়ে করে, তালাক দেয়। গায়ক গায়িকারা ঘটা করে বিয়ে করে, বছর পেরুতে না পেরুতেই,‘সম্মানের সাথে দুজন আলাদা’ হবার খবর নিয়ে শিরোনাম হয়।
শাকিব খান-অপু বিশ্বাস, হাবিব ওয়াহিদ-তার আগের বউ-তানজিন তিশা, হৃদয় খান-সুজানা, তাহসান-মিথিলা…বিনোদন জগতের কয়েকটা আলোচিত নাম। পর্দায়, সিনেমায় কিংবা গানের কথায় তারা অসাধারণ রোমান্টিক। কিন্তু বাস্তবে?
পত্রিকার পাতায় একেকজনের কাহিনী পড়লে মনে হয়, তাদের প্রেম ভালোবাসা কিংবা একে অন্যের প্রতি দায়িত্ববোধ কচু পাতার পানির চাইতেও ক্ষণস্থায়ী।
কী হলিউড কি বলিউড…বিনোদন জগতটাই বোধহয় এমন। বাইরে গ্লামারাস, ঝলমলে ঝিকিমিকি। যে জগত যে কোন মানুষকে দেয় দুর্নিবার হাতছানি। কিন্তু ভেতরে কেবলই হতাশা, দীর্ঘশ্বাস আর অবিশ্বাসের কাহিনী।
এখন ভাবি, এই বেশ ভালো আছি। আমাদের জগত কিংবা দাম্পত্যে গ্লামার নেই। নেই চোখ ধাঁধিয়ে যাওয়ার মত বিশেষ কিছু। কিন্তু, ভেতরে আছে প্রশান্তি, নির্ভরতা আর ছোট ছোট ভালো লাগা, স্বপ্ন দেখা। দুঃখ কষ্ট সয়ে বারেবারে ফিরে আসা।
রুপালী পর্দার মানুষদের দেখে সেই পুরনো প্রবাদ খুব করে মনে পড়ে,‘”চকচক করলেই সোনা হয়না।’
বি:দ্র: জীবনের রকম-ফের বইটি free pdf download করিতে চাহিয়া লেখকদের নিরুৎসাহিত করিবেন না
Reviews
There are no reviews yet.