জীবনের একটি লক্ষ্য আছে
আমাদের অনেক কিছুই শেখানো হয়, কিন্তু এই কথাটা শেখানো হয় না যে, হে তরুণ, হে যুবক, হে কিশোর, তোমার পরিচয় হলো তুমি একজন মুসলিম। তোমার এই জীবন, তোমরা এই গুণ ও যোগ্যতা, এসবের একটা উদ্দেশ্য আছে, তাৎপর্য আছে। সেই উদ্দেশ্য এই নয় যে, তুমি দুনিয়াতে শুধু পশু-পাখির মতো উদরপূর্তি করবে। প্রয়োজনগুলো পূরণ করবে, চাহিদাগুলো পূরণ করবে; এরপর কীট-পতঙ্গের মতো মৃত্যুবরণ করে দুনিয়া থেকে বিলুপ্ত হয়ে যাবে। এটা তো পশু-পাখির জীবন হতে পারে, কীট-পতঙ্গের জীবন হতে পারে। তারা পৃথিবীতে আসে, খায়-দায়, প্রয়োজন পূরণ করে, চাহিদা পূরণ করে এরপর মরে বিলুপ্ত হয়ে যায়।
মানুষ তো পৃথিবীতে আল্লাহর খলীফা। সে আল্লাহ পাকের বিধান মোতাবেক চলবে, অন্যদেরও তাঁর বিধান মোতাবেক পরিচালিত করবে। যে গুণ ও যোগ্যতা আল্লাহ তাকে দান করেছেন, তা ব্যবহার করে পৃথিবীতে সত্য-ন্যায়ের পতাকা উড্ডীন করবে। আর আখেরাতের জীবনে চিরস্থায়ী শান্তি ও সফলতা অর্জন করবে। এটা একজন মুসলিমের জীবন, মুমিনের জীবন, একজন মানুষের জীবন। কিন্তু পশ্চিমারা মুসলিম দেশগুলোতেও এই চিন্তা সরবরাহ করেছে যে, পার্থিব জীবনই তোমাদের একমাত্র জীবন; ব্যস, খাও-দাও ফুর্তি করো, জীবনকে ভোগ করো, উপভোগ করো।
আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা, সমাজব্যবস্থা, রাষ্ট্রব্যবস্থা এই চিন্তার দ্বারাই প্রভাবিত। এ কারণে তা আমাদের বলে না—তুমি একজন মুসলিম, তোমার জীবনের এক মহান লক্ষ্য আছে, তোমার একটি কালজয়ী আদর্শ আছে, সেই আদর্শ তোমার জীবনে প্রতিফলিত হতে হবে। তোমাকে ন্যায়ের পথে চলতে হবে, অন্যায়ের পথ থেকে বেঁচে থাকতে হবে। যা ইচ্ছে তা-ই করা যাবে না; বরং যা করণীয় তা-ই করতে হবে।
যেকোনো চাহিদা যেকোনো উপায়ে পূরণ করা যাবে না; বরং যে কাজটা তোমার লক্ষ্য-উদ্দেশ্যের সাথে সংগতিপূর্ণ, যে উপায় তোমার সম্মান ও মর্যাদার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ, যেটা তোমাকে দুনিয়া ও আখেরাতে সফলতার অধিকারী করবে, তোমাকে সেই কর্ম, সেই পন্থা অবলম্বন করতে হবে। এই শিক্ষাগুলো আমাদের দেওয়া হয় না।
তো কুরআন ও সুন্নাহ এ জন্যই এসেছে যে, মানুষকে তার জীবনের লক্ষ্য-উদ্দেশ্যের সাথে পরিচিত করিয়ে দেবে, মানুষকে তার জীবনের লক্ষ্য-উদ্দেশ্যের সন্ধান দান করবে।
বি:দ্র: জীবনের একটি লক্ষ্য আছে বইটি free pdf download করিতে চাহিয়া লেখকদের নিরুৎসাহিত করিবেন না
Abir Israq –
জীবনের একটি লক্ষ্য আছে
পাশ্চাত্যের শিক্ষাব্যবস্থা আমাদের শিখায় Man is an economical animal অর্থাৎ মানুষ অর্থনৈতিক পশু। আমাদের জীবনের সুখ, শান্তি কিংবা উন্নতি সব কিছুর পিছনেই টাকার অবদান। একজন মানুষ জীবনে কতটূকু সফল তা নির্ণয়ের ক্ষেত্রে মাপকাঠি করা হয় সম্পদকে; টাকাকে। কিন্তু একজন মানুষ হিসেবে শুধু সম্পদ আহরণের মাধ্যমেই কি সফলতা সম্ভব? মানুষের জীবনের কি আর কোনো লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য নেই? ইসলামে সফলতার ভিন্ন একটা অর্থ আছে। হযরত আবুবকর সিদ্দিক রাঃ এর সম্পদের কথা তো আমাদের কারই অজানা নয়। অথচ ইসলামের খেদমতে তিনি তাঁর সমস্ত সম্পদ ব্যয় করেছেন। হাদীস শরীফে এসেছে, ওমর রা. বলেন, একবার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে দান করার নির্দেশ দিলেন। তখন আমার হাতে বেশ সম্পদও ছিল। আমি মনে মনে বললাম, আজ আমি আবু বকরের চেয়ে অগ্রগামী হব। আমি আমার অর্ধেক সম্পদ নবীজীর দরবারে পেশ করলাম। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞেস করলেন, তোমার পরিবারের জন্য কী রেখে এসেছ (হে ওমর!)? আমি বললাম, অনুরূপ অর্ধেক রেখে এসেছি। তারপর আবু বকর তাঁর সমস্ত সম্পদ নিয়ে হাজির হলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞেস করলেন, হে আবু বকর! পরিবারের জন্য কী রেখে এসেছ? তিনি উত্তরে বললেন, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে রেখে এসেছি। তখন আমি বললাম, আল্লাহর কসম, আমি কখনোই তাঁর চেয়ে অগ্রগামী হতে পারব না। (জামে তিরমিযী, হাদীস:৩৬৭৫; সুনানে আবু দাউদ, হাদীস:১৬৮০; মুসতাদরাকে হাকিম, হাদীস:১৫১০) আরাফার সন্ধ্যায় যখন আরাফা-ময়দান থেকে বের হওয়ার সময় হলো, উমর ইবনে আব্দুল আজিজ রহঃ বলেছিলেন, “আজ অগ্রগ্রামী সে নয়, যার উট আগে চলে গেছে। অগ্রগামী সে, যার মাগফেরাত হয়েছে।“ (জামিউল উলূমি ওয়াল হিকাম, ২/১০৬)
অথচ আজ পাশ্চাত্যের শিক্ষাব্যবস্থার ভিতরে ঢুকে আমরা অর্থসম্পদকে নিজেদের জন্য অধিক জরুরী মনে করছি। খাও-দাও ফুর্তি করেই আমরা জীবন পার করার চিন্তায় মগ্ন আছি। কিন্তু জীবন কি সত্যি এরকম? আমাদের দায়িত্ব কি এতই কম? নাহ, এমন নয়। এই হিসাব মানবজীবনের সাথে কিছুতেই মেলে না। বোধ-বুদ্ধি ও বিচার-বিবেচনায় অনন্য এই সৃষ্টি কিছুতেই এত ক্ষুদ্র হতে পারে না। মানবজীবন কিছুতেই এত অসার, এত দায়হীন হতে পারে না। মানুষের জীবনের সফলতার সাথে অর্থ-সম্পদের কোনো সম্পর্ক হতে পারেনা। তাহলে? তাহলে জীবনের অর্থ কী? তাৎপর্য কী? লক্ষ্য কী? গন্তব্য কী? চেতনার এই জ্বলজ্বলে প্রশ্নগুলো নিয়ে কিছু মূল্যবান কথা দিয়ে ভরপুর একটা বই ‘জীবনের একটি লক্ষ্য আছে’।
বইটি সব শ্রেণির মানুষের জন্যই প্রয়োজনীয়। কিন্তু আমাদের মত তরুণ প্রজন্ম যাদের মাথায় অর্থ সম্পদের লোভ-লালসা ঢুকে গেছে, তাদের জন্য বইটি অধিক উপযোগী। ……………………