ওপারে
ছোটবেলায় পড়া রবিঠাকুরের কবিতাটি মনে আছে?
“নদীর এপার কহে ছাড়িয়া নিঃশ্বাস,
ওপারেতে সর্বসুখ আমার বিশ্বাস।
নদীর ওপার বসি দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে;
কহে, যাহা কিছু সুখ সকলি ওপারে।”
সুখ যে আসলে কোথায় তা সত্যিই বহুমানুষ এখনো জানে না। এপার থেকে ওপারে, ওপার থেকে এপারে—ঘর ছেড়ে বাইরে, বাহির থেকে ঘরে, সংসার ছেড়ে চাকরি, চাকরি ছেড়ে বোহেমিয়ান—চাতক পাখির মতো হন্যে হয়ে সুখ খুঁজছে সবাই; কিন্তু কোথায় সেই সুখ?
সুখের উৎস যিনি, শুধু তিনি জানেন আসল সুখের সুলুক। ওপার থেকে এপারে এসেছি কদিনের জন্য সওদা করতে। সওদা ভালো হলে ফিরে যাবো নৌকোভরতি সদাই নিয়ে ওপারে।
আখের গোছাতে এসে এপারের যাত্রাপালার রঙিন জগতে ডুবে গেছি অনেকে। তাদেরকে সেখান থেকে তুলে নিয়ে সদাই বোঝাই করে অপেক্ষমাণ নৌকোয় তুলে দিতে রেহনুমা বিন্ত আনিসের বই ‘ওপারে’।
বি:দ্র: ওপারে বইটি free pdf download করিতে চাহিয়া লেখকদের নিরুৎসাহিত করিবেন না
Alamgir Hossain Manik –
“ওপারে”
এত চমৎকার একটা বই আমার পড়া হবে সেটা কখনো ভাবিনি।যদিও কথাটা শুনতে অতিরঞ্জিত মনে হয় কিন্তু এটাই সত্য।বইটার পারিপার্শ্বিক বর্ননা আমাকে দারুনভাবে ভাবিয়ে তুলেছে।বইটার প্রতিটা পাতায় পাতায় রয়েছে শিক্ষনীয় সব জ্ঞানের সমাহার।
‘সেই ভালোবাসার নদীটি’ যখন পড়ছি তখন মনে মনে ভাবছিলাম আমি কি আসলেই আল্লাহর রাসূলের দেখানো পথ মোতাবেক অনুসরন করে চলতে পাররছি?দিন শেষে যা করেছি সেটা কি নবীজীর কাজের সাথে মিলেছে কিনা।এই চিন্তা ভীষন ভাবায় মনকে।
‘ঘরে ফেরা’ যখন পড়ে যাচ্ছি তখন মনে উদয় হলো প্রবাসে যারা এত কষ্ট স্বীকার করে রাতদিন খাটা-খাটুনি করে যে পয়সা ইনকাম করছে প্রবাসের সময়সীমা পেরিয়ে দেশে ফেরার পর তারা ধরেই নিতে পারে না এই কি ছিল আমাদের মাতৃভূমি! চারিদিকে এতসব অন্যায় কিন্তু রুখে দেওয়ার মত কেউ নেই।দেশটা ডাকাতের কবলে পড়েছে।এই দেশকে ঐ ডাকাত দলের হাত থেকে উদ্ধার করা প্রয়োজন।
‘মৃত্যুচিন্তা’ এই অধ্যায় পড়ে কেবলই শুধু মৃত্যুকে নিয়ে ভেবেছি।যেন যেকোন মুহুর্তেই এটা আমাকে জেকে ধরবে।একদিন তো ঠিকই মৃত্যুবরন করবো কিন্তু তার জন্য কতটুকু প্রস্তুতি গ্রহন করছি সেটাই দেখার বিষয়।
‘বাড়ি পরিবর্তন এবং একটি অভিজ্ঞতা’ পড়ছি আর ভাবছি আমরা কতই না বাড়ি পাল্টাই।আজ এই বাড়িতে থাকছি ভালো না লাগলে এটা চেঞ্জ করে আরেক বাড়িতে গিয়ে উঠছি।কার হরেক রকম আসবাবপত্র তো থাকেই।কিন্তু কখনো কি ভেবেছি মৃত্যুর পর অনন্তকাল ধরে যে বাড়িতে বাস করতে হবে সেই বাড়ির জন্য কি কি আসবাবপত্র নিয়ে যাচ্ছি?ঈমান, আমল আসলেই দুর্বল হয়ে যাচ্ছে।
‘আমি আত্নহত্যা করব!’ আমরা অনেকেই পছন্দের মানুষকে না পাওয়ার বেদনায় আত্নহত্যা করার চিন্তা চটপট নিয়ে নেই।কিন্তু যখন একটা সুখের সংসার জীবন সবার জীবনে আসে তখন আগের সেই চিন্তাটা ভেবে কত যে আফসোস করি আসলে আল্লাহ পাক আমাদের জন্য কত নিয়ামত তৈরী করে রেখেছেন।একটা সময় আত্নহত্যা করতে যাই আর যখন আমাদের মৃত্যুর সময় ঘনিয়ে আসে তখন এই ক্ষুদ্র জীবনকে বাচানোর জন্য উল্টো লড়াই সংগ্রাম করে যাই।আমরা মানুষেরা আসলেই বিচিত্র ধরনের।
‘প্রতিবিম্ব’ যখন পড়ে যাচ্ছি দু’চোখের পাতা কখন যে ভিজে গেল টেরই পেলাম না।একটা মানুষ এত ভালো কিভাবে হয়।সংসারের প্রতিটা সদস্যের দেখাশোনা, কেয়ারিং প্রতিটা ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ব্যাপারে খেয়াল রাখা কিভাবে সম্ভব হয়।সে মানুষটা যখন হঠাৎ এক্সিডেন্টে আহত হয়ে পরজীবনের দিকে এক পা এগিয়ে যায় তখন বুঝা যায় সেই মানুষটার শুন্যতা যে কখনো পূরন করবার নয়।এই অধ্যায়টা পড়েছি আর ভীষন কেঁদেছি।
বইটা শেষ করে বুঝতে পারলাম কত মূল্যবান একটা বিষয় এতদিন পর আমাকে ভাবিয়ে তুলতে সাহায্য করলো।প্রতিটা মুহুর্তে যেন এক পা এক পা করে মৃত্যুর এক ধাপ এগিয়ে যাচ্ছি।আল্লাহ পাক আমাদের সবাইকে ওপারের ব্যাপারে বেশি বেশি চিন্তা করের বুঝ দান করুক।আমিন!