একটি লাল নোটবুক
একটি লাল নোটবুক একজন আদর্শ মাদ্রাসা ছাত্র ‘মারুফ’। ইলম-আমল, আদব-লেহাজ কোন দিকেই তার কমতি নেই। এমন একটি ছাত্র কে নিয়ে শিক্ষকরা স্বপ্ন দেখেন একদিন সে বড় আলেমে দ্বীন হবে, তাঁর চমৎকার বাগ্মীতায় পথ খুঁজে পাবে হাজারো পথ হারা মুসলিম। সেই ‘মারুফ’ ফেঁসে গেলো ব্লগার ‘রেহান’ হত্যা মামলায়! সব প্রমাণ তার বিরুদ্ধে, সি সি টিভি ক্যামেরার ফুটেজেও তাকেই দেখা গেছে। পুলিশ তাকে এবং তার লেখা লাল নোটবুক টিকে খুঁজছে হন্যে হয়ে, যেটিতে মিলতে পারে অনেক ক্লোজ ক্লু! মারুফ এখন পালিয়ে বেড়ায় পার্বত্য বান্দরবানের পাহাড়ে পাহাড়ে।
জাঁদরেল ওসি ‘কামরুল’! ব্লগার রেহান হত্যা মামলার তদন্ত এবং আসামী কে গ্রেফতার করার দায়িত্ব তার কাঁধে বর্তেছে। উপর মহল থেকে সাতদিনের সময় বেধে দেয়া হয়েছে, নির্দিষ্ট সময়ে মধ্যে আসামী কে পাকড়াও না করতে পারলে খোয়াতে হতে পারে তার সাধের চাকরী! কিংবা তার পোস্টিং হয়ে যেতে পারে দেশের কোন দুর্গম অঞ্চলে।
সদ্য উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করা ধনীর দুলালী ‘নাবিলা’। সাপ্তাহন্তে শুক্রবারের জুমার নামাজ আর বছরে একমাস রোজা রাখাই যাদের কাছে ইসলাম! এমন একটি পরিবারে বেড়ে ওঠা ‘নাবিলা’ এখন পুরোপুরি পর্দাবৃত দ্বীনদার মুসলিম তরুণী, বান্ধবীদের টিপ্পনী, কলেজ শিক্ষকদের চোখ রাঙানি কোন কিছুই দমাতে পারছে না তার দ্বীনি স্পৃহা উদ্দীপনা। কে আছে তার এই হঠাৎ পরিবর্তনের নেপথ্যে ? শুনা যায় একটি লাল রংয়ের নোটবুক নাকি ইদানীং তার কাছে পাঠ্য বইয়ের চেয়ে বেশি মূল্য রাখে! পরম যত্নে আগলে রাখে সে নোটবুক টিকে।
এটি কি মারুফের হারিয়ে যাওয়া সেই ‘লাল নোটবুক’ যেটি এই মূহুর্তে তাকে পুলিশের মামলা থেকে বাঁচতে সাহায্য করবে ? এটি কি সেই ‘লাল নোটবুক’ যেটি ওসি কামরুল কে ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’ মারুফ পর্যন্ত পৌঁছতে সাহায্য করবে ? নাবিলাই বা কোথায় পেলো এই নোটবুক ?
সকল প্রশ্নের উত্তর জানতে হলে আপনাকে পড়তে হবে ‘একটি লাল নোটবুক’।
সহজ গল্প ভাষ্য, সরল শব্দ ব্যঞ্জনায় একটি মৌলিক গল্প কে অত্যন্ত চমৎকারভাবে তুলে ধরা হয়েছে এই বইয়ে, কোন রকম কৃত্রিমতার আশ্রয় না নিয়ে। বইটি পড়তে পড়তে কখন যে রাত পার হয়ে ভোর চলে আসবে বলতেই পারবেন না রোমাঞ্চ মুগ্ধ পাঠক!
যে কোন ইসলামী বই পেতে ইসলামিক বইঘর.কম এর সাথেই থাকুন
বি:দ্র: একটি লাল নোটবুক বইটি free pdf download করিতে চাহিয়া লেখকদের নিরুৎসাহিত করিবেন না
Muhammad Sabuz Ahmed –
১। মারুফ (মূল চরিত্র) ঢাকার এক মাদ্রাসায় পড়ে খুব ভদ্র এবং লাজুক। খুব পড়াশোনায় আগ্রহী। পড়ায় ক্ষতি হবে ভেবে মোবাইল ব্যবহার করে না বললেই চলে। “মা” ভক্ত সে মার কোন কথাই যেন সে ফেলতে পারে না। তার আছে একটি লাল নোট বুক সে আবার ভুলো মনা তাই লিখে রাখে সব কিছু এতে স্থানও উপদেশমূলক কিছু কথা। ছুটি শেষে ঢাকায় আসছে মারুফ।
২। নাবিলা কলেজে উঠবে মাত্র রুপ লাবন্যে কোন কমতিই যেন নেই। তাঁর বড় ভাই তাঁর মতের বিরুদ্ধে এক নাস্তিকের সঙ্গে বিবাহ দিতে চায় কারন ছেলে মোটা মাইনের বেতন পায় এবং কলেজের লেকচারারও। কিন্তু নাবিলা অতো ধর্মপ্রাণাও নন। কিন্তু সে ধর্মকে শ্রদ্ধা করে। তাই সে এই বিবাহে রাজি নন। তাই ঘর থেকে পালিয়ে যায় ঢাকায় এক বান্ধবির হোস্টেলে।
৩। মারুফ এবং নাবিলা ঘটনাক্রমে একই সিটে একই বাসযোগে ঢাকায় যাচ্ছেন। হঠাৎ একজন পুলিশ পোশাকে বাকি দুজন সাধারন পোষাকে মারুফকে বাস থেকে নামিয়ে মারধর করে নিয়ে যায় হতবাক সব বাসযাত্রী। বাসে রয়ে মারুফ তার লাল নোটটিসহ ব্যাগটি। নাবিলা সেটা নেয়।
৪। রেহান শিক্ষিত বেকার এক ছেলে এবং কার্টুনিস্টও। তাঁর মেধা প্রচুর কিন্তু তা খাটায় ধর্মবিরোধীতার কাজে।
৫। দেশে একটি বার্নিং ইস্যু বিরাজ করছে সেটা হল ব্লগার রেহান কে বা কারা যেন বীভৎসভাবে খুন করেছে। সিসি টিভিই একমাত্র ভরসা। সেখানে দেখা যাচ্ছে পাঞ্জাবী পড়া এক ছেলে হাতে ছুরি সদৃশ কি যেন দেখা যাচ্ছে। তদন্তে পুলিশ আসামীর নাম জানতে পারে তার নাম মারুফ । আর একটি জিনিষ দরকার সেটা হল তার লালনোটটি
৬। বেলাল একজন মেডিকেল কলেজের লেকচারার। কাকরাইলে থেকে জামাত নিয়ে যাবে বান্দরবন ইসলামের দাওয়াত দেয়ার উদ্দেশ্যে। আব্দুল্লাহ নামক এক বালকের অনুরোধ এই জামাতে তাকে নেয়ার জন্য। বেলাল কি মনে করে যেন নিয়ে নেয়। বান্দরবনে খৃষ্টানদের কবলে পড়ে একজন ধর্ম চেঞ্জ করে ফেলে মকবুল। তার কাছে দাওয়াত আব্দুল্লাহ। এতে মকবুল এর মন নরম হয়ে যায় এবং পরে আবার ইসলাম ধর্মে ফিরে আসে। আব্দুল্লাহর কথা বলার বাচন ভঙ্গিএবং ব্যবহার সে এলাকার মেম্বারকে আকর্ষন করে। মেম্বার সাহেব মনে মনে তার মেয়ে আয়েশার জন্য তাকে জামাই হিসেবে কবুল করে নিয়েছেন।
হঠাৎ একদিন পুলিশের একটি দল রেহান হত্যাকান্ডের তদন্তে এসে মসজিদের চারদিকে ঘেড়াও করে ফেলে।
৭। ঐদিকে লালনোটটি পড়ে নাবিলা ধর্মের বিধান মানার চেষ্টা করেছে। । ওইদিকে নাবিলা সব স্বীকার করে নেয়। যে রেহানকে সেই হত্যা করেছে। কিন্তু সিসি টিভির ফুটেজ তো বলেছিল ভিন্ন কথা!
উপরের পয়েন্টগুলো দেখার পর না বুঝারই কথা। লেখক অসাধারনভাবে সৃজনশীল মেধা দিয়ে এই সবগুলোকে এক সেতু বন্ধনের আবদ্ধ করেছে। পৃষ্টায় পৃষ্টায় আছে রোমাঞ্চকর কাহিনী। কাহিনী এক দিক থেকে আরেক দিকে নিবে মোড়। আপনার মনে প্রশ্ন জমা পরবে অনেকটি। সেই প্রশ্নের কাঙ্ক্ষিত উত্তর পেতে আপনাকে নিয়ে যাবে বইটির শেষপ্রান্তে। লাস্টে লেখক যেই টুইস্ট টা দিয়েছে তা রীতিমত অনেককেই অবাক করবে।
মুহাম্মাদ তানজিম –
একটি লাল নোটবুক
মারুফ নামের লাজুক যুবক ছেলেটি ঢাকার কাছাকাছি একটা মাদ্রাসায় দাওরায়ে হাদীস পড়ে। ছেলেটি এতই লাজুক আর ভীতু যে কিনা গরু কুরবানি করতে গিয়ে অজ্ঞান হয়ে পরে যায়!
নাস্তিক এক ব্লগার রেহান হঠাৎ করেই খুন হয়ে যায়। কে কিভাবে খুন করলো তা জানা না গেলেও সি সি ক্যামেরার ফুটেজে পুলিশ মারুফ কে দেখতে পায়। পুলিশ খুঁজতে থাকে মারুফ কে। মারুফ এর সাথে সাথে পুলিশ খুঁজতে থাকে মারুফের ব্যক্তিগত লাল নোটবুক!
কি এমন আছে এই নোটবুকে? যার জন্য পুলিশ এত মরিয়া? প্রকৃত হত্যাকারী বা কে?
বান্দরবানে কিছু মানুষ মুসলিম থেকে খৃস্টান হয়ে যাচ্ছে। মিশনারীর লোকেরা টাকা পয়সার লোভ দেখিয়ে কিনে নিচ্ছে। হঠাৎ এক সৌম্যদর্শন যুবকের আগমন ঘটে ঐ এলাকায়। বিনয়, নম্র আচরণ এবং চমৎকার কথামালা দিয়ে দাওয়াত দিতে থাকে মানুষকে। পাহাড়ী এলাকার দ্বীনহীন মানুষগুলো অল্পদিনেই ভক্ত হয়ে ওঠে এই যুবকের। কে এই যুবক? কি তার উদ্দেশ্য?
একটি লাল নোটবুক উপন্যাসটি মনে এমন অনেক জিজ্ঞাসা তৈরি করবে। অদ্ভুত এক আকর্ষণে টেনে নিয়ে যাবে শেষ পাতা অবধি।
কিছু কথা : বর্তমান বাংলা সাহিত্যে ইসলামি উপন্যাস খুব বেশি দেখা যায়না। সাইমুম সিরিজ চমৎকার ইসলামিক উপন্যাস হলেও বর্তমান প্রেক্ষাপট ও বাংলাদেশের আবহে আমার পড়া প্রথম উপন্যাস এই বইটি। প্রথম বার লেখকের বই পড়ে মনে ভালোই আগ্রহ জন্মেছে। অনেকটা থ্রিলার থ্রিলার ফ্লেবার ছিল। প্রচ্ছদ টা ও দারুন।
লেখক উপন্যাসটি দিয়ে সুন্দর কিছু মেসেজ দিতে চেয়েছেন, মাদ্রাসা শিক্ষা ও জংগিবাদ নিয়ে কিছু আমাদের ভুল ও ভ্রান্ত ধারণা তিনি ভাঙতে চেয়েছেন যা সত্যি প্রশংসনীয়।
সব মিলিয়েই নতুন চেষ্টা হিসেবে ভালোই ছিল।
খারাপ লাগা : উপন্যাস টির কাহিনীর গাঁথুনি আরো মজবুত করা যেত। কিছুটা খাপছাড়া লেগেছে। কিছু কিছু জায়গায় কেমন যেন অতিরঞ্জিত মনে হয়েছে কাহিনী অর্থাৎ বাস্তবসম্মত লাগেনি।
একটি লাল নোটবুক ছাড়াও আঁধার মানবী ও শেষ চিঠি এই লেখকের লেখা আরো দুটো বই।।