অন্তিম মুহূর্ত
সামনের ঠিকানা
তুমি অবশ্য বিচক্ষণ-জ্ঞানী। চলছ অন্যদের দৃষ্টিসীমায়, তাদের অভিজ্ঞতা জানার অভিপ্রায়ে। আর বই-পুস্তক ঘাঁটাঘাঁটি করছ পূর্ববর্তীদের ইতিহাস সম্পর্কে জ্ঞাত হবে বলে। এসো, দেখো—তাদের জীবনের সমাপ্তি, কেমন তাদের অন্তিম মুহূর্তটি। মানি, তুমি অনেক পড়েছ, অনেক শুনেছ। তারপরও আমার দুটি কথা শোনার আশায় একটু কান পেতে দাও। আঁখিযুগল নিবদ্ধ করো। আমার সঙ্গে সফর করো কিতাবের পরতে পরতে।
হ্যাঁ, এটি তাদের সময় অতিক্রমের সফর, যাদের অন্তিম মুহূর্ত এসে গিয়েছিল, যাদের কাছে মৃত্যুদূত মৃত্যু নিয়েই হাজির হয়েছিল। এটি জীবনের সফর। এ সফর একসময় শুরু হয়েছিল তোমারও। অচিরেই তুমি দেখতে পাবে, এ সফরের নিশ্চিত অবসানও। তোমার শেষ সমাপ্তিকে এ কিতাবের পরতে পরতে দেখে নাও। বেছে নাও কেমন হবে তোমার অন্তিম মুহূর্ত।
ভয় যেন তোমাকে অস্থির না করে তোলে। কারণ, মৃত্যুকে ফেরাতে তা কোনোই কাজে আসবে না। ভয় মৃত্যুকে ঠেকাতে পারে না। তুমি বরং তাদের শেষ মুহূর্তগুলো নিয়ে ভাবো। নিজেকে তাদের একজন মনে করো। কারণ, প্রত্যেক প্রাণীরই আছে একটি নিশ্চিত সমাপ্তি। জন্ম নিলে মৃত্যু যে অবধারিত। অন্তিম মুহূর্তের এ স্মরণিকাতে হয়তো তোমারও কিছু উপদেশ অর্জিত হবে। একদিন তোমাকেও মরতে হবে, তুমিও হবে কবরবাসীদের একজন।
এসো, এ সফরে আমরা একে অপরের হাত ধরি। পরস্পরে অন্তরঙ্গ হই। কেননা, আমরা যে একই পথের পথিক।
অন্তিম মুহূর্ত
বি:দ্র: অন্তিম মুহূর্ত বইটি free pdf download করিতে চাহিয়া লেখকদের নিরুৎসাহিত করিবেন না
Najnin Tasnia –
অন্তিম মুহূর্ত
আমি আমার অবস্থানের কথা যেন ভুলেই গিয়েছিলাম! দুনিয়ার মোহ আমাকে যেন ধরে রেখেছিল! কিন্তু আমি যে একটি স্টেশনে বসে আছি মাত্র! আমি এত উদাসীন কেন হলাম! দুনিয়ার দুঃখ-কষ্ট, সুখ-আনন্দ আমাকে এত ভাবায় কেন?
আমি দুনিয়ার সামান্য পরীক্ষার জন্য সব কাজ রেখে আগে থেকেই কত প্রস্তুতি গ্রহণ করি। অথচ আখেরাতের জন্য কোন প্রস্তুতিই নিচ্ছিনা!
আমার কী মৃত্যু যন্ত্রণা আসবে না! আসবে! অবশ্যই আসবে! যেকোনো সময় আসবে! মৃত্যু চিরসত্য! তাও কেন দুনিয়ার প্রতি আকর্ষণ থাকবে?
মৃত্যু পর সবাই একসময় আমাকে ভুলে যাবে। হিংসুকেরা শান্ত হবে!
কেউই থাকবে না আমার সাথে! শুধু থাকবে নেক আমল! তাও কতটুকু তাকওয়া নিয়ে করছি!
মুতারিফ ইবনে আব্দুল্লাহ বলতেন, “নিশ্চয়, এই মৃত্যু দুনিয়ার ভোগ-বিলাসে মত্ত মানুষদের ভোগ বিলাস শেষ করে দেয়। সুতরাং তোমরা এমন ভোগ-বিলাস তালাশ করো, যার কোনো মৃত্যু নেই।” (সিফাতুস সাফওয়াহ:৩/২২৪)
বইয়ের কিছু কথা যা আমার ভালো লেগেছে,
১। বর্ণিত আছে, দাউদ আ. এর নিকট যখন মালাকুল মাওত আসলো, তখন তিনি বললেন, ‘আপনি কে?’
সে বলল, ‘ আমি এমন ব্যক্তি, যে কোনো রাজা-বাদশাহকে ভয় করে না, কোনো মজবুত দুর্গই যাকে আটকাতে পারে না এবং যে কারও কাছ থেকে কোনো ঘুষ গ্রহণ করে না।’
তিনি (দাউদ আ.) বললেন, ‘তাহলে আপনি মালাকুল মাওত।’
সে বলল, ‘হ্যাঁ।’
তিনি বললেন, ‘আপনি আমার কাছে চলে এসেছেন, অথচ আমার প্রস্তুতি এখনো শেষ হয় নি। ‘
মালাতুল মাওত বলল, ‘হে দাউদ আ., আপনার অমুক নিকটাত্মীয় কোথায়? আপনার অমুক প্রতিবেশী কোথায়? ‘
তিনি বললেন, ‘তারা মারা গেছে।’
সে বলল, ‘তাদের মৃত্যুর মধ্যে কি আপনার প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য শিক্ষা ছিল না?’ (আত-তাজকিরাহ:২০৪)
২। সালাফের কেউ একজন বলেছেন,
“ওই ব্যক্তির বিষয়টা আশ্চর্যজনক, যে জানে, মৃত্যু সত্য; তারপরও সে হাসিখুশি থাকে! ওই ব্যক্তির বিষয়টা আশ্চর্যজনক, যে জানে, জাহান্নাম সত্য; তারপরও হাসে! ওই ব্যক্তির বিষয়টা আশ্চর্যজনক, যে দেখে দুনিয়া তার অধিবাসী-সহ নিত্য পরিবর্তন হচ্ছে; তারপরও কীভাবে দুনিয়ার প্রতি নিশ্চিত রয়েছে?! ওই ব্যক্তির বিষয়টা আশ্চর্যজনক, যে জানে তাকদির সত্য; তারপরও দুনিয়া নিয়ে কীভাবে সে এত ব্যস্ত হয়?” ( মুকাশাফাতুল কুলুব:১৫৭)
৩। শাকিক ইবনে ইবরাহিম রহ. বলেন,
“তুমি এমনভাবে প্রস্তুতি গ্রহণ করো, যাতে মৃত্যুর পর আর তোমাকে ফিরে আসার প্রার্থনা করতে না হয়।” (ইমাম বায়হাকি কৃত আজ-জুহদ: ২৩৯)