কিয়ামুল লাইল
কিয়ামুল লাইল মানে কি?
কিয়াম অর্থ হল আল্লাহর ডাকে সাড়া দেয়া। কিয়ামুল লাইল অর্থ রাতে আল্লাহর ডাকে সাড়া দেয়া। প্রতিরাতের এক তৃতীয়াংশ অবশিষ্ট থাকতেই আল্লাহ তা’য়ালা সর্বনিন্ম আসমানে নেমে আসেন। তিনি চান আমরা তার ডাকে সারা দেই। এসময় আল্লাহ তা’য়ালা আমাদেরকে বলেন, কার কি চাহিদা আছে? অথচ এই সময়টাতে আমরা কি করি, গভীর ঘুমে পড়ে পড়ে নাক ডাকতে থাকি! প্রিয় পাঠক, তাহাজ্জুদকে আপনার জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশে পরিণত করুন! নিঃসন্দেহে এটা খুবই জরুরী!
ধরুন, আপনার স্ত্রী, সন্তান, বা প্রিয় মানুষটি যদি আপনাকে মাঝরাতে ডেকে জিজ্ঞেস করে, যে, “তুমি ঠিক আছো তো? তোমার কি কিছু লাগবে?” তখন আপনি কিভাবে উত্তর দিবেন? আপনি কি এভাবে বলবেন, যে, “আমার সাথে ঠাট্টা করো না?” না, বরং আপনি বলেন, যে, “আমি ঠিক আছি বন্ধু”, “আমি ঠিক আছি ভাই”, ইত্যাদি। আপনার সহকর্মী, অফিসের বস, বা কেউ যদি আপনাকে ফোন কল বা মেসেজ দিতো, আপনি অবশ্যই এটা ভেবে খুশি হতেন, যে, তারা আপনার খোঁজ নিচ্ছে। এক্ষেত্রে কিন্তু আপনি অবশ্যই তাদের উত্তর দিতেন। আর যখন আল্লাহ আপনাকে ডাকছেন, এবং বলছেন, যে, তোমাদের কার কি প্রয়োজন, আপনি কিভাবে আল্লাহর সেই আহবানকে উপেক্ষা করতে পারেন? আর নিঃসন্দেহে আল্লাহর উদাহরণই হচ্ছে সর্বোত্তম!
হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) বলেছেন, রাসুলুল্লাহ (সঃ) বলেছেন, আল্লাহ তা’য়ালা প্রতিরাতের এক তৃতীয়াংশ অবশিষ্ট থাকাকালে সর্বনিন্ম আসমানে অবতরণ করে ঘোষণা করতে থাকেন- “কে আছে এমন যে আমাকে ডাকবে আর আমি তার ডাকে সাড়া দেবো, কে এমন আছে যে আমার কাছে চাইবে আর আমি তাকে দিবো, কে এমন আছে যে আমার কাছে ক্ষমা চাইবে আর আমি তাকে ক্ষমা করবো?”
সুবহানাল্লাহ ! এই হাদিসটি পড়ে কার না অন্তর শীতল হয়? তবুও কি আমরা আল্লাহর কাছে চাই? আল্লাহ আমাদেরকে ডাকছেন অথচ আমরা গভীর ঘুমে বিভোর হয়ে থাকি!
পাঠক! আপনি কি চান আপনার চেহারায় নুরানি ছাপ থাকুক, আপনার রাতের কিয়াম পুলসিরাতে আপনার জন্য নূর হোক, জান্নাতে আপনার জন্য উত্তম প্রাসাদ থাকুক? তাহলে তাহাজ্জুদের জন্য উঠুন!
হাসান আলবাসরি (রাহ.) বলেন, যারা আল্লাহর সাথে নির্জনে সময় কাটায়, আল্লাহ তাদেরকে তাঁর নূর দ্বারা আচ্ছাদিত করে নেন।
তারা রাতের গভীর অন্ধকারে আল্লাহর সাথে নির্জনে সময় কাটিয়ে থাকেন, তাই আল্লাহ তাঁর নিজস্ব জ্যোতি থেকে তাদেরকে কিছু অংশ দান করেন। তাদের চেহারা থেকে নূর ঠিকরে বের হতে থাকে। জান্নাতে যাওয়ার পথে পুলসিরাত কিয়ামের আলোয় আলোকিত হয়ে উঠবে।
দিনের বেলা সব কাজের ব্যর্থতার কারণ কি? রাতের বেলা কিয়াম ও তাহাজ্জুদের ব্যর্থতা!
হ্যাঁ, এটাই আপনার ব্যর্থতার একমাত্র কারণ! আপনার ঈমান স্থবির হয়ে গেছে? তাহাজ্জুদের মাধ্যমে পুনরুজ্জীবিত করুন। আপনার মনে যদি কিছুর প্রত্যাশা থাকে, তবে কিয়ামের জন্য উঠুন। যদি আপনার পাপ আপনাকে আচ্ছন্ন করে ফেলে, তবে তাহাজ্জুদই ভরসা।যদি পার্থিব জীবনে নানা ফিতনা-ফাসাদের সম্মুখীন হন, তবে তাহাজ্জুদের মাধ্যমে আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করুন! আপনি যদি ইলম হাসিল করতে চান, তবে তাহাজ্জুদের অভ্যাস গড়ে তুলুন।
কিভাবে তাহাজ্জুদের পাবন্দী করতেন আমাদের সালাফগণ? এই বইয়ে অ-নে-ক উদাহরণ আছে এর।যারা শিখতে চায় তাদের জন্য শেখার আছে অনেক কিছু।
ফুযাইল ইবনু ইয়াজ(রাহ.) বলেন, যখন ঘরের দরজা বন্ধ হয়ে যায়, রাতের অন্ধকার নেমে আসে,এবং লোকজন তার পরিবারের সাথে একান্তে সময় কাটায়, এই মুহুর্তটিই হচ্ছে ভালবাসার দু’জন মানুষের কাছে আসার সবচেয়ে উত্তম সময়, এবং আমি এ সময়টাতে আমার রবের সাথে একাকী মুহূর্ত পার করি!
সালাফদের একজন একবার কিছু দিনের জন্য রাতের সালাত আদায় করতে পারলেন না।তারপর তিনি আল্লাহর কাছে দুয়া করলেন- হে আল্লাহ, আমাকে রাতের সালাত আদায়ের তৌফিক দিন, আর যদি এটা আমার তাকদিরে না থাকে, তবে আমাকে দুনিয়ার বুক থেকে উঠিয়ে নিন!
আলি ইবনু বাক্কার (রাঃ) এবং আব্দুল আযীয ইবনু রাওয়াদ (রাঃ) তো এমন করতেন যে-
তারা নিজেদের বিছানার হাত বুলাতেন এবং বলতেন- ওয়াল্লাহি, তুমি খুবই উষ্ণ ও আরামদায়ক কিন্তু কসম আল্লাহর আজ রাতে আমি তোমার কাছে ঘেষব না, ফজরের আগপর্যন্ত আমি সালাত আদায় করব; তুমি নরম ও সুন্দর কিন্তু জান্নাতের বিছানা আরও নরম ও সুন্দর।
এমনই ছিল তাদের তাকওয়ার নিদর্শন। জান্নাতকে পাওয়ার জন্য তারা দুনিয়ার সুখ ত্যগ করতে প্রস্তুত থাকতেন সবসময়।
[লেখেছেনঃ Marium Rakib]বি:দ্র: কিয়ামুল লাইল বইটি free pdf download করিতে চাহিয়া লেখকদের নিরুৎসাহিত করিবেন না
Reviews
There are no reviews yet.