আমার দেখা পৃথিবী (২য় খন্ড)
আমার দেখা পৃথিবী (২য় খন্ড) আলোচ্য গ্রন্থটি লেখকের ভ্রমণকাহিনী “জাহানে দীদাহ”র বাংলা অনুবাদের দ্বিতীয় খণ্ড। তিনি গ্রন্থটিতে বিশটিরও অধিক দেশের ভ্রমণ বৃত্তান্ত তুলে ধরেছেন। যে দেশগুলোর ভ্রমন বৃত্তান্ত গ্রন্থটিতে এসেছে সেগুলো হল: তুরস্ক, সিঙ্গাপুর, ইন্দোনেশিয়া, চীন, কাতার, বাংলাদেশ, ইউরোপ, আমেরিকা ও ভারত।
সফর নামার এই খণ্ডটি শুরু হয় তুরস্ক সফর দিয়ে। মুসলিম জাতির রাজনীতি ও সভ্যতার ইতিহাসে তুরস্কের অবস্থান সোনালী ফ্রেমে বাঁধা। এই কিছুকাল আগেও এই ভূখণ্ড মুসলিম বিশ্বের রাজধানী ও ইসলামী তাহজীব-তমদ্দুনের প্রাণ কেন্দ্র ছিল। পবিত্র কুরআনের অনুবাদ বিষয়ে একটি আন্তর্জাতিক কনফারেন্সে ওআইসির নিমন্ত্রণ পত্র পেয়ে লেখক ইস্তাম্বুল যান। এই সেই ইস্তাম্বুল যা সুলতান মোহাম্মদ ফাতিহ রহ. স্থলের জাহাজ ডাঙ্গায় চালিয়ে আক্রমণ করে বিজয় করেন। উক্ত সফরনামায় লেখক ইস্তাম্বুল বিজয়ের ঈমানদীপ্ত কাহিনী বর্ণনা করেন ও বিজয়ের স্মৃতিবিজড়িত বিভিন্ন স্থান পরিদর্শন করেন। এছাড়াও তিনি তুরস্কের চিত্তাকর্ষক নির্মাণ শৈলীতে নির্মিত বিভিন্ন মসজিদ পরিদর্শন করেন। এরমাঝে “সুলাইমানিয়া জামে মসজিদ” এর নির্মাতা যুগ শ্রেষ্ঠ নির্মাণ শিল্পী যীনানকে নিয়ে কিছু আলোচনা করেন।
ইন্দোনেশিয়ার সরকারের নিমন্ত্রনে সেখানকার বিভিন্ন ধর্ম ভিত্তিক সংস্থা, প্রতিষ্ঠান এবং ধর্মীয় পরিবেশ-পরিস্থিতি পরিদর্শন করার জন্য লেখক ইন্দোনেশিয়া সফর করেন। যাত্রাপথে তিনি কিছুক্ষণ সিঙ্গাপুরে অবস্থান করেন। সফরনামার এই অংশে লেখক ইন্দোনেশিয়ার রাজনৈতিক অবস্থা ও মুসলমানদের সার্বিক অবস্থার বর্ণনা করেন। এছাড়াও লেখক সেখানে কাদিয়ানীদের অপতৎপরতার উল্লেখ করে তা প্রতিরোধের গুরুত্ব উল্লেখ করেন। লেখক “শুব্বানুল মসজিদ” নামে তরুণদের একটি অদৃশ্য সংগঠনের বর্ণনা দেন যা প্রতিটি মসজিদে সংঘটিত কিন্তু তার কোন কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ নেই।
সিলেটের “কাসিমুল উলূম মাদ্রাসা”র দাওয়াতে লেখক এক সপ্তাহের জন্য বাংলাদেশে আসেন। স্বাধীনতার পর বাংলাদেশে লেখকের এটিই প্রথম সফর। ঢাকা বিমানবন্দরে অবতরণ করে তাই লেখক আবেগী হয়ে পড়েন। এসময় ইসলামিক ফাউন্ডেশন-এর ডিরেক্টর জেনারেলের আমন্ত্রণে তিনি ফাউন্ডেশনের বাংলা “মা’আরিফুল কুরআন” এর প্রথম খন্ডের প্রকাশনা উৎসবে উর্দুতে বক্তৃতা করেন। বক্তৃতাটি ঢাকা রেডিও থেকে প্রচারিত হয়। স্বাধীনতার পর সম্ভবত এটিই প্রথম উর্দু ভাষণ যা ঢাকা রেডিও থেকে প্রচারিত হয়। ঢাকায় অবস্থানকালে লেখক মোহাম্মদ উল্লাহ হাফেজ্জী হুজুর রহ. সাহেবের দর্শন ও তার সাহচর্য লাভ করেন।
কাতারের ধর্ম বিষয়ক অধিদপ্তরের উদ্যোগে আয়োজিত একটি আন্তর্জাতিক সিরাত কনফারেন্সে লেখক নিমন্ত্রণ পান। কনফারেন্সে অন্যান্য আলেমের মতো তিনিও সিরাত বিষয়ক একটি প্রবন্ধ পেশ করেন। পাঠকদের জন্য তিনি উক্ত প্রবন্ধটি সফরনামায় হুবহু তুলে ধরেন।
চীনের মুসলমানদের সহযোগিতার উদ্দেশ্যে পাকিস্তান সরকার লেখকের নেতৃত্বে একটি ছোট প্রতিনিধিদল প্রেরণ করে। এই সফরে তিনি চীনের বিভিন্ন মুসলিম জনপদ ও মসজিদ ভ্রমণ করে সেখানে সাধারণ মুসলমানদের উদ্দেশ্যে প্রয়োজনীয় বয়ান করেন। পাঠক অবাক হবেন যে চীনের মতো একটি দেশে স্বল্প সংখ্যক মুসলমান হলেও এখানে অসংখ্য মসজিদ রয়েছে। পাশাপাশি লেখক চীনের বিভিন্ন ঐতিহাসিক ও দর্শনীয় স্থান ভ্রমণ করে সেগুলোর বর্ণনা তুলে ধরেন। সফরনামার এই অংশের শেষে লেখক চীনের সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের অভিজ্ঞতা ও বিপ্লব পরবর্তী চীনের সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাষ্ট্রীয় অবস্থার চিত্র তুলে ধরেন। পাশাপাশি লেখক চীনের মুসলিমদের বর্তমান সামগ্রিক অবস্থা ও সে অবস্থা থেকে পরিত্রাণের উপায়ও বর্ণনা করেন।
আমেরিকার বিভিন্ন স্টেটের মুসলমানদের ছোট ছোট সংগঠনের একটি জোট “ফেডারেশন অব ইসলামিক এসোসিয়েশন”। তাদের আমন্ত্রণে ছোট একটি প্রতিনিধি দলের সাথে লেখক আমেরিকা সফর করেন। এই সফরনামায় তিনি আমেরিকায় ইসলামের আগমন ও আমেরিকার মুসলিমদের নিয়ে আলোচনা করেন। প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য এই দুই সভ্যতার সংঘাত ও তার প্রতিকার নিয়েও আলোচনা করেন। পাশ্চাত্য জীবনধারার আলোকময় দিক ও অন্ধকার দিক উল্লেখ করে তিনি পাশ্চাত্যে ইসলামী দাওয়াত জোরদার করার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন।
দারুল উলুম দেওবন্দের শতবার্ষিকী মাহফিল উপলক্ষে লেখক ভারত সফর করেন। এ সফরে তিনি আকাবিরে দেওবন্দের স্মৃতিবিজড়িত বিভিন্ন স্থান এবং ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের স্মৃতিবিজড়িত বিভিন্ন স্থান পরিদর্শন করেন। দারুল উলুম দেওবন্দ ও দারুল উলুম নদওয়াতুল উলামার ওলামাদের সাথে মতবিনিময় করেন। এই সফর নামায তিনি আকাবিরদের বিভিন্ন ঈমানদীপ্ত ঘটনাও তুলে ধরেন।
এরপর লেখক দক্ষিণ আফ্রিকার দুই সফরনামা লিপিবদ্ধ করেন। প্রথম সফর ছিল দক্ষিণ আফ্রিকার কিছু মুসলিমের পক্ষ থেকে নিমন্ত্রণ। উক্ত সফরনামায় লেখক দক্ষিণ আফ্রিকার অধিবাসী ও দক্ষিণ আফ্রিকার মুসলমানদের ধর্মীয় অবস্থা নিয়ে সামান্য আলোচনা করেন। উক্ত সফরে লেখক দক্ষিণ আফ্রিকার বিভিন্ন মুসলিম জনপদ ও মসজিদে বিভিন্ন দাওয়াতি বয়ান করেন ও মুসলমানদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন। দক্ষিণ আফ্রিকায় বসবাসরত কৃষ্ণাঙ্গদের অবস্থা বিবেচনা করে লেখকের তাদের ওপর দাওয়াতি তৎপরতা জোরদার করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
দ্বিতীয় সফর ছিল কেপটাউনের সুপ্রিম কোর্টে কাদিয়ানীদের দায়ের করা একটি অবান্তর মামলার শুনানিতে মুসলমানদের পক্ষে জবাব তৎপরতায় সাহায্য দানের জন্য। পাঠকের অবগতির জন্য লেখক মামলা ও মামলার যাবতীয় কার্যক্রম সম্পর্কেও বর্ণনা করেন। আল্লাহর অশেষ রহমতে কাদিয়ানীদের মামলাটি আদালত থেকে খারিজ হয়। এই দ্বিতীয় সফরনামায় লেখক যে সকল মুসলমানদের অবিস্মরনীয় কুরবানীর ফলে দক্ষিণ আফ্রিকায় ইসলামের ভিত্তি স্থাপন হয়, সে ঈমানদীপ্ত কাহিনী বর্ণনা করেন। এছাড়াও তিনি মুসলমানদের উপর কৃষ্ণাঙ্গদের আক্রমণ ও তার প্রতিকার নিয়েও আলোচনা করেন।
আমার দেখা পৃথিবী (২য় খন্ড) গ্রন্থের শেষ অংশে লেখক কানাডা, আমেরিকা ও ফ্রান্সের সফরনামা উল্লেখ করেন। এই সফর গুলোও ছিল সেসকল দেশের মুসলিমদের আমন্ত্রণে। এই সফরেও লেখক মুসলমানদের বিভিন্ন সমাবেশ ও মসজিদে দিকনির্দেশনামূলক বিভিন্ন বক্তব্য দেন। কানাডার সফরে লেখক বিখ্যাত “ম্যাকগিল বিশ্ববিদ্যালয়” পরিদর্শন করেন। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের “ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ” সমগ্র বিশ্বের মধ্যে প্রসিদ্ধ যেখানে থেকে এই যুগের অনেক বিখ্যাত প্রাচ্যবিদ ডিগ্রি লাভ করেছেন। “মা’হাদ আর রশীদ আল ইসলামী” নামে কর্ণওয়ালের একটি মাদ্রাসাও পরিদর্শন করেন যেখানে কুরআনের হিফজ, নজেরা ও প্রাথমিক দ্বিনিয়াত শিক্ষাদানের ব্যাবস্থা আছে। এছাড়াও লেখক এ সকল দেশের বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান পরিদর্শন করেন।
মুসলিম ও অমুসলিম অনেক দেশ সফরের পর লেখকদের এই অভিব্যক্তি হয় যে বিশ্বের অনেক মুসলিম দেশই পাশ্চাত্যের নগ্ন সয়লাবে মারাত্মকভাবে ভেসে গেছে। যদিও অবস্থা এখনও সীমা অতিক্রম করে যায়নি। এসকল অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য লেখক ইখলাস, লিল্লাহিয়াত, মেহনত ও বিচক্ষণতার সাথে কাজ করার উপর গুরুত্বারোপ করেন।
অপরদিকে পাশ্চাত্যের উন্নত দেশসমূহ এমন সব গুণাবলীর কারণে বিশ্বের নেতৃত্বের আসনে আসীন, যে গুণাবলীসমূহ মূলত মুসলমানদের আয়ত্তে থাকার কথা ছিল। এরপরও পাশ্চাত্য সভ্যতা ও জীবনধারার কতগুলো অন্ধকার দিক উল্লেখ করে লেখক সেখানেও দাওয়াতী কার্যক্রম জোরদারের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। বিশেষ করে বিভিন্ন অমুসলিম দেশে মুসলমানদের জন্য স্বতন্ত্র শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠার উপরে গুরুত্বারোপ করেন।
আমার দেখা পৃথিবী (২য় খন্ড)
[রিভিউ লেখক : Riaz Ud-daula ]বি:দ্র: আমার দেখা পৃথিবী (২য় খন্ড) বইটি free pdf download করিতে চাহিয়া লেখকদের নিরুৎসাহিত করিবেন না
Reviews
There are no reviews yet.