আত্মার পরিচর্যা
সাধারণত সৌন্দর্য বলতে মানুষ বাহ্যিক রূপ-লাবণ্য আর সাজসজ্জাকেই বুঝে থাকে। এ জন্যই দেখা যায়, অনেক মানুষই কেবল নিজের বাহ্যিক অবস্থাকে চাকচিক্য করে তোলতে চেষ্টা-সাধনা করে। অপরকেও তার বাহ্যিক সৌন্দর্য দেখে পরিমাপ করে; তা দেখেই পছন্দ হলে কাছে টানে, না হলে দূরে ঠেলে।
আসলে কি বাইরের এ সৌন্দর্যই আসল সৌন্দর্য? শরীরী কাঠামোটাই কি ভালো-মন্দ পরিমাপের মানদণ্ড? না, বরং একজন মানুষের বাহ্যিক অবস্থা যতই আকর্ষণীয় হোক না কেন, তার আত্মা যদি পরিশুদ্ধ না হয়; তার এ বাহ্যিক সৌন্দর্য ও চাকচিক্যতার কোনো মূল্য নেই। প্রকৃত সুন্দর তো সে-ই ব্যক্তি, যার অন্তর-আত্মা পরিশুদ্ধ। তাই আসুন, প্রকৃত সৌন্দর্যে নিজেকে শোভিত করি। আর এর জন্যই প্রয়োজন- আত্মার পরিচর্যা।
বি:দ্র: আত্মার পরিচর্যা বইটি free pdf download করিতে চাহিয়া লেখকদের নিরুৎসাহিত করিবেন না
বৃষ্টি জলি –
একজন মানুষের সত্যিকার সৌন্দর্য্য মূলত তার ভেতরের সৌন্দর্য্য । আর যদি ভিতর এবং বাহির উভয় সৌন্দর্য্যের অধিকার কেউ হয় তবে তো সে মাশাআল্লাহ দারুণ সৌন্দর্য্যের দাবিদার। কিন্তু সাধারণত, সৌন্দর্য্য বলতে আমরা বুঝি বাহিরের রূপ-লাবণ্য ও চাকচিক্যকেই। ভেতরটা তার যেমনই থাক বাহ্যিক সৌন্দর্য্য দেখেই আমরা বলে ফেলি সে তো আসলেই খুবই আকর্ষণীয় ও ব্যাপক সৌন্দর্য্যের অধিকারী। আসলেই কি তাই?!? বাহ্যিক সৌন্দর্য্যের অধিকারী যতই হোক সে যদি অন্তর-আত্মার প্রকৃত সৌন্দর্য্যের অধিকারী না হতে পারে তার কোন মূল্যই নেই। অন্তর-আত্মার পরিশুদ্ধকরণ খুব বেশি জরুরি ইহকাল ও পরকালের জন্য।
আত্মার পরিচর্যা বইটি আপনাকে পরিচয় করিয়ে দিবে অন্তর-আত্মা কিভাবে রোগাক্রান্ত হয়ে পরে এবং এই রোগগুলো নিরাময়ের বিভিন্ন উপায় এবং উপকরণ।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন—
“যার অন্তরে অণু পরিমাণ অহংকার থাকবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে না”।
সুতরাং আত্মার সকল ব্যাধি থেকে মুমিনদের অবশ্যই পরিশুদ্ধি লাভ করতে হবে। শরীরে যখন কোন রোগ হানা দেয় সেটি নিরাময়ের জন্য আমরা কতইনা রোগ প্রতিষেধক ঔষধ গ্রহণ করি। যাতে করে রোগের প্রকোপ বেশী ছড়িয়ে না পরে শরীরে বা দীর্ঘস্থায়ী না হয়। দ্রুত রোগ সেরে যায় তার ব্যবস্থা করি যেকোন উপায়ে। কিন্তু আত্মার ও যে রোগ আছে তা আমরা কতটুকু উপলদ্ধি করি? এই রোগ হলে যে আমাদের কত বড় ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয় তা ভেবে দেখার সময় কি আমাদের হয়? আত্মার এই রোগ সারিয়ে তুলবার জন্য আমরা কি কি উপায় ও প্রতিষেধক গ্রহণ করি এবং করা উচিত তা কি আমরা আদৌ জানি!?আত্মার রোগ নিরাময় ও পরিচর্যার জন্যই মূলত এই বইটি।
“দুনিয়া মুমিনদের জন্য কারাগার স্বরূপ। ”
এইখানে যা ইচ্ছা তাই করা সম্ভব না। আমরা কারাগারে মন যা চাইবে তাই করতে পারবো না। কারাগারের বিভিন্ন নিয়ম, কানুন যেমন মেনে চলতে হয়।
ঠিক তেমনি এই দুনিয়া নামক কারাগারেও আমরা আমাদের মন যা চায় তাই করতে পারবো না। আমাদের রব এর দেওয়া নিয়ম, কানুন মেনে চলতে হবে। রব যা কিছু আদেশ করেছেন তা মেনে চলতে হবে আর যা কিছু নিষেধ করেছেন তা থেকে বিরত থাকতে হবে।
মনের সব চাহিদা মেটাতে চাওয়া খুব খারাপ জিনিস। এমন কিছু চাহিদা আছে যা আমাদের ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেয়। সেগুলি পূরণ করলে আমাদের ধ্বংস নিশ্চিত। তাইতো আমাদের অন্তর – আত্মাকে কোন দিকে ধাপিত করলে ভালো হবে আর কোন দিকে ধাপিত করলে খারাপ পথে চলে যাবে সেগুলি জানা খুবই জরুরি। এবং সঠিক পথে আমাদের মনকে পরিচালনা করার জন্য আত্নার পরিচর্যা করা অবশ্য কর্তব্য।
এই গ্রন্থটি রচনা করার উদ্দেশ্য হলো—
আত্মশোধনের সঠিক পথ দেখানো,
ক্ষতিকর বিষয়ের খায়েশ থেকে মনকে নিবারণ করা
এবং সঠিক পথ থেকে বিচ্যুত-খায়েশের গোলামিতে নিমগ্ন থাকা বিষয়গুলোর পরিশোধন করা।
বইটি মূলত ৩০টি অধ্যায়ে বিন্যস্ত করা হয়েছে। এই ৩০টি অধ্যায় জুড়ে আত্মার বিবিধ রোগ এবং এর পরিচর্যা নিয়ে বইটি লেখা হয়েছে।
আমাদের জীবন এক পরীক্ষা কেন্দ্র। এ জীবনে পরীক্ষায় টিকে থাকতে হলে আমাদের অবশ্যই আত্মার পরিচর্যা করা অপরিহার্য। আমি আমার আত্মাকে কতটা ভালো রাখার চেষ্টা করেছি, খারাপ কাজ থেকে কতটা দূরে থাকার চেষ্টা করেছি, কত বার ব্যর্থ হয়েও আবার সফল হবার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করেছি, কোন রকম এক ধাপ এগিয়ে গিয়ে আবার পিছলে পরে পুনরায় উঠে দাড়াঁবার চেষ্টা চালিয়েই গিয়েছি এসব কিছুই আমার রব দেখছেন।
আমার রবের কাছে আমার বাহিক্য সৌন্দর্যের কোনই মূল্য নেই। মূল্য আছে কেবল আমার অন্তরের পবিএতার। নিজের নফস বার বার খারাপ কাজের জন্য সাড়া দিলেও আমি কতটা নিজেকে নিয়ন্ত্রণ রাখতে পেরেছি আমার রাব্বে কারিম এর ভয়ে, ভালোবাসায় তাই চান আমার রব আমার থেকে।
অথচ আমরা দুনিয়া হাসিলে মও। দুনিয়ার মোহে পরে এহেন এমন কাজ নেই যা আমরা করিনা। নফসের তাড়নায় পরে আমরা আজ সামান্য বিবেক খাটিয়ে কাজ করিনা। নফস যা চায় তাই করে ফেলি অনায়াসেই। অথচ এর পরিণতি যে কতটা ভয়ঙ্কর তা আমাদের ভাবারও সময় মেলে না।
আমাদের আত্মাকে কিভাবে পরিচর্যা করবো, কিভাবে নফসের চাহিদা থেকে বেঁচে থাকবো তার বিভিন্ন দিক ও উপায় নিয়েই পুরো বইটি সাজানো হয়েছে।
?? বইটি পড়লে আপনি জানতে পারবেন—
বিবেকের তাড়না ও প্রবৃওির চাওয়া থেকে কিভাবে বাচঁতে পারবেন।
প্রেমরোগ থেকে মুক্তি লাভ।
শারাহ বা লালসা কিভাবে পরিহার করবেন।
নেতৃত্ব প্রত্যাখ্যানকরণ।
কৃপণতা কিভাবে পরিহার করবেন।
মিথ্যাবাদিতার নিন্দা।
হিংসা পরিহারকরণ।
রাগ সংবরণ।
রিয়া ও আত্মপ্রদর্শন পরিহার।
অহেতুক দুঃখ পরিহার।
দুশ্চিতা ও অযথা উদ্বেগ পরিহারকরণ।
ভয়কাতরতা ও মৃত্যুভয় পরিহার।
অলসতা পরিহার।
হীনমন্যতা পরিহার।
আত্মতৃপ্তি পরিহার।
আত্মশুদ্ধির অভিসার।
এছাড়াও আরো অনেক বিষয়ের আত্মার পরিচর্যার দিক নিয়ে। কিভাবে আত্মার পরিচর্যা করে একজন অনুপম চরিএের অধিকারী হওয়া যায় এর সবকিছুই জানতে পারবেন বইটি অধ্যায়ন করে।
পরিশেষে,
আত্মার পরিচর্যা’র বিষয় গুলো জেনে এবং সে অনুযায়ী আমল করে আমরা যেনো আমাদের মহান রব এর সন্তুষ্টি লাভ করতে পারি।
আমিন।
আবু ইয়াযিদ বলেন, আমি মনকে যতই আল্লাহ’র দিকে নিয়ে যাচ্ছিলাম, সে ততই কষ্টে বুক ভাসিয়ে ছিল। কিন্তু আমি যখন আল্লাহ পর্যন্ত তাকে নিয়ে গেলাম, সে হাসতে লাগল।
এ কথাটিই কবি বুঝাতে চেয়েছেন কবিতায়—
‘যতই দেখেছি ততই কেঁদেছি, হেসেছি তখন
যখন দেখেছি নয়নতারারা আমার খুনে রঙ্গিন।‘