যেমন ছিলেন তারা
ইবনুল আরাবী রহ. বলেন, হৃদয় নির্মল হতে পারে না, যখন তাতে হিংসা, বিদ্বেষ, আত্মবিমুগ্ধতা ও অহংকার বিরাজ করে। কারণ, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈমানের জন্য শর্ত করেছেন যে, মুমিন তার ভাইয়ের জন্য তা-ই পছন্দ করবে; যা সে নিজের জন্য পছন্দ করে।
ইবনে সিরীন রহ. কে জিজ্ঞেস করা হলো, নির্মল অন্তর কী? তিনি বললেন, “আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য তাঁর সৃষ্টির ব্যাপারে কল্যাণ কামনা করা।”
সালফে সালিহীন হলেন রাসূল সা. এর প্রকৃত উত্তরসূরি। তাঁরা ইসলামে উৎসাহিত প্রতিটি গুণকে নিজেদের মাঝে ধারণ করার ক্ষেত্রে ছিলেন প্রচণ্ড আগ্রহী ও অগ্রগামী। তাঁরা ছিলেন নিজেদের মাঝে রাসূলের শিক্ষাকে আঁকড়ে ধারণকারী। তারাই হলেন মুমিনদের মধ্যকার সর্বোাত্তম মুমিন।
সালফে সালেহীন কারা:
সালফে সালেহীন বলতে বোঝায় প্রথম তিন স্বর্ণযুগের স্বর্ণালী মুসলিমদেরকে। আরেকটু সহজ করে বললে, সাহাবায়ে কিরাম, তাবেয়ীন ও তাবে তাবেয়ীন এবং সম্মানিত হেদায়েতপ্রাপ্ত ইমামগণই হলেন সালফে সালেহীন।
(ইমাম ইবনে তাইমিয়া রহ. —দারউ তাআরিদিল আকলি ওয়ান নাকলি: ৭/১৩৪; ইমাম ইবনু রজব রহ. —ফাদলু ইলমিস সালাফি আলা ইলমিল খালাফি: ৬০ এবং প্রমুখ উলামা)
ইবনু হাজার আসকালানী রহ. বলেন: ‘‘সৌভাগ্যবান তো সে—ই, যে সালাফদের পথ ও পদ্ধতীকে আাঁকড়ে ধরে এবং খালাফদের নবউদ্ভাবিত বেদআতকে পরিহার করে। ’’—(ফাতহুল বারী: ১৩/২৬৭)
অতএব, সালাফদের অনুসরণ করা, তাঁদের পথ ও পদ্ধতীকে আঁকড়ে ধরা সফলতার সোপান। তাই, আমাদের উচিত সালাফদের কিতবাদি, তাঁদের বাণী সংকলন মনোযোগ সহকারে পড়া। সালাফদের বাণী সংকলন নিয়ে বাংলা ভাষায় প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা তেমন বেশি নয়।
অন্যদিকে, যে সকল গ্রন্থ এ বিষয়ে রচিত বা অনূদিত হয়েছে, তার মধ্যে এমন বই কমই আছে যা একজন পাঠকের খোরাক পূর্ণ করতে পারে। এ কথাকে অন্য ভাবে এভাবে বলতে পারি যে, জীবনের গুরুত্বপূর্ণ দিকসমূহ নিয়ে রচিত/অনূদিত সালফে সালিহীনের বাণী সংকলনের বইয়ের সংখ্যা খুব বেশি নয়।
কোন বই এমন আছে, যাতে এলোমেলো বা বিষয় বিন্যস্ততা ছাড়াই বাণীগুলো সংকলন করা হয়েছে। কোন বই বিষয় বিন্যস্ত হলেও তা সালাফদের একক বাণীতে সমৃদ্ধ হয়েছে। কিংবা বিষয়ের পর্যাপ্ততা রক্ষা করা সম্ভব হয়নি। তবে বিষয় বিন্যস্ততা, সালাফদের বাণীর প্রাচুর্যতা নিয়ে আমাদের সামনে হাজির হয়েছে—সমম্প্রতি প্রকাশিত যেমন ছিলেন তাঁরা বইটি।
যেমন ছিলেন তারা সম্পর্কে দুটি কথা:
এ বইটির অন্যতম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এটি জীবনের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দিক নিয়ে রচিত ও বাংলা ভাষায় অনূদিত সালাফদের বাণী সংকলন। এ দিক থেকে এটি অনন্য। এখানে আলোচিত উল্লেখযোগ্য কয়েকটি বিষয় হলো—
০১. ইবাদত।
০২.তাকওয়া।
০৩.বিনয়।
০৪.সাহায্য ও ধৈর্যধারণ।
০৫.হৃদয়ের স্বচ্ছতা।
০৬.আল্লাহর ওলী।
০৭.কীভাবে আমাদের অন্তরে আল্লাহর বড়ত্ব স্থাপন করবো?
০৮.যুহদ।
০৯.জিহাদ।
১০.আল্লাহর সাক্ষাতের জন্য প্রস্তুতি। এছাড়াও আরো অনেক বিষয়ে সমৃদ্ধ এ কিতাবটি।
.
যেমন ছিলেন তারা এর লেখক সম্পর্কে:
আরব বিশ্বের প্রখ্যাত এ দাঈ সবার কাছে খালিদ আল-হুসাইনান নামেই সমধিক পরিচিত। অত্যন্ত বিনয়ী এ আলেমে দ্বীন তাঁর কথার মাধুর্যতায় যে কোন শ্রোতারই মুখে তৃপ্তির হাসি ফোটাতে পারতেন। শিক্ষা সমাপনের পরে তিনি প্রথমত কুয়েতের একটি সামরিক সরকারি মসজিদের ইমাম ও খতীব হিসেবে নিয়োগ প্রাপ্ত হন।
তাঁর দাওয়াত ও জিহাদের হৃদয়ছোঁয়া বয়ানে রীতিমতো ঝড় উঠতো। সামরিক মহলে তাঁর জনপ্রিয়তা ক্রমান্বয়ে বাড়ছিল, তাই ইসলামি চিন্তাধারার প্রভাব থেকে সেনাবাহিনীকে মুক্ত রাখতে এক সময় সরকার তাঁকে সরিয়ে দেয় সেখান থেকে । পাঠিয়ে দেয় কুয়েতের প্রত্যন্ত এক অঞ্চলে। কিন্তু এতেই তিনি দমে যাননি।… [লেখক সম্পর্কে আরো দেখুন যেমন ছিলেন তাঁরা-র সপ্তম পৃষ্ঠায়]
যেমন ছিলেন তারা থেকে
– হাসান বসরী রহ: ‘‘সর্বোত্তম ইবাদত হলো—গভীর রাতের নামাজ। এটা বান্দার জন্য আল্লাহর নৈকট্য লাভের নিকটতম পথ।…’’
– ইয়াহইয়া ইবনে মুআজ রহ.: শরীর রোগাক্রান্ত হয় ব্যথা-বেদনার কারণে। হৃদয় রোগাক্রান্ত হয় গুনাহের কারণে। তাই অসুস্থ হলে শরীর যেমন খাবারের স্বাদ পায় না, তেমনিভাবে গুনাহ করলেও হৃদয়ে ইবাদতের স্বাদ পাওয়া যায় না।
– ফুযাইল ইবনে আয়ায রহ. : যখন তুমি রাতের তাহাজ্জুদ ও দিনের রোজা থেকে বঞ্চিত হবে, তখন বুঝে নেবে যে, তুমি বঞ্চিতদের অন্তর্ভূক্ত। তোমার গুনাহই তোমাকে বঞ্চিত করে রেখেছে। তুমি বন্দি! তোমার গুনাহই তোমাকে বন্দি করে রেখেছে।
– আল্লাহ ভীতির একটি নমুনা: আব্দুল্লাহ ইবনে মুবারাক রহ. তাঁর এক সাথী থেকে একটি কলম ধার নেন। পরবর্তীতে সেটি ফিরিয়ে দেয়ার জন্য তিনি মার্ভ থেকে সুদূর শামে আসেন।
– হাসান বসরী রহ. : প্রত্যেক গন্তব্যরই একটি সংক্ষিপ্ত পথ আছে। আর জান্নাতের সংক্ষিপ্ত পথ হলো—জিহাদ।
– এটা ফেতনার যামানা। কেমন ফেতনার যামানা? এটা এমন ফেতনার যামানা, যেখানে মানুষ শয়তানরা জিন শয়তানদের থেকে বড় চক্রান্তকারী হয়ে গেছে। সুতরায় মানুষের জন্য আল্লাহর সাহায্য চাওয়া, বেশি বেশি দুআ করা ও তাঁর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করা আবশ্যক। হাদীসে এসেছে: ‘‘তোমরা প্রকাশ্য ও গোপন ফেতনা থেকে আল্লাহর নিকট সাহায্য প্রার্থনা কর।’’—সহীহ মুসলিম: ২৮৬৭
– কখন আসবে আল্লাহ সাহায্য? :ইমাম ইবনুল কায়্যিম রহ. বলেন, যখনই বান্দা পূর্ণাঙ্গ দাসত্ব করবে, তখনই আল্লাহর পক্ষ থেকে তার ওপর সর্বোচ্চ সাহায্য আসবে।
– সুন্নাহর ওপর আমলই মুক্তি:
ইমাম যুহরী রহ. বলেন, পূর্ববর্তী আলেমগণ বলতেন—সুন্নাহ আঁকড়ে ধরাই মুক্তি।
ইমাম মালেক রহ. বলেন: সুন্নাহ হলো নূহ আ. এর নৌকা। যে তাতে আরোহণ করবে, সে মুক্তি পাবে। আরে যে পেছনে থেকে যাবে, সে ডুবে মরবে।
উল্লিখিত বাণীগুলো এ বইয়ের এক ঝলক মাত্র। কিন্তু এ বইটি তো অগণিত মুক্তার সম্ভার। এ বইটি প্রাণের তৃষ্ণা মেটানোর অন্যতম উপায়।
ইমাম ইবনুল কাইয়্যিম রহ. :
মালিক ইবনে আনাস রহ. কতইনা সুন্দর বলেছেন— এ উম্মাহর উত্তরসূরিগণ তার মাধ্যমেই সংশোধিত হবে যার মাধ্যমে উম্মাহর পূর্বসূরিগণ সংশোধিত হয়েছেন। (ইগাছাতুল লুহফান: ১/৩৭৩)
সালাফের পথেই রয়েছে খালাফের মুক্তি। তাই আসুন সে মুক্তির তরে যেমন ছিলেন তারা -র পাতায় পাতায় মনোনিবেশ করি। আসুন সত্যের পথে আলোকিত মহামানবদের প্রকৃত উত্তরসূরি হই…
যেমন ছিলেন তারা
বি:দ্র: যেমন ছিলেন তারা বইটি free pdf download করিতে চাহিয়া লেখকদের নিরুৎসাহিত করিবেন না
Nafees Omar –
অনেকেই প্রশ্ন করে থাকেন যে কোন বই পড়লে ঈমান বৃদ্ধি পাবে, কোন বই পড়লে অন্তরের বিশুদ্ধতা সম্পর্কে জানা যাবে, নামাজে খুশু খুজু অর্জন করা সহজ হবে, যুহ্দ কি ইত্যাদি ইত্যাদি। এরকম যাবতীয় প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যাবে এই বইটিতে ইন শা আল্লাহ্।
তাকওয়া অর্জনের পূর্বশর্ত হচ্ছে তাযকিয়া। বইটিতে তাযকিয়া সম্পর্কে সালাফে সালেহিনদের ধারণা, তারা কীভাবে কুরআন ও হাদীস মোতাবেক তা পালন করেছেন তার সহজ সরল ব্যাখ্যা করা হয়েছে। এ দুনিয়া ও আখিরাতে মর্যাদা কি, কীসে তা অর্জিত হয়, কীভাবে ধৈর্য্য সহকারে একাগ্রচিত্তে আল্লাহ্ তা’আলার সাহায্য কামনা করা যায়, জিহাদের গুরুত্ব, প্রয়োজনীয়তা এবং মর্যাদা, নফসের নিয়ন্ত্রন সহ অনেক বিষয় বইটিতে স্থান পেয়েছে যা জানা একজন মুসলিমের অবশ্য কর্তব্য।
যারা ঈমান মজবুত করা নিয়ে ভাবেন, অন্তরের মুনাফেকী দূর করা নিয়ে ভাবেন, ইবাদাতে পরিতৃপ্তি লাভ করতে চান, অন্তরকে আল্লাহর সাথে দৃঢ়ভাবে সম্পর্কিত করতে চান তারা অবশ্যই পড়বেন বইটি। পাতায় পাতায় উপলব্ধি করবেন ঈমানের তাড়না যা আপনাকে আখিরাতমুখী হতে সচেষ্ট করবে ইন শা আল্লাহ্।
Samir Saleh –
পাঠ প্রতিক্রিয়া: যেমন ছিলেন তাঁরা
সালফে সালিহীন হলেন রাসূল সা. এর প্রকৃত উত্তরসূরি। তাঁরা ইসলামে উৎসাহিত প্রতিটি গুণকে নিজেদের মাঝে ধারণ করার ক্ষেত্রে ছিলেন প্রচণ্ড আগ্রহী ও অগ্রগামী। তাঁরা ছিলেন নিজেদের মাঝে রাসূলের শিক্ষাকে আঁকড়ে ধারণকারী। তারাই হলেন মুমিনদের মধ্যকার সর্বোাত্তম মুমিন।
সালফে সালেহীন কারা:
সালফে সালেহীন বলতে বোঝায় প্রথম তিন স্বর্ণযুগের স্বর্ণালী মুসলিমদেরকে। আরেকটু সহজ করে বললে, সাহাবায়ে কিরাম, তাবেয়ীন ও তাবে তাবেয়ীন এবং সম্মানিত হেদায়েতপ্রাপ্ত ইমামগণই হলেন সালফে সালেহীন।
(ইমাম ইবনে তাইমিয়া রহ. —দারউ তাআরিদিল আকলি ওয়ান নাকলি: ৭/১৩৪; ইমাম ইবনু রজব রহ. —ফাদলু ইলমিস সালাফি আলা ইলমিল খালাফি: ৬০ এবং প্রমুখ উলামা)
সালফে সালিহীনের অনুসরণের গুরুত্ব:
পবিত্র কুরআন মাজিদে সাহাবীদের অনুসরণকে ওয়াজিব সাব্যস্ত করা হয়েছে। সাহাবাগণ হলেন সালফে সালেহীনের প্রথম ও সবচে উত্তম স্তর। আমাদের উপরে সাহাবা রা. এর পথ নির্দেশকে অনুসরণ আবশ্যক করে দেয়া হয়েছে। তাদের বিরোধীদেরকে কঠিন শাস্তির ধমকী দেয়া হয়েছে। ইরশাদ হচ্ছে:
وَمَنْ يُشَاقِقِ الرَّسُولَ مِنْ بَعْدِ مَا تَبَيَّنَ لَهُ الْهُدَى وَيَتَّبِعْ غَيْرَ سَبِيلِ الْمُؤْمِنِينَ نُوَلِّهِ مَا تَوَلَّى وَنُصْلِهِ جَهَنَّمَ وَسَاءَتْ مَصِيرًا
‘‘আর হিদায়াত প্রকাশ পাওয়ার পর যে রাসূলের বিরুদ্ধাচরণ করে এবং মুমিনদের পথের বিপরীত পথ অনুসরণ করে, আমি তাকে ফেরাব যেদিকে সে ফিরে এবং তাকে প্রবেশ করাব জাহান্নামে। আর আবাস হিসেবে তা খুবই মন্দ।’’ —(সূরা নিসা: ১১৭ ) কোরআন আয়াতসমূহ নাযিল হওয়ার সময় সাহাবা রাদিয়াল্লাহু আনহুমই ছিলেন সে মুমিন শ্রেণি।
অন্যত্র ইরশাদ হচ্ছে:
وَالسَّابِقُونَ الْأَوَّلُونَ مِنَ الْمُهَاجِرِينَ وَالْأَنصَارِ وَالَّذِينَ اتَّبَعُوهُم بِإِحْسَانٍ رَّضِيَ اللَّهُ عَنْهُمْ وَرَضُوا عَنْهُ
‘‘আর মুহাজির ও আনসারদের মধ্যে যারা প্রথম অগ্রগামী এবং যারা তাদের অনুসরণ করেছে, আল্লাহ সে সমস্ত লোকদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন এবং তারাও তাঁর প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছে।’’—সূরা তাওবা: ১০০
যারা তাদের অনুসরণ করেছে-এর ক্ষেত্রে বলা যায়—সাহাবাদের উত্তম অনুসারী হলেন তাবেয়ী, অতঃপর তাবে-তাবেয়ীগণ।
হাদীসে রাসূল সা. এ বর্ণিত হচ্ছে —
خَيْرُ النَّاسِ قَرْنِي ثُمَّ الَّذِينَ يَلُونَهُمْ ثُمَّ الَّذِينَ يَلُونَهُمْ
‘‘সর্বোাত্তম মানুষ হচ্ছে আমার যুগের মানুষ, অতঃপর তাদের পরবর্তী যুগ, তারপর তাদের পরবর্তী যুগ।’’ — (বুখারী ও মুসলিম)
শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহ. বলেন: কোন ব্যক্তির সালাফদের অভিমত উল্লেখ করাতে ত্রুটির কিছু নেই। যদি কেউ সালাফদের সাথে তার বংশধারা সম্পৃক্ত করে, তাতেও দোষের কিছু নেই। কেননা সালাফদের মত ও মাজহাব সত্য ভিন্ন, অন্য কিছু নয়।
—(আল-ফাতাওয়াতে আরো দেখুন: ৫৪৮৪, ১৪৫২৭, ২৩৩৪২, ২৬০৫৬ নং ফতোয়া)
ইবনু হাজার আসকালানী রহ. বলেন: ‘‘সৌভাগ্যবান তো সে—ই, যে সালাফদের পথ ও পদ্ধতীকে আাঁকড়ে ধরে এবং খালাফদের নবউদ্ভাবিত বেদআতকে পরিহার করে। ’’—(ফাতহুল বারী: ১৩/২৬৭)
অতএব, সালাফদের অনুসরণ করা, তাঁদের পথ ও পদ্ধতীকে আঁকড়ে ধরা সফলতার সোপান। তাই, আমাদের উচিত সালাফদের কিতবাদি, তাঁদের বাণী সংকলন মনোযোগ সহকারে পড়া। সালাফদের বাণী সংকলন নিয়ে বাংলা ভাষায় প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা তেমন বেশি নয়।
অন্যদিকে, যে সকল গ্রন্থ এ বিষয়ে রচিত বা অনূদিত হয়েছে, তার মধ্যে এমন বই কমই আছে যা একজন পাঠকের খোরাক পূর্ণ করতে পারে। এ কথাকে অন্য ভাবে এভাবে বলতে পারি যে, জীবনের গুরুত্বপূর্ণ দিকসমূহ নিয়ে রচিত/অনূদিত সালফে সালিহীনের বাণী সংকলনের বইয়ের সংখ্যা খুব বেশি নয়।
কোন বই এমন আছে, যাতে এলোমেলো বা বিষয় বিন্যস্ততা ছাড়াই বাণীগুলো সংকলন করা হয়েছে। কোন বই বিষয় বিন্যস্ত হলেও তা সালাফদের একক বাণীতে সমৃদ্ধ হয়েছে। কিংবা বিষয়ের পর্যাপ্ততা রক্ষা করা সম্ভব হয়নি। তবে বিষয় বিন্যস্ততা, সালাফদের বাণীর প্রাচুর্যতা নিয়ে আমাদের সামনে হাজির হয়েছে—সমম্প্রতি প্রকাশিত যেমন ছিলেন তাঁরা বইটি।
যেমন ছিলেন তাঁরা সম্পর্কে দুটি কথা:
এ বইটির অন্যতম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এটি জীবনের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দিক নিয়ে রচিত ও বাংলা ভাষায় অনূদিত সালাফদের বাণী সংকলন। এ দিক থেকে এটি অনন্য। এখানে আলোচিত উল্লেখযোগ্য কয়েকটি বিষয় হলো—
০১. ইবাদত।
০২.তাকওয়া।
০৩.বিনয়।
০৪.সাহায্য ও ধৈর্যধারণ।
০৫.হৃদয়ের স্বচ্ছতা।
০৬.আল্লাহর ওলী।
০৭.কীভাবে আমাদের অন্তরে আল্লাহর বড়ত্ব স্থাপন করবো?
০৮.যুহদ।
০৯.জিহাদ।
১০.আল্লাহর সাক্ষাতের জন্য প্রস্তুতি। এছাড়াও আরো অনেক বিষয়ে সমৃদ্ধ এ কিতাবটি।
যেমন ছিলেন তাঁরা বইটির লেখক সম্পর্কে:
আরব বিশ্বের প্রখ্যাত এ দাঈ সবার কাছে খালিদ আল-হুসাইনান নামেই সমধিক পরিচিত। অত্যন্ত বিনয়ী এ আলেমে দ্বীন তাঁর কথার মাধুর্যতায় যে কোন শ্রোতারই মুখে তৃপ্তির হাসি ফোটাতে পারতেন। শিক্ষা সমাপনের পরে তিনি প্রথমত কুয়েতের একটি সামরিক সরকারি মসজিদের ইমাম ও খতীব হিসেবে নিয়োগ প্রাপ্ত হন।
তাঁর দাওয়াত ও জিহাদের হৃদয়ছোঁয়া বয়ানে রীতিমতো ঝড় উঠতো। সামরিক মহলে তাঁর জনপ্রিয়তা ক্রমান্বয়ে বাড়ছিল, তাই ইসলামি চিন্তাধারার প্রভাব থেকে সেনাবাহিনীকে মুক্ত রাখতে এক সময় সরকার তাঁকে সরিয়ে দেয় সেখান থেকে । পাঠিয়ে দেয় কুয়েতের প্রত্যন্ত এক অঞ্চলে। কিন্তু এতেই তিনি দমে যাননি।… [লেখক সম্পর্কে আরো দেখুন যেমন ছিলেন তাঁরা-র সপ্তম পৃষ্ঠায়]
যেমন ছিলেন তাঁরা থেকে:
– হাসান বসরী রহ: ‘‘সর্বোত্তম ইবাদত হলো—গভীর রাতের নামাজ। এটা বান্দার জন্য আল্লাহর নৈকট্য লাভের নিকটতম পথ।…’’
– ইয়াহইয়া ইবনে মুআজ রহ.: শরীর রোগাক্রান্ত হয় ব্যথা-বেদনার কারণে। হৃদয় রোগাক্রান্ত হয় গুনাহের কারণে। তাই অসুস্থ হলে শরীর যেমন খাবারের স্বাদ পায় না, তেমনিভাবে গুনাহ করলেও হৃদয়ে ইবাদতের স্বাদ পাওয়া যায় না।
– ফুযাইল ইবনে আয়ায রহ. : যখন তুমি রাতের তাহাজ্জুদ ও দিনের রোজা থেকে বঞ্চিত হবে, তখন বুঝে নেবে যে, তুমি বঞ্চিতদের অন্তর্ভূক্ত। তোমার গুনাহই তোমাকে বঞ্চিত করে রেখেছে। তুমি বন্দি! তোমার গুনাহই তোমাকে বন্দি করে রেখেছে।
– আল্লাহ ভীতির একটি নমুনা: আব্দুল্লাহ ইবনে মুবারাক রহ. তাঁর এক সাথী থেকে একটি কলম ধার নেন। পরবর্তীতে সেটি ফিরিয়ে দেয়ার জন্য তিনি মার্ভ থেকে সুদূর শামে আসেন।
– হাসান বসরী রহ. : প্রত্যেক গন্তব্যরই একটি সংক্ষিপ্ত পথ আছে। আর জান্নাতের সংক্ষিপ্ত পথ হলো—জিহাদ।
– এটা ফেতনার যামানা। কেমন ফেতনার যামানা? এটা এমন ফেতনার যামানা, যেখানে মানুষ শয়তানরা জিন শয়তানদের থেকে বড় চক্রান্তকারী হয়ে গেছে। সুতরায় মানুষের জন্য আল্লাহর সাহায্য চাওয়া, বেশি বেশি দুআ করা ও তাঁর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করা আবশ্যক। হাদীসে এসেছে: ‘‘তোমরা প্রকাশ্য ও গোপন ফেতনা থেকে আল্লাহর নিকট সাহায্য প্রার্থনা কর।’’—সহীহ মুসলিম: ২৮৬৭
– কখন আসবে আল্লাহ সাহায্য? :ইমাম ইবনুল কায়্যিম রহ. বলেন, যখনই বান্দা পূর্ণাঙ্গ দাসত্ব করবে, তখনই আল্লাহর পক্ষ থেকে তার ওপর সর্বোচ্চ সাহায্য আসবে।
– সুন্নাহর ওপর আমলই মুক্তি:
ইমাম যুহরী রহ. বলেন, পূর্ববর্তী আলেমগণ বলতেন—সুন্নাহ আঁকড়ে ধরাই মুক্তি।
ইমাম মালেক রহ. বলেন: সুন্নাহ হলো নূহ আ. এর নৌকা। যে তাতে আরোহণ করবে, সে মুক্তি পাবে। আরে যে পেছনে থেকে যাবে, সে ডুবে মরবে।
উল্লিখিত বাণীগুলো এ বইয়ের এক ঝলক মাত্র। কিন্তু এ বইটি তো অগণিত মুক্তার সম্ভার। এ বইটি প্রাণের তৃষ্ণা মেটানোর অন্যতম উপায়।
ইমাম ইবনুল কাইয়্যিম রহ. :
“
মালিক ইবনে আনাস রহ. কতইনা সুন্দর বলেছেন— এ উম্মাহর উত্তরসূরিগণ তার মাধ্যমেই সংশোধিত হবে যার মাধ্যমে উম্মাহর পূর্বসূরিগণ সংশোধিত হয়েছেন।
’’
(ইগাছাতুল লুহফান: ১/৩৭৩)
সালাফের পথেই রয়েছে খালাফের মুক্তি। তাই আসুন সে মুক্তির তরে যেমন ছিলেন তাঁরা-র পাতায় পাতায় মনোনিবেশ করি। আসুন সত্যের পথে আলোকিত মহামানবদের প্রকৃত উত্তরসূরি হই…