আব্বাসি খিলাফাহ
ইসলামের ইতিহাস নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করতে গেলে প্রায় সময়ই আমাদের যে শব্দ-যুগলের মুখোমুখি হতে হয়, তা হলো ‘ইসলামের স্বর্ণযুগ’। কিন্তু আসলে কোন সময়টাকে ইসলামের স্বর্ণযুগ বলা হয়? আর কেনই-বা এমনটা বলা হয়ে থাকে? এটা নিয়ে বিতর্ক হতে পারে। কিন্তু যেটা সিদ্ধ বিষয় তা হলো, আব্বাসি খিলাফাহ এই স্বর্ণযুগেরই অংশ। এ সময়ে বরেণ্য মুসলিম শাসক, কবি-সাহিত্যিক, বিজ্ঞানী, প্রকৌশলী, পণ্ডিত, চিত্রকর, দার্শনিক, ভূতত্ত্ববিদ, বণিক ও পর্যটকদের ভূমিকা উল্লেখযোগ্য। তারা নিজ নিজ ক্ষেত্রে অসাধারণ পাণ্ডিত্য প্রদর্শন করে মানবজাতির শিল্প-সংস্কৃতি, ব্যবসা-বাণিজ্য, অর্থনীতি, আইনশাস্ত্র, সাহিত্য, দর্শন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ইতিহাসে নিজেদের নাম অমর করে রেখে গেছেন। সেই সাথে স্থায়ী করে গেছেন ইসলামি শাসনব্যবস্থার সুনামও।
তখনকার সময়ে জ্ঞান ও বিজ্ঞানচর্চার এক কেন্দ্রেই পরিণত হয়েছিলো আজকের ধুঁকতে থাকা মুসলিমসমাজ। বাগদাদে তখন প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিলো House of Wisdom, যেখানে বিশ্বের নানা প্রান্তের মুসলিম-অমুসলিম পণ্ডিতেরা এসে জড়ো হতেন। একদিকে তারা যেমন জ্ঞানের বিনিময়ের মাধ্যমে জ্ঞানের বিভিন্ন শাখাকে সমৃদ্ধ করতেন, তেমনি প্রাচীন বিভিন্ন শাখার জ্ঞানকে অনুবাদের মাধ্যমে চিরস্থায়ী সংরক্ষণের ব্যবস্থাও করতেন। তাদের এ অনুবাদ করার কাজটি যে আসলে কতটা গুরুত্বপূর্ণ ছিলো তা বলে বোঝানো সম্ভব নয়। কারণ কেবল সেই পণ্ডিতদের হাড়ভাঙা পরিশ্রমের জন্যই মানবজাতি অতীতের জ্ঞান-বিজ্ঞানের অনেক কিছুই জানতে পেরেছে।
এই খিলাফাহর ইতিহাস রচনা ও ইতিহাসচর্চা সম্পর্কে বিভিন্ন দৃষ্ঠিভঙ্গি থাকতে পারে; কিন্তু তাদের ইতিহাস জানার প্রয়োজন সম্পর্কে কোনো দ্বিমত নেই। কারণ, ইসলামের ইতিহাসপাঠ উম্মাহর চেতনা উন্মেষের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। একটি জাতির ঐতিহ্য ও অতীতের গৌরবময় ইতিহাস ওই জাতিকে বর্তমানের মর্যাদাপূর্ণ কর্মতৎপরতায় উদ্দীপিত করতে পারে। জানা কথা—আমাদের প্রতিদিনের গল্পই আগামীকালের ইতিহাস। এ গল্পে ব্যক্তিক, গোষ্ঠীয়, সামাজিক এবং রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে হয় আমরা অন্যকে নিয়ন্ত্রণ করছি বা অন্যের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হচ্ছি। এ এক নিরন্তর অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই। এ যুদ্ধে যার ইতিহাসজ্ঞান যত বেশি, তার টিকে থাকবার সম্ভাবনাও তত বেশি। কারণ, ইতিহাস সুদূরের অতীতকে বর্তমানের মধ্যে হাজির করে। দূরকে করে নিকট। অজানাকে জানায়। অপরিচিতের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেখিয়ে দেয়। অতীতে কী ছিল, এখন কী হয়েছে, সতর্ক না হলে ভবিষ্যতে কী পরিণতি হতে পারে? ইতিহাস তাই যুগ-যুগান্তরের অনির্বাণ ধ্রুবতারা। তার জ্যোতির্ময় আলোকশিখা অভ্রান্ত পথের দিশারি—সুন্দরতম জীবনের পথিকৃৎ। সুখে-দুঃখে, সুদিনে-দুর্দিনে সে বিশ্বমানবকে পথ দেখাচ্ছে। সে মৃত নয়। ব্যর্থ নয় তার শিক্ষা। মিথ্যা নয় তার চর্চা ও অনুশীলন।
-কাজী আবুল কালাম সিদ্দীক
বি:দ্র: আব্বাসি খিলাফাহ বইটি free pdf download করিতে চাহিয়া লেখকদের নিরুৎসাহিত করিবেন না
Reviews
There are no reviews yet.