বিয়ে : স্বপ্ন থেকে অষ্টপ্রহর
একটি সুস্থ-সুন্দর সমাজের ভিত্তি হলো পরিবার ব্যবস্থা, আর পারিবারিক জীবনের ভিত্তি হলো একটি সুস্থ-সুন্দর দাম্পত্য জীবন। অথচ সেই পবিত্র দাম্পত্য জীবনে যেন আজ ভাঙনের মহামারি লেগেছে। পরিণতিতে সমাজ জীবনে তৈরি হয়েছে ভয়ানক দায়িত্ববোধধহীনতা। এই বিপর্যয় এমন একটি অপসংস্কৃতি ছড়িয়ে দিচ্ছে যা মানুষকে স্বার্থপর ও আত্মকেন্দ্রিক করে তুলছে। এই দুষ্টচক্রটি অনেক পরিবারকে ধ্বংস করছে এবং ভাঙনের এই করুণ সুর ক্রমেই যেন নির্মম হয়ে উঠছে।
এই ছোট্ট বিয়ে : স্বপ্ন থেকে অষ্টপ্রহর বইটি, দাম্পত্য জীবনের গুরুত্বপূর্ণ নানা বিষয় সম্পর্কে আমার জ্ঞান ও উপলব্ধি এবং কীভাবে তাকে সুখী-সমৃদ্ধ করা যায় সেসব বিষয় তুলে ধরার একটি ক্ষুদ্র প্রয়াস। আমি আশা করি, বিয়ে : স্বপ্ন থেকে অষ্টপ্রহর বইটিতে দেওয়া পরামর্শ যারা মানবেন তারা সত্যিই উপকৃত হবেন এবং একটি শান্তিপূর্ণ জীবনযাপনে সক্ষম হবেন।
বিয়ে : স্বপ্ন থেকে অষ্টপ্রহর বইটি মুসলিমদের উদ্দেশ্যে লেখা হলেও অমুসলিমরাও এ থেকে উপকৃত হবেন।
বি:দ্র: বিয়ে : স্বপ্ন থেকে অষ্টপ্রহর বইটি free pdf download করিতে চাহিয়া লেখকদের নিরুৎসাহিত করিবেন না
তানজিনা সুলতানা –
বিয়ে নিয়ে স্বপ্ন, জল্পনাকল্পনা থাকে না এমন মানুষ হয়ত খুবই কম। স্পেশালি বিয়ে নিয়ে মেয়েরাই বেশি ভাবে। একটা সংসার হবে, হাজবেন্ড অনেক কেয়ার করবে, তার না বলা কথা গুলো নিজ থেকে বুঝে নিবে, সব সময় তার পাশে থাকবে, মাঝে মাঝে একটু বেড়াতে নিয়ে যাবে আর রোমান্টিক সে তো হতেই হবে, ফাইনসা হাজবেন্ড হলে চলবে না ব্লা ব্লা ব্লা অনেক কিছু চিন্তা করে। কিন্তু তাদের বিয়ের পর কয়জনেরই বা এইসব স্বপ্ন সত্যি হয়?
যারা সত্যি ই চান যে তাদের এই স্বপ্ন গুলো বাস্তবে রূপ নিক তাদের জন্য “বিয়ে:স্বপ্ন থেকে অষ্টপ্রহর ” এই বইটা আমি বলব ম্যাজিকের মত কাজ করবে। এই বইটিতে দাম্পত্য জীবন সুখী করার সকল টিপসই লেখক তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন। এই বইতে হাজবেন্ডরা স্পেশালি তাদের ওয়াইফের প্রতি কেমন হবে সে বিষয়গুলোই বেশি উপস্থাপন করা হয়েছে। তবে ওয়াইফরাও তাদের হাজবেন্ডের প্রতি কেমন হবে তার যথেষ্ট টিপস রয়েছে।
আমি মনে করি এই বইটা প্রাপ্ত বয়স্ক সবার পড়া উচিত। আর যারা বিয়ে নিয়ে চিন্তা করছেন, বা দাম্পত্য জীবনে আছেন তাদের জন্য তো অসাধারণ এক উপহার বইটি। না পড়লেই মিস। শুধু মিস না অনেক কিছুই মিস।
বইটা পড়া অবস্থায় মনে হয়েছে সাধ্যে থাকলে হয়ত পরিচিত সবাইকে গিফট করতাম। তারপর মনে হলো গিফট করতে না পারি অন্তত কিনে নিতে তো বলতে পারি। আর যেটা খুব বেশি মনে হয়েছে সেটা হচ্ছে বিয়ে নিয়ে যত বই আছে আগে নিজে পড়ব তারপর আল্লাহ্ চাহেন তো আমার যদি কখনো বিয়ের কথাবার্তা ফাইনাল হয় তাকে আগে জিজ্ঞেস করে নিব সে বই গুলা পড়েছে কি না! আর যদি না পড়ে থাকে তাহলে কিনে নিতে বলব অথবা আমি গিফট করে দিব।
আর বইটা যে শুধু মুসলিমদের জন্যই তা কিন্তু নয়, এটা সকল ধর্মের (দাম্পত্য জীবন সুখি করতে চায়) মানুষদের কাজে আসবে বলে আশা করি। সবার জন্যই উপকারী হবে বইটা, ইন-শা-আল্লাহ্।
প্রচ্ছদ নিয়ে বেশি কিছু বলার নাই ! এক কথায় প্রচ্ছদ টা অসাধারণ লেগেছে।
শেষ কথা হলো বিয়ে নিয়ে চিন্তা করছেন এমন কেউ যদি বইটা না পড়েন তাহলে ব্যাপারটা এমন হবে যে – অপারেশন সাকসেসফুল কিন্তু রোগী মারা গিয়েছে।
আল্লাহ্ লেখককে নেক হায়াত দান করুক। তার এই বইয়ের দ্বারা বিয়ে চিন্তক সবাইকে উপকৃত করুক এই কামনাই করি।
আ-মী-ন
Sumaiya Busra –
বিয়ে : স্বপ্ন থেকে অষ্টপ্রহর
দুটি সুস্থ মানসিকতা =একটি সুন্দর দাম্পত্য জীবন = একটি সুস্থ পরিবার= একটি প্রত্যাশিত সমাজ।
ভালোবাসা মূলত সৃষ্টি হয় সম্মান থেকে। আমরা এমন কাউকে ভালোবাসতে পারি না যাকে আমরা সম্মান করিনা। তাই স্বামী-স্ত্রী দুজনেরই পরস্পরের প্রতি গভীর সম্মান বোধ থাকতে হবে। একটি সুন্দর দাম্পত্য জীবনের অন্যতম গোপন চাবিকাঠি হলো- সুন্দরতম স্মৃতিগুলো মনে রাখা, আর মন্দ বিষয় গুলো ভুলে যাওয়া।
জীবনসঙ্গীকেকে সময় দেয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। তাকে গুরত্ব না দিয়ে অন্য কারো সাথে বা কিছুতে অকারনে সময় নষ্ট করা মটেই উচিৎ নয়। এমন কিছু বিষয় তৈরি করে নেয়া যা উভয়েরই পছন্দের। একে অন্যের কাজের মধ্যে আনন্দ পাওয়ার বিষয়টা শিখে নেয়া উচিৎ। সবধরনের ভালো কাজে পারস্পরিক সহযোগীতা প্রয়োজন। কনো বিষয় পছন্দ না হলে প্রতিক্রিয়া জানানো যেতে পারে, তবে তা অবশ্যই হতে হবে একান্তে, আগ্রহ ও যত্নের সাথে। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে কনো প্রতিরক্ষা প্রাচীর গড়ে তোলা ঠিক নয়। এ সম্পর্কের ভিত্তি হওয়া উচিৎ পরস্পরের প্রতি গভীর আস্থা ও বিশ্বাস। আবেগ অনুভূতির বিষয়ে একে অন্যের প্রতি বেশেষ যত্নবান হওয়া আবশ্যক।
বিয়ের জন্য প্রয়োজনীয় কিছু কথাঃ
বিয়ের জন্যে যে ৬টি বিষয় খুব দরকার সেগুলো হচ্ছেঃ
১। ইসলামঃ
প্রথমেই দেখতে হবে, সম্ভব্য জীবনসঙ্গী ইসলামের নূন্যতম মৌলিক বিধিবিধান গুলো পালন করে কিনা। এটা যাচাই করার জন্যে কয়েকটি বিষয় লক্ষ করা যেতে পারেঃ
*দ্বীনঃ সালাত, সাওম, যাকাতের ব্যাপারে সচেতন কিনা। শুদ্ধভাবে (অর্থাৎ তাজউইদ সহকারে) ক্বুর’আন তিলোয়াত পারেন কিনা। লেখকের মতে, যারা পরিনিত বয়সে উপনিত হয়েছে অথচ, শুদ্ধ তিলয়াত জানেন না, এটা তাদের জন্যে খুবই লজ্জাজনক!
*চরিত্রঃ
সাহস, ধৈর্য, আত্নবিশ্বাস, ধীরস্থির স্বভাব, পুরুষের পৌরুষদীপ্ততা, নারীদের লজ্জাশীলতা, বিনয়, যে কনো পরিস্থিতিতে মাথা ঠান্ডা রাখতে পারা, শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান, নীরবতায় স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করা, বাচাল প্রকৃতির না হওয়া ইত্যাদি।
*চেহারাঃ
মেয়েদের ক্ষেত্রে পরিপূর্ণ পর্দা আর ছেলেদের ক্ষেত্রে দাড়ি। আর চেহারার বিষয়টি যদি আপনার কাছে খুব বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে থাকে, তাহলে তাদের বাবা ও মায়ের দেহের গঠন দেখে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। কারন, এই চেহারাটিই আপনি প্রতিদিন সকালে দেখবেন, কেননা বেশিরভাগ ছেলে বাবার মতন এবং মেয়ে মায়ের মতন চেহারা পায় বুড়ো বয়সে।
সতর্কতাঃ
কনো মানুষ যদি আল্লাহকেই গুরুত্ব না দেয়, তাহলে এক সময় সে আপনাকেও পাত্তা দিবে না। জীবনের যে কনো মুহূর্তে আল্লাহ ভীতিই আপনার সমস্যা সমাধানে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখতে পারে; বরং বলা যেতে পারে, আল্লাহভীতি না থাকাটাই বিপদ এবং সবচেয়ে ভয়াবহ বিপদ। কেননা যে কনো মিমাংসায় আপনার শেষ আশ্রয় হলো ক্বুর’আন এবং সুন্নাহ। অতএব আপনার জীবনসঙ্গী যদি এর প্রতি গুরুত্ব না দেয় তাহলে আপনি নির্ঘাত এক অকূল পাথারে পড়বেন। কয়েকমাস বাদেই তাদের রূপলাবন্য বা স্মার্টনেসের আকর্ষণ হারিয়ে যেতে শুরু করবে। এই মানুষটিই আপনার সন্তানদের প্রতিপানলন করবে, আর এই সন্তানেরাই আপনার জান্নাত বা জাহান্নামের কারন হবে। সুতরাং আপনি যদি এমন কাউকে খুজে বের করে থাকেন- যে তার দ্বীনদারির ব্যাপারে সচেতন নয়, তাহলে সে দেখতে যতই দারুন হোক না কেন, আপনি ডুবেছেন! ফিরে আসুন, এক্ষুনি! এটা খুবই ভয়ানক একটা ব্যাপার। আর এই লিখাটাও পড়া বন্ধ করুন, কেননা কারো দ্বীনদারিই যদি ঠিক না থাকে তবে এই লিখাটা পড়ে সময় নষ্ট করা হবে অর্থহীন। (লেখকের কথা)
২। প্রেমে পড়ার কথা ভূলে যানঃ
পড়ে যাওয়া কখনোই ভালো বিষয় নয়। আপনি যেহেতু চান আপনার বিয়েটা দীর্ঘস্থায়ী হোক, সেহেতু সম্মানবোধকে বেশি গুরুত্ব দিন। “পড়ে যাওয়া” নয়, বরং বেছে নিন “তৈরি হওয়া”।
সত্যিকার ভালোবাসা তৈরি হয় সম্মান, শ্রদ্ধা ও মর্যাদা থেকে। এমন ভালোবাসার কারনেই আপনার জীবনসঙ্গী আপনাকে ও আপনার সম্মান রক্ষার্থে সবসময় সচেষ্ট থাকবে, জনসমক্ষে আপনাকে কখনো ছোট করবেনা, আপনার ভূলগুলোকে আড়াল করে রাখবে। দাম্পত্যজীবনে আপনার ভালো অবদান গুলোই তুলে ধরবে। এই ভালোবাসার কারনেই জীবন চলার পথে তৈরি হওয়া কনো সমস্যার কারনে সে আপনাকে অভিযুক্ত করবেনা; বরং সমস্যা সমাধানে আন্তরিকতার সাথে আপনার পাশে থাকবে। রাতে সালাতে দাঁড়িয়ে আপনার জন্যে আল্লাহর সাহায্য চেয়ে কান্নাকাটি করবে। যতদিন বেচে থাকবে সে আপনাকে ছেড়ে যাবে না। এমনকি আপনি দুনিয়া ছেড়ে চলে গেলেও আপনার মাগফিরাতের জন্যে সে আল্লাহর কাছে দু’আ করবে।
৩। আচার-আচরনঃ
দ্বীনদারি ভালো হলে আচার-আচরন এমনিতেই ভালো হবে। কিন্তু দ্বীন পালনের দিক থেকে ভালো হওয়া সত্ত্বেও সবার আচার-ব্যাবহার ভালো নাও হতে পারে। তার দ্বীনদারি যদি ভালো হয়, তাহলে খেয়াল রাখুন সে পরিবারের সদস্য এবং অন্যদের (ওয়েটার, ড্রাইভার) সাথে কেমন আচরন করে। সে কি অন্যদের সুবিধা অসুবিধার প্রতি সচেতন? দয়াশীল? সহানুভূতিশীল? অন্যদের কি সে সম্মান করে?
সহমর্মিতা, সহানুভূতি, মায়ামমতা, রসবোধ এখন সোনার মতই দামি। এই গুনগুলোই আপনার সংসারকে পৃথিবীর বুকে এক টুকরো জান্নাতে পরিণত করবে। ইন শা আল্লাহ।
৪। কথোপকথনঃ
তার জ্ঞানের ব্যাপারে জানুন। দৃষ্টিভঙ্গির গভীরতা, গঠনমূলক চিন্তাভাবনা। জিজ্ঞাসা করুন, সে কি ধরনের বই পড়ে, আর কোন কোন বই আর লেখক তার পছন্দের। দেখুন সে কি সমালোচনা করতে বেশি পছন্দ করে নাকি ভূলত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখতে আগ্রহী? শুধু সমস্যা নিয়ে কথা বলে নাকি তার সমাধান নিয়ে আলোচনা করে? পার্থিব বিষয় নিয়ে বেশি আলাপ করে নাকি আখিরাত? যখন ধর্ম নিয়ে কথা বলে তখন কি সে অন্যের দোষ ধরতেই বেশি ব্যাস্ত থাকে, না নিজের সীমাবদ্ধতা ও পরিবর্তনের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে আলাপ করে? সে কি নিদৃষ্ট কনো দলের অন্ধ অনুসারী? অন্যদের সাথে মতানৈক্য বিষয়গুলো নিয়ে বেশি ভাবে, নাকি সারাক্ষন মতবিরোধ নিয়ে হৈচৈ করে বেড়ায়? ঐক্যের চিন্তা করে নাকি বিভক্তির দিকে বেশি ঝুকে?
সতর্কতাঃ স্বামী-স্ত্রীর পারস্পরিক কথোপকথন একটি সুস্থ দাম্পত্যের জীবনীশক্তির মতন। জীবনসঙ্গী হিসেবে বেছে নিন এমন একজনকে, যে হবে আপনার কথা বলার সঙ্গী, যার সাথে আপনি আপনার সুখ-দুঃখ অকপটে শেয়ার করতে পারেন। যার সাথে আপনার পছন্দগুলো নিয়ে আলাপ করতে পারবেন। যে আপনার অনুভূতি গুলোকে শ্রদ্ধার সাথে শুনবে; যার কাছ থেকে আপনিও কিছু শিখতে পারবেন। যার সাথে মন খুলে কথা বলা যায় না, তার সাথে কখনো একত্রে বেশিদূর এগোনো যায় না।
৫। দুজনের জীবনের কিছু অভিন্ন লক্ষ নির্ধারণ করাঃ
এমন কিছু খুঁজে বের করুন, যা আপনারা উভয়ে পছন্দ করেন। যেহেতু আপনারা লম্বা একটি সময় একই সঙ্গে পাড়ি দিতে চাচ্ছেন তাই জীবনের লক্ষ ও উদ্দেশ্য গুলো একই রকম থাকা ভালো। নতুবা পুরো জীবন জুড়েই আপনাকে একাকী থাকতে হবে অথবা, লড়াই করে যেতে হবে।
তাই এমন কাউকে বেছি নিন, যে আপনাকে বুদ্ধি দিবে। আপনার লক্ষকে গুরুত্বহীন বলে হেলাফেলা করবেনা। আপনার প্রয়োজন এমন একজনকে আপনার সময়, শ্রম, আবেগ এবং চিন্তাকে কাজে লাগাতে উৎসাহীত করবে। দীর্ঘকালীন পরিকল্পনা গুলোকে গুরুত্ব সহকারে নেয়ার মাঝেই লুকিয়ে আছে সুখী দাম্পত্য জীবনের গোপন রহস্য।
৬। পরিবারঃ
সম্ভাব্য জীবনসঙ্গীর দিকে খেয়াল রাখুন। তাদের আকীদা-বিশ্বাস, ধর্মীয় প্রথা, সংস্কৃতি, অভ্যাস, জীবনযাত্রা, আচার-ব্যাবহার, রীতিনীতি প্রত্যেকটিই গুরুত্বপূর্ণ। কিছু বিষয়ের সাথে একদম আপোষ চলে না, যেমনঃ মাজার বা দর্গা পুজারী।
একদম মনের মতো হতে হবে এমন নয়, তবে অমিল কতখানি তা খেয়াল রাখতে হবে। মনে রাখবেন পরিবর্তন সাধন সবসময়ই কষ্টকর; তাই ভিন্যতা যত কম হবে বৈবাহিক জীবনে আপনার সুখী হওয়ার সম্ভাবনা ততো বেশি হবে।
কিছু সাবধান বানীঃ
যেসব দুঃসাহসী মানুষ মনে করেন তারা অন্যদের বদলে ফেলতে পারেন, তারা মনে রাখবেন, হিদায়াহ্ একমাত্র আল্লাহর হাতে। এমন কাউকে খুজে বের করুন যাকে দেখে আপনি মুগ্ধ হবেন; আপনিও তার মত একজন হতে চাইবেন।
ইন্টারনেটে কারো প্রফাইল দেখে বিয়ে করাকে তুলনা করা যায় ‘রাশিয়ান বুলেট’ নামের জুয়া খেলার সাথে- যে খেলায় পিস্তলের ৬টি চেম্বারের যে কনো একটাতে বুলেট থাকে। সবার প্রতি আমার আন্তরিক পরামর্শ থাকবে, এমন প্রাণঘাতী জুয়া খেলা যেন এড়িয়ে চলা হয়। অনেককে ধ্বংস হতে দেখেছি আমি (লেখক)।
এতক্ষন যা উল্যেখ করা হয়েছে, তা একটি বা দুটি সাক্ষাতেই জেনে নেয়া সম্ভব যদি চোখ-কান খোলা রাখে এবং জানেন যে আপনি ঠিক কি খুঁজছেন।
আমরা এ বিষয় গুলো যেন ভূলে না যাই। উপরে যা বলা হয়েছে নিজেকে খেয়াল রেখে জিজ্ঞেস করুন, ‘অন্যের মধ্যে যে জিনিস গুলো খুঁজছি, আমার মধ্যে সেগুলো কতটুকু আছে? আমি নিজে কতগুলো শর্তপূরন করতে পেরেছি? যাকে বিয়ে করতে যাচ্ছি আমি কি তার একজন ভালো জীবনসঙ্গী হতে পারবো?’
বিবাহিত জীবনকে সুখি করার উপায়ঃ
*সত্য বলা, যত্ন নেয়া, পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ- এই তিনটি জিনিসকে লেখক সুখী দাম্পত্য জীবনের মূলমন্ত্র হিসেবে গন্য করেছেন।
* ক্ষমাশীল হওয়া। এমন কাউকে বিয়ে করুন যাকে অনুকরণ করতে ইচ্ছে হয়; যাকে শ্রদ্ধা করা যায় এবং যার থেকে ক্ষমা করা শেখা যায়।
*দাম্পত্য জীবনকে সফল করার অন্যতম হাতিয়ার হচ্ছে “কাজ করা”। মন থেকে ইচ্ছে না করলেও, কিংবা নিজের পছন্দ না হলেও “ওর” কথা ভেবে কিছু করাটাই হলো কাজ। এর বিনিময় আপনার জন্যে এনে দিবে একরাশ ভালোবাসা আর আকাশছোঁয়া সম্মান। আপনার স্বামী বা স্ত্রী আপনাকে সময় না দিলে অভিযোগ করবেন না। কারন,
_প্রথমত এক্ষেত্রে অভিযোগ করাটা দুঃখজনক এবং অবমাননাকর।
_দ্বিতীয়ত, আমার (লেখক) একটা নিয়ম হচ্ছে কেউ যদি ভালোবেসে কনো কাজ না করে, তাহলে নিছক কর্তব্য পালনের জন্যে কাউকে কিছু করতে না বলা।
_তৃতীয়ত, সে অন্য কারো সঙ্গ খুঁজছে কিনা, এটা আপনার জন্য একটা সতর্ক বার্তা। মানুষ সব সময় আনন্দের বিষয় গুলোকেই খোঁজে। সুতরাং আপনার সঙ্গ যদি আনন্দের চাইতে বেশি যন্ত্রণাদায়ক হয়, স্বাভাবিকভাবেই সে অন্য কোথাও তা খুজে পাতে চাইবে।
*অনুরাগ প্রকাশে কিছু পাগলামো করুন। জীবন সঙ্গীকে ফুল অথবা পছন্দনীয় কিছু উপহার দিন। দামি কিছু হতে হবে এমন নয় বা ঘটা করে কিছু করতে যাবেন না। বরং তাকে এমন সময় এমন কিছু দিন যা সে আশা করেনি। উপহারটি আপনার জীবনসঙ্গীর বিশেষত্ব প্রকাশ করে বলবে “তুমি আমার বিশেষ একজন”। ঘটনাটিকে স্মরণীয়, বৈশিষ্ট্যপপূর্ন ও সৃজনশীল করে তুলুন।
*হাসির কিছু পেলে অন্যজনকে জানান, যেন সে-ও আনন্দ পায়। এই আনন্দ ভাগাভাগির মাঝেই এক ধরনের নির্মল আনন্দ রয়েছে।
*কিছু প্রশ্নের উত্তর মিলিয়ে দেখা। আপনিকি সত্যবাদি? জীবন সঙ্গীর প্রয়োজনকে আপনার প্রয়োজন হিসেবে দেখছেন তো? আপনি তার জন্যে অন্তরে যে সম্মান বোধ করেন, তা প্রকাশ করছেন তো? ছোট ছোট কিছু কাজ, সম্পর্ককে গভীর থেকে গভীরতর করে। খাবার পরিবেশন করা, পছন্দের টুকরোটা তুলে দেয়া, মুখে লোকমা তুলে দেয়া…ইত্যাদি।
*দাম্পত্য জীবনে মা বাবা এবং শ্বশুরালায়ের লোকদের কতটুকু জড়ানো উচিৎ? একটুকুও না। কারন, এটা সংসারে ঝামেলা ডেকে আনার অন্যতম কারন। দাম্পত্য জীবনে মা বাবার উৎসাহ দেখতে পেলে, তাদের নিরুৎসাহিত করুন। বিয়ে করার যথেষ্ট বয়স যখন আপনাদের হয়েছে, সমস্যা সমাধানেরও বয়স হয়েছে।
আপনার মা যদি আপনাকে বলে, যখন সে এটা বলেছিল তখন তুমি কি বলেছিলে? তখন মাকে বলুন- “সরি মা ও আমাকে কি বলেছে সেটা তোমাকে বলতে পারবোনা”। কথাটি হাসি মুখে এবং স্পস্ট করে বলুন। আপনাদের সমস্যা আপনারা দুজনে মিলে সমাধান করুন। এটা বলা হচ্ছে না যে, আপনার বাবা মাকে অবহেলা করবেন। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো প্রত্যেককে যার যার অবস্থানে রেখে সম্পর্ক রক্ষা করে চলতে হবে।
একইভাবে যখন সন্তান হবে তখন এ বিষয়টি নিয়ে ভাবতে হবে। কেউ সন্তানের পেছনে এতই সময় দেয় যে নিজেরাই নিজেদের কাছে অচেনা হয়ে পড়ে। এতে করে একে অপরের দূরত্ব তৈরি হয়।
বিয়ের পরে এমন নানারকম সম্পর্কের প্রত্যেকটিকে যথাস্থানে রেখে সামাল দিয়ে চলতে পারাটাই মানসিক পরিপক্ষতা।
*অতিভদ্র যেসব ‘অনুগত’ সন্তান সিনেমার ডায়লগের মতো বাবা-মাকে বলে, তোমরা যাকে পছন্দ কর তাকেই বিয়ে করবো; এদেরকে আবার নার্সারিতে পড়ানোর জন্য ফেরত পাঠানো উচিৎ। কারন জীবনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের ব্যাপারে ভেবে চিনতে সিদ্ধান্ত নেয়ার মতো পরিপক্কতা এখনো তাদের আসেনি। এমন আনুগত্য সবসময় ভালো ফল বয়ে আনে না। হয়ত একসময় দেখবেন, আপনার এই আনুগত্য সন্তানই একদিন ‘তালাকনামা’ নিয়ে হাজির হয়ে বলবে, তাদের এই ধ্বংসের জন্যে আপনারাই দায়ী।
* বিয়ের পূর্বেই জেনে বুঝে নেয়া নিজেদের প্রকৃতিগত অবস্থা সম্পর্কে। অনেকেই পূর্বে এগুলো লুকিয়ে রাখে, যেটা পরবর্তীতে মারাত্মক সমস্যার কারন হয়ে দাঁড়ায়। দুর্ভাগ্যবশত এসব সম্পর্ক খুব বেশিদিন স্থায়ী হয় না।
*যখন দাম্পত্য জীবনে আনন্দের চেয়ে যন্ত্রনা বেশি হবে, তখন বুঝতে হবে বৈবাহিক জীবন সফল হচ্ছে না। তখন নিজেকে অবশ্যই এই প্রশ্নগুলো করুন-
১। আমি কি এটা সফল করতে চাই?
২। একে সফল করতে কি কি প্রয়োজন?
৩। আমি কি সেই প্রয়োজনীয় কাজ গুলো করতে আগ্রহী?
আপনি যদি সত্যিই সফল হতে চান তবে, সমস্যা গুলো খুজে বের করুন এবং তা নিরসনের বিষয়ে সচেতন হন।
*সব সময় সঠিক হওয়ার চেয়ে বিনয়ী হওয়াটা বেশি ভালো। কৌশল অবলম্বন ও বিচক্ষণতা এমন দুটি মহৎ গুন যেগুলো দাম্পত্য জীবনে সবচেয়ে বেশি কাজে লাগে। শুধু মানুষের ভূলত্রুটি খুজে বেড়ানো মটেই বিচক্ষনতার লক্ষন নয়। মার্জনার সাথে এড়িয়ে চলুন, ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখুন। এমন কনো পরিস্থিতি সৃষ্টি করবেন না যাতে আপনার জীবনসঙ্গী আপনার আচরনের দাঁত ভাঙা জবাব দেয়ার জন্যে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে।
* কিছু সংখ্যক, যারা সঙ্গীকে নিয়ন্ত্রনের জন্যে ধর্মকে অস্ত্র হিসেবে ব্যাবহার করেন। তারা নিজেদের ইচ্ছা ও কামনা বাসনার সামনে সঙ্গীর মাথা নোয়ানোর জন্য ধর্মীয় বিধানের দোহাই পাড়ে, এবং সঙ্গীকে জাহান্নাম ও শাস্তির ভয় দেখায়। এটা বেশি দেখা যায় পুরুষের ক্ষেত্রে। বিশেষ করে যারা জীবনে তেমন কিছুই করতে পারে না, হীনমন্যতায় ভোগেন।
‘উচিৎ’ হচ্ছে ভাষার মধ্যে সবচেয়ে অকেজো শব্দ। সবাই যদি নিজেদের উচিৎ কাজগুলো করতো, তাহলে পৃথিবী অন্যরকম হতো। এই ধরনের ধর্মানুশীলতার নামে ধর্মের অপব্যাবহারের সাথে সৃষ্টিকর্তার কনোই সম্পর্ক নেই।
*দাম্পত্য জীবনের সমস্যা নিয়ে কারো সাথে পরামর্শ করলে কি সেটা কাজে দিবে?
>>দুজনেই যাকে শ্রদ্ধা করেন এবং দুজনেই যার কথা শুনতে এবং তার ফয়সালা মেনে নিতে ইচ্ছুক এমন কারো সাথে আলাপ-আলোচনা করতে পারেন। শুধু পরামর্শ করা উদ্দেশ্য হলে তা অপরিচিত সত্যনিষ্ঠ কারো সাথে করাই ভালো। কেননা, না চেনার কারনে অপেক্ষাকৃত বেশি নিরপেক্ষ হবেন।
*সংসার সুখী করতে টাকা পয়সা কতটা গুরুত্বপূর্ণ?
একেবারেই গুরুত্বপূর্ণ নয়। স্বচ্ছলতা কিংবা অস্বচ্ছলতা উভয়টিই সাংসারিক বন্ধন দৃঢ় হওয়া কিংবা ভাঙার কারন হতে পারে। মূলত পারস্পরিক সম্মান এবং সচেতনতাই আসল জিনিস। আর এগুলো হচ্ছে চরিত্র, ধর্মানুরাগ, শিক্ষা চালচলন ও আচরনের মহত্ব, আত্নবিশ্বাস, আস্থাশীলতা, সম্মান, মমতা, পরস্পরকে খুশি করার অকৃত্রিম ইচ্ছা এবং নিজের উপর অন্যকে প্রাধান্য দেয়ার মহৎ গুনের ফল। এসব গুন কনো টাকা পয়সা দিয়ে কেনা যায় না বা এগুলো অর্জনের জন্যে আমাদের টাকার প্রয়োজনও নেই।
তবে সর্বমোট কথা এটাই, আপনার দাম্পত্য জীবন আপনি যেমন চাইবেন তেমনই হবে। মানুষের জীবনে সব ধরনের স্মৃতি থাকে। আপনি ভালোটা ধরে রেখে সুখী হতে চান, নাকি খারাপটা মনে রেখে দুঃখ পেতে চান সেটা সম্পূই আপনার ব্যক্তিগত ব্যাপার।
সব শেষে মনে রাখুন, সবকিছুর শুরু আর শেষ আল্লাহর সন্তুষ্টির সাথে। দাম্পত্য জীবনে এমন কিছু ব্যাপার থেকেই যাবে যা বাহ্যত স্বামী-স্ত্রী যে কনো ইচ্ছের বিরুদ্ধে যায়। এগুলো মেনে নিয়েই জীবন যাপন করতে হবে। কাজেই এমন ভাবে বৈবাহিক সম্পর্ক গড়ে তুলুন যাতে আল্লাহর সন্তুষ্টি থাকে। যে কনো ভালো কাজে একে অপরকে সহযোগীতা করুন। একসঙ্গে সালাত আদায় করুন, তাহাজ্জুদে জাগিয়ে তুলুন, একে অন্যের ক্বুর’আর তিলোয়াত শুনুন, কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করুন, খারাপ স্মৃতি গুলো ভূলে যান, সুখ-দুঃখ গুলো ভাগাভাগি করে নিয়ে একে অপরকে সাপর্ট করুন।
মহান আল্লাহর নিকট প্রতিটি দাম্পতির মঙ্গল প্রার্থনা করছি। যেদিন আমরা সবাই আল্লাহর সামনে দাঁড়াবো, সেদিন যেন তিনি আমাদের সবার প্রতি সন্তুষ্ট হন।
আমীন। আমীন ইয়া রব্বি।