আরজ আলী সমীপে
আরজ আলী সমীপে আমাদের কারো মাঝে হয়তো একটি বদ্ধমূল ধারণা আছে তা হলো, আমরা মনে করি যারা নাস্তিকবাদের প্রতি ঝুকে পড়ছে তারা মনে হয় সবাই বিজ্ঞানের ঝলক(!) দেখে। আমার মনে হয় ব্যাপারটা এমনটি নয়। আমাদের সমাজের সিংহভাগ ছেলেপুলেরা সরলমনা এবং সমাজে প্রচলিত ইসলামের অনুসারী। বাপদাদা সনদে বর্ণিত বিভিন্ন রেওয়াজ, ঘটনা এবং (জাল) হাদীসকে তারা ইসলামের অংশ মনে করে থাকে। সঠিক ইসলাম সম্পর্কীয় জ্ঞান না থাকায় হক্ব ও বাতিলের পার্থক্যটি তারা বোধ করতে পারে না। তারা যা অধ্যয়ন করে তাই বিশ্বাস করে থাকে। অনেকটা লেখকের প্রতি অন্ধপ্রেমের কারণে। কিন্তু পরিতাপের বিষয় হলো, এদের কাছে প্রচলিত ইসলামের জ্ঞানকেই তারা ইসলামের প্রামাণ্য তথ্য মনে করে থাকে।
উপরিউক্ত প্রকৃতির পাঠকসমাজের এই জ্ঞানের দীনতাকে যুগে যুগে ‘টোপ’ হিসেবে ব্যবহার করে আসছে কিছু মুক্তমনা নামধারী লেখক। যারা তাদের সাহিত্যের মায়াজালে ফেলে এসব যুবকদের বিভ্রান্ত করার অপপ্রয়াস চালিয়ে আসছে দীর্ঘদিন যাবৎ। তাদের অন্যতম “আরজ আলী”।
“আরজ আলী সমীপে” বইটি পড়ার সময় চোখকান ওয়ালা পাঠকসমাজ হাসি সংবরণ করতে পারবেন না বলেই আমার বোধ হয়। এর একমাত্র হেতু হলো, আরজ আলী কর্তৃক দাবীকৃত কিছু কথিত (জাল) ইসলামিক তথ্য। বইটি পড়ার সময় আমি ভাবছিলাম, যে ব্যক্তি নিজেই জানে না তার থেকে পাঠক কি শিখবে! আসল কথা হলো আরজ আলী যে তথ্যাদি দিয়ে তার বিরুদ্ধাচরণ করেছে আসলে তা আদৌ ইসলামের তথ্যই নয়। এ যেন প্রচলিত মিথ্যাচারের মিথ্যাচরণ। আর তারই দাঁতভাঙা জবাব রয়েছে “আরজ আলী সমীপে” বইটিতে।
এযাবৎ কেও ‘আরজ আলীদের’ তেমন ফলপ্রসূ উপায়ে এসব মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর তথ্যের জবাব প্রদান করেননি যে উপায়ে জবাব প্রদান করেছেন ‘আরিফ আজাদ’ ভাই (হাফিজাহুল্লাহ)। সরলমনা যুব সমাজের মনে ধীরেধীরে নাস্তিকবাদের বীজ বপনকারীদের জবাব কিভাবে দিতে হয় তার অতুলনীয় দৃষ্টান্ত হলো “আরজ আলী সমীপে” বইটি। যেখানে লেখক ভদ্রভাষায় ‘আরজ আলীকে’ ধোলাই দিয়েছেন। এবং লেখকের জ্ঞানের দীনতার তীব্রভাবে সমালোচনা করেছেন।
‘আরজ আলীদের’ মতো ভণ্ড, মুর্খ ও জ্ঞানপাপী লেখকদের জবাব দিয়ে শ্রদ্ধেয় ‘আরিফ আজাদ’ ভাই সরলমনা যুবমনে নাস্তিক্যবাদের অঙ্কুরিত বীজ সমূলে উৎপাটন করার জন্য যে প্রয়াস নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন তা যেন সফল হয়। আল্লাহ যেন ভাইয়ের এই প্রয়াসকে কবুল করে নেন। আর জান্নাতে যেন তার সাথে আমাকেও অন্তর্ভুক্ত করে নেন। আমীন ইয়া রাব্বাল আ’লামীন।
শরীফুল ইসলাম (সজীব)
যে কোন ইসলামী বই পেতে ইসলামিক বইঘর.কম এর সাথেই থাকুন
বি:দ্র: আরজ আলী সমীপে বইটি free pdf download করিতে চাহিয়া লেখকদের নিরুৎসাহিত করিবেন না
Muhibbullah bin Atik –
বই: আরজ আলী সমীপে।
‘সত্য সমাগত,মিথ্যা বিতারিত ‘। সত্য-মিথ্যার দ্বন্দ্ব একটি চিরন্তন সত্য। যে দ্বন্দ্ব শুরু হয়েছিলো আদি পিতা আদম(আ:) এবং অভিশপ্ত শয়তানের সাথে জান্নাতী উদ্যানে। ধরা পৃষ্ঠে যার প্রকাশ ঘটেছিলো হাবিল-কাবিলের দ্বন্দ্ব রুপে।
সৃষ্টির শুরুলগ্ন থেকেই দুইটা পথ নির্ধারিত হয়েছে। একটি সত্যের পথ, অন্যটি মিথ্যার পথ। একটি আলোর পথ, অন্যটি অন্ধকারের পথ। একটি বিশ্বাসের পথ, অন্যটি অবিশ্বাসের পথ। একটি পথ কঠিন কণ্টকাকির্ণ, তবে তার শেষে রয়েছে মূক্তি ও শান্তি। অন্যটি খুব সহজ ও চোখ ধাধানো সাজে সজ্জিত, তবে তার শেষে রয়েছে চির অশান্তি ও শাস্তি।
যুগের ব্যাবধানে মিথ্যা ও অন্ধকারের সেই পথ মানুষের সামনে হাজির হয়েছে ভিন্ন ভিন্ন রুপে। কালের বিবর্তনে বিভিন্ন সমাজ, সম্প্রদায়, ও জাতির মাঝে সেই পথের নেতৃত্বও দিয়েছে অনেকে। তবে সব যুগের অবিশ্বাসী সম্প্রদায়ের গন্তব্য ও লক্ষ্য-উদ্দেশ্য অভিন্ন। মানব মনে সংশয়ের বীজ বপন করে একদিন তা বিরাট মহিরুহে পরিনত করা। বিশ্বাসী সম্প্রদায়কে অবিশ্বাসের পথে নিয়ে একটি বস্তুবাদি সমাজ প্রতিষ্ঠা করাই তাদের মূল লক্ষ্য।
আমাদের এই মুসলিম ভূখন্ড ও বিশ্বাসী জনপদেও অনেকে এসেছে আমাদেরকে সেই অন্ধকার ও অবিশ্বাসের পথে ডাকতে। তারা এসেছিলো আমাদের অন্তরে সংশয়ের বীজ রোপন করতে। এদের মাঝে অন্যতম ছিলেন ‘আরজ আলী মাতব্বর ‘ নামের ভদ্রলোক! তিনি অশিক্ষিত হলেও তার লেখাগুলোই আমাদের সমাজের মহা শিক্ষিত(!) কলাবিজ্ঞানী সপ্রদায়ের কাছে নাস্তিকতার বাইবেল হিসেবে বিবেচিত হয়।
আরজ আলী সাহেবরা ধর্মকে, বিশেষ করে ইসলামকে বিজ্ঞানের মাধ্যমে বুঝতে চেয়েছেন। অথচ বিজ্ঞান আর ধর্ম সম্পূর্ণ আলাদা বিষয়। দুইটার বিষয়বস্তুও আলাদা। তবে দুইটা সাংঘর্ষিক নয়। আমাদের সীমাবদ্ধতার কারনে যেমন আমরা প্রকৃতির অনেক কিছুই দেখতে পাই না, তেমনি বিজ্ঞানের সীমাবদ্ধতার কারনেই বিজ্ঞান দিয়ে ধর্মকে বিশ্লেষণ করা সম্ভব না। তিনি বলেন ধর্ম মানেই কিছু অন্ধবিশ্বাসের নাম। অথচ তিনি নিজেই বিজ্ঞানকে এমন অন্ধভাবে বিশ্বাস করতেন যে বিজ্ঞানের চশমা পরে উকি দিয়ে তিনি জান্নাত-জাহান্নাম দেখতে চেয়েছেন! স্রষ্টার সৃষ্ট পদার্থের ধার করা জ্ঞান দিয়ে তিনি স্বয়ং স্রষ্টা কোন পদার্থ দিয়ে তৈরি তার উত্তর জানতে চেয়েছেন! হাবলের টেলিস্কপ দিয়ে তিনি পরকাল আবিষ্কার করতে চেয়েছেন! ওনার অবস্থা তো হাত খাটো মানুষের কলশের তলা হাতিয়ে না পাওয়ার সেই গল্পের মতো!!!
শ্রদ্বেয় লেখক আরিফ আজাদ ভাই তার এই বইয়ে খুব সুন্দর ভাবে আরজ আলী সাহেবের সেই সব শিশু সুলভ প্রশ্নের জাবাব দিয়েছেন।
এই বয়ের অন্য যে আলোচনাটি বেশি ভালো লেগেছে তা হচ্ছে তক্বদীর সংক্রান্ত আলোচনা। যা ‘ ইশ্বর সংক্রান্ত ‘ অধ্যায়ে আলোচনা করা হয়েছে। তাক্বদীর নিয়ে আমাদের অনেকেরই স্পষ্ট কোনো ধারনা নেই। যাদের একটু আধটু জানা আছে তারাও তাক্বদীর সম্পর্কে যে কোনো প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেন না। আবার অনেকে সংশয়ে ভোগেন যে তাক্বদীরে যদি সব আগে থেকেই লেখা থাকে তাহলে আমার পাপ-পূন্যের হিসেব কেন হবে। আমার তাক্বদীরেই যদি পাপ লেখা থাকে তাহলে তার দায়ভার আমার কাধে কেন বর্তাবে? তাক্বদীরের এইসব বিষয় গুলো নিয়ে খুব সুন্দর আলোচনা করা হয়েছে। এটা পড়ার পরে তাক্বদীর সংক্রান্ত অনেক বিষয় আমার কাছে স্পষ্ট হয়ে গেছে।
বিবিধ: আধুনিক বিজ্ঞানের সবথেকে আলোচিত -সমালোচিত বিষয় হচ্ছে বিবর্তনবাদ।এই বইয়ের অন্যতম আলোচ্য বিষয় হয়ে উঠেছে এই বিবর্তনবাদ সংক্রান্ত আলোচবনা যা লেখক বইয়ের শেষের দিকে ‘বিবিধ ‘ শিরোনামের অধ্যায়ে খুব সুন্দর ভাবে প্রাঞ্জল ও স্পষ্ট ভাবে বর্ণনা করেছেন।
বস্তুবাদি সমাজ বিনির্মানে তথা কথিত এই বিবর্তনবাদ হচ্ছে একটি মোক্ষম অস্ত্র। বিবর্তনবাদ হচ্ছে আধুনিক বিজ্ঞানের সব থেকে ভুয়া এবং ভন্ডামিতে ভরা একটি মতবাদ। এর স্বপক্ষে আজ পর্যন্ত কোনো প্রমান পাওয়া যায়নি। তবুও এরকম একটি মিথ্যা মতবাদকে সুপ্রতিষ্ঠিত সত্যের মত টিকিয়ে রাখা হচ্ছে সম্পূর্ণ ভিন্ন কিছু উদ্দেশ্যে। এই মিথ্যা মতবাদ টিকিয়ে রাখার জন্য বিভিন্ন সময় তারা যে কতো গল্প সাজিয়েছে, এবং সারা বিশ্বে সেগুলো প্রচার করেছে তা শুনলেও আপনার গা শিউরে উঠবে। গল্পগুলো পড়লে আপনি একেবারে ‘থ ‘ হয়ে যাবেন। তাদের গল্পগুলো পড়লে মনেই হবে না যে আপনি কোনো বৈজ্ঞানিক থিওরি পড়ছেন, আপনার হয়ত মনে হবে যে ছোটবেলার সেই রুপকথার গল্প বা ঠাকুরমার ঝুলির কোনো গল্প পড়ছেন! তারা তাদের এই মিথ্যা মতবাদকে টিকিয়ে রাখার জন্য যে কত বড় ধোকাবাজী আর ধাপ্পাবাজীর আশ্রয় নিতে পারে তা হয়ত আপ্নি কল্পনাও করতে পারবেন না! এই অধ্যায়ের সেই গল্পগুলো পড়লে আপনার কাছে বিবর্তনবাদের বিষয়গুলো একেবারে স্পষ্ট হয়ে উঠবে ইনশা আল্লাহ….
পরিশেষে বলবো, সুবহে সাদিকের সুভ্র আঁভা যখন চারিদিকে ছড়িয়ে পরে, রাতের নিকষ কালো অন্ধকার তখন ফিঁকে হয়ে আসে। প্রভাত রবির সোনালী কিরন যবে হাসতে শুরু করে, রজনির কালো আঁভাটুকুও তখন দুর হয়ে যায়। ঠিক তেমনি সত্যের সূর্য্য-কিরন পরিস্ফূটিত হয় মিথ্যার গাঢ় অন্ধকারও তখন পালিয়ে যায়। সত্যের রবি যখন আকাশে উঁকি দেয়, মিথ্যার কালো মেঘপূঞ্জগুলো তখন বিলিন হয়ে যায়। বিশ্বাসের পথ নতুন করে উন্মুক্ত হয়।
আশা করি এই বইটিও বিশ্বাসের আকাশে সুর্য কিরন হয়ে মিথ্যার সব অন্ধকার দুর করে দিবে। সুভ্র আলো হয়ে সংশয়ের মেঘপুঞ্জ হটিয়ে দিবে। বিশ্বাসের পথ হবে আরোও সুন্দর ও উদ্ভাসিত। ইনশা আল্লাহ……
সালেহ খান বাবলু –
কিছু সংখ্যক মানুষ আছে যারা অন্ধকারে থাকতে পারে না। হন্যে হয়ে আলো খোঁজে। বিপথে সঠিক পথ তালাশ করে। অজানাকে জানতে চায়। ভ্রান্তির ঘোর থেকে বেরিয়ে আসতে চায়। মিথ্যার মুখোশ উন্মোচন করতে তারা বদ্ধপরিকর। সর্বোপরি সত্যের মশাল হাতে নিয়ে চারদিকে আলো বিলিয়ে দিতে চায়। এটা তাদের জন্মগত বৈশিষ্ট। যদিও যার যার অবস্থান থেকে এটা ভিন্ন রূপ ধারণ করে। আর এইসব বৈশিষ্টকে কেন্দ্র করেই মানুষের শ্রেষ্ঠত্ব। মানুষ বুঝতে পারে কোনটা ভালো, কোনটা মন্দ। কোনটা সত্য, কোনটা মিথ্যা। কোনটা অর্জন করতে হবে এবং কী কী বর্জন করা লাগবে।
এই যে মানুষের এই জ্ঞান, বোধশক্তি, ক্ষমতা ও যোগ্যতা এটা স্রষ্টাপ্রদত্ত।
আরজ আলী।
তেমনি একজন। নাস্তিকপাড়ায় সর্বজনবিদিত ব্যক্তিত্ব। বামপন্থীদের শ্রদ্ধাভাজন। যিনি সত্য খোঁজতেন। সুন্দরের সৌন্দর্য তলব করতেন। সত্যের আলো, সুন্দরের সৌরভ চারপাশে ছড়িয়ে দিতেও প্রতিজ্ঞাবদ্ধ ছিলেন। তাই তিনি সাধুবাদ পাওয়ার যোগ্য।
এরই নিমিত্তে তিনি সৃষ্টিকে নিয়ে ব্যাপক সাধনা ও গবেষণায় ব্যাপৃত ছিলেন। অধ্যাবসায় স্রষ্টার স্বরূপ উদ্ঘাটন করতে নিমগ্ন ছিলেন। মানুষের কাছে তা পৌঁছাতেও কৃপণতা করেননি।
স্রষ্টার অস্তিত্ব, সৃষ্টির উদ্দেশ্য, ধর্মের বিধি-বাগড়ায় আরোপিত মনান্তরকে উপাত্ত করে তিনি লিখেছেন `সত্যের সন্ধান`। সন্ধান করেছেন সত্যের। কিন্তু তিনি যে সত্যের সন্ধান পেয়েছেন তা কি সত্যিই সত্য?
তিনি যে আলো পেয়েছিলেন তা আলো ছিল নাকি আলেয়ার আলো? তার সেই `সত্যের সন্ধান`র স্বরূপ বিশ্লেষণ করেই রচিত হয়েছে `আরজ আলী সমীপে`। আপাতদৃষ্টিতে বইটি `সত্যের সন্ধান`র সাংঘর্ষিক হলেও বইটি মূলত সত্যেরই সন্ধান দিয়েছে। সত্য সন্ধান করে আরজ আলী যে মিথ্যার আশ্রয় নিয়েছেন, সমাজে মিথ্যার কলুষ ছড়িয়েছেন, যুক্তির ফুলঝুরি দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করেছেন এবং এদেশের হাজারো যুবককে বিপথগামী করেছেন সেই আরজ আলীর মুখোশ উন্মোচন করেই `আরজ আলী সমীপে`র সংকলন।
সত্যের সন্ধান
বইটিতে প্রশ্ন, সন্দেহ, সংশয় উপস্থাপন করেছেন আরজ আলী। প্রশ্ন ছুঁড়েছেন ধর্মের উপর। যুক্তি দেখিয়েছেন স্রষ্টাহীনতার। গুলিয়ে ফেলেছেন কুসংস্কার এবং ধর্মকে। যার ফলে তিনি আবদ্ধ হয়েছেন বিভ্রান্তির বেড়াজালে।
ভূমিকা, আত্মবিষয়ক, ঈশ্বর সংক্রান্ত, পরকাল বিষয়ক, ধর্ম সংক্রান্ত, প্রকৃতি বিষয়ক এবং বিবিধ প্রশ্ন শিরোনামে অধ্যায় সুবিন্যস্ত করা হয়েছে সত্যের সন্ধান বইয়ে। আরজ আলী সমীপে`তে সেই প্রশ্ন, সন্দেহ, সংশয়কে নিরসন করা হয়েছে ঠিক একই বিন্যাসে। যুক্তি খণ্ডন তো করেছেনই বরং পাল্টা যুক্তি ছুঁড়ে পরাস্ত করেছেন নাস্তিকদের। সর্বোপরি আরজ আলীর ভুল তথ্য, মিথ্যাচার ও প্রোপাগণ্ডার মুখোশ খসে পড়েছে আরজ আলী সমীপে`তে।
পৃথিবীর স্রষ্টা আছে কি? থাকলে আমরা দেখি না কেন? জান্নাত জাহান্নাম বলতে কিছু আছে কি?
থাকলে বিজ্ঞানের চোখে ধরা দেয় না কেন?
আরজ আলীর এসব প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন লেখক। বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে ধরা না পড়লেই কি অস্তিত্বহীন হয়ে যায়?
বিজ্ঞান তো মহাবিশ্বের ৯৫ % জিনিস সম্পর্কেই জানে না এবং দেখতে পারে না। তাই বলে কি সেসবের অস্তিত্বকে অস্বীকার করে? কখনোই না। স্রষ্টা পর্যন্ত পৌঁছতে না পারাটা বিজ্ঞানের সীমাবদ্ধতা। বিজ্ঞান কখনোই প্রকৃতির সকল রহস্য উদ্ঘাটন করতে পারেনি এবং পারবে না। আবার এই অদৃশ্য রহস্যকে অস্বীকার করতেও পারবে না।
এটা বিজ্ঞানের ব্যর্থতা নয়, বরং এটাই বিজ্ঞানের ধর্ম। এটাই বিজ্ঞানের অন্ধবিশ্বাস। সুতরাং আরজ আলীর এইসব প্রশ্ন আধুনিক বিজ্ঞানের দৃষ্টিতেই অগ্রহণযোগ্য।
মুসলমানদের কাছে অমুসলিমরা নাপাক- বলেছেন আরজ আলী। অথচ এটা ধর্মের উপর তার ডাহা মিথ্যাচার। তিনি আরো মিথ্যাচার করে লিখেছেন-
ইবলিশ ফেরেশতা, ধর্ম জ্ঞানচর্চায় বাধা দেয়!
অথচ এগুলো ইসলামের উপর ওনার চাপিয়ে দেয়া মিথ্যাচার। আরজ আলী একজন স্বশিক্ষিত মানুষ হয়ে কীভাবে ধর্মের উপর মিথ্যাচার করে? আসলে তিনি কোনটা ধর্ম, কোনটা কুসংস্কার চিনতে না পেরে সব একাকার করে ফেলেছেন। ফলে মানুষের কাছে আজ হাসির পাত্র হয়েছেন। আর এমন কিছু যুক্তি দিয়েছেন যা অসাড়, শিশুসুলভ, বিকৃত মস্তিস্কপ্রসূত। তিনি যদি ইসলামের সমালোচনা করার আগে ইসলামকে পুরাদস্তুর জেনে নিতেন! তাহলে তিনিও খোঁজে পেতেন সত্যের সন্ধান। আলোকিত হতেন সত্যের আলোয়। সুবাসিত হতেন সুন্দরের সুবাসে। সবশেষে তার ভক্তকূলও সেসবের অংশীদার হতে পারত।
আরজ আলীদের ভ্রান্তি, মিথ্যাচার, প্রোপাগণ্ডার কারণে আমরা কি তাদের সঙ্গে উদ্ধত আচরণ করব? না, কখনোই না। আমরা যদি আরো আগেই তাদের নিকট পৌঁছে দিতে পারতাম `আরজ আলী সমীপে` তাহলে হয়তো ইতিহাসের মোড়ই পাল্টে যেত। যদি আরো আগেই তাদের ভ্রান্তিগুলো নিরসন করতাম, ভুলগুলো সংশোধন করতাম, মিথ্যাচারের জবাব দিতাম, যুক্তিগুচ্ছ খণ্ডন করতাম; সর্বোপরি সত্যের সন্ধান এবং সুন্দরের সুবাস পৌঁছে দিতাম- তাহলে হয়তো তারাও বঞ্চিত হত না এই আলোর দীপ্তি থেকে।
এখন আমরা জেগেছি, হয়তো বড্ড দেরিতে!
আবার যেন আমরা গাফেল না হই। এখন সময় প্রতিজ্ঞা করার। এখনই সময় অঙ্গিকারবদ্ধ হওয়ার। আজ আমাদের শপথ হবে এই আলো চারদিকে বিলিয়ে দেওয়ার। এই সুবাসে চারপাশ সুবাসিত করার।
* * *
প্রতিক্রিয়া:
বইটা হাতে পেয়েই প্রচ্ছদসৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়েছি। পড়ে শেষ করেছি একনাগাড়ে। একনাগাড়ে বই পড়তে অস্বস্তি লাগে, কিন্তু এমন তথ্যসমৃদ্ধ ও গবেষণালব্ধ বই হলে শেষ না করে উঠতে পারি না! বইটা পড়ে খুবই উপকৃত হয়েছি। সত্যকে সত্য বলে জানতে পেরেছি। মিথ্যা, ভ্রান্তি, কুপ্রথা, কুসংস্কারের কবলে পড়ে মানুষ কীভাবে বিপথে পা দেয়- তাও জানেছি বইটা পড়ে। লেখকের লেখা যতই পড়ছি আশ্চর্য হচ্ছি। একজন লেখক কীভাবে এতো গবেষণালব্ধ লেখা লিখেন! লেখা পড়েই অনুমেয় লেখকের মেধা, যোগ্যতা, সাধনা, গবেষণা, অধ্যাবসায়।
.
সবমিলিয়ে বইটা
প্রশংসার দাবি রাখে। বিশ্বাসী-অবিশ্বাসী, আস্তিক-নাস্তিক,
ধর্মপ্রেমী এবং ধর্মবিদ্বেষী সবাই বইটি পড়লে উপকৃত হবে বলে আমি মনে করি।