নট ফর সেল
কিছু বই মানুষকে হাসায়, কিছু বই কাঁদায়। কিছু বই খুলে দেয় মানুষের অন্তর্দৃষ্টি। চোখের সামনে মেলে ধরে নতুন এক পৃথিবী। পাপ–পঙ্কিলতাকে পাশ কাটিয়ে মানুষ তখন অর্জন করে এগিয়ে চলার শক্তি। ধীরে ধীরে সে বুঝতে শেখে, বস্তুবাদী এ জগতে সবকিছু বিক্রি হবার নয়। নিজের মাকে বিক্রি করা যায় না! নিজের বোনকে কখনো পণ্য ভাবা যায় না!
.
তেমনই একটি বই— নট ফর সেল। লেখিকা খুব সুনিপুণভাবে এবং দক্ষ হাতে কলম চালিয়েছেন। চমৎকার কতগুলো শব্দের মজবুত গাঁথুনি দিয়ে তৈরি করেছেন একেকটি প্রবন্ধগল্প। গল্পগুলো আপনাকে ভাবাবে, আপনার চিন্তার খোরাক জোগাবে। মনের গহিন কোণে ঘুমিয়ে থাকা সত্তাটিকে জাগ্রত করে তুলবে। কখনো কৌতুকের ছলে, কখনো–বা গাম্ভীর্যের আভরণে নির্মম কিছু সত্য খুব সহজ করে বলা হয়েছে এখানে।
বি:দ্র: নট ফর সেল বইটি free pdf download করিতে চাহিয়া লেখকদের নিরুৎসাহিত করিবেন না
Alamgir Hossain Manik –
“নট ফর সেল”
আমার ক্যানাডিয়ান নওমুসলিম ছাত্রী আয়শা; বয়স ১৯, পরীর মত সুন্দরী; আমার কাছে আরবী পড়া শেখার পাশাপাশি ইসলাম সম্পর্কে কিছু কিছু তথ্য জেনে নেয়।
ওর সাথে পরিচয় এই রামাদানে।সেদিন ইফতার পার্টি ছিল, রাতে কিয়ামুল লাইল,ইফতারের পর আমরা পাশাপাশি নামাজে দাঁড়ালাম।সামনে, পেছনে, পাশে এত মহিলা এবং বাচ্চারা গিজগিজ করছে যে, নামাজে মনোযোগ ধরে রাখা যুদ্ধসম কঠিন ব্যাপার।লক্ষ্য করলাম এর মাঝেই সে একমনে স্রষ্টার সাথে বাক্যালাপ চালিয়ে যাচ্ছে।এই ময়দানে সে যেন একাই দাঁড়িয়ে! জানতে পারলাম পাচ ওয়াক্তের পাশাপাশি সে এমন অনেক নফল সালাত আদায় করে যার নামও অনেক জন্মগত মুসলিমের অজানা।
ইসলামের প্রতি ওর আগ্রহ আমাকে চমৎকৃত করলো।সে ইসলাম গ্রহন করেছে মাত্র দু’বছর।কিন্তু সে তার ধর্মের প্রতি অত্যন্ত আন্তরিক; ফলে সে এর সবটুকুই পালন করতে আগ্রহী এবন যত্নশীল।দেখলাম সে এর মাঝেই ভারী সুন্দর বোরকা এবং স্কার্ফের কালেকশন করে নিয়েছে।ওর পোশাক-আশাক থেকে সবকিছুতে রুচিশীলতার ছাপ রয়েছে।তবে এর সবটুকুই ইসলামের দৃষ্টিতে যতটুকু গ্রহনযোগ্য সে বিবেচনা মাথায় রেখে।
যেমন, কানাডায় নেইল পলিশ ছাড়া কোন স্টাইলিশ মেয়ের দেখা পাওয়া অস্বাভাবিক, কিন্তু ওর হাতে-পায়ে কোথাও নেইল পলিশ নেই।স্কার্ফ বা ওড়না যখন যা-ই পরে একটি চুলও কোনোদিন বেরিয়ে থাকতে দেখিনি।
রাতে কুর’আনের আলোচনার সময় বাংলায় আলোচনা হওয়ায় বেচারি বুঝতে পারছিল না।আমি তখন ওর আগ্রহ দেখে কিছু অংশ মুখে এবং কিছু অংশ লিখে বুঝিয়ে দিতে লাগলাম।সে কৃতজ্ঞচিত্তে সব শুষে নিতে লাগলো এবং মাঝে মাঝে প্রশ্ন করে সঠিকভাবে বুঝে নিল।যখন আলোচনা শেষে নামাজ শুরু হবে, সে এসে আমাকে বললো, ‘আমি কি আপনার পাশে দাড়াতে পারি?তাহলে আমি আপনাকে দেখে আমার Posture গুলো ঠিক হচ্ছে কিনা যাচাই করে নিতে পারবো’।আমি তো হতবাক।অনেক সময় অনেক আত্নীয় বন্ধুবান্ধবকে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে বিশেষ করে রুকু এবং সিজদায় Posture এর ভুলের ব্যাপারে বলতে গিয়ে তাদের বিরাগভাজন হয়েছি।আর সে কিনা বলে নামাজ সঠিকভাবে পড়ার জন্য Posture ঝালাই করে নিবে! ওর আগ্রহ আবারও আমাকে চমৎকৃত করলো।
এর পর থেকে কুর’আনের ওয়েবলিঙ্ক নেওয়া শুরু করে ভ্রু তোলার মাসআলা পর্যন্ত নানান বিষয়ে ওর সাথে আলাপ হয়েছে।ভালো লেগেছে যে, সে কোনো বিষয়ে জানার সাথে সাথে তা গ্রহন করেছে, কুতর্কের আশ্রয় নেয়নি।অথচ একটা স্বতঃস্ফূর্তভাবে ইসলামের সকল হুকুম আহকাম আঁকড়ে ধরার আগ্রহ অনেক ইসলাম জানা মানুষের মাঝেও দেখা যায় না।
ক’দিন আগে নতুন করে ওর ইসলামের বোধ এবং অনুভুতির পরিচয় পেয়ে আবারও মুগ্ধ হলাম।কানাডার একটি বৃহৎ ফ্যাশন হাউজ একটি ফ্যাশন শোর আয়োজন করছে।এক পর্বে সমাপ্য শোটিতে মডেলিং করার জন্য ওকে ৪০,০০০ কানাডিয়ান ডলার অফার করা হয়।সে সরাসরি না করে দেয় এই বলে, ‘আমার ধর্ম আমাকে নিজেকে পুঁজি করার অনুমতি দেয়না’।শুনে এতো ভালো লাগলো! মনে হলো, এই মেয়েটি খানিকটা দেরিতে ইসলামকে খুঁজে পেয়েছে, কিন্তু সে-ই তো পেয়েছে এর আসল স্বাদ! দোকানে,লাইব্রেরীতে,মসজিদে ওর মতো এমন আরো অনেক নওমুসলিমা বোনকে দেখে আনন্দিত হই, আশা জাগে ইসলামের সম্ভাবনাময় ভবিষ্যৎ নিয়ে।আবার ভয় হয় আমরা যারা জন্মগতভাবে একে পেয়েও হেলায় হারাচ্ছি তারা বুঝি আবার অপাংক্তেয় হয়ে পড়ি!