মাযহাবের গোড়ার কথা
মাযহাব ও তাকলিদের বিষয়টি কোন হাল্কা বিষয় নয়। বরং এটি একটি ইলমি বিষয়। এই বিষয়ক আলোচনা – পর্যালোচনা উলামায়ে কেরামের মাঝে সীমাবদ্ব থাকার প্রয়োজন ছিল। কিন্তু কী করা যাবে, অন্যান্য অনেক বিষয়ের মতো এই নিরেট ইলমি বিষয়কেও সাধারণের আলোচনায় ওয়াজ- মাহফিলে টেনে আনা হয়েছে। এবং মাযহাব – অনুসারী ও মাযহাব – বিরোধী উভয়পক্ষই এমন কুৎসিত কূটতর্কে লিপ্ত হয়ে থাকেন যে, ভদ্র মানুষের কান এ আলোচনা শুনতে গেলে লজ্জায় লাল বর্ণ ধারণ করে।
পাঠ- পর্যালোচনা-
এই গ্রন্থে তিনি কুরআন – হাদীদের বিশুদ্ব রেফারেন্সে ও সুস্থ যুক্তি-বুদ্বির আলোকে তাকলীদ ও ইজতিহাদ বিষয়ক আলোচনার অবতারণা করেছেন। এবং শুধু এটাই প্রমাণ করতে চেয়েছেন যে; নির্ভরযোগ্য ও প্রমাণসমৃদ্ব কোনো ইজতিহাদের তাকলীদ করা বিদআত নয় যে, একে তিরষ্কারযোগ্য মনে করা হবে। বরং এটি অতীতের সালাফ থেকে আরম্ভ করে বর্তমানের খালাফ পর্যন্ত দ্বীনের স্বীকৃত পথ বলে পরিগণিত। তাকলিদ অস্বীকারকারীদের সাথে বাহাছ করা বা দালীলিক যুদ্ব করা থেকে তিনি বিরত থেকেছেন। আর স্রেফ মাযহাবের অপরিহার্যতা, দালীলিক ও যৌক্তিকভাবে স্বীয় হাকীমানা উসলুবে তুলে ধরেছেন। সেমতে তিনি একেবারে গোড়া থেকে আলোচনা শুরু করেছেন। ইজতিহাদের তত্ত্ব ও প্রকারভেদ আলোচনা করেছেন সংক্ষেপে, অতঃপর ইজতিহাদের মাধ্যমে কীভাবে শরীয়তে শৃঙ্খলা বজায় থাকে, তা বিস্তারিতভাবে নস (কুরআন – হাদীসের মূলভাষ্য) ও ইল্লত (কার্যকারণ) বর্ণনার মাধ্যমে বুঝিয়েছেন। এছাড়াও সাহাবায়ে কেরামের মাঝেও যে নির্দিষ্ট ব্যক্তি তাকলীদের প্রচলন ছিল এর কিছু দৃষ্টান্ত উল্লেখ করেছেন। পাশাপাশি ইজতেহাদের সীমারেখা ও ইজতেহাদের অপব্যবহারের কুফল সম্পর্কে নাতিদীর্ঘ বিবরণ পেশ করেছেন।
‘ইমামগণের মতবিরোধ রহমতের কারণ’ শিরোনামের আলোচনাটি সংক্ষেপ হলেও উপকারী। তারপর তাকলীদে শখসী নিয়ে কিছু আরয করার পর পরিশেষে ‘সালাফের মধ্যে নির্দিষ্ট তাকলীদ ছিল ব্যাপক আকারে’ –এই শিরোনামে তুলনামূলক লম্বা আলোচনা করেন।
হাকিমুল ইসলামের অন্যান্য রচনার মত এই রচনাও তাত্ত্বিক ও কিছুটা জটিলগোছের। কারো কাছে কিছু কিছু আলোচনা তত্ত্বের কচকচানি মনে হতে পারে। বস্তুত এই গ্রন্থ ‘কলসির ভেতর সাগর ভরে দেওয়া’ – র বাস্তব নমুনা। আর স্বভাবতই এজাতীয় দালীলিক গ্রন্থগুলো জটিল সব তাত্ত্বিক আলোচনায় ভরপুর থাকে। উপরন্তু যদি ছোট্ট কলেবরের হয় এবং উসূলে ফিকহের নানা পরিভাষার ব্যবহার করা হয়, তাহলে তো যেন দুর্বোধ্যতা আরো বেড়ে যায়।
যাই হোক, উল্লিখিত বইয়ের ২৪ পৃষ্ঠায় নিম্ন হাদিসটি আনা হয়েছে-
হাদীসের অর্থ- যে ব্যক্তি নিজের ইলম অনুপাতে আমল করে, আল্লাহ তা’আলা তাকে এমন ইলম দান করেন, যা তার নিকট ছিল না।
বিশুদ্ব মতানুসারে এটি হাদিস নয়। এর নির্ভরযোগ্য কোনো সূত্র নেই। যে সূত্রে তা বর্ণিত হয়েছে হাদীস বিশারদগণের নিকট তা জাল ও বানোয়াট।
বিস্তারিত দেখুন- ‘এসব হাদীস নয়’, দ্বিতীয় সংস্করণ, খন্ড নং- ২, পৃষ্ঠা নং- ৬২, রচনায়ঃ মাওলানা হুজ্জাতুল্লাহ দাঃ বাঃ। তত্ত্বাবধান ও সম্পাদনায়ঃ মাওলানা মুহাম্মদ আবদুল মালেক দাঃ বাঃ।
এমনিভাবে উক্ত গ্রন্থের ৪০ পৃষ্ঠায় একটি রেওয়ায়াত এমন নকল করা হয়েছে-
“আমার উম্মতের আলেমগণ বনী ইসরাঈলের নবীতুল্য।”
বিশুদ্ব মতানুসারে এটিও হাদীসরূপে গ্রহণযোগ্য নয়। হাদীসের ভাণ্ডারসমূহে অনুসন্ধান করলে হাদীস হিসেবে এর কোনো প্রমাণ পাওয়া যায় না।
দেখুন- ‘এসব হাদীস নয়, দ্বিতীয় সংস্করণ, খন্ড নং-১, পৃষ্ঠা নং- ৯১, রচনায়ঃ মাওলানা মুতীউর রহমান দাঃ বাঃ। তত্ত্বাবধান ও সম্পাদনায়ঃ মাওলানা মুহাম্মদ আবদুল মালেক দাঃ বাঃ।
আমার চোখে বইটিতে এছাড়া আর বড় কোনো অসঙ্গতি চোখে পড়ে নি।
বি:দ্র: মাযহাবের গোড়ার কথা বইটি free pdf download করিতে চাহিয়া লেখকদের নিরুৎসাহিত করিবেন না
Reviews
There are no reviews yet.