দাদু একটা গল্প বলো
একজন লেখক দাদুর গল্প
ছোটবেলায় চাঁদনি রাতে মাদুরপাতা বিছিয়ে দাদুর কোলে গপ্পো শোনার সুযোগ হয় নি কোনদিন ।দাদুর পান খাওয়া দুটি সুন্দর ঠোঁট থেকে নিঃসৃত অদ্ভূত সব রূপকথা ও রোমাঞ্চকর কাহিনী ভরা জমজমাট আসরে শামিল হতে পারি নি। দাদু থাকতেন স্নিগ্ধ মোলায়েম সবুজঘেরা গ্রামে। আমরা থাকতাম ইট -কংক্রিটের শহরে। তবে দাদু যখন শহরে আসতেন তখন গল্পের আসর পাততেন। দাদুর কাছে হরেক রকমের গল্প গচ্ছিত ছিলো। পরতে পরতে তিনি নীল ঝিলমিল প্রজাপতির ডানার মতো গল্পগুলো তুলে ধরতেন। দাদুর গল্পগুলো প্রজাপতি সেজে নরোম তুলতুলে ডানা ঝাপটাতো। আমি ডানপিটে বালকের ন্যায় সেই প্রজাপতির পিছু নিতাম। প্রজাপতিটি হঠাৎ হারিয়ে যেত। আমি মন খারাপ করতাম। দাদু আবার গল্প বলতেন। আমার সামনে আবার ফরফর করে প্রজাপতিটি উড়ে এসে ডানা ঝাপটাতো। আমার কোমল মন তখন বেশ ফুরফুরে ঝরঝরে হয়ে যেত।
শৈশবে একজন ‘লেখক দাদুর ‘রসটইটম্বুর কলম থেকে নিঃসৃত মজার মজার শিক্ষণীয়, ঝকঝকে-তকতকে রঙিন গল্পের বই চোখে দেখি নি। কিছু সস্তা দামের কয়েক পাতা সম্বলিত গল্পের বই পড়েছি। গল্পগুলো ছিলো ধূর্ত শেয়াল পণ্ডিত আর বোকা বাঘের।সাময়িক আনন্দ পেতাম। মুহূর্তেই আবার সেই আনন্দ মিইয়ে যেত।
খবর পেলাম একজন ‘বুড়ো লেখক দাদু’ ছোটদের জন্য একটি গল্পের বই লিখেছেন। বইটির নাম ‘ দাদু একটা গল্প বলো’। আহ্ কী সুন্দর নাম। ছোট্ট নাতির এমন গাল-ফুলানো, কপাল-কুঁচকানো বায়না ও আবেগ জড়ানো আবদার বুড়ো দাদু কি ফেলতে পারেন। লেখক দাদুর প্রতি আমার বড্ড অভিমান। আমাদের শিশুবেলায় তিনি কি ঘুমিয়ে ছিলেন? কেন আমাদের হাতে এইসব মজার গল্পগুলো তুলে দেন নি? একটি মজার স্মৃতি মনে পড়তে মুহূর্তেই আমার অভিমান ভেঙে গেল। তখন লেখক দাদুর সম্পাদনায় একটি পত্রিকা বের হতো কিশোর স্বপ্ন নামে। পত্রিকায় প্রতিটি পাতায় পাতায় ছিলো কিশোরদের রঙিন স্বপ্নে স্বপ্নে ছাওয়া। স্বপ্নের রঙধনুর বর্ণিল পরাগে মাখামাখি ছিলো এ কিশোর স্বপ্নে। কিশোরদের স্বপ্নগুলো কালো কালো অক্ষরে খণ্ড খন্ড মেঘের মতো কিশোর স্বপ্নের আকাশে অবাধে বিচরণ করতো।সেই পত্রিকায় আমি একটি চিঠি পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে একটি বানান ভুল হয়ে যায়। লেখক দাদু বুড়ো হতে পারেন কিন্তু তাঁর চোখ দু’টো এখনো টগবগে যুবক । চশমার ফাঁক দিয়ে তিনি আমার ভুলটি ধরে ফেললেন। আমাকে চিঠির উত্তরে খুব সুন্দর ভাষায় ভুলটি অবগত করে পাঠকের ‘বকাবৃষ্টি’ থেকে উদ্ধার করলেন। লেখক দাদুর চিঠির উত্তর পেয়ে আনন্দে ফড়িংয়ের মতো মনটা নেচে উঠল আবার নিজের ভুল দাদুর কাছে প্রকাশ হওয়াতেই একটু লজ্জিত হলাম। পণ করেছিলাম কোন মুহূর্তেই ‘ মুহূর্ত ‘কে বিকৃতি করব না।
‘দাদু একটা গল্প বলো ‘ বইটি এখনো হাতে আসে নি।আশা করি খুব জলদি হাতে পাব।বইয়ের প্রচ্ছদটি অসম্ভব ভালো লেগেছে। বইয়ের ভেতরের খবর হালকা পাতলা শুনেছি।সবুজ বনের অসংখ্য জীব-জন্তুর বৈচিত্ররকম জীবনের গল্পে গল্পে সাজানো। গল্পের শেষে কী শিক্ষা হলো, তা রসেভরা চমচমের মতো সাজানো হয়েছে। লেখক দাদুর শব্দগুলো মিষ্টি মিষ্টি। মধুর মধুর । খেজুর গাছ থেকে রস যেমন টপটপ করে ঝরে দাদুর শব্দগুলো থেকেও তেমনি রস ঝরে।বইটি হাতে আসা মাত্রই চাঁদনি রাতে মায়াবী জ্যোৎস্নায় বসে পড়ে ফেলব।হয়ত বইটি পাঠ করে শৈশবে দাদুর গল্পের আসরে না শোনা গল্পগুলো ফিরে পাব।শৈশবের গল্প না শোনার সেই অতৃপ্তি মেটাবে।
-আমজাদ ইউনুস
বি:দ্র: দাদু একটা গল্প বলো বইটি free pdf download করিতে চাহিয়া লেখকদের নিরুৎসাহিত করিবেন না
Reviews
There are no reviews yet.